#চন্দ্রাক্ষী
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্বঃ১
পরপর তিনবার কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার অপরাধে কুহুকপুরে মা এবং নবজাতক কন্যাকে জীবন্ত দাফন।
গত বুধবার দিবাগত রাতে মোজাম্মেল হোসাইনের স্ত্রী নিপা বেগম কন্যা সন্তান জন্ম দেন।
বার বার কন্যাসন্তানের শোক যেন পশু বানিয়ে দিয়েছিল মোজাম্মেল কে। তাই রাতের আধারে অবচেতন স্ত্রী এবং কন্যাকে বাড়ির পাশেই দাফন করে আটাশ বছর বয়সী দিনমজুর মোজাম্মেল।
পুত্রের……..
বাকী সংবাদটা শোনা হলো না আরীকাহ্-এর। পাহাড়সম পেট নিয়ে বসে বসে বাদাম খাচ্ছিলো সাথে টিভিতে খবর শুনছিল।
ইদানীং খবর শোনা বা দেখার এক বিশেষ রোগ হয়েছে তার।নানা দেশের নানান জাতি, তাদের অপরাধের কথাও ভিন্ন।তবে এই মুহূর্তে তার
ফোনটা অনবরত বেজেই চলেছে।তাকে বলা হয়েছে ফোন সবসময় হাতের কাছে রাখতে।এক আকাশ বিরক্তি নিয়ে পেটের উপর থেকে প্রথমে বাদামের বাটি তারপর সমরেশ বাবুর চতুষ্কোণ সিরিজ নামিয়ে পাশে রাখলো আরীকাহ্। হট ওয়াটার ব্যাগটা কামিজের তলা থেকে বের করে ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে চলল ফোনের কাছে।
স্ক্রিনে খানিক সময় পর পর উদয় হচ্ছে এশাদ এর নাম।
“বলুন।”
“বলুন মানে কী?আরু? কোথায় ছিলে?”
“টিভি দেখছিলাম।”
“বলেছিলাম না? ফোন হাতের কাছে রাখতে?”
“চার্জে ছিল।কখন আসবে?”
“রাউন্ডে যাচ্ছি।শেষ হতেই ব্যাক করবো।”
“রাতে কী খাবে?”
“আমি খাবার নিয়ে আসবো। এই শরীরে রান্না করার প্রয়োজন নেই।”
এশাদ যখন রাতে বাসায় ফিরল তখন রাত সাড়ে নয়টার মতোন হবে। স্ত্রী হিসেবে আরীকাহ্ যথেষ্ট নয় সম্পূর্ণ মনের মতোন হলেও প্রেমিকা হিসেবে সে উড়নচণ্ডী। হাসি হাসি মুখে তাকে দিয়ে খুন অবধি করানো যাবে কিন্তু আদেশের সুরে এক গ্লাস পানিও না।
এই ফ্ল্যাট টা তাদের নিজের।আরীকাহ্ নিজ হাতে সাজিয়েছে। তাদের বেডরুমের পাশের রুমটা দখল করে নিয়েছে আরীকাহ্ এর জিনিসপত্র। তার জিনিসপত্র বলতে রাজ্যের বই। সে বই হতে পারে যেকোনো বিষয়ের। তারপর তার ডায়েরি, ল্যাপটপ এবং ফোনের চার্জার, বিছানা পাতা হয়েছে ফ্লোরে। আর আছে ছোট্ট একটা দোলনা। ঠিক যেন চড়ুই পাখির বাসা।
আরীকাহ্ এশাদের প্রিয়তমা স্ত্রী।
বিয়ের বয়স মাত্র ছয় মাস।আরীকাহ্-এর মতে পেশায় এশাদ মানুষের কসাই।
অর্থাৎ এশাদ একজন ডক্টর আর আরীকাহ্?
সে আপাতত হোম মেইড গৃহিনী।
ঘরকুনো নয় তবে তার কাজ হচ্ছে সারাদিন নেটে রিসার্চ করা,বই পড়া যতক্ষণ অবধি এশাদ বাসায় না আসে।
টুকটাক লেখালেখি করে ইতিমধ্যে আরীকাহ্ তথাকথিত বেস্টসেলার লেখকদের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। আপাতত তার এই কাজ সে বাসায় বসেই করে কারণ রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে হিসেবে তার পরিধি ছিল বরাবর কম।তাই খানিকটা ঘরকুনো স্বভাবের এটাও বলা যেতে পারে।
এশাদের হাতে রসমালাইয়ের হাড়ি দেখে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে আছে আরীকাহ্। নিশ্চয়ই আজ কোনো তালগোল পাকিয়েছে এশাদ।
বিগত আট বছরের পরিচয়ে এতটা তো এশাদ কে সে চিনে।
“আজ হঠাৎ রসমালাই?তুমি জানো না আমি ডায়েটে আছি?”
মিষ্টি হেসে এশাদ আরীকাহ্-এর পাশে বসে বললেন,
“জানি তো। কিন্তু খাবারের সাথে কোনো ছাড় নেই। চলো তো খেয়ে নিব। তারপর কথা আছে।”
“ফ্রেশ হয়ে এসো।টেবিল গুছিয়ে নিচ্ছি।”
খাবার টেবিলে বসে এশাদ নিজে নিজে কথাগুলো গুছিয়ে নিচ্ছে। আগামী বছর খানেকের জন্য তাকে যেতে হচ্ছে এক গ্রামে। নতুন হাসপাতাল খোলা হয়েছে। সেখানে মূলত যেতে হবে তাকে। গ্রামের মানুষের সেখানে চিকিৎসার কোনো উপায় নেই। তাছাড়া…….
“কী ভাবছো?”
“আচ্ছা আরু তোমার লেখাপড়ার কী খবর? ফাইনাল তো এসে গেলো।”
“ভাবছি বাদ দিয়ে দিব। কী হবে লেখাপড়া করে?সেই তো তোমার বাচ্চাকাচ্চা সামলাতে হবে, চুলো গুতিয়ে রান্না করতে হবে। ”
“এটা কেমন কথা?মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। অন্তত এক বছর সময় নিজেকে নিয়েই ভাববে। পড়া লেখা প্লাস সাথে তোমার লেখালেখি।”
“সে দেখা যাবে।”
“আমাকে ছাড়া থাকতে তোমার কষ্ট হবে?”
“কেনো বলোতো?”
“আগামী এক বছরের জন্য আমাকে এক জায়গায় যেতে হবে।”
“মানে? কোথায়?”
“একটা গ্রামে। সে গ্রামে চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। নতুন হাসপাতাল খোলা হয়েছে। সেখানে……..”
কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই এশাদ খেয়াল করলেন তার সামনে বসে থাকা ব্যক্তিটির চোখেমুখে আষাঢ়মাসের ঘন কালো মেঘ জমেছে। চন্দ্রাক্ষী টইটম্বুর।নয়নবারির বাধ ভাঙ্গলো বলে! ত্রস্ত কণ্ঠে এশাদ বললেন,
“আমি মাঝেমধ্যে আসবো তো।”
“তোমার ব্যস্ততা মেনে নিয়েছি তাই বলে দূরত্ব মেনে নিব এটা কিভাবে ভাবলে?”
“গ্রাম অঞ্চল, তুমি ওসবে অভ্যস্ত নও।”
“আমি তোমাতে অভ্যস্ত।”
“আবেগ নয় পাগলী, বাস্তবতা মেনে নিতে হবে তো।”
“আমার কাছে সস্তা আবেগের দাম নেই। আমি যা বলি সহজ ভাষায় বলি।”
এশাদ জানে, এই মেয়েকে বুঝিয়ে লাভ হবে না।সে যাবেই মাঝ থেকে এখন তার কথা না মেনে নিলে গাল ফুলিয়ে চারটা মুখ বানিয়ে রাখবে। তাই যুদ্ধের পূর্বেই আত্নসমর্পণ করলেন এশাদ।দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন,
“আরু তুমি কী জানো? তোমার কাজ কী? তুমি খুব সহজে কথার প্যাঁচে ফেলতে পারো।”
“জানি।”
“আচ্ছা বেশ। তাহলে যাবে তুমি আমার সাথে। অবশ্য এতে তোমার সুবিধে হবে৷ গ্রামের মানুষের জীবন, তাদের কে কাছ থেকে স্টাডি করতে পারবে। তবে আরেকবার ভেবে দেখো।”
“ভেবে নিয়েছি ক্যালিক্রাটিক্স। তুমি বিহনে আমি তো আধার বিহীন রাত্রী।”
প্রতি উত্তরে এশাদ মুচকি হেসে টেবিল ছেড়ে উঠে যেতেই আরীকাহ্ প্রশ্ন করে,
“কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
“কুহুকপুর।”
কুহুকপুর নামটা পরিচিত লাগলেও এটা নিয়ে ভাববার সময় পেলো না আরীকাহ্।
দ্রুত হাতে টেবিল গুছিয়ে এশাদের পাশে বসলো সে। এশাদ বাসায় ফিরে আসার পর সবটা সময় সে তাকেই দিতে চায়।
আরীকাহ্কে পাশে পেয়ে তার কোলে মাথা রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো এশাদ।
এশাদের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে আরীকাহ্ বললো,
“তোমার সে গ্রাম কী আমাকে তপ্তরোদের অনুভূতি দিবে? কালবৈশাখীর প্রথম স্পর্শ? বর্ষার অঝোর ধারা, শরৎের পেজা পেজা মেঘ, হেমন্তের হাসি কিংবা শীতের প্রথম শিশির এবং বসন্তের বাহনের দেখা?”
“জানি না তো।তবে তুমি চাইলে আমি তোমায় স্বর্গ ভ্রমণ করিয়ে আনতে পারি। যাবে না কী?”
মাঝরাতে হঠাৎ বাতাসের ঝাপ্টায় ঘুম ভেঙে গেলো আরীকাহ্-এর। ঘামে ভিজে চুপসে গিয়েছে তার গা।দিব্যি মনে পড়ছে কেউ তাকে মা বলে ডাকছিল।
কিন্তু তার চেহারা! কী বিভৎস! আগুনে পোড়া বাচ্চা না কী ছিল? মাংসের পিন্ড?
ভাবতেই আরেকদফা ঘাম ছুটলো আরীকাহ্ -এর।
পাশেই ঘুমিয়ে আছে এশাদ। উন্মুক্ত পিঠে মাথা রেখে আবার কখন আরীকাহ্ ঘুমিয়ে গেলো নিজেই জানে না।
তবে এবারের স্বপ্নে নয় মনে হচ্ছে কেউ একজন তার পায়ের কাছে এসে দাড়িয়েছে। আদৌও কী মানুষ? নাকী একটা মাংস পিন্ড? যার গা দিয়ে আসছে আগুনে পুড়ে যাওয়ার বাজে গন্ধ। ভারী হয়ে উঠছে চারপাশের বাতাস৷
চলবে
“কিছুকথা – আপাতত ভীমরুল গল্পটা দিতে পারছি না।কারণ ব্যক্তিগত কিছু কারণে মাস খানেক বেশ মানসিক চাপে ছিলাম।আলহামদুলিল্লাহ্ এখন ভালো আছি তবে ভীমরুল লেখার আগ্রহ পাচ্ছি না। তবে ইন-শাহ্-আল্লাহ্ শেষ করবো। কারণ আমি জোড় করে লিখলে না আপনারা পড়ে তৃপ্তি পাবেন না আমি লিখে। তাই আপাতত ভীমরুলের জন্য আমায় মাফ করবেন। তবে কথা দিচ্ছি শেষ করবো।”
#ছবিয়ালঃইসমাত