#বিনি_সুতোর_টান
#লেখিকা_জেনিফা_চৌধুরী (মেহু)
#পর্ব_বারো
–আমাদের বা’চ্চাটার থেকে বাবা ডাকার অধিকার কেড়ে নিও না জেমি। আমাকেও বাবা ডাক শোনার থেকে বঞ্চিত করোনা। আমার সাথে একবার ফিরে চলো। আমাকে লাস্টবার একটা সুযোগ দাও। আমি একটাও ভুল করব না। প্রমিস। আমার অনাগত সন্তানের প্রমিস।
জেমির রুমে জেমির সামনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে জায়ান। ওর চোখ পানিতে ভরপুর। জেমি শক্ত হয়ে ঠাঁই দাড়িয়ে আছে। জায়ানের কথা শেষ হতেই জেমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলো…..
–আমি তোমাকে একবার ও বলিনি তুমি তোমার সন্তান কে কাছে পাবেনা, তোমাকে বাবা ডাকতে পারবে না। আমি জানি, এই সন্তানের প্রতি আমার যতটুকু অধিকার আছে তোমার ও ঠিক ততটুকু অধিকার রয়েছে। কিন্ত আমি তোমার কাছে ফিরে যাব না। আর না তো তোমার উপর আমার কোনো অভিযোগ রয়েছে। আমার বাড়ির দরজা তোমার জন্য খোলা। তুমি যখন ইচ্ছে তোমার সন্তানের খোঁজ নিতে আসতেই পারো। কিন্তু আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভুলেও ভাববে না।
বলেই জেমি বেড়িয়ে গেলো। জায়ান নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে দাড়িয়ে দাড়িয়ে।
____________________________________________
বেলকনিতে এসে জেমির ডায়রিটা হাতে নিয়ে বসে পড়লো জায়ান। সেদিন ডায়রির প্রথম পাতাটা পড়ার পর আর পড়ার সাহস হয়নি ওর আজকে কেনো যেনো ডায়রিটা পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে খুব। জায়ান ডায়রিটা খুলে কয়েকটা পাতা উল্টে দেখতেই কিছু লেখা চোখে পড়লো…..
— ভালোবেসে ঘর ছেড়ে শুধুমাত্র তাকে বিশ্বাস করে এই বাড়িটায় এসেছিলাম। ভেবেছিলাম আমার ভালোবাসার মানুষটা জীবনের প্রত্যেকটা মুহূর্ত পাশে থাকবে। এটাও ভেবেছিলাম, নিজের মাকে ছেড়ে এসেছি ঠিকি এখানে দ্বিতীয় মা পাবো। কিন্ত কে জানতো, আমার ভালোবাসার মানুষটাই আমাকে নির্মম ভাবে অত্যাচার করবে। কে জানতো যাকে মা বলে সম্মোধন করলাম সেই মা নামক নারী আমার সংসারটা ভেঙে দিবে। জানো জায়ান, আমি না অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই বাড়িতে পা রেখেছিলাম। শুধু আমি না, প্রত্যেকটা মেয়ে যেদিন বাবার বাড়ি থেকে শুশুড় বাড়িতে আসে সেদিন অনেক স্বপ্ন নিয়ে নতুন জীবনের দিকে পা রাখে। কিন্তু তুমি আমার স্বপ্ন গুলো দিন দিন ভেঙে দিচ্ছো। আজকে তুমি যখন এসে মায়ের কথায় আমারর হাতটা চেপে ধরলে তখন একবার ও খেয়াল করোনি যে তোমার মায়ের হাত পুড়েনি, পুড়েছে আমার হাত। এই বিষাদময় যন্ত্রনায় আমি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছি।
“দোষ না করেও, দোষী হয়ে শাস্তি পাওয়ার মতো বিষাক্ততা হয়তো আর কিছুতে নেই”
আর একটু কোনায় লেখায়,
“সে আমার হয়েও আমার হয়ে থাকলো না।
” সে আমার কাছে থেকেও আমাকে ভালোবাসলো না”
“ভালোবাসা পাওয়ার এক টুকরো লোভ আমাকে আজীবন দুঃখী করে রাখবে”
লেখা গুলো পড়তেই জায়ানের চোখ থেকে পানি টপটপ করে ডায়রির উপর পড়ছে।
—নিশ্চুপ হয়ে ছেড়ে যাওয়ার থেকে বড় শাস্তি হতে পারে না। তুমি আমাকে ছেড়ে গিয়ে বুঝিয়ে দিলে আমি কতটা নিচ মানসিকতার।
জায়ান কথাটা বলেই কলম নিয়ে ডায়রির একটা পাতায় লিখলো…..
“তোমাকে পেয়েও ধরে রাখতে না পারার কষ্ট আমাকে কুড়ে কুড়ে খেয়ে ফেলছে ”
“হৃদ পিন্ডে রক্তক্ষরন হচ্ছে,
থেমে যাবে বেলা শেষে,
ফুরিয়ে গিয়েও হয়তো বাঁচবো,,
অপরাধী বেশে…..
“তোমাকে পেয়ে গেলে বোধহয় না পাওয়ার যন্ত্রনার সাধ থেকে বঞ্চিত হয়ে যেতাম”
জায়ান ডায়রিটা বুকে জড়িয়ে কেঁদে উঠলো। “শারীরিক শাস্তির চেয়ে মানসিক শাস্তির কষ্টটার বিশালতা এক সমুদ্র সমান” জেমি শারীরিক শাস্তি সহ্য করেছে আর জায়ান সহ্য করছে মানসিক শাস্তি। দুজনের যন্ত্রনা কোনো একদিক থেকে সমান।
____________________________________________
আজ সাতদিন জেমি আর জায়ান আলাদা। জেমি নিজের মতো প্রত্যেকটা সময় ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করে। জায়ান ভেতরে ভেতরে গুমড়ে ম/রছে প্রতিনিয়ত। এই অপরাধ বোধ প্রতি মুহূর্ত মৃ/ত্যু যন্ত্রনা দিচ্ছে। জায়ান কাল সারারাত ভেবে এই সিদ্ধান্তে এসে থেমেছে। সেদিনের পর ইরা বেগম ও চুপ হয়ে গিয়েছে। হয়তো ভেতরে ভেতরে সেও অপরাধ বোধে ম/রছে। জায়ান সকালে উঠেই বেড়িয়ে গেলো। জেমির বাড়ির পাশে পার্কের মাঠের এক কোনায় বসে আছে জেমি। কিছু একটা ভাবছে। জায়ান কাল রাতে শেষ বারের মতো একবার দেখা করতে চেয়েছে। জায়ান কে পার্কের ভেতরে ঢুকতে দেখেই জেমি নিজের চোখের জল মুছে নিলো। জায়ান এসেই নিঃশব্দে জেমির পাশে বসে পড়লো। দুজনের দৃষ্টি সামনের দিকে। দুজন ব্যাক্তি একে অপরকে ভালোবাসে কিন্তু তাদের মাঝে দূরত্ব রয়েছে বিশাল। একজনের মাঝে অভিমানের শক্ত দেয়াল। আরেক জনের মাঝে রয়েছে অপরাধ-বোধ। দুজনের মাঝে চলছে নিরবতা। নিরবতা কাটিয়ে জেমি বলে উঠলো……
— কেনো ডেকেছো?
জায়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো….
—মনে করো শেষ বারের মতো দেখা করতে?
জেমি একটু অবাক হলো জায়ানের কথায়। শেষবার বলতে ও কি বুঝাতে চাইছে। জেমি ভ্রু যুগল কুচকে প্রশ্ন করলো?
—শেষবার মানে?
জায়ান একটু বাকা হেসে শান্ত কন্ঠেই উওর দিলো…..
— আজকে এই পরিস্থিতিতে এসে বুঝতে পারছি”মানুষ হয়তো মা/রা যাওয়ার জন্য না, মানসিক যন্ত্রনা থেকে বাঁচার জন্য সুই/সাইড করে”।
প্রতি মুহূর্তে মৃ/ত্যু যন্ত্রনা ভোগ করছি আমি। তোমাকে হারানোর যন্ত্রনা, নিজের করা অপরাধের যন্ত্রনা, মায়ের করা বিশ্বাসঘাতকতা, আমাকে ভেতর থেকে শেষ করে দিচ্ছে। হয়তো কোনো একদিন এইভাবেই নিঃশেষ হয়ে যাব দুনিয়া থেকে। আচ্ছা, একটা প্রশ্নের উওর দাও তো। আমাদের সন্তান যখন বড় হবে যখন জানবে ওর বাবা কতটা খারাপ, কতটা নিচ মানসিকতার, কতটা জঘন্য ভাবে ওর মাকে অত্যাচার করেছে তখন ওর সামনে আমি কোন মুখে গিয়ে দাড়াব? কোন মুখে গিয়ে নিজেকে বাবা বলে দাবী করব? ও কি আমাকে পারবে বাবা বলে ডাকতে?
জায়ানের কথাগুলো শুনে জেমি ছলছল চোখে জায়ানের দিকে তাকালো। জায়ানের চোখে ও পানি টলমল করছে। জায়ান কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আবারো বলে উঠলো…..
—আমি আমার কালো ছায়া তোমাদের উপর পড়তে দিব না। তাই অনেক ভেবে এই সিদ্ধান্তে এসে থেমেছি।
জেমি শান্ত কন্ঠেই বললো….
—কি সিদ্ধান্ত?
কান্না গুলো জায়ানের গলায় বিধে আছে। জায়ান শান্ত হয়েই নিজেকে সামলে উওর দিলো….
— আমি কানাডা চলে যাব।
কথাটা শুনতেই জেমি বিস্ফোরিত চোখে জায়ানের দিকে তাকালো। জেমি আজ নিশ্চুপ। ওর কথা বলার শক্তি নেই। জেমি হুট করেই দাড়িয়ে গেলো।
দাড়িয়ে বলে উঠলো….
—যখন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছো। তখন, আর আমার কিছু বলার নেই। আমি আমার জীবন গুঁছিয়ে নিব। আমি যথেষ্ট শিক্ষিত আছি।
জেমির শক্ত কন্ঠে কথাগুলো শুনে জায়ানের বুকের ভেতর দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। জায়ান ছলছল চোখে জেমির দিকে তাকিয়ে আছে। জেমি ও শক্ত চোখে নিচে তাকিয়ে আছে।
— আর কিছু বলার আছে?
জেমির শক্ত কন্ঠে প্রশ্নটা শুনে জায়ান জোরে হা-হা করে হেসে দিলো। জায়ান কে এমন ভাবে হাসতে দেখে জেমির চোখের কোনে পানি জমে আছে। জায়ানের এই হাসির পেছনে লুকিয়ে থাকা কষ্টটা জেমি ঠিকি বুঝতে পারছে। ভালোবাসার মানুষটার কষ্ট বুঝতে দেরি হলো না ওর। জায়ান হাসতে হাসতে হঠাৎ করেই শান্ত হয়ে গেলো। তারপর অসহায় কন্ঠে বলে উঠলো…..
— একবার তোমাকে জড়িয়ে ধরতে দিবে প্লিজ। আমার নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। প্লিজ একবার জড়িয়ে ধরতে দিবে।
জায়ানের অসহায় কন্ঠে কথাটা শুনে জেমির চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো। জেমি চুপ করে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। জায়ান আর অপেক্ষা না করে জেমিকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো। জেমি শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে। জায়ানের চোখের পানিতে ভিজে যাচ্ছে জেমির কাঁধ। আজ জেমির ও নিজেকে অসহায় লাগছে। একদিকে আত্মসম্মান, আরেকদিকে ভালোবাসা। কোন দিকটা বেছে নিবে? জেমি বড্ড দুটোনায় পড়ে গেছে। জেমি হঠাৎ করেই জায়ানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে চলে গেলো।
জায়ান শক্ত কাঠ হয়ে দাড়িয়ে আছে। জেমির যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে উঠলো…..
–একবার ক্ষমা করে দিলে কি খুব বেশি ক্ষতি হতো?
#চলবে..
(আসসালামু আলাইকুম। অসুস্থ তাই ছোট করে দিলাম।ভুল ক্রুটি ক্ষমা করুন। খুব শিঘ্রই শেষ হবে।
আমি দোটানায় আছি কেউ বলে হ্যাপি এন্ডিং/কেউ বলে মিল না দিতে। এখন কি করবো আপনারাই বলেন)