বিনি সুতোর টান পর্ব ৪

0
336

#বিনি_সুতোর_টান
#লেখিকা_জেনিফা_চৌধুরী(ছদ্মনাম)
#পর্ব_চার

কাল রাতে জায়ান জেমির উপর জোর করে নিজের পুরুষত্ব দেখিয়েছে। জেমির অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বে ও কিছু করতে পারেনি।জেমির বুক ফেটে কান্না আসচ্ছে। ও কখনো ভাবতেও পারেনি জায়ান ওর সাথে এতটা নোংরামি করবে। কাল রাতে জায়ান নোংরামির শেষ পর্যায় চলে গিয়েছে। কোনো নারীর অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বে ও যে পুরুষ জোরে করে পুরুষত্ব খাটায় সে কখনো পুরুষ হতে পারে না। হোক সে নারী তার বউ। জেমি ভোর হওয়ার সাথে সাথে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই জায়ান কে বিছানায় উপর মাথা ধরে বসতে থাকতে দেখে ওর রাগে গা জ্বলে উঠলো। জেমিকে বের হতে দেখেই জায়ান উঠে দাড়িয়ে জেমির সামনে গিয়ে দাড়ালো। জায়ানকে দেখেই জেমি পাশ কাটিয়ে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই, জায়ান ওর হাতটা টেনে ধরতেই, জেমি একটানে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ালো। জায়ান রেগে গিয়ে জেমিকে দরজার সাথে চেপে ধরলো। তারপর জেমির গাল চেপে ধরে বলে উঠলো……

— আমি তোমার স্বামী তোমার উপর আমার সসম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। তাহলে, কেনো এমন করছো?

জেমির জায়ানের হাতটা ছুটানোর চেষ্টা করতে করতে বললো……

—স্বামী! হাস্যকর! স্বামী শব্দ টা তোমার মুখে মানায় না জায়ান। খুব শিঘ্রই তোমার জীবন থেকে অনেক দূরে চলে যাব। আর সেদিন তুমি বুঝবে তুমি কতটা অন্যায় করেছো।

বলেই শরীরে সমস্ত জোর দিয়ে জায়ান কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বাইরে বেড়িয়ে গেলো জেমি। এখন আর ওর চোখের পানি জমে না। শুধু ভেতরে রাগ, ক্ষোভ আর ঘৃনা জন্ম হয়েছে। ভালোবাসাটা চাপা পড়ে যাচ্ছে এসবের আড়ালে। জায়ান চোখ মুখ শক্ত করে দাড়িয়ে আছে। ওর কানে জেমির বলে যাওয়া কথা গুলো ভাসচ্ছে। রাগে চোখ দুটো লাল হয়ে গেলো মুহূর্তে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে সজোরে দেয়ালে ঘুষি মে/রে বসলো। তারপর চিৎকার করে বলতে শুরু করলো…..

— আমাকে ঠকানোর শাস্তি যতদিন না তুমি পাচ্ছো ততদিন অব্দি আমার থেকে তোমাকে কেউ দূরে রাখতে পারবে না। কেউ না।

বলেই তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
____________________________________________

— আজকে কি রান্না বান্না কিছু হবে না। আমি কি না খেয়ে থাকব।

ইরা বেগম রান্না ঘরের দরজার এসে কথাটা বলতেই জেমি সাথে সাথে শান্ত কন্ঠে জবাব দিলো……

—আজ থেকে আমি আপনাদের জন্য কোনো রান্না করব না। আপনার যদি এতই ক্ষুদা লাগে নিজের টা নিজে বানিয়ে খাবেন।

জেমির এমন কথা শুনে ইরা বেগম সাপের মতো ফোস করে উঠলো রাগে। চোখ দুটো বড় বড় করে জেমির দিকে রাগী চাহনী নিক্ষেপ করে এক প্রকার চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..

— তোমার সাহস তো কম না মেয়ে তুমি আমার মুখের উপর এইকথা বলো। আজ জায়ান বাড়িতে আসুক তোমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে বলব।

ইরা বেগমের কথা শুনে জেমি একটু শব্দ করে হাসলো। তারপর ইরা বেগমের সামনে এসে দাড়িয়ে শান্ত ভঙ্গিতেই বললো..

— আপনার মতো শাশুড়ীর কাছ থেকে এই কথাই আশা করা যায়। আচ্ছা মা আপনার কি লজ্জা করে না। নিজের হাতে নিজের ছেলের সংসার ভাঙ্গতে চাচ্ছেন, সংসারে আগুন লাগাচ্ছেন, কেনো করছেন মা? আমাদের একটু শান্তিতে সংসার করতে দিচ্ছেন না কেনো মা? বাবা মা ছেড়ে আপনাদের ভরসায় আপনাদের কাছে এসেছিলাম তার পরির্বতে এমন পুরষ্কার পাবো আমি ভাবতেও পারিনি। আপনার ও একটা মেয়ে আছে ওর সাথে যদি আজ ওর শাশুড়ী এমন করতো আপনি কি সহ্য করতে পারতেন।

জেমি কথাটা বলতে দেরি ওর গালে থা/প্পড় পড়ত্ব দেরি হলো না। ইরা বেগম সজোরে জেমির গালে থাপ্পড় দিয়ে জেমির চুলের মুঠি ধরে বলতে লাগলো…..

—কত দিন বলেছি আমার মেয়ের সাথে তোমার তুলনা দিবে না। তোমার মতো যেসব নোংরা মেয়েরা স্বামী থাকতেও বাইরে নোংরামি করে বেড়ায় সে সব মেয়েরা স্বামী, সংসার পাওয়ার যোগ্য না। আজ জায়ান আসুক তোমার একদিন কি আমার একদিন দেখো?

বলেই জেমিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হনহন করে বেড়িয়ে গেলো রান্না ঘর থেকে। জেমি এখন কাঁদছে না, ওর ব্যাথা ও লাগছে না, ওর মনে হচ্ছে ও অনূভুতিহীন হয়ে গেছে। জেমি নিঃশব্দে রান্না ঘর ত্যাগ করলো। আজ ও কারোর জন্য রান্না করবে না। এতে যা হওয়ার হবে। ও প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছে আর কোনো অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করবে না।
জেমি শক্ত মুখ করে নিজের রুমে চলে আসলো।
____________________________________________
আজ জেমি সত্যি সত্যি রান্না করে নি। এদিকে ইরা বেগমের পেটে ক্ষুদায় পেটে ইঁদুর লাফাচ্ছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে এখনো পেটে কিছু পড়েনি সকালের চাটা অব্দি দেয়নি। কয়েকবার রান্না ঘরে গিয়ে ও ফিরে এসেছেন কারন রান্নার ঘরের কোনো কিছুই সে খুঁজে পায়না। জেমি কে জিজ্ঞেস করলে জেমি সটান জবাব দিয়েছে “জানিনা নিজে খুঁজে নেন” বিরক্ত হয়ে আর রান্না ঘরে ঢুকেন নি। বিছানায় সুয়ে ক্ষুদায় এপাশ ওপাশ করছে ইরা বেগম। এইবার আর থাকতে না পেরে বিছানায় উঠে বসে পড়ে পেটে হাত দিয়ে বলতে লাগলো…..

— এমন অস/ভ্য মেয়ে আমি জীবনে দেখিনি। আজ জায়ান আসুক আজকেই বাড়ি থেকে বিদায় করব এই মেয়েকে। কিন্তু এখন কি খাব আমি?

বলেই রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলো জেমি ডাইনিং টেবিলে আরাম করে বসে খাচ্ছে। জেমিকে খেতে দেখে ইরা বেগম রাগে ফেটে পড়ে চিৎকার দিয়ে বললেন……

—আমাকে না খাইয়ে রেখে এখানে তুমি আরাম করে বসে খাচ্ছো। তোমার লজ্জা করেনা। বাসায় একটা বয়স্ক লোক না খেয়ে আছে আর তুমি খাচ্ছো। বাবা মা আদব কায়দা শেখায় নাই কিছু। কি করে বড়দের সম্মান করতে হয় জানোনা?

জেমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলো….

— বয়স্ক। আর সম্মান। হাসালেন? সম্মান জিনিস টা আদায় করে নিতে হয়। আর আপনাকে সম্মান তো দূরের কথা। আপনার প্রতি আমার ঘৃনা হয়। মা বলতেও লজ্জা করে। মা শব্দটার মতো সম্মানের শব্দটা আপনার জন্য না।

ইরা বেগম রাগে জেমির মুখের সামনে থেকে খাবার টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে হনহন করে রুমে চলে গেলো। জেমিও কিছু বললো না।
____________________________________________
রাতে জায়ান বাসায় ফিরতেই ইরা বেগম কান্না করে ভাসালেন। জায়ানের কাছে সবটা বলে জেমিকে রুমের থেকে টানতে টানতে এনে জায়ানের সামনে ফেললো। জেমির মধ্যে আজ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখতে পারছেনা জায়ান। জেমি একবার ও জায়ানের দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছে। জায়ান জেমির চোখে স্পষ্ট ঘৃনা দেখতে পারছে। আজ জেমিকে শান্ত মনে হচ্ছে। জায়ান কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো…..

— বড়দের সম্মান দিতে শিখোনাই বোধহয়? বয়স্ক একটা মানুষ কে সারাদিন অভুক্ত রেখে নিজে খেয়েছো এটা কোন ধরনের অস/ভ্যতা।

জায়ানের প্রশ্নে জেমি উওর দিলো…..

—সম্মান শব্দটা তোমার মুখে মানায় না। মনে করো তোমার থেকেই শিখেছি এইসব। যে নিজের বউকে সম্মান দেয়না সেই লোকের মা কে আমি কেনো সম্মান দিবো?

জেমির কথা শুনে জায়ান ওর দিকে রাগী চাহনী নিক্ষেপ করলো। ইরা বেগম জেমির কথা শুনে জায়ান কে উদ্দেশ্য করে ন্যাকা কান্না কাঁদতে কাঁদতে বললো….

–দেখেছিস বাবা দেখেছিস। তোর মুখে মুখে ও কথা বলে। কি মেয়ে বিয়ে করে এনেছিস দেখেছিস?

জেমি কিছু না বলে ওদের সাইড কাটিয়ে চলে গেলো। জায়ান ও আজ কিছু না বলে নিঃশব্দে উঠে চলে গেলো নিজের রুমে। ইরা বেগম কেনো জানি শান্তি পেলেন না জায়ানের চুপ থাকায়।
____________________________________________
জায়ান ফ্রেশ হয়ে রুমে ঢুকতেই শুনতে পেলো জেমির ফোন টা বাজছে। জায়ান এগিয়ে গিয়ে ফোন হাতে নিতেই দেখলো আননোন নাম্বার। জায়ান ফোন টা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ ছেলে কন্ঠের থেকে বলে উঠলো…..

— কাল একবার দেখা করতে পারবে। তোমার সাথে আমার অনেক কথা জমে আছে?

জায়ানের এই মুহূর্তে কপালের রকটা ফুলে উঠেছে। ঠোঁট দুটো রাগে কাপছে। চোখ দুটো লাল বর্ন ধারন করেছে। জেমি রুমে ঢুকতেই জায়ান জেমি কে দেখেই রেগে গেলো। ফোন টা মেঝেতে এক আছাড়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলো। জেমি জায়ানের ভয়ংকর রুপ দেখে কিছুটা ভয় পেলো। হঠাৎ জায়ানের এতটা রেগে যাওয়ার কারন খুঁজে পেলো না ও। জায়ান ফোন টা ছুড়ে মে/রেই জেমির সামনে গিয়ে জেমিকে সজোরে একটা থাপ্পড় মা/রতেই জেমি ছিটকে ড্রেসিং টেবিলের উপরে পড়ে যেতেই ড্রেসিং টেবিলের কাচটা ভেঙে গেলো। আর সেখান থেকে এক টুকরো কাচ জেমির হাতে ঢুকে যেতেই জেমি চিৎকার করে উঠলো। জায়ান সেদিকে চোখ না দিয়েই পূর্নরায় জেমিকে সরিয়ে এনে দ্বিতীয় বার থাপ্পড় মা/রলো………

#চলবে

(আসসালামু আলাইকুম।আজ অনেক অগোছালো আমাকে ক্ষমা করবেন। একটু ধৈর্য ধরুন সব টা ঠিক হবে। জায়ান ওর শাস্তি পাবে।একটু ধৈর্য ধরুন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here