বিনি সুতোর টান পর্ব ৫

0
338

#বিনি_সুতোর_টান
#লেখিকা_জেনিফা_চৌধুরী(ছদ্মনাম)
#পর্ব_পাঁচ

পোড়া আর কেটে যাওয়ার যন্ত্রনায় জেমি কাতড়াচ্ছে। হাতের তালু দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। পর পর দুইটা থাপ্পড় খেয়ে মেঝেতে পড়ে ছটফট করছে ব্যাথায়। ওর সামনেই জায়ান রাগী চেহারা নিয়ে খাটের উপর বসে আছে। জেমি যন্ত্রনায় ছটফট করে কাঁদছে সেদিকে ওর কোনো হুশ নেই। ওর কানে বার বার ওই ছেলেটার কন্ঠস্বর ভাসচ্ছে। জেমি হাঁউমাঁউ করে কাঁদছে। জেমির চোখ গুলো বার বার বন্ধ হয়ে আসচ্ছে। দূর্বল শরীরে এতটা ব্যাথা কারোর পক্ষে সহ্য করা সম্ভব না। যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে জেমি জ্ঞান হারালো। জেমিকে শান্ত হতে দেখেই জায়ানের হুশ ফিরলো। ওর মনে হলো ওর দেহে প্রান ফিরে আসচ্ছে। এতক্ষণ ও কোন দুনিয়ার ছিলো ওর মক্নে নেই। জায়ান চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে দেখলো ঘরের সারা মেঝেতে রক্ত দিয়ে মাখা মাখি। জায়ান মুহূর্তেই জেমির কাছে দৌড়ে গিয়ে হাটু ভেঙে বসে জেমির মাথাটা কোলে নিয়ে দেখলো জেমির জ্ঞান নেই। জায়ানের চোখ টা জেমির হাতের দিকে যেতেই জায়ানের চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেলো। পুড়ে যাওয়া হাতের তালুতে কাচ ঢুকে আছে। সেখান থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছে। হাতটা দেখতে এই মুহূর্তে ভয়ংকর লাগছে। জায়ান দেখেই আতৎকে উঠলো। জায়ান জেমিকে কোলে তুলে খাটে নিয়ে সুইয়ে দিয়ে ডাক্তার কে ফোন দিলো। জেমির এই অবস্থা দেখে ওর নিজের উপর ভীষন রাগ উঠছে আবার ছেলেটার কথা মনে উঠতেই জেমির উপর রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। জেমি ওকে ঠকাচ্ছে ভাবতেই ওর রাগ বেড়েই চলছে। ডাক্তার আসার আগেই জায়ান রুমটা তড়িঘড়ি করে পরিষ্কার করে নিলো।ডাক্তার এসে জেমির হাতটা ব্যান্ডেজ করে দিয়ে ওষুধ দিয়ে গেলো। জায়ান জেমির পাশের বসে আর হাতটা আকড়ে ধরে বলতে লাগলো…..

–তুমি আমাকে কেনো ঠকাচ্ছো? তুমি নিজেও জানোনা তোমার সাথে ঠিক কি কি হবে? এর থেকেও ভয়ংকর শাস্তি হবে তোমার? ভয়ংকর।

বলেই রাগে হনহন করে বেড়িয়ে গেলো।
____________________________________________
জেমির জ্ঞান ফিরতেই মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলো। সারা শরীর ব্যাথায় জর্জরিত হয়ে আছে। চোখ খুলে চারদিকে তাকাতেই নিজেকে খাটের উপর আবিষ্কার করলো। জায়ানের আঘাতের কথা আর হাতের যন্ত্রনার কথা মনে পড়তেই জেমি লাফিয়ে উঠে বসে পড়লো। হাতের দিকে নজর দিতেই দেখলো হাতটা ব্যান্ডেজ করা। জেমির৷ মুখ দিয়ে ওর নিজের অজান্তেই বেড়িয়ে এলো….

–ব্যান্ডেজ! কে করলো? আর আমি এখানেই বা কি করে এলাম? মনে পড়ছে না কেনো আমার?

বলেই মাথাটা চেপে ধরলো। মাথাটা প্রচন্ড ভারী মনে হচ্ছে ওর। চারদিকে চোখ বুলিয়েও জায়ান কে কোথাও দেখতে পেলো না। বাড়িটা নিস্তব্ধ লাগছে ওর। ইরা বেগম কি বাড়ি নেই? জেমি ঘড়ির দিকে নজর দিতেই দেখলো সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা বাজে। কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে করতেই জেমি আতৎ কে উঠলো ভয়ে। জায়ানের পশুর মতো আচরণ জায়ানের প্রতি ঘৃনা ওর বেড়েই যাচ্ছে। হঠাৎ করেই কলিং বেলের আওয়াজ কানে আসতেই জেমি দূর্বল শরীর নিয়েই এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। দরজা খুলতেই একটা অপরিচিত মেয়েকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অনেক টা অবাক চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে জেমি। মেয়েটা জেমিকে দেখেই একটু মুচকি হেসে এসে জেমিকে হুট করে জড়িয়ে ধরতেই জেমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। জেমি কে জড়িয়ে ধরেই মেয়েটা হাসোজ্জল মুখে বলে উঠলো……

— হেই ভাবিপু কেমন আছো?

জেমি কি বলবে খুঁজে না পেয়ে সোজা প্রশ্ন করে বসলো…..

— তোমাকে ঠিক চিনতে পারলাম না। কে তুমি?

মেয়েটা একটু হেসে জবাব দিলো…..

— আমি মায়া। সম্পর্কে তোমার ননদ। জায়ানের খালাতো বোন।অবশ্য আমাকে চেনার কথাও না। তোমাদের বিয়েতে আমি আসতে পারিনি। আজেই বাংলাদেশে ব্যাক করেছি। আর এসেই সোজা তোমার সাথে দেখা করার জন্য চলে এসেছি।

মায়ার জবাবে জেমি সৌজন্যতার খাতিরে একটু হাসার চেষ্টা করলো। কেনো যেনো মেয়েটা কে ওর ভালো লাগছে না। দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা রহস্য আছে ওর মধ্যে। হঠাৎ করেই ইরা বেগম মেয়েটার পেছন থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলো…..

—সরো দেখি তাড়াতাড়ি। এত বড়টা সুটেকস কি টাইনা আনা যায়। আবার কত কষ্ট কইরা সিড়ি দিয়ে উঠাইলাম। আমার দম বের হইয়া যাইতাছে। সরো আমারে ভেতরে ঢুকতে দাও।

ইরা বেগমের কথা শুনে মায়া নিজে নিজেই ফিসফিসিয়ে বললো…

–এতো কিছুই না তোমার কপালে আরো দুঃখ আছ খালামনি।

মায়া বিরবির করে কিছু বলতেই জেমি অবাক চোখে একবার মায়ার দিকে তাকালো। দেখলো মায়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছে। জেমি একবার ইরা বেগমের তাকিয়ে দেখলো সত্যি অনেক বড় একটা লাকেজ হাতে। জেমি বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করে উঠলো…….

— এত বড় একটা লাকেজ নিয়ে আপনি কি করছেন?

জেমির প্রশ্ন শুনে ইরা বেগম তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলে উঠলো…

— সেই কৈফিয়ত কি আমি তোমারে দিমু। সরো সামনের থেকে।

বলেই জেমিকে সাইড কাটিয়ে ভেতরে চলে গেলো। মায়া জেমির হাতটা ধরতেই জেমি আহঃ করে উঠলো। মায়া একটু ভ্রু কুচকে জেমির হাতের দিকে নজর দিতেই দেখলো জেমির হাতটা ব্যান্ডেজ করা। মায়া মনে মনে একটা পৈশাচিক হাসি দিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো…..

— তোমাকে খুব দ্রুত আমার আর জায়ানের জীবন থেকে আউট করব মাই ডিয়ার ভাইপু।

বলেই একটু হাসলো। মেয়েটাকে আনমনে হাসতে দেখে জেমির কেনো যেনো সন্দেহ হলো। মায়া কিছু না বলে ভেতরে ঢুকে গেলো। জেমির ও কেনো যেনো ইচ্ছে হলো না তাই নিঃশব্দে ভেতরে চলে গেলো। কেনো যেনো ওর মনে হচ্ছে আবার কোনো নতুন ঝড় আসবে। সে ঝড়ের নাম কি হবে?
____________________________________________
ঘড়ির কাটা ১১ টা ছুঁই ছুঁই জেমি আনমনে বেলকনিতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওর জীবন টা কিভাবে এলোমেলো হয়ে গেলো সেটা ভাবছে। আজকে সন্ধ্যা থেকে কয়েক বার মায়া ওর রুমে এসে নিজে নিজেই বকবক করে চলে গেছে। জেমির কেনো যেনো এই মেয়েটাকে সন্দেহ হচ্ছে। আবার সাথে অবাক ও হয়েছে একটা বয়স্ক মহিলা কে দিয়ে ওত বড় একটা লাকেজ এতটা রাস্তা আনলো। জায়ান এখনো বাসায় ফিরে নি। জেমি এইসবেই ভাবছিলো আর হঠাৎ করেই পেছন থেকে কেউ একটা হাত ওর কাঁধে রাখতেই জেমি হকচকিয়ে উঠে পেছনে ফিরতেই জায়ান কে দেখতে পেলো। জায়ান কে দেখেই জেমি পেছনে পিছিয়ে গিয়ে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো…..

–খবরদার কালকের মতো আজক আমার কাছে আসার চেষ্টা করো না। তাহলে, আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।

জায়ান জেমির কথা শুনে শান্ত কন্ঠেই জেমির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,,,,,

— আমি তোমাকে টার্চ করলে তোমার ঘৃনা লাগে তাইনা। অন্য একজন টার্চ করলে বুঝি খুব ভালো লাগে?

জায়ানের কথা শুনেই জেমির শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রতঙ্গ জ্বলে উঠলো রাগে। জায়ান জেমির সামলে গিয়ে জেমির গালে হাত দেওয়ার আগেই জেমি জায়ান কে ধাক্কা মেরে দূরে ফেলে দিলো। জায়ান কে ধাক্কা দিয়েই জেমি রুমে এসে পড়লো। একটা বালিশ নিয়ে রুমের বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই জায়ান পেছন থেকে এসে জেমির চুলের মুঠি খাবলে ধরলো। জেমি ব্যাথায় আহঃ করে উঠলো। জায়ান জেমিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে রাগী কন্ঠে বললো……

— তোমার শরীরের উপর আমার অধিকার। প্রতি রাতে তোমাকে ভোগ করার অধিকার আছে আমার।

জায়ানের কথা শুনে জেমি নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজেকে জায়ানের কাছ থেকে ছাড়িয়ে পায়ের জুতো খুলে সোজা জায়ানের গালে জুতোর বাড়ি বসিয়ে দিলো। জেমির এহেতুক কান্ডে জায়ান সাথে সাথে জেমির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। জায়ান জেমিকে কিছু বলার জন্য এগিয়ে যেতেই জেমি জায়ানের হাতটা মুচড়ে ধরে রাগী স্বরে বলে উঠলো…..

—নারীকে ভোগ পন্য হিসেবে দেখো তাইনা। তোমার মতো জঘন্য মানসিকতার মানুষ আমি আমার জীবনে দুটো দেখিনি। কি ভেবেছিলে, আমাকে যেমন খুশি তেমন ভাবে পশুর মতো অত্যাচার করবে আর আমি সবটা মুখ বুঝে মেন নিব। আজ একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো,

“নারী সস্তা না,যে নারী অল্প আঘাতে কান্না করে ভাসিয়ে দিতে পারে, সে নারী হাজার আঘাতেও কাঠের ন্যায় শক্ত হয়ে ঠাঁই দাড়িয়ে থাকতে পারে, যে নারী পরিস্থিতি বুঝে অনেক অত্যাচার মুখে বুঝে মেনে নেয়, সেই নারীর যখন সব সহ্য করতে করতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন সে ভয়ংকর রুপ ধারন করতে পারে। তাই নারীকে সস্তা মনে করো না।”

আজ থেকে প্রত্যেক টা অন্যায়ের শাস্তি আমি তোমাকে গুনে গুনে দিব। মানিনা তোমাকে স্বামী হিসেবে, তাই আমার অথবা আমার শরীরের উপর কোনো অধিকার তোমার নেই। মাইন্ড ইট।

বলেই জায়ান কে ধাক্কা মেরে ফেলে জেমি রুম ত্যাগ করলো।

#চলবে

(আসসালামু আলাইকুম। আজ থেকে আস্তে আস্তে সবটা ক্লিয়ার হবে। আবার একটু রহস্য ও থাকবে। একটু ধৈর্য ধরতে হবে। জেমির প্রতিবাদী লুক টা কেমন লাগলো জানাবেন? আজ থেকে অন্য রকম জেমিকে দেখবেন সবাই)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here