#অ্যাসিড
নাফীছাহ ইফফাত
পর্ব ৫
নির্ভীক হোসাইনুল আলমকে কড়া কিছু কথা শোনানোর জন্য প্রস্তুত হয়। দাঁতে দাঁত চেপে, হাত মুষ্টিবদ্ধ করে শান্তস্বরে বলে,
‘আমার লাইফের ডিসিশন নিজে নেয়ার মতো যথেষ্ট বয়স হয়েছে আমার। এখনও কেন আপনাকে আমার সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হবে?’
হোসাইনুল আলম হতভম্ব হয়ে পড়েন নির্ভীকের কথায়। ওর এত সাহস হলো কবে? তিনি রক্তবর্ণ চোখে বলেন,
‘কি বললে তুমি? তোমার…’
হোসাইনুল আলমকে হাতের ইশারায় থামিয়ে নির্ভীক বলে,
‘আপনি নিজের পছন্দমতো নিজের ক্যারিয়ার গড়েছেন। আপনার ইচ্ছে ছিলো রাজনীতি করার, কিন্তু দাদু ভাইয়ের ইচ্ছে ছিলো আপনাকে ডাক্তার বানানোর। আপনি পড়েছেন? সে-ই তো নিজের ইচ্ছেয় রাজনীতি করলেন।’
হোসাইনুল আলম তুমুল রেগে বললেন,
‘কি বললে তুমি? ডাক্তারি পড়ার কোনো ইচ্ছে আমার ছিলো না। ওটা বাবার পেশা বলে বাবা আমাকেও পড়তে বলেছিলেন।’
নির্ভীক হোসাইনুল আলমের কথাটা ধরলো। ও যেন এই কথাটা শোনার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। সুযোগ বুঝে কোপ দিলো নির্ভীক।
“এক্সেক্টলি! এটাই আপনাকে বোঝাতে পারছিলাম না। আপনার বাবা ডাক্তার বলে তিনি আপনাকে ডাক্তার বানাতে চাইলেন। কিন্তু আপনার পছন্দ রাজনীতি। তাই আপনি বাবার কথা না মেনে রাজনীতি করে গেছেন আজীবন। আর আজকে আপনার পছন্দের পেশা চাপাতে চাইছেন আমার ওপর। আমাকে রাজনীতিতে নিতে চাইছেন। আপনিও ঠিক দাদুর মতো কাজই করছেন এবং আমিও ঠিক আপনার মতো বাবার কথা না শুনে ফটোগ্রাফিই করবো। কেউ আমাকে সরাতে পারবে না।”
এটুকু বলে নির্ভীক হোসাইনুল আলমের হাত থেকে শান্ত ভঙ্গিতে ক্যামেরাটা নিয়ে নিলো। হোসাইনুল আলম বিস্ফোরিত চোখে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে রইলেন। নির্ভীক চলে যাওয়ার জন্য সিঁড়ির দিকে পা বাড়ায়। আবার ফিরে তাকিয়ে বলে,
‘মি. হোসাইনুল আলম, হয়তো এই ফর্মূলা একদিন আমিও আমার ছেলের ওপর প্রয়োগ করবো। তাকে জোর করে ফটোগ্রাফার বানানোর চেষ্টা করবো। আর সে আমার বিরোধিতা করবে। হয়তো বংশপরম্পরায় এই নিয়ম চলমান থাকবে।’
হোসাইনুল আলম পাশে থাকা বড় ফুলদানিটাতে জোরে লাথি মারলেন। ভয়ানক জোরালো শব্দে সেটা ভেঙ্গে খানখান হয়ে সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। সিঁড়ির রেলিংয়ের রিংয়ে হাত রেখে ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস ছাড়েন হোসাইনুল আলম। হোসাইনুল আলমের ছাড়া কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসগুলো মুহুর্তেই পরিবেশটাকে বিষাক্ত করে তুললো। কিছু ভাঙ্গার শব্দ পেয়ে পড়িমরি করে সবাই ড্রইংরুমে ছুটে আসে।
নির্ভীক সিঁড়িতে দাঁড়িয়েই মুচকি হেসে বলে,
‘এটাই আপনার আর আমার মধ্যে তফাৎ। আপনি সামান্য কারণেই তুমুল রেগে যান। অথচ আমি সকল পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারি। আমি আপনার মতো নিজের ছেলের ওপর নিজের পছন্দের পেশা চাপিয়ে দিবো না। ছেলের সাথে বন্ধুর মতো মিশে আগে তার মনের কথা জানার চেষ্টা করবো।’
হোসাইনুল আলমের চোখ ভয়াবহ লাল হয়ে গেছে। তাঁর ইচ্ছে করছে নির্ভীককে কষে একটা চড় লাগাতে। কিন্তু সেটা তিনি করতে পারছেন না। কারণ নির্ভীকের প্রত্যেকটা কথায় যুক্তি আছে। তিনি হুংকার ছেড়ে বললেন,
‘তোমার সাহস খুব বেড়ে গেছে। নিজের বাবার সামনে দাঁড়িয়ে ফিউচার ছেলের কথা বলছো। লজ্জা করে না তোমার?’
নির্ভীক কিছু বলার আগেই মিসেস শায়লা এসে ওর হাত চেপে ধরে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে বলেন,
‘তুমি আর একটা কথা বলবে না নির্ভীক। এক্ষুনি নিজের রুমে যাও।’
নির্ভীক কথা না বাড়িয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে চলে গেল। যেতে যেতে একবার বাবার দিকে ফিরে তাকালো। এরপর নিজের মতো উঠে চলে গেল।
সন্ধ্যার পর আরিশা পড়তে বসে। সামনে বই খোলা অথচ মন পড়ে আছে নির্ভীকের কাছে। আরিশা ভেবে পায় না, ক্ষনিকের দেখা পাওয়া সেই ছেলেটার কথা ওর কেন বারবার মনে পড়ছে।
রাফসান এসে বসে আরিশার পাশে। ভালোভাবে খেয়াল করে আরিশাকে। অন্যমনস্ক হয়ে থাকতে দেখে চোখের সামনে তুড়ি বাজায়। আরিশা চমকে উঠে বলে,
‘ওহ চাচ্চু তুমি?’
‘কি ব্যাপার? অন্যমনস্ক লাগছে?’
‘কিছু না।’
‘কিছু তো একটা আছেই। আচ্ছা, আজকে নাকি তুই ভাত রাঁধতে ভুলে গিয়েছিস?’
আরিশা কেমন যেন লজ্জা পেয়ে যায়। লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বলে,
‘কেন এরকমটা হলো বুঝলাম না। ভাত রাঁধতে কেউ ভুলে যায়? আব্বু আর সেঝ চাচ্চুর সামনে কেমন লজ্জায় পড়ে গেলাম।’
‘হয় হয় এরকম হয়।’ সবজান্তার মতো বলে রাফসান।
‘মানে?’
‘শোন তোকে একটা গল্প বলি।’
‘কিসের গল্প?’ উৎসুক হয়ে জানতে চায় আরিশা।
‘তোর মায়ের।’
আরিশা খানিক দমে যায়। এ-বাড়িতে কেউ ওকে মায়ের গল্প শোনায় না। মাঝেমধ্যে রাফসান শোনায়। কিন্তু সেটা যদি আশফাক আহমেদ জানতে পারে তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যায়। আশফাক আহমেদ এমনিতেই খুব শান্ত প্রকৃতির। কারো সাতেপাঁচে থাকেন না তিনি। তার জীবনের সবটা জুড়ে আছে আরিশা এবং তার ভাইয়েরা। আরিশার কষ্ট তিনি কোনোভাবেই সহ্য করতে পারেন না। মায়ের গল্প শুনলেই আরিশার মন খারাপ হয়। সারাক্ষণ কেমন মুখ গোমড়া করে, উদাস হয়ে ঘুরে বেড়ায়। তখন আশফাক আহমেদের খুব রাগ হয়। তিনি আরিশার বিষাদময় চেহারাটা দেখতে পারেন না, সইতে পারেন না। তিনি রেগে খানিক কথা শুনিয়ে দেন রাফসানকে। এরপর আরিশাকে আদর করে ওর মন খারাপটা দূর করেন। কিন্তু আরিশার মন খারাপ দূর হতেই সেটা ওনার ওপর এসে ভর করে। সারাদিন তাঁর স্ত্রী হুরায়রাকে মনে পড়ে। যন্ত্রণায় সারারাত ছটফট করেন, ঘুমাতে পারেন না বেশ কয়েক রাত। চোখ বুজলেই চোখের সামনে হুরায়রার বিভৎস চেহারাটা ভেসে উঠে। তখন তিনি হাউমাউ করে ছোট বাচ্চার মতো কাঁদেন। আরিশার পাশে বসে সারারাত চোখের জল ফেলেন। অন্যপাশে ফিরে আরিশাও তখন চোখের নোনা পানিতে বালিশ ভেজায়।
‘আরিশা? কি হলো? শুনবি না?’ আরিশাকে চুপ থাকতে দেখে ডাকে রাফসান।
‘হ্যাঁ বলো শুনবো তো।’
‘তোর মা-ও না বিয়ে করে এখানে আসার পর প্রায়সময় ভাত রাঁধতে ভুলে যেত। সে তখন ভালো রাঁধতে পারতো না। অনেক বড়লোকের মেয়ে ছিলো ভাবী। মস্ত বড় ডাক্তারের মেয়ে। শহরের মস্ত ভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছে। সে কি আর রাঁধতে জানে?’ আরিশার ভাজ করা বইয়ের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে রাফসান।
‘তারপর?’ টেবিলে রাখা রাফসানের হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে আরিশা।
‘প্রথম প্রথম এই বাড়িতে তার খুব অসুবিধে হতো। ছোটবেলা থেকে যে মেয়ে সোনার চামচ মুখে দিয়ে বড় হয়েছে সে আমাদের মতো ভাঙ্গাচোরা বাড়িতে কিভাবে থাকবে? তবে ধীরে ধীরে সব মানিয়ে নেয় ভাবী। বড়ভাইকে অনেক বেশি ভালোবাসতো ভাবী। শুধুমাত্র বড়ভাইয়ের জন্য এরকম বাড়িতে থাকতেও আপত্তি করেনি কোনোদিন।’
‘আব্বু-আম্মু কি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো চাচ্চু?’
‘না। ওরা বিয়ের আগে কেউ কাউকে কোনদিন দেখেনি। বড়ভাই তো ভাবীকে দেখেছে বিয়ের পর। না দেখেই শুধুমাত্র তোর দাদার কথায় বিয়ে করে নিয়েছিলো।’
‘দাদা কিভাবে আম্মুর খোঁজ পেয়েছিলো?’
‘আব্বা তো প্রায়ই শহরে যেত। একবার আব্বার হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। তাই সেঝভাইকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে শহরে যায় আব্বা। ওখানে আলাপ হয় ভাবীর আব্বার সাথে। ভাবীর আব্বা মানে তোর নানাভাই আমার আব্বার চিকিৎসা করে। তোর নানাভাই ছিলো খুবই সুন্দর মনের মানুষ। তিনি খুব সুন্দর ভাষায় কথা বলতেন। আব্বা তার কথায় মুগ্ধ হয়ে বলে বসেন, ওনার মেয়েকে তিনি ঘরের বউ করতে চান।’ এটুকু বলে থামে রাফসান।
‘নানাভাই কি মারা গেছে?’ আকষ্মিক প্রশ্ন করে আরিশা।
‘আমি জানি না। ভাবী মারা যাওয়ার পর ওনাদের সাথে আর কোনো সম্পর্ক নেই আমাদের। ভাবীর আব্বা যোগাযোগ রাখতে চাইলেও ভাবীর ভাই সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন করে চলে যায়। তার ধারণা, ভাবীর মৃত্যুর জন্য আমরা দায়ী।’ বিমর্ষ কন্ঠে জবাব দেয় রাফসান।
আরিশা আকষ্মিক বোবা বনে যায়। শূন্য দৃষ্টিতে ছাদের কালো ঝুলের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাফসান বহুবার ডেকেও সাড়া পেলো না আরিশার। রাফসান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
‘আরিশা, মুখ গোমড়া করে থাকিস না। বড়ভাই জানলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। ও আরিশা সোনা মেয়ে আমার। একটু স্বাভাবিক থাক। মুখ গোমড়া করে থাকিস না। আরিশা!’
আরিশার চোখ বেয়ে নোনাজলের ধারা নামে। ও শান্তভঙ্গিতে চোখ মুছে রান্নাঘরে যায়। রাতের খাবার তৈরী করতে হবে।
ডিনারের জন্য ডাইনিংয়ে এসে নির্ভীক হোসাইনুল আলমকে দেখতে পেলো না। বাকিরা খেতে বসেছে ঠিকই কিন্তু সবার মুখ গোমড়া। নির্ভীক দ্বিধান্বিত কন্ঠে জানতে চাইলো,
‘কিছু হয়েছে? এনিথিং রং?’
‘বাবার সাথে এত বাজে ব্যবহার করা তোমার উচিত হয়নি নির্ভীক!’ গম্ভীর মুখে বলেন মিসেস শায়লা।
‘বাবা খেতে আসেনি? ওয়েট আমি ডেকে নিয়ে আসছি।’
নির্ভীক হোসাইনুল আলমের রুমে গেল। হোসাইনুল আলম আধশোয়া হয়ে বসে আছেন। নির্ভীক গিয়ে ওনার পাশে বসে মৃদুস্বরে ডাকে,
‘ড্যাড!’
হোসাইনুল আলম চোখ খুলে তাকান। নির্ভীকের দিকে একঝলক তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেন।
নির্ভীক শান্তস্বরে বলে,
‘তোমাকে অনেক রেসপেক্ট করি ড্যাড। তুমি কষ্ট পাবে বলে কখনো তোমার মুখের উপর কথা বলিনি। আজও বলতাম না, যদি না তুমি ক্যামেরাটা ছিনিয়ে নিতে। ওটা আমার ড্রিম ড্যাড, আমার সবকিছু।’
‘তোমার কথা বলা শেষ হলে আসতে পারো।’ আবার চোখ বুজে ফেলেন হোসাইনুল আলম।
‘ডিনার করবে না?’
‘না, তোমাকে যেতে বললাম তো।’
‘তুমি ডিনারে যাওনি বলে কেউ খাচ্ছে না। সবাই তোমার অপেক্ষায় বসে আছে।’
হোসাইনুল আলম আকস্মিক রেগে গেলেন। বললেন,
‘ওহ এটাই তাহলে কারণ। সবাইকে খাওয়ানোর জন্য তুমি আমাকে ডাকতে এসেছো। নিজের ইচ্ছেয় আসোনি৷ আমি কিনা এতক্ষণ কতকিছু ভাবছিলাম।’
‘বাবা, অন্যদেরকে খাওয়ানোর জন্য তোমাকে ডাকতে আসিনি। তুমি খেতে যাওনি বলে ডাকতে এসেছি। এ্যনিওয়ে, তোমার ইচ্ছে না হলে যেতে হবে না। আমিও খাবো না, বাকীরাও খাবে বলে মনে হয় না। তোমার একজনের জন্য পুরো বাড়ির সবাই উপোস থাক। এতে কোনো সমস্যা নেই। শুধু তোমার জেদ বজায় থাকলেই হলো।’ বলে নির্ভীক উঠে চলে গেল।
ডাইনিংয়ে গিয়ে বললো,
‘বাবা না আসলে তো তোমরা কেউ খাবে না। তাহলে খাবারগুলো টেবিলে রাখার কি প্রয়োজন আছে? নিয়ে যাও সব।’
নির্ভীক নিজেই টেবিল থেকে রান্নাাঘরে নিতে থাকে খাবারগুলো। কেউ ওকে কিছুই বলে না। যে যার মতো উঠে চলে যায়। নির্ভীক দাঁড়িয়ে সবার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। ও কি অনেক বেশি ভুল করে ফেলেছে? যার জন্য সবাই ওর ওপর রেগে গেল? একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের রুমে চলে যায় নির্ভীক।
রাতে খেতে বসার পর আরিশার থমথমে চেহারা দেখে থমকে যান আশফাক আহমেদ। বুকের ভেতর হু হু করে ওঠে। তিনি কটমট করে রাফসানের দিকে তাকান। রাফসান প্লেটে ভাত নাড়াচাড়া করছে। কারো দিকে তাকাচ্ছে না। আশফাক আহমেদ কোমল গলায় আরিশাকে ডাকেন।
‘আরিশা, খাচ্ছিস না যে?’
আরিশা মুচকি হেসে বলে,
‘এই তো খাচ্ছি।’
আরিশার হাসি দেখে আশফাক আহমেদ বড়সড় একটা ধাক্কা খান। আরিশার চোখেমুখে বিষন্নতার ছাপ। চোখে পানি টলমল করছে। চোখের পানি লুকোতে আরিশা দ্রুত রান্নাঘরে চলে গেল।
আরিশা যেতেই আশফাক আহমেদ রাফসানের উদ্দেশ্যে কড়া গলায় বললেন,
‘তুই আবার ওকে ওর মায়ের কথা বলেছিস?’
রাফসান মাথা নিচু করে রাখে। আশফাক আহমেদ হুংকার ছাড়েন,
‘কেন বলেছিস? কতবার বলেছি, ওকে এসব কথা বলবি না। তাও তুই বললি?’
‘হঠাৎ মনে পড়ে গেল। ভাবীও নতুন বিয়ে করে আসার পর ভাত রাঁধতে ভুলে যেত। তাই…’
‘তাই বলে ওকে বলতে হবে সেসব? জানিস না ওর কষ্ট হয়?’ আরমান বলে।
‘ও-ই তো শুনতে চাইলো।’ কাঁচুমাচু করে জবাব দেয় রাফসান।
‘শুনতে চাইলেই বলতে হবে? তুই বলতে চাস বলে ও শুনতে চায়। কই আমাদের কাছে তো শুনতে চায় না।’ আশফাক আহমেদ বলেন।
‘ও যা চায় তাই করতে মন চায় আমার। তাই না বলে থাকতে পারিনি।’ সোজাসাপটা জবাব রাফসানের।
আশফাক আহমেদ আর কথা না বাড়িয়ে চলে যান। আরমান টেবিল থেকে খাবার-দাবারগুলো রান্নাঘরে নিয়ে যায়। কারোই খাওয়াটা হলো না আজ।
নির্ভীক রুমে এসে শুয়ে পড়ে। শুয়ে শুয়ে নিউজফিড স্ক্রল করতে থাকে। হঠাৎ কি মনে করে ফেসবুকে “আরিশা” লিখে সার্চ দেয়। গাদা গাদা আইডি চলে আসে। প্রিন্সেস আরিশা, অ্যাঞ্জেল আরিশা, বাটারফ্লাই আরিশাসহ আর অনেকগুলো আইডি। নির্ভীকের মুড অফ হয়ে যায়। ও ফেসবুক থেকে বেরিয়ে মোবাইল রেখে দেয়। সিলিংয়ের দিকে অপলক তাকিয়ে থেকে আরিশার কথা ভাবে আনমনে। অংক মেলানোর চেষ্টা করে ও।
আরিশার তো ফোন নেই বললো, ওর ফেসবুক আইডি কোথা থেকে আসবে? তাছাড়া জঙ্গলে তো নেটওয়ার্কই নেই। তাহলে কি আরিশার সাথে যোগাযোগ করা কোনোভাবেই সম্ভব না? কিন্তু নির্ভীকের মন যে আরিশাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে।
নির্ভীক ড্রেসিং টেবিল থেকে ক্যামেরা নিয়ে, ক্যামেরায় চোখ রাখে। একটার পর একটা ছবি দেখে যায়। অনেকক্ষণ দেখার পর সাদা বাড়িটা দেখতে পায় ও। এরপরই আরিশার ছবিটা চোখের সামনে আসে। কাঁধে বানর নিয়ে অপূর্ব সুন্দরী মেয়েটা। একবার চোখে পড়লে চোখ ধাঁধিয়ে যায় এমন সুন্দর।
নির্ভীক ক্যামেরা থেকে ছবিগুলো ল্যাপটপে ট্রান্সফার করে। ক্যামেরা পাশে রেখে পেটের ওপর ল্যাপটপটা নিয়ে শুয়ে পড়ে ও। জুম করে খতিয়ে খতিয়ে দেখে আরিশাকে। কিছুক্ষণ চুল দেখে তো কিছুক্ষণ পা। আবার কিছুক্ষণ চোখজোড়া দেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। পিসির স্ক্রিনে আরিশার চোখে চোখ রাখতেই নির্ভীক কেমন দিশেহারা হয়ে পড়ে। অস্থির হয়ে ওঠে ও। অবাধ্য মন বারবার চায় আরিশাকে সামনে থেকে দেখতে। নির্ভীক তৎক্ষনাৎ সিদ্ধান্ত নেয় ও আবার আরিশার কাছে যাবে। তার আগে আরেকটা কাজ বাকি। নির্ভীক তাড়াহুড়ো করে আরিশার ছবিটা নিয়ে বসে যায় এডিট করবে বলে। যদিও আরিশার ছবিটা তেমন এডিট করার প্রয়োজন পড়লো না। ও তো এমনিতেই অপূর্ব সুন্দরী।
ছবি এডিট করতে করতে নির্ভীকের ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফোটে। তখনো নির্ভীক জানে না ও আরিশার জীবনে কি ভয়াবহ বিপদ টেনে আনছে।
#Be_Continued_In_Sha_Allah ?