#অবহেলায়_ভালোবাসা
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ১২
মেয়েটা মেঘাকে বলল, তুমি রিয়ানের সম্পর্কে ভালোভাবে জানো তো?
– রিয়ান খুবই ভালো একটা ছেলে। আর ও আমাকে অনেক ভালোবাসে।
– আমিও একসময় এটাই ভাবতাম। পরে বুঝতে পারি সবকিছু কিন্তু তখন অনেক দেঁড়ি হয়ে গেছিলো। কারন আমি সবকিছু হারিয়ে ছিলাম। আমি চাইনা আমার মত আর কোন মেয়ের সাথে এমন হউক
– তোমার কথা আমি কিছুই বুঝতেছি না। তুমি আসলে কি বলতে চাইছো? তুমি রিয়ানকে কিভাবে চিনো?
– একটা সময় আমি রিয়ানের গার্লফ্রেন্ড ছিলাম। পরে রিয়ানের আসল রুপ দেখতে পাই। আমিও প্রথমে ভেবেছিলাম রিয়ান অনেক ভালো একটা ছেলে ও আমাকে অনেক ভালোবাসে। ও আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার সাথে শারিরীক সম্পর্ক করে
তারপর রিয়ান পরিরর্তন হতে শুরু করে। আমার সাথে ঠিকভাবে কথা বলতো না। একটু কিছু হলেই খারাপ ব্যবহার করতো। আমি কল দিলে রিসিভ করতো না। ওর এমন ব্যবহারে আমি অনেক কষ্ট পাচ্ছিলাম
ওকে বললে ও বলে আমি সবসময় বিজি থাকি তারমানে এই নয় যে আমি তোমাকে ভালোবাসি না। আমি ওকে অনেক ভালোবাসতাম তাই ওর সব কথা বিশ্বাস করতাম।
হঠাৎ একদিন আমি ওকে বিয়ের কথা বলি তখন ওর আসল রুপটা জানতে পারে। ও আসলে আমাকে কখনও ভালোইবাসেনি। ও আমার সাথে শারিরীক সম্পর্ক করার জন্য আমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেছে
ও আমাকে বলে, তোর মত মেয়েকে বিয়ে করার কোন প্রশ্নই আসেনা যে বিয়ের আগেই শারিরীক সম্পর্ক করে। না জানি আরও কত ছেলের সাথে এসব করেছিস। তোকে আমি কখনও ভালোবাসিনি। আর কখনও আমার সামনে আসবি না। আর কাউকে কিছু বললে, তোর ভিডিও ভাইরাল করে দিবো
আমি অনেক কান্না করছিলাম কিন্তু ওর কাছে আমার চোখের পানির কোন মূল্য ছিলোনা। পরে জানতে পারি ও অনেক মেয়ের সাথেই এমন করেছে। আমি আত্নহত্যারও চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পারিনি। আমি রিয়ানকে শাস্তি পেতে দেখতে চেয়েছিলাম
আমি কাউকে কিছু বলতে পারছিলাম না কারন ওর কাছে আমার ভিডিও আছে। আমি অনেক ডিপ্রেশনে ছিলাম। পরে আমি আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে রবি ভাইয়ের কথা জানতে পারি
তারপর একদিন আমি তোমাদের কলেজে আসি তখন রিয়ানের বন্ধুরা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে আর তখন রবি ভাইয়া এসে আমাকে সাহায্য করে। সে রিয়ানের বন্ধুদের কলেজে সবার সামনে মারে। তারপর রিয়ানের কাছ থেকে আমার ভিডিওটা উদ্ধার করে আর ওকে বলে, আর কখনও যদি ওর কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করিস তাহলে তোকে আমি মেরে ফেলবো। তারপর আমি অন্য শহরে চলে যাই। কিছুদিন হলো এসেছি
রবি ভাইয়া না থাকলে যে আমার কি হতো। তিনি আমার ভাইয়ের মত। শুধু আমার না। তিনি অনেক মেয়েকেই রিয়ানের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন
মেঘার এখন মনে পড়তেছে, ওইদিন রবি ছেলেগুলোকে মারছিলো আর মেঘা তা দেখছিলো। ছেলেগুলো রবির কাছে না মারার জন্য অনুরোধ করছিলো কিন্তু রবি শুনেনি। মেঘা রবিকে ওইদিন এরকম করতে দেখে ভয় পেয়ে যায়। গুন্ডা মনে হয় রবিকে। তারপর থেকেই ও রবিকে ঘৃনা করে।
মেঘা মেয়েটাকে বলল, আমি আপনার কথা কেনো বিশ্বাস করবো? আপনাকে তো রবিও এসব বলার জন্য পাঠাতে পারে। আমি রবিকে বিশ্বাস করিনা। ও আমার ভালোবাসার জন্য সবকিছু করতে পারে। তাই হয়তো আপনাকে আমার কাছে পাঠিয়েছে যাতে আমি রিয়ানের সাথে ব্রেকআপ করি
– একটা মেয়ে নিজের সম্মান নিয়ে কখনই মিথ্যা বলবেনা। আমি তোমাকে রিয়ানের সাথে দেখে সতর্ক করে দিলাম। কারন আমি চাইনা আমার সাথে যা হয়েছে তা তোমার সাথেও হউক। কিছুদিন পর তুমি নিজেই জানতে পারবে। যখন দেখবে রিয়ান তোমার সাথে শারিরীক সম্পর্ক করতে চাইবো।
এটা বলেই মেয়েটা চলে গেলো। মেঘা ভাবতেছে এটা কি সত্যি নাকি রবির কোন ফাঁদ। মেয়েটা রবির কথা বলায় মেঘার সন্দেহ হলো কিছুটা
মেঘা মেয়েটার নামও জানে না। মেয়েটার সাথে যদি আবার দেখা হয় তাহলে আরও ভালোভাবে জিজ্ঞেস করবে মেঘা। আপাতত এসব রিয়ানকে বলার দরকার নেই
রিয়ানকে ওর বন্ধু বলল, তা ব্যবসার কি খবর?
– রবির জন্য বন্ধ হয়ে যাবার অবস্থা
– রবিকে সরিয়ে কেনো দিচ্ছিস না?
– কে করবে এই কাজ। এমন কারও সাহস আছে। আর এখন তো ও একা না।
– শুনলাম কিছুদিন আগে রবিকে কেও মারার চেষ্টা করেছিলো?
– হ্যা আমরাও শুনেছি। ছেলেগুলো নাকি অন্য শহরের। কিন্তু এটা বুঝতে পারছিনা আমরা ছাড়া রবিকে কে মারতে চাইবে?
– হয়তো রবির আরও কোন শত্রু আছে যে অদৃশ্য থেকেই রবিকে মারতে চায়
– তাতে তার লাভ কি? তাকে তো কেও আর চিনবে না
– লাভ নিশ্চয় আছে তা না হলে এমন ঝুঁকি কেনো নিবে? আর সে হয়তো চায়না রবি তাকে চিনুক তাইতো অদৃশ্য থেকেই রবিকে মারতে চাইছে
– রবিকে মেরে ফেললে তখন সবাই ভাববে আমরা রবিকে মেরেছি। এক ঢিলে কেও দুই পাখি মারতে চাইছে। সে তো সামনে আসছে না তাহলে তাকে কিভাবে চিনবো?
– সময় হলে ঠিকই আসবে
১মাস পর
রবি আবিরের সব ড্রাগ ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। সব শেষ করে গোপন ভাবে পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছে। আবিরের সব অপকর্ম বন্ধ এখন। রবি আর মেহেদী যা চেয়েছিলো তাই হয়েছে
আর কিছুদিন পর কলেজের ভিপি নির্বাচন। এবার নির্বাচনে রবি দাঁড়াবে। রবি এতদিন কলেজে সবার যা উপকার করেছে এখন তা সামনে এনেছে। ও কেনো কলেজে মারামারি করতো এখন তা সবাই জানতে পেরেছে। মেয়েদের সাথে খারাপ আচরন ছেলেদেরকে জোর করে ড্রাগ দেওয়া এসব কারনেই রবি ওদেরকে মেরেছে। মেঘা অবাকের পর অবাক হচ্ছে
মেঘা কখনও ভাবতে পারেনি এমন কিছু হবে। রবি সবার সামনে হিরো হয়ে গেছে। সবাই ভাবছে নির্বাচনে রবিই জয়ী হবে। অন্যায় ঠেকাতে সবাই রবিকেই ভিপি হিসেবে চায়
দিশা ওর ভুল বুঝতে পেরেছে। তবে এটাও ঠিক যে মারামারি কোন কিছুর সমাধান হতে পারেনা। রবি যা করেছে অন্যায় ঠেকাতে কিন্তু করার পদ্ধতিটা ঠিক ছিলোনা। এর জন্য ওদের সবার জিবন ঝুঁকিতে আছে
সবার সামনে আবিরের মুখোশ খুলে গেলো। রিয়ান আর আয়ান সবকিছু অস্বীকার করেছে। ওরা সবাই আবিরকে একা ফাঁসিয়ে দিয়েছে। কারন আবির ছিলো ভিপি। আবির গোপনভাবে এগুলো পরিচালনা করতো।
আর রিয়ান তো এসব কিছুই জানতো না। রিয়ান, আয়ান আগেই বুঝতে পেরেছিলো এমন কিছু হতে পারে তাই ওরা নিজেরা কিছু করতো না। ওরা দুজন সবার কাছে ভালো থাকতো। রবির বিপক্ষে আয়ান দাঁড়িয়েছে নির্বাচনে
সেদিনের পর রবি আর কখনও মেঘার সামনে আসেনি। তবে রবি ওর বন্ধুদের মাধ্যমে মেঘার খোজ- খবর রাখে। রবি চায়না মেঘার কোন ক্ষতি হোক। রবির কাছে রিয়ানের বিপক্ষে প্রমান হলো ওইসব মেয়েরা যারা রিয়ানের ভালোবাসার ফাঁদে পড়েছে। কিন্তু রবি ওদেরকে সবার সামনে নিয়ে আসতে পারবেনা। ওর অন্য কোন প্রমান খুজে বের করতে হবে
রিয়ান মেঘাকে বলল, আবির ভাইয়া এতটা খারাপ হবে তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। ভাইয়ার বন্ধু ছিলো সে। অথচ সে গোপনভাবে এমন জগন্য কাজের সাথে জড়িত তা ভাইয়াও জানতো না
চলবে—