#বিষাদময়_প্রহর
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ০৯ ||
দৌড়ে “Black Mery” রেস্টুরেন্টে ঢুকলো নিবিড়!
বারবার হাত ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর রেস্টুরেন্টের মাঝে কাউকে খুঁজে চলেছে।
রেস্টুরেন্টের ভেতরে খুব বেশি লাইটস নাই তবে যাও আছে তার আলো ঝাপসা।
সবাই সবার মতো ব্যস্ত।
নীল আর সবুজ মরিচবাতিতে পুরো রেস্টুরেন্টটা আলোকিত হয়ে আছে তবে আবছা।
মিউজিকও চলছে তবে খুব স্লো আর অল্প সাউন্ডে।
ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশে এমন সফট মিউজিকই সুট করে।
নিবিড় এদিক সেদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজে চলেছে হুট করে তার ফোন ভাইব্রেশন করলো।
নিবিড় পকেট থেকে ফোনটা নিয়ে কল রিসিভ করলো।
কলের ওপাশ থেকে কেউ কর্কশ গলায় বলে উঠে,
—“গ্রাউন্ড সাইডের দিকে তাকাও কানা!”
মেয়েটির কথা মতো নিবিড় দূরে গ্রাউন্ড সাইডে তাকালো।
তার ধানিলঙ্কা সেখানেই বসে আছে তার দিকে রাগি লুক দিয়ে।
নিবিড় ফোন আবার পকেটে পুরে সেদিকেই পা বাঁড়ালো।
মেয়েটি বুকে দুইহাত দিয়ে নিবিড়ের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
নিবিড়ের সামনে হুট করে এক মেয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
—“হেই হ্যান্ডসাম! ওয়ান ডেট উইথ মি?”
নিবিড় চোখ বড় বড় করে মেয়েটার দিকে একবার তো আরেকবার তার ধানিলঙ্কার দিকে তাকালো।
অর্ণা বেশ রেগে গেলো মেয়েটির জন্য।
মেয়েটির কথা অর্ণা অস্পষ্ট হলেও বেশ শুনেছে।
অর্ণা উঠে দাঁড়িয়ে নিবিড়ের সামনে এসে মেয়েটির মুখোমুখি দাঁড়ালো!
তারপর ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,
—“হেই ইউ! হি ইজ মাই হাসবেন্ড! তাই ডেট করার জন্য অন্য কাউকে খুঁজে নিন। অর! সাইড প্লিজ! ”
বলে নিবিড়ের হাত ধরে গ্রাউন্ড কর্ণারের টেবিলের দিকে চলে আসে।
—“একে তো লেট করে আসছো তুমি তার উপর এইসব আজাইরা মেয়েদের ঢং! মুখের উপর মেয়েটাকে কিছু বলতে পারলে না? তা পারবা কেন? তুমি তো আস্ত ভীতুর ডিম! যার বাঘের মতো বড় ভাই আছে সে কেমনে এমন ভীতুর ডিম হয় আল্লাহ মালুম।”
—“এই একদম আমায় ভীতুর ডিম বলবা না। যথেষ্ট সাহসী আমি।”
—“ও আচ্ছা তাই? এতো যেহেতু সাহসী হতেন আমারে এমন ভয় পান কেন? তার চেয়েও বড় কথা ওই মেয়েটাকে বলতে পারলা না তুমি ম্যারিড!!”
—“সাহসী না হলে সেদিন এতোগুলা বখাটের হাত থেকে তোমাকে বাঁচাতে পারতাম না।”
—“হ্যাঁ! ওই একবার বাঁচিয়ে তো দুনিয়া উল্টায় ফেলসো তুমি।”
—“আরে ধুর! রাখো তো এসব কথাবার্তা ভালো লাগছে না। এমনেই পরীক্ষার প্রেসার আর প্রেসার দিও না!”
অর্ণা কিছু বললো না, সে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে ফিরলো।
এক ওয়েটারকে দেখতে পেতেই তাকে ডেকে কিছু খাবার অর্ডার করলো তবে নিবিড়ের পছন্দের ডিশ।
নিবিড় কোনো রিয়েকশন করলো না, সে অপলক দৃষ্টিতে শুধু তার অর্ণাকে দেখছে।
পরীক্ষার জন্য প্রায় অনেকদিনই তাদের দেখা হয়নি।
অর্ণাকে তার সবসময় নতুনই মনে হয় সেই প্রথমদিনের মতো।
এই মেয়ের রূপের রহস্য কি সেটা আজও ভেদ করতে পারলো না নিবিড়।
নিবিড়কে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে অর্ণার গাল জ্বলে উঠলো।
সে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেললো।
নিবিড়ের হুট করে খুদা লাগলো।
তখনই মনে পরলো ইক্সাম শেষে বাসায় এসেই ঘুম দিয়েছিলো।
এক ঘুমে বিকালে উঠেছে সে।
পরে অর্ণার ফোন পেয়ে না খেয়েই চলে এসেছে।
কিছুক্ষণ পর ওয়েটার খাবার নিয়ে আসলো।
সব খাবার দিয়েই ওয়েটার চলে গেলো।
নিবিড় অবাক হয়ে খাবারগুলোর দিকে তাকালো।
সব তার পছন্দের খাবার।
—“এমন হা করে তাকিয়ে না থেকে চুপচাপ খাওয়া শুরু করেন নবাবসাহেব!”
—“তুমি খাবে না?”
—“নাহ। তুমি খাও। দুপুরে খাওনি তাই এখন আমার সামনে সবটা শেষ করবা।”
নিবিড় চোখ বড় বড় করে তাকায় এবং বলে,
—“তুমি জানলে কি করে?”
—“২বছর ধরে আপনাকে হারে হারে চিনে ফেলেছি তাই। যাইহোক খাও তো জলদি।”
নিবিড় আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেতে শুরু করলো।
হঠাৎ অর্ণা উঠতেই নিবিড় জিজ্ঞেস করলো,
—“কোথায় যাচ্ছো?”
—“বিল পে করতে।”
—“হোয়াট! আমি করবো তোমার পে করার কোনো প্রয়োজন নেই।”
অর্ণা চোখ গরম করে নিবিড়ের দিকে তাকালো।
—“তোমাকে এতো কথা বলতে বলেছি? চুপচাপ খাও! একদম বড়লোকি দেখাবা না।”
বলে অর্ণা চলে গেলো বিল পে করতে।
★
বাসা থেকে প্রায় ১০মিনিটের রাস্তায় একটা নতুন রেস্টুরেন্ট খুলেছে।
শুনেছি রেস্টুরেন্টের পরিবেশ আর খাবারের কোয়ালিটিও বেশ ভালো।
তাই আমি ঠিক করলাম ইরিন আর জিনিয়াকে নিয়ে সেখানেই যাবো।
আমার আগে ইরিন আর জিনিয়া ইন্টারনেটে এই রেস্টুরেন্টের পিকসহ সবকিছু দেখে নিয়েছে।
বিশেষ করে ইরিন!
তার মতে আমার চয়েস সব লো ক্লাস।
এই মেয়েকে তো তখনই মন চাইছিলো কয়েকটা থাপ্পড় লাগাতে।
কিন্তু সেই সবসময়ের মতো মা এসে বাধা দিলো আর একপ্রকার জোর করেই এদের সাথে বের করালো।
ইনুকে মা নিজের কাছে রেখেছে।
তবে ইনু থাকায় ফুপি তেমন কিছু মাকে বলতে পারে না।
মাও সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে।
ইনু আর মায়ের বন্ধুত্ব কি বলবো।
মা আমার চেয়েও বেশি যত্ন নেয়ে ইনুর।
ইরিন আর জিনিয়া রিক্সায় করে চলে গিয়েছে রেস্টুরেন্টের সামনে আর আমি হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি।
ইচ্ছা করেই হেঁটে যাচ্ছি কারণ এই শেষ বিকালের পরিবেশে হাঁটতে আমার বেশ লাগে।
হাঁটতে হাঁটতে কখন রেস্টুরেন্টের সামনে চলে এলাম বুঝতেই পারিনি।
রেস্টুরেন্টের সামনে ইরিন আর জিনিয়া দাঁড়িয়েছিলো।
আমি আসতেই আমার সাথে ওরা ভেতরে প্রবেশ করলো।
অনেক মানুষজন আছে বোঝা যাচ্ছে।
পরিবেশ আসলেই অনেক ভালো।
বাসার কাছে থেকেও কখনো আসিনি এই রেস্টুরেন্টে।
নিবিড় টিস্যু দিয়ে সবে মুখ মুছলো এমন সময় সামনে তাকাতেই নিবিড়ের চোখ কপালে উঠে গেলো।
সে জিনিয়া আর নাফিহাকে দেখতে পারছে।
এরা এখানে কি করতে আসলো তাও এখন?
নিবিড় কি করবে ভেবে পাচ্ছে না, জিনিয়া যদি নিবিড়কে অন্যকারো সাথে দেখে তাহলে পুরো দুনিয়া এই খবর জানাবে।
নিবিড় নিজের চেয়ার নিয়ে অর্ণার পাশে গিয়ে বসে অর্ণার সাইডে লুকালো।
অর্ণা সবে কোল্ড কফি শেষ করলো।
নিবিড়ের এহেম কান্ডে অর্ণা কিছুটা হতবাক হলো।
—“আরে কি হলো, এভাবে আমার গা ঘেঁষে বসলা কেন দূরে যাও।”
—“না।”
—“না মানে? মাথা খারাপ নাকি? তোমাকে এভাবে দেখলে মানুষ কি ভাববে আশ্চর্য!”
—“মানুষ কি ভাবছে সেটা আমার বিষয় না এখন চলো এখান থেকে এখানে থাকা যাবে না!”
—“মানেহ! কিসব যা-তা বলছো তুমি? আসছি তো বেশি সময় হয়নি। কই ভাবলাম রেস্টুরেন্টটা ঘুরে ঘুরে দেখবো।”
—“আবার এসে ঘুরে দেখিও এখন প্লিজ চলো নয়তো তুমিও গাঙ্গে পরবা সেইসাথে আমিও গভীর সমুদ্রে ডুব মারবো।”
—“এতো না পেঁচিয়ে সোজাসাপ্টা বলো কি বলতে চাইছো!”
—“বাইরে আসো সব বলছি।” বলেই পকেট থেকে একটা মাস্ক বের করে মুখে লাগালো।
তারপর অর্ণাকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেলো।
আমার কেন জানিনা মনে হলো আমি নিবিড় ভাইয়াকে দেখলাম।
আশেপাশে তাকালাম ভালোভাবে।
নাহ নিবিড় ভাইয়া তো নেই।
তাহলে কি এটা আমার মনের ভুল?
হয়তোবা।
জিনিয়া আমি আর ইরিন মিলে এক কর্ণারে গিয়ে বসলাম।
এখানের চারপাশে বিভিন্ন লতাপাতা দিয়ে ভরা।
মনে হচ্ছে যেন সবুজে ঘেরা একটা জায়গায় আমরা বসেছি।
তার সাথে বেশ সুন্দর মিউজিক, প্রাণ যেন জুড়িয়ে যাচ্ছে।
আজ যা অবস্থা, ছুটিরদিন হলে এখানের অবস্থা কি হতো?
ভাগ্যিস আজ ছুটির দিন না, নইলে রেস্টুরেন্টে তো ঢোকাই যেত না।
একজন ওয়েটার এসে আমাদের তিনজনের হাতে খাবারের মেন্যু কার্ড ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
আমি হেসে হেসে মেন্যু কার্ড খুলতে আতকে উঠলাম।
সাথে সাথে সেই ওয়েটারের যাওয়ার দিকে তাকালাম।
জিনিয়াদের বলে আমি ওই ওয়েটারটার পিছু নিলাম।
যেই ধরতে নিবো ওমনি কেউ আমার সামনে এসে দাঁড়ায় আর আমিও থেমে গেলাম।
মাথা উঁচু করে দেখি নিহান ভাইয়া!!
উফফফ এই হিটলার সবসময় আমার কাজে ব্যাগড়া দিবেই দিবে!
নিহান ভাইয়াকে পাশ কেটে সামনে ফিরলাম!
ধ্যাত হারিয়ে ফেললাম!
ওই ওয়েটারকে ধরতে পারলে ওই বিষাদময় প্রহরটাকে ধরতে পারতাম।
আমার মেন্যু কার্ডে একটা চিরকুট ছিলো যেটায় লেখা ছিলো,
“বেশি ঘোরাফেরা করবে না, অচেনা ছেলেদের থেকে দূরে থাকবে।”
ইতি তোমার
‘বিষাদময় প্রহর’
নিহান ভাইয়া ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
—“কিরে! রেস্টুরেন্টের মাঝে এমন দৌড়ঝাপ লাগিয়ে রেখেছিস কেন?”
প্রহরের কথা বলতে গিয়েও বললাম না।
—“এক পরিচিত বান্ধবী দেখেছিলাম মনে হলো তাই পিছু নিয়ে তাকে ডাকতে নিয়েছিলাম!”
—“ও আচ্ছা। এতো দরদ তোর বান্ধবীর জন্য যে তুই চিল্লাতি আর রেস্টুরেন্টের পরিবেশ নষ্ট করতি!”
—“আপনার সাথে কথা বলাই বেকার! এখানে আসছেন কেন আপনি?”
—“সেটা তোকে বলতে বাধ্য না। তুই এখানে কি করছিস?”
—“আমিও আপনাকে বলতে বাধ্য না।”
বলেই হনহন করে জিনিয়াদের কাছে চলে গেলাম।
যেতে যেতে হাতে থাকা চিরকুটটা ছিঁড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিলাম।
এই বিষাদের চিঠি রেখে আমি আমার জীবনকে আরও বিষাদময় করতে চাইনা।
এসব আজাইরা আশিক শুধু পারে লাইফ হ্যাল করতে, উন্নতি করতে না।
আমার জীবন যা বিষাদময় হওয়ার তা হয়েই গেছে আর এই বিষাদের জালে ফাসতে চাইনা।
এসব ভাবতে ভাবতেই চলে আসলাম।
খাবার অর্ডার দেয়ার পরপরই হুট করে নিহান ভাইয়া এসে হাজির।
কি সুন্দর হেসে বললো,
—“কেমন আছো জিনিয়া?”
জিনিয়া থতমত খেয়ে মাথা উঁচু করে তাকালো।
এদিকে তেমন মানুষ আর বেশি আলো না থাকায় তেমনভাবে নিহান ভাইয়াকে চেনা যাচ্ছে না।
জিনিয়া তো মিষ্টি হেসে জবাব দেয়,
—“এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া আপনি কেমন আছেন? তা হঠাৎ আপনি এই রেস্টুরেন্টে?”
ইরিন হা করে নিহানের দিকে তাকিয়ে আছে।
এতোদিন নিহানকে সে ছবিতেই দেখে এসেছে কিন্তু আজ সরাসরি দেখছে তাও নিজ চোখের সামনে।
ইরিন যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না।
আবছা আলোয় নিহানকে কি সুন্দর লাগছে!
ছবির চেয়ে বাস্তবে আরও সুন্দর সে।
কি হ্যান্ডসাম!
নিহান টেডি স্মাইল দিয়ে বলে,
—“আমিও আলহামদুলিল্লাহ। এইতো জরুরি কাজে এসেছিলাম তখন তোমার আপুকে দেখলাম তাই এদিকে চলে আসলাম।”
এহ ঢং!
নিহানের মুখে নাফিহার কথা শুনে ইরিন তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো।
তবুও ইরিন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বারবার নিজের চুল ঠিক করছে, নিহানকে ইমপ্রেস করার জন্য ইরিন তার ওড়না একপাশে ঝুলিয়ে রাখলো।
কিন্তু আফসোস নিহান একবারও তার দিকে তাকালো না।
—“আরে ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছেন কেন বসুন।”
জিনিয়ার কথায় ইরিন জিনিয়াকে খুচিয়ে নাফিহার পাশে বসতে বললো যাতে করে ইরিনের পাশে নিহান বসতে পারে।
জিনিয়া ইরিনের ইশারা বুঝেও না বুঝার ভান ধরে ইশারায় ভ্রু কুচকে বলে, “কি?”
ইরিনের খোঁচাখুঁচির মাঝেই নিহান নাফিহাকে ঠেলে নাফিহার পাশে বসলো।
নাফিহার যেন গা জ্বলছে।
ইরিন বুঝলো সে বড্ড দেরী করে ফেলেছে।
নিহানের দিকে করুণ চোখে একবার তাকিয়ে নাফিহার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিয়ে তাকালো।
জিনিয়া মুখ টিপে হাসছে ইরিনকে এমন জ্বলতে দেখে।
নিহান আর জিনিয়া কথার আসর বসিয়েছে।
একবারও ইরিনের দিকে নিহান তাকায়নি এমনকি জিনিয়ার পাশে কে বসেছে সেটা অব্দি জিজ্ঞেস করেনি।
এতে ইরিন যেন আরও জ্বলে যাচ্ছে।
এতো করে নিহানকে তার দিকে ফেরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু একবারও তাকালো না।
শেষে খাবার আসলো।
সকলেই টুকটাক নাস্তা করলেও নিহান ভাই জাস্ট ব্ল্যাক কফি খেলো।
শেষে অনেক জোরাজুরির পরেও আমি বিল পে করতে পারলাম না তার আগেই নিহান ভাইয়া বিল পে করে দেয়।
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আশেপাশে কিছুটা ঘুরাফেরা করলাম।
এই ঘুরাঘুরিতে নিহান ভাইয়া আমার পাশ থেকে একদম নড়েনি।
এখন আমার হাত ধরে হাঁটছে আর জিনিয়ার সাথে কথা বলছে, হাসছে।
এতো করে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম একবারও হাত ছাড়লো না উল্টো আরও শক্ত করে ধরে রেখেছে।
হাত ধরাটা জিনিয়া খেয়াল না করলেও ইরিন ঠিকই খেয়াল করেছে।
এতক্ষণে ইরিন নিহানের পাশে ঘেঁষার অনেক চেষ্টা চালিয়েছে কিন্তু সে কিছুতেই সফল হয়নি।
তার চোখ দিয়ে যেন আগুনের গোলা বের হচ্ছে।
তার একমাত্র ক্রাশ আর লাভ কি না তার মামাতো বোনের হাত ধরে ঘুরছে, যাকে সে একদমই সহ্য করতে পারে না তার হাত ধরে রেখেছে?
আজ কিছু না কিছু একটা ঘটিয়েই ছাড়বে সে।
উচিত শিক্ষা দিবে সে এই নাফিহাকে।
আপাতত ইরিন সেই পরিকল্পনা করতেই ব্যস্ত।
নিহান বাসায় পৌঁছে দিয়েই চলে গেলো।
নাফিহা আগে উঠে গেলো সিঁড়ি দিয়ে আর জিনিয়া, ইরিন আস্তে ধীরে উঠছে।
ইরিন জিনিয়াকে খুঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—“কিরে নিহান আমার দিকে ফিরেও কেন তাকালো না? আর তোদের কীভাবে চিনে?”
—“আপুর বান্ধবীর ভাই নিহান ভাইয়া। সেই থেকেই আমাদের চিনে। আর নিহান ভাইয়ার পার্সোনালিটিও আলাদা, সে যেই-সেই মেয়ের দিকে তাকায় না।” ইরিনকে উদ্দেশ্য করেই কথাটা বললো জিনিয়া কিন্তু আফসোস ইরিন বুঝলো না।
—“তাহলে এরে পটাতে তো আমার সেইরকম সমস্যা হবে।”
—“মানে?” হঠাৎ দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো জিনিয়া।
—“মানে হলো আই লাভ হিম। একবার যদি নিহানকে পাই কেমন হবে ভাবতে পারছিস? রাজরানীর মতো থাকবো, হাজারো মেয়েরা আমায় দেখে জ্বলবে নিহানের বউ হিসেবে দেখলে।” এটিটিউডের সাথে কথাগুলো বললো ইরিন।
—“চেহারার নাই ঢক আবার সে হবে নিহান ভাইয়ের ওয়াইফ! আমার তোর চেয়েও ব্যাটার। দেখিস আমার আপু তোর মুখে চুনকালি মাখিয়ে তোরে বিদায় করবে।” জিনিয়া কথাগুলো মনে মনে বলে উপরে উঠে গেলো।
চলবে!!!
বিঃদ্রঃ গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।