বিষাদময়_প্রহর পর্ব ১০

0
830

#বিষাদময়_প্রহর
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ১০ ||

পরীক্ষা আর ১টা বাকি।
পরীক্ষার প্রিপারেশনসহ সব রিভাইস দিতে দিতে আমার অবস্থা খারাপ।
খাওয়া আর ঘুম ছাড়া টেবিল ছেড়ে উঠতেই পারি না এমন অবস্থা।
ফুপি আর ইরিন সেদিনের দুইদিন পরপরই চলে গেলো।
সেদিন ঘুরে আসার পর ইরিন এবং ফুপির ব্যবহার আচমকা বদলে গেলো।
কি সুন্দর ব্যবহার আমার সাথে।
আমি যেন আকাশ থেকে পরেছিলাম তাদের এমন ব্যবহারে।
তাদের এমন ব্যবহার যে কোনোভাবে তাদের প্রতি অভিযোগ আনবো তার সুযোগ অব্দি দেয়নি।
শেষে ইরিনের কলেজ খুলে দেয়ায় বেশিদিন থাকতে পারেনি।
যাক এক উছিলায় ওনারা নিজেদের শুধরে নিয়েছে ভেবেছিলাম।
কিন্তু তারা যাওয়ার দুইদিন পর যখন ইরিন ফোন দিয়ে নিহান ভাইয়ার নাম্বারটা চাইলো তখনই মা-বেটির আসল কাহিনি বুঝতে পেরেছিলাম।
একপ্রকার রাগের বসে ইরিনকে ভুল নাম্বার দিয়ে দেই।
নিহান ভাইয়ার আসল নাম্বার দিতে আমার ঠ্যাকা পরেনি হুহ!
নাম্বার কেন দিলাম না আমি জানি না তবে ইরিন যেই মুহূর্তে নাম্বার চেয়েছে আমার মাঝে এক চাপা রাগ চলে আসলো।
এর আগেও অনেকে আমার কাছে নিহান ভাইয়ার নাম্বার চেয়েছে, হয়তো বিরক্তি নিয়ে এড়িয়ে গেছি কিন্তু এবার এর ব্যতিক্রম।
প্রচন্ড রাগ উঠে গেছিলো।
কেন অন্য মেয়ে তার নাম্বার চাইবে?
আশ্চর্য!
তবে নাম্বার দেয়ার পর ইরিন নিরুদ্দেশ!
তাতে আমার কি?
আর এদিকে নিহান ভাই!
ইলেকশনের জন্য যেন তার ভেতরের জানটা বের করে পাবলিককে দিয়ে ফেলছে। হাহ!
তার চরম ব্যস্ততায় আমার কোনো খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন নেই তার।
বড্ড অভিমান হয় তার প্রতি তবে অপ্রকাশিত।
কিন্তু কেন? এই “কেন”-র উত্তর আমি আজও পেলাম না।
তবে ওই বিষাদটার প্রতিদিনের চিঠি তো থাকবেই।
এর চিঠিতে এই সেই ভালোবাসার উক্তি, রবীন্দ্রসঙ্গীত আরও কতো কি?
আচ্ছা এই ছেলের মাথায় এসব বিষয়ে এত জ্ঞান আসে কোথা থেকে?
আমি তো কোনো উক্তি পড়ার ২ সেকেন্ডেই সব গুলিলে ফেলি সেখানে উনি এতো সাহিত্যিক!
কিন্তু আমি বিষাদের জাল থেকে ছাড়া পেতে চাই, এইটা কি বুঝবে না?
এর ঠিকানাও জানিনা নয়তো আমিও এরে পাল্টা চিঠি দিয়ে ১৪ গুষ্টির বেইজ্জতি করে ছাড়তাম।
আমারে চিনে? চুপচাপ স্বভাবের বলে এই না আমি সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করবো।
সেদিন দারোয়ান চাচার সাথে কথা বলেছিলাম যে কেউ হাতে চিঠি নিয়ে আসে কি না, এবং চিঠি দেয়ার সময়সূচিও বললাম।
উনি বললেন,
—“আমি তো তখন আশেপাশের টঙে চা খাইতে যাই মা তাই তহন কেউ আসে কি যায় সেইটা কইতে পারুম না।”

—“ও আচ্ছা। ধন্যবাদ চাচা।”

ব্যাস! আর বুঝতে বাকি নেই এই লম্পট বিষাদটা এই সময়েরই সুযোগ নেয়।
কিন্তু আমিও নফিহা!
পরীক্ষা একবার শেষ হোক তারপর দেখাবো এই আমার খেল হুহ!
পরেরদিন তাহিরাকে পড়িয়ে বাসায় ফিরছিলাম তখন এলাকার কিছু ছেলে মাঝরাস্তায় অনেক উত্ত্যক্ত করে যাকে বলে মাত্রাতিরিক্ত।
শেষে আমার ওড়না অব্দি টান মারে মাঝের বেয়াদব ছেলেটা, আমি আর নিতে না পেরে মাঝের ছেলেটার গালে কষে এক চড় লাগিয়ে দেই।
তারপর রাগি সুরে চোখ গরম করে বলি,

—“বাসায় মা-বোন নাই? তাদের কেউ এভাবে উত্ত্যক্ত করলে তোদের মতো জানোয়ারের কেমন লাগবে?আর জীবনেও কোনো মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার আগে এই চড়টা ১০বার মনে করবি আশা করছি। আর হ্যাঁ পারলে তোর মায়ের ফোন নাম্বার বা বাড়ির ঠিকানা দিস। তাকে সম্মানের সাথে বলে আসবো সে এক নারীর গর্ভ থেকে এসে কীভাবে অন্য নারীদের উত্ত্যক্ত করছে বাজে ভাষায় কথা বলছে। জানোয়ার কোথাকার! একটা কথা ভালোভাবে মনে রাখিস মেয়েরা ভোগের বস্তু নয়।”

বলেই হনহন করে বাসার দিকে চলে আসলাম।
এই ঘটনা অনেকেই দেখেছিলো কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি প্রতিবাদ করতে।
হাহ! আমি কখনো আশাও করি না এসব নিরব মানুষদের প্রতিবাদ, এরা শুধু বিড়ালের মতো মিঁয়াও মিঁয়াও করতে পারে।
এদের থেকে আমার ইনু বেস্ট!
ইনু থাকলে ইনুকে দিয়েই এই বেয়াদবগুলার ব্যবস্থা নিতাম।
ফয়সাল রাগে সাপের মতো ফোঁসফোঁস করছে।
ফয়সালের এক বন্ধু কাঁধে হাত রেখে বলে,

—“মালটার সাহস দেখেছিস, তোরে এতকিছু বলে গেলো আর তুই চুপ করে রইলি? আমাদের বাঘ কি না এক মালের কাছে হেরে গেলো?”

—“পরিস্থিতি বদলাতে হলে মাঝেমধ্যে চুপ থাকতে হয় দোস্ত। এখন এই মালটার ডিটেইলস যেমনে পারোস বাইর কর! এরে আমার বেডে চাই! এর এমন হাল করবো যা কল্পনাও করতে পারবে না! কমিপশনারের পোলারে চিনে নাই এখনো!”

—“ওকে দোস্ত আমি এখনই ব্যবস্থা করতাসি।”

বলেই ফয়সালের বন্ধুরা চলে গেলো।
আমি বাসায় এসে চুপচাপ বইয়ের পড়ায় মনোযোগ দিয়েছি।
মা পাশের বাসার আন্টির সাথে দেখা করতে গেছে আর জিনিয়া লিভিংরুমে টিভি দেখছে মনে হয়।
আমার পড়ার মাঝেই ইনু চলে আসলো।

—“মিঁয়াও!”

—“না ভাই মাফ কর! তুই এখানে আসিস না ইনু!”

—“মিঁয়াও।”

—“একদম না। তোকে আমি কোলে নিবো আর তুই আমার টেবিলের উপর থাকা সবকিছু তছনছ করে দিবি! কখনো না! তোর এইসব অকাজের জন্য আমার দ্বিতীয়বার বই আর টেস্টপেপার গুলা কিনতে হয়েছে।”

—“মিঁয়াও।”

—“তোরে আমার বিশ্বাস নেই। জিনিয়া! জিনিয়া! কোথায় তুই? ইনুকে এখান থেকে নিয়ে যা নয়তো আবার আমার বইয়ের বেহাল করবে।”

জিনিয়া একপ্রকার ছুটে এসে ইনুকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
জিনিয়া যাওয়ার আগে দরজাটা ভিঁজিয়ে দিয়ে গেলো যাতে ইনু আবার রুমে আসতে না পারে।
আমি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজের পড়ায় মনোযোগ দিলাম।
দুপুরের দিকে পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানিনা তবে সন্ধ্যার দিকে ঘুম ছুটে গেলো শোড়গোলের শব্দে।
চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে দাঁড়ালাম।
উঠে দাঁড়াতেই পায়ের কাছে নরম কিছু অনুভব হলো, নিচে তাকিয়ে দেখি ইনু।
ইনুকে কোলে নিয়ে ড্রইংরুমের দিকে গেলাম।
গিয়ে দেখলাম একজন মধ্যবয়সী লোক, একজন মধ্যাবয়সী মহিলা আর আরেকটা যুবক দাঁড়িয়ে।
তাড়াতাড়ি এক হাত দিয়ে মাথায় ভালো করে ঘোমটা টেনে দিলাম।
যুবকটি একদম চুপ করে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে তার মুখে কোনোরকম কথা নেই।
লম্বা-চাওড়া, তেমন ফর্সা না তবুও চলে।
গরমে তার মুখমন্ডল লাল হয়ে আছে।
চোখমুখ একদম স্থির।
আমি যুবকটির থেকে চোখ সরিয়ে মায়েদের দিকে তাকালাম।
রীতিমতো কথা কাটাকাটি হচ্ছে মা এবং লোকটির মাঝে।
লোকটিকে চিনতে না পেরে ভ্রু কুচকে তাদের দিকে এগোলাম।

—“আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল। দেখুন আমার মনে হচ্ছে না আমি আপনাকে চিনি আর না আপনি আমাদের চিনেন, এখানে একজনের বাসায় এসে কথা কাটাকাটি করা কি ঠিক হচ্ছে?”

আমার কথায় সকলেই আমার দিকে তাকালো।
মহিলা তো কেমন ড্যাবড্যাব করে দেখছে আমাকে।
আমাকে দেখতেই লোকটার মুখমন্ডল চিকচিক করে উঠলো।
অস্ফুট সুরে বলে উঠে,
—“ওয়া আলাইকুম আসসালাম। তুমি কি নাফিহা মা?”

নাফিহার পর “মা” শব্দটি শুনতেই আমার বুকটা কেমন ধক করে উঠলো।
কতোদিন পর কেউ আমাকে মা বললো।
বাবাকে বড্ড মনে পরছে।
উনি আমাকে মা অথবা মামুনি বলে সমর্থন করতেন।
কতো সুখের ছিলো দিনগুলো, সব যেন নিমিষে হারিয়ে গেলো।
নিজেকে সামনে অনেক কষ্টে বললাম,

—“জ..জ্বী। আমিই নাফিহা। আমার কাছে কি কোনো প্রয়োজন আপনাদের?”

লোকটি উজ্জ্বল হাসি দিয়ে আমার কোলে থাকা ইনুর দিকে তাকালো।
তারপর আবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

—“হ্যাঁ মা। আমাদের এই প্রয়োজনে যদি তুমি আমাদের সাহায্য করতে পারো।”

—“আমি সাহায্য করবো মানে?” কিছুটা বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করলাম।
আমার পাশ থেকে মা বলে উঠে,

—“আর বলিস না, কমিশনার সাহেব হুট করে বাসাতে এসে তোর নাম ধরে ডেকেই চলেছে। তার কাছে কারণ জানতে চাইলে বলে তার ছোট ছেলেকে নাকি পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, এখন সেই ছেলেকে তুই-ই নাকি ছাড়াতে পারিস।”

আমি অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকালাম।
বিষয়টা কেমন মাথার উপর দিয়ে গেলো।
আর তার চেয়েও বেশি অবাক লাগছে স্বয়ং এলাকার কমিশনারসহ তার পরিবার আমার বাসায় উপস্থিত।
সত্যি বলতে আমি পলিটিক্স নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামাই না তাই হয়তো চিনতে পারিনি। আর কমিশনারের ছেলেকে
আমি ছাড়াবো মানে? আমি কি পুলিশ নাকি লইয়ার?

—“দুঃখিত আঙ্কেল তবে একটা প্রশ্ন করতে চাই, আমি কি করে আপনার ছেলেকে ছাড়াতে পারবো?”

পাশে থেকে সেই যুবকটি মৃদ্যু সুরে বলে,
—“আমার ভাই নাকি আপনার সাথে অসভ্যতামি করেছে তাই পলিটিশিয়ান নিহান ভাই স্বয়ং আমার ভাইকে টেনেটুনে জেলে গিয়ে ভরেছে, বলা যায় ইভ-টিভিং কেসে ফাসানো হয়েছে। যখন কোনোকূলেই তাকে ছাড়াতে পারছিলাম না, একপ্রকার বাধ্য হয়েই আপনার এখানে আসা। আপনি যদি কোনোভাবে আমাদের সাহায্য করে এই উপকারটি করতেন?”
আরেকদফা অবাক হলাম।
কমিশনারের ছেলে আমার সাথে অসভ্যতামি করেছে মানে?
একসময় উপায় না পেয়ে সেই যুবকটির থেকে ছবি চাইলাম কমিশনার আঙ্কেলের ছোট ছেলের।
যুবকটি সম্মতি জানিয়ে ছবিটি দেখালো।
আমি অবাক হয়ে তাকালাম।
এ তো সকালের ছেলেটা যেটাকে আমি চড় মেরেছিলাম।
নিমিষেই মেজাজ গরম হয়ে গেলো।
নিহান ভাই এরে জেলে ঢুকিয়েছে বেশ করেছে, এখন এই চরিত্রহীন ছেলেকে আমি ক্ষমা করবো? কোনোদিনও না।
এই ছেলে আর তার চ্যালাগুলার বিশ্রী ভাষাগুলো এখনো আমার কানে বেজে চলেছে।
যারা মেয়েদের সম্মান দিতে জানে না সেখানে আমি তাদের ক্ষমা করবো? ইমপসিবল।
নিজেকে ঠান্ডা করে বলি,

—“আঙ্কেল বেয়াদবি করার জন্য দুঃখিত তবুও বলি, দেখুন আপনি এই এলাকার কমিশনার। যেখানে আপনার উচিত এই এলাকার প্রতিটি মানুষকে যত্নে আগলে রাখা সেখানে আপনার নিজের ছেলে ক্ষমতার নামে অনেকগুলো মেয়ের সাথে অসভ্যতামি করেছে, এছাড়াও… বাকিটুকু না-ই বা বললাম। সেখানে আমি আজ নিজে তার অসভ্যতামির স্বীকার হয়েছি। আদৌ কি এটি ক্ষমার যোগ্য? আপনাদের কি উচিত ছিলো না, আপনাদের ছেলে কখন কি করে না করে সেই বিষয়ে খোঁজখবর নেয়ার? শুধু জম্ম দিলেই বাবা-মা হওয়া যায়না, তাকে সঠিক শিক্ষা দিয়ে মানুষ করতে হয়। জানি আপনারা আপনাদের ছেলেকে ভালোবাসেন তাই হয়তো আগ বাড়িয়ে কখনো তেমন খবর রাখেননি, হয়তো মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু এদিকে সমাজের অন্যান্য মানুষগুলো কিন্তু ঠিকই আপনার ছেলের সাথে আপনাদেরও গালাগাল করছে, মন্দ কথা বলছে। বিশেষ করে আপনাদের একটু বেশিই বলছে। এটা কি আদৌ কি ঠিক? যাইহোক আঙ্কেল বেয়াদবির জন্য আবারও দুঃখিত আমি জাস্ট আপনাদের কিছু সত্য বলার চেষ্টা করলাম, যদি বা আপনারা আপনাদের ভুলগুলো কিছুটা হলেও বুঝতে পারেন।”

আমি থামতেই যুবকটি ক্ষীণ কন্ঠে বলে উঠলো,
—“তার মানে আপনি বলতে চাইছেন আমরা সঠিক শিক্ষা পাইনি? আমাদের বাবা-মা সঠিক শিক্ষা দিতে অক্ষম?”

—“আপনি নিশ্চয়ই আমার শেষের কথাগুলো শুনেননি। যাইহোক আপনার আচরণ আমার ভালো লেগেছে, আপনি আসলেই আপনার ভাইয়ের মতোন নন।”

—“বুঝলেন কি করে?”

আমি কিছু বললাম না চুপ করে রইলাম।
কিছুক্ষণ নীরবতা বিরাজ করলো।
নীরবতা ভেঙ্গে মহিলাটি আঁচলে মুখ গুজে কান্নামাখা কন্ঠে বলে উঠে,

—“তোমার কথা আমরা বুঝতে পেরেছি মা কিন্তু আমি মা হয়ে কি করে নিজের ছেলেকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখবো? হোক সে খারাপ তবুও তো আমারই গর্ভের সন্তান। তুমি দয়া করে এই মায়ের কোলে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও। আমি কথা দিচ্ছি আমার ছেলেকে আর কখনো এসবে জড়াতে দিবো না। আমি নিজে কঠোরতার সাথে আমার ছেলেকে শুধরে নেয়ার চেষ্টা করবো।”

মহিলাটির কথায় আমার বেশ খারাপ লাগলো।
মা রা আসলেই এমন হয়, সন্তানের হাজারো ভুলের মাঝেও কি সুন্দর নিজের সন্তানকে ক্ষমা করে দেয়, নিজের সন্তানের দুঃখে নিজেও দুঃখ পায়।
আমি আড়চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে নরম হয়ে গেলাম।
আমি রাজি হলাম সেই ফয়সালকে ক্ষমা করে দিতে।
অবশেষে ফয়সাল ছাড়া পেলো।
ফয়সালের বড় ভাই সাজিদ মুচকি হেসে ছোট্ট করে ধন্যবাদ দিলো।
আমিও উত্তরে মুচকি হেসে বলি,

—“ধন্যবাদের প্রয়োজন নেই।”

—“আপনি কিন্তু এখনো বললেন না।”

—“কী?”

—“কেন আমি আমার ভাইয়ের থেকে আলাদা?”

—“মেয়েদের সাথে মানে আমার সাথে নীচুসরে কথা বলেছেন তাই। আর আমি দুঃখিত।”

—“কেন?”

—“আপনার বাবা-মাকে হয়তো অপমান করে ফেলেছি।”

—“আরে নাহ! আপনি বাস্তব কথাগুলোই বলেছেন যাইহোক আজ আসি।”

বলেই সাজিদ চলে গেলো।
আমি মুচকি হেসে পিছে ফিরতেই দেখলাম জিনিয়া তাড়াহুড়ো করে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে পরলো।
কাহিনি বুঝলাম না, এভাবে লুকানোর কি হলো?
যাইহোক, এসব বিষয়ে আর মাথা না ঘামিয়ে আমি নিজের ঘরে চলে গেলাম।
হুট করে নিহান ভাইয়ার কথা মনে পরলো।

চটজলদি নিহান ভাইয়াকে ফোন দিলাম, ভেবে নিলাম আজ এরে আচ্ছাসে ধোলাই করবো।
কিন্তু নাহ তার ফোন বিজি বলছে।
বেশ কয়েকবার দিলাম।
কিন্তু না সেই একই বিজি বলছে।
আচ্ছা উনি কি আমার নাম্বার ব্লক করেছেন?
ধুর আমিও কি ভাবছি, এখন তো ওনার ইলেকশন চলছে তাই বিভিন্ন জায়গা থেকে ওনার কলটলও আসতে পারে।
সেইজন্যই হয়তো বিজি।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে আবার পড়তে বসলাম।
মা নাস্তা দিয়ে গেলো, পড়তে পড়তেই পুরোটা খেয়ে নিলাম।
কাল লাস্ট পরীক্ষা তাই ঠিকভাবে পড়তে হবে।

সাজিদ সবে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসলো ওমনি তার ফোনে এক আননোন নাম্বার থেকে কম এলো।
সে কিছুটা বিরক্তিবোধ করলো কারণ, এই নাম্বার থেকে একটা মেয়ে কল করে তাকে ভিষণভাবে ডিস্টার্ব করছে।
মেয়েটা তাকে জান, বাবু, বেইব বিভিন্ন নিকনেইমে ডাকে।
সাজিদ এতো ধমকালো কিন্তু মেয়েটাও নাছোড়বান্দা।
একপ্রকার বিরক্তি নিয়েই রিসিভ করলো,

—“হ্যালো! কে?”

—“বেইবি নিহু আমাকে চিনো না?”

—“আজিব মহিলা তো আপনি, কয়শো বার বলবো রং নাম্বারে কল করছেন, তবুও কেন বারংবার বিরক্ত করেন? তামাশা পাইসেন!”

—“আরেহ! আমি ইরিন। কেন চিনতে পারো না আমাকে?”

চলবে!!!

বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। দুইদিন গল্প দিতে না পারার জন্য দুঃখিত। আসলে আমি রাইটার্স ব্লকে ছিলাম তাই লিখতে পারিনি, আমার জন্য দোয়া করবেন। গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here