অশান্ত বসন্ত পর্ব-২৬

0
653

#অশান্ত বসন্ত
(২৬ পর্ব)
জয়া চক্রবর্তী।
********************
শিখাকে নিয়ে বেশ চিন্তায় পরে গেছেন বরুন সাহা।বহ্নি মুম্বাইয়ে চলে যাওয়ার পর থেকে গত সাতদিন ধরে তিনি পল্লবের ফ্ল্যাটে আসছেন থেরাপির জন্য। অথচ শিখা একেবারেই সহযোগিতা করছেনা ওনার সাথে।

থেরাপির সময়টাতেও উদাস দৃষ্টিতে জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকছে।এইভাবে তো লাভ কিছুই হচ্ছেনা। অনেক ভেবে একটা ছোট্ট সলিউশন বের করেছেন তিনি।

আসলে বৃহস্পতিবার করে অফডে থাকে বরুন সাহার। সেই অনুযায়ী পল্লবের কাছে অনুমতি নিয়ে নেন ওই দিন শিখাকে নিয়ে বাইরে বের হওয়ার। কারন মেয়েটা এতোটাই মন মরা হয়ে থাকছে যে থেরাপিটাও ওকে ঠিক ভাবে দেওয়া যাচ্ছেনা।

পল্লব পরিস্থিতি বুঝে আর না করেনি।সত্যিই কি বহ্নির ফাঁকটা তারা পূরণ করতে পারছে!বাড়ি ফিরে ও অফিসের কাজ করতে হচ্ছে পল্লবকে ।আর পিউয়ের কলেজে হঠাৎ সেমিস্টারের ডেট ফেলায় পিউও বাড়ি থাকলে বই মুখে করে বসে থাকছে। তাই বরুন সাহার প্রস্তাবটা না মেনে নেওয়ার কোনো কারন খুঁজে পায়নি পল্লব।

বরুন সাহা ঘুম থেকে উঠেই তৈরি হয়ে নেন।তারপর পল্লবকে একটা ফোন করেন।পল্লব জানায়, শিখাকে পিউ তৈরি করে দিয়ে কলেজে বেরিয়ে গেছে,বরুন সাহা আসার পর পল্লব ও অফিসে বের হবে।ফোণটা পকেটে রেখে বরুন সাহা গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করতে গেলেন।

‘একটু দেরি হয়ে গেলো আমার।রাস্তায় এতো যানজট ছিলো যে কি বলবো!’,বরুন সাহার কথায় পল্লব হেসে বললো,’না না ঠিক আছে,খুব একটা দেরি হয়নি।আমি শিখাকে ডেকে দিচ্ছি’।পল্লবের ডাকে শিখা ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো।একটা পিঙ্ক রঙের সালোয়ার কামিজ শিখার গায়ে, বড়ো বড়ো চোখ দুটো আরো গভীর লাগছে কাজলে।ঠোঁটে পিঙ্ক শেডের লিপস্টিক। শিখার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসান বরুন সাহা।

তারপর গাড়ি চালাতে চালাতে শিখার সাথে অনর্গল কথা বলতে শুরু করেন।যাতে শিখা স্বাভাবিক আচরণ করে।কিন্তু শিখার মধ্যে কোনো ভাবান্তর লক্ষ্য করা যায়না,এমনকি শুনছে নাকি তাও বোঝা যাচ্ছেনা। চুপচাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।

বরুন সাহা গতকাল রাতেই ঠিক করেছিলেন শিখাকে লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে আসবেন।এই জায়গাটা ওনার বরাবরই খুব প্রিয়।প্রায় ২৮০ একর জায়গার ওপর গার্ডেন। চারিদিকে শুধুই সবুজের সমারোহ।গার্ডেন জুড়ে হাজার প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ।

এছাড়া পুরো গার্ডেন জুড়েই বানানো আছে অসংখ্য শিল্পকর্ম। কোথাও শিশুরা খেলা করছে,কোথাও বা মা দুধ পান করাচ্ছে শিশুকে,আছে অজগর সাপ,কুমির,উটপাখি, ময়ুর সহ অসংখ্য শিল্পকর্ম যা দেখে বোঝবার উপায় নেই সেগুলো কাঠের তৈরি।

বরুন সাহা বহু বছর ওনার মাকে নিয়ে ব্যাঙ্গালোরে থাকেন।বিয়ের দেড় বছরের মাথায় বাচ্চা হতে গিয়ে বৌ মারা যায়।তারপর থেকে নিজেকে আরো বেশি কাজের মধ্যে ডুবিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রতিটি পেশেন্টই তার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ।পেশেন্টদের সাইকোলজি বুঝে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করেন তিনি।সেই কারনেই ওনার এতো নামডাক।ওনার থেরাপিতে খুব তাড়াতাড়ি আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় পেশেন্ট।

গাড়ি পার্কিং-এ রেখে তিনি দুটো টিকিট কেটে শিখার হাত ধরে ভিতরে প্রবেশ করলেন।তারপর মোবাইল বের করে সাইনবোর্ডে দেওয়া ম্যাপের ছবি তুলে নিলেন।আসলে গার্ডেনের ভিতর অসংখ্য রাস্তা।ম্যাপ না থাকলে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে ।

সবুজের যে কতো বৈচিত্র্য হয় তা এখানে না আসলে বোঝাই যায় না।গার্ডেনের ভিতর ঢুকেই শিখার চোখে একটা চমক খেলা করতে থাকে।ঠিক যেমনটা বরুন সাহা চেয়েছিলেন। শিখা হাত ছাড়িয়ে এগিয়ে গেলো, ছুঁয়ে দেখতে থাকলো প্রকৃতিকে।তবে এতো পর্যটকের ভিড় যে একটু সময় পর নিজে থেকে এসেই বরুন সাহার হাত ধরলো।

এই গার্ডেনে আছে অসাধারণ সুন্দর একটি গ্লাস হাউজ।যার ভিতরেও বিভিন্ন প্রজাতির ফুলগাছ আছে। শিখাকে ঘুরিয়ে দেখাতে থাকেন বরুন সাহা।শিখা ও পরম বিস্ময়ে অপার মুগ্ধতা নিয়ে দেখতে থাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভান্ডার।

এরপর শিখাকে তিনি ঘুরে ঘুরে কাঠের শিল্পকর্ম গুলো দেখাতে লাগলেন।শিখা অপার বিষ্ময়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগলো সেগুলো।গার্ডেন জুড়ে অসংখ্য পাখি উড়ছে,কিছু পাখি আবার খাঁচায় বন্দি।শিখাকে বরুন সাহা বন্দী পাখিদের নাম জানাতে থাকলেন,কখনো বা ফুলেদের নাম, কখনো বা গাছেদের নাম।

অনেকক্ষণ ধরে ঘুরে ঘুরে হেঁটে ক্লান্ত শিখা,সেটা বুঝতে পেরে শিখাকে নিয়ে একটা গাছের তলায় বসলেন তিনি।তারপর ব্যাগ থেকে জলের বোতল আর বিস্কুটের প্যাকেট বের করে শিখার হাতে দিলেন। নিজে আর একটা বোতল বের করে কিছুটা জল গলায় ঢেলে নিলেন।

শিখা নিজের হাতের বিস্কুটের প্যাকেটটা বরুন সাহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,’খাও’।নিজে থেকে কথা বিনিময় শুরু করেছে শিখা।এটা লক্ষ্য করে বরুন সাহার মুখে হাসি খেলে গেলো।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here