অশান্ত বসন্ত পর্ব-২৫

0
588

#অশান্ত বসন্ত।
(২৫ পর্ব)
জয়া চক্রবর্তী
**********************
পল্লব দুচোখের পাতা এক করতে পারছেনা। এদিকে ঘড়ির কাঁটা বলছে এখন রাত সাড়ে তিনটে।
ঘন্টাখানেক আগে ডাইনিং এ বসে বহ্নিকে প্যাকিং এ সাহায্য করছিলো পল্লব। বহ্নি চাইছিলো বাকি রাতটা ব্যলকনিতে বসেই কাটিয়ে দেবে গল্প করে।

কিন্তু পল্লব রাজি হয়নি।বলেছে,’নতুন জায়গায় যাচ্ছো,সেখানে শরীর খারাপ হলে কে দেখবে?’

বহ্নি বলেছিলো,’অন্তত আধ ঘন্টা তো ব্যলকনিতে বসতেই পারি আমরা’। পল্লব আর না করেনি।
বহ্নিকে যেতে বলে রান্নাঘর থেকে দু-মাগ কফি
বানিয়ে এনেছিলো।

ব্যলকনিতে গিয়ে কফি মাগ দুটো রাখতেই বহ্নি পল্লবকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছিলো। পল্লবের ও কাঁদতে ইচ্ছে করছিলো,অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো বহ্নিকে । কিন্তু ও শুধু বহ্নির চুলে হাত বুলিয়ে দিয়েছিলো, দুরন্ত প্রেমের অসহ্য আবেগের স্পন্দন বুকে চেপে রেখে।

কিছু সময় পরে বলেছিলো, ‘কফিটা খেয়ে নাও ঠান্ডা হয়ে যাবে’।

আসলে প্রেম যতই দেহ-নির্ভর হোক না কেন,শেষ পর্যন্ত মনের জগতেই তাঁর স্থায়ী স্বাক্ষর সে রেখে যায়। দুরন্ত অস্থির বলিষ্ঠ প্রেম নয় বরং অর্ধস্ফুট স্বপ্নময় প্রেমের পরিচয় করাতে চায় সে বহ্নির সাথে।

এমনিতেই যে বহ্নির নিজের বাবার কারনে পুরুষ জাতির ভালোবাসার উপর অবিশ্বাস জন্মে গেছে।
তাই সময় দিতে চায় বহ্নিকে। সম্ভব অসম্ভবের সীমানায় দাঁড়িয়ে আশায় বুক বাঁধে পল্লব।

যদি সম্পূর্ণভাবে নিজের করে না-ই বা পাওয়া যায় তাহলে হাতে হাত ছুঁয়ে,কথা দিয়ে মন হাতড়িয়ে, আংশিক পেয়ে লাভ কি!

পল্লব জানে অতীতের কিছু স্মৃতির কারনে বহ্নি বৈবাহিক জীবনে আসতে চায়না।ভুলতে চাইলেও সেই স্মৃতি থেকে বের হতে পারেনা।কিন্তু পল্লব আশাবাদী। পল্লব বিশ্বাস করে বিবাহের সেই শুভ মুহুর্তটা অবশ্যই আসবে তাদের জীবনে।

ছয়টার এলার্মে বহ্নির ঘুম ভাঙতেই দেখে দিদিয়া জানালার সামনে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। এই দুদিন পিউয়ের সাথেই দিদিয়ার বিছানা করে দিয়েছিলো পল্লব।বলেছিলো,যেহেতু বহ্নি ছয় মাস থাকবে না তাই শিখার সাথে পিউয়ের বন্ধুক্তটা জরুরি। নিজের বিছানাটা ছেড়ে দিয়েছিলো বহ্নির জন্য। আর ডাইনিং এ সোফা কাম বেডে পল্লব নিজের শোওয়ার ব্যবস্থা করেছিলো।

একটু বাদেই বেরিয়ে যেতে হবে ফ্লাইট ধরতে।বহ্নি বিছানা ছেড়ে উঠে দিদিয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।দিদিয়াকে যে কি করে ছেড়ে থাকবে বহ্নি! দিদিয়ার পিঠে হাত রাখতেই অসহায় চোখে তাকালো দিদিয়া।

বহ্নি গতকালই জানিয়েছে দিদিয়াকে ওর ছয় মাস না থাকার কথাটা।তখন থেকেই দিদিয়ার মুখটা থমথমে। যদিও পল্লব আর পিউ বহ্নিকে ভরসা দিয়েছে যে ওরা দিদিয়াকে ভালো রাখবে।বরুন সাহার সাথে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলবার পরে উনিও ভরসা দিয়েছেন বহ্নিকে।

ওনার সাজেশন মতো আজ থেকে শিখাকে আঁকা শেখাবার জন্য একজন আসবেন।সেই অনুযায়ী গতকালই আঁকার যাবতীয় সরঞ্জাম এনে রেখেছে বহ্নি।

পিউ বলেছে প্রতিদিন কলেজ যাওয়ার আগে ও রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে দিদিয়ার সাথে ভিডিও কলে দেখা করিয়ে দেবে বহ্নিকে।তবু বহ্নির কান্না পাচ্ছে খুব।
পল্লব সবার জন্য কফি বানিয়ে এনেছে।

একটু বাদে রান্নার দিদিও চলে আসবেন। পিউকে কলেজে ভর্তি করবার পর থেকেই ওনাকে রেখেছে পল্লব।

উনিই বেশি টাকা নিয়ে সাথে বাসন মাজা, ঘর মোছা, আর কাপড় কাচাটাও করে দিয়ে যাচ্ছেন।রাতের রান্না ও করে রেখে যান উনি।পল্লব শুধু ভাতটা বানিয়ে নেয় রাতে। ওনাকেও বহ্নি শিখার একটু খেয়াল রাখতে বলেছে এবং জানিয়েছে এরজন্য ফিরে আসার পর ওনাকে খুশি করে দেবেন।

বহ্নি দিদিয়ার শুকনো মুখটা দেখে দিদিয়াকে টাইট করে জড়িয়ে ধরলো।তারপর বললো,’আমি চেষ্টা করবো এর মাঝে যদি এক দুবার আসা যায়’।

পিউ পল্লবের মুখের দিকে তাকিয়ে ফিচেল হাসি হেসে বহ্নিকে বললো, ‘বহ্নিদি এই কথাটা দাদাভাইকেও একবার জড়িয়ে ধরে বলোনা ,মুখটা করে রেখেছে দেখো’। বহ্নি হেসে ফেললো,আর পল্লব ছুটলো পিউয়ের মাথায় গাট্টা মারতে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here