আমৃত্য পর্ব ৫

0
1224

#আমৃত্য পর্ব ৫

লেখক: মো: শাহরিয়ার

– হ্যালো? আসিফের কোনো কিছু করেছো কি?

– হ্যা। ও নিজে এসেই আমার ফাদে পা দিয়েছে।

– তাই নাকি? এখন যত তাড়াতাড়ি পারো ওকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেল। ও বেঁচে থাকলে আমাদেরই বিপদ।

এতক্ষণ দেলোয়ারের সাথে কথা বলছিল রনির মা। দেলোয়ারের সাথে রনির মায়ে গোপন সম্পর্ক রয়েছে। রনির মা মূলত রনিদের সম্পত্তি হাতানোর জন্যই রনির বাবাকে ভূলিয়ে ভালিয়ে বিয়ে করেছে আর এই চক্রান্ত করেছে। যেটা আসিফ খুব ভালোমতোই বুঝতে পারছে। আসিফ মিস্টার শাহরিয়ার কে জিজ্ঞেস করলো,

– আপনাকে আমি নিজের আইডল মনে করতাম। কিন্তু কেন করলেন এমন আমার সাথে?

মিস্টার শাহরিয়ার বলল,

– এই পৃথিবীতে ভালো কাজের দাম নেই। যদি সমাজে টিকে থাকতে চাও তাহলে একসময় বাধ্য হয়েই খারাপের পথ বেছে নিতে হবে।

– কে বলেছে আপনাকে? এই পৃথিবীতে এখনো ভালো মানুষ বেঁচে আছে। তা নাহলে এই পৃথিবী থাকতো না।

শাহরিয়ার তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বলল,

– ভালো মানুষ? এই পৃথিবীতে ভালো মানুষের কোনো জায়গা নেই। সবাই ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে থাকে কিন্তু আড়ালে তারা এক একটা হিংস্র জানোয়ার। সমাজের এই ভালো মানুষরাই আমার ১৪ বছর বয়সী মেয়েটাকে ধর্ষন করে হত্যা করেছে। এরাই তো তোমার কাছে ভালোমানুষ তাই না?

আসিফ দেখতে পেল মিস্টার শাহরিয়ারের পুরো চোখ লাল হয়ে গিয়েছে। প্রতিশোধের আগুনে সে অন্ধ হয়ে গিয়েছে।

– তার মানে আপনি প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছেন? কিন্তু এতে লাভ কি? আপনি তো আর আপনার মেয়েকে ফিরে পাবেন না কোনোদিনই।

– কে বলেছে তোমাকে আমি প্রতিশোধ নেব? এই সবকিছু আমি করেছি আমার মেয়েকে ফেরত পাবার জন্য। ১০ জন মানুষকে আমাদের গুরু লুসিফারের কাছে উৎসর্গ করতে হবে। ইতিমধ্যে আমি ৯ জনকে উৎসর্গ করেছি। তোমাকে উৎসর্গ করলেই আমার মনের ইচ্ছা পূরণ করবে লুসিফার। সে আমার মেয়ে আবার জীবিত করে তুলবে।

আসিফ মিস্টার শাহরিয়ারের কথা শুনে অবাক হয়ে গেল। কেউ এতটা অন্ধবিশ্বাসী হতে পারে তা তার জানা ছিল না। সে তার মেয়ের জন্য অন্য মানুষদের হত্যা করছে লুসিফারের কাছে উৎসর্গ করার নামে। কিন্তু এটা যে শয়তানের একটা ধোকা তা আসিফ জানে। কারণ ছোটবেলায় এমনি শয়তানের ধোকায় পড়ে ওর সবচেয়ে কাছের এক বন্ধু সাকিবকে ওর মা-বাবা উৎসর্গ করেছিল। হ্যা। ওর আপন মা-বাবা। সাকিব ওর অনেক ভালো বন্ধু ছিল। তাই ওর কথা মনে পড়লে এখনো কান্না আসে আসিফের। তার উপর আবার রনির ও সাকিবের মতো একই অবস্থা। আসিফ এসব চিন্তাভাবনায় মগ্ন ছিল ঠিক তখনি শাহরিয়ার বলল,

– তা আসিফ এবার উৎসর্গ হওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নাও।

আসিফ মিস্টার শাহরিয়ারকে জিজ্ঞেস করলো,

– আপনি রনিকেও আপনার সেই শয়তান গুরুর কাছে উৎসর্গ করেছিলেন তাই না?

– ব্যাপারটা যখন বুঝতেই পেরেছো তখন আর বলে লাভ কী? আমার দরকার ছিল শিকারের তাও আবার তোমার বয়সী কাউকে। আর রনির মায়ের দরকার ছিল ওদের সম্পত্তির। এর জন্য রনির উপর কালোযাদু করে ওকে বশ করা হয় এবং আত্নহত্যা করানো হয়। আর আত্নহত্যা করানো হয়েছে যাতে ওর জানাযা পড়াতে সবাই অস্বীকার করে। কারণ জানাযা হয়ে গেলে ওর আত্নাকে আমরা মহান লুসিফারের কাছে উৎসর্গ করতে পারবো না।

– তার মানে কী রনির বাবাকেও আপনি উৎসর্গ করেছিলেন?

– না। কারণ তার বয়সী লোকদের উৎসর্গ করে লাভ নেই। আমার তো দরকার তোমাদের মতো জোয়ান ছেলে।

– রনি এবার পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারলো। বেশকিছুদিন আগে এই শহর থেকে রনির বয়সী অনেক ছেলেই গায়েব হয়ে যাচ্ছিল। তাদের কোনো খোজ খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। এই কেসের দায়িত্বটা মিস্টার শাহরিয়ারকেই দেওয়া হয়েছিল। এখন সে বুঝতে পারছে যে মিস্টার শাহরিয়ার মিথ্যে মামলায় কাউকে ফাসিয়ে কেস ক্লোজ করে দিয়েছিল যাতে সে তার কাজ করতে পারে।

– কী ব্যাপার দেলোয়ার এত দেড়ি করছো কেন? তাড়াতাড়ি কাজ করো।

আসিফ দেখলো দেলোয়ার কিছু মন্ত্র পড়ছে। আসিফকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় শোয়ানো হলো। এরপর দেলোয়ার একটি রামদা হাতে নিল। এটা দিয়েই সে রনিকে হত্যা করবে আর তাকে শয়তানের কাছে উৎসর্গ করবে। দেলোয়ার রামদা টা আসিফের গলার কাছে ধরে মন্ত্র পড়ছে আর এদিকে আসিফ তার জীবনের শেষ দোয়া পড়তে লাগলো। মন্ত্র পড়া শেষ করে দেলোয়ার যেই আসিফকে হত্যা করতে যাবে ঠিক তখনি দ্রুতবেগে একটা তীর এসে দেলোয়ারের মাথায় বিধলো। দেলোয়ার মাটিতে পরে গিয়ে ছটফট করতে লাগলো। এদিকে আসিফ লক্ষ করলো তার হাতের বাধন খুলে গিয়েছে। সে যলদি সেখান থেকে উঠে গেল। ঘটনা এত দ্রুত ঘটলো যে কেউ বুঝতে পারলো না কী হয়েছে? মিস্টার শাহরিয়ার দেখলো দেলোয়ার মাটিতে ছটফট করছে। আসিফ এবং শাহরিয়ার দুজনে গুহার মুখের দিকে তাকাতেই সেই কালো অবয়বকে দেখতে পেল। যার হাতে রয়েছে একটি ধনুক। এদিকে অবস্থা বেগতিক বুঝে মিস্টার শাহরিয়ার সেখান থেকে দ্রুত পালিয়ে গেল। কিন্তু কালো অবয়বটা মিস্টার শাহরিয়ারকে ধরার চেস্টা না করে আসিফের কাছে আসলো। জিজ্ঞেস করলো,

– তুমি ঠিক আছো?

কণ্ঠটা আসিফের খুবই চেনা চেনা লাগলো। কিন্তু চিনতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো,

– কে তুমি?

– যে তোমাকে ঐদিন ভোরে একটি কাগজ দিয়েছিল।

আসিফ কালো অবয়বটার কথা শুনে অবাক হয়ে গেল।

– তার মানে তুমিই নীলিমাকে বাচিয়েছো?

– নীলিমাকে তো তুমি বাচিয়েছো।

– মানে? বুঝলাম না। আর তোমার নাম কি?

এরপর সেই কালো অবয়বটা তার মুখের কালো কাপড় সরিয়ে ফেলল। অবয়বটার চেহারা দেখে আসিফ সবচেয়ে বেশি অবাক হলো। কারণ কালো অবয়বটা আর কেউ না। সে নিজেই। হুবহু তার মতো চেহারা। কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব?

– তুমি ভাবছো যে আমার চেহারা আর তোমার চেহারা এক কেন তাইনা?

আসিফ অবয়ব টার কথা শুনে চমকে উঠলো। সে কীভাবে জানলো আসিফ এই মূহুর্তে কী ভাবছে?

– তুমি কীভাবে জানলে? আর তোমার আর আমার চেহারা এক কীভাবে? তুমি কি আমার জমজ ভাই নাকি?

অবয়বটি মুচকি হেসে বলল,

– না। আমি তোমার জমজ ভাই না। তবে আমরা দুজন আলাদা কোনো মানুষ না। আমাদের মধ্যকার পার্থক্য হচ্ছে শুধু বর্তমান আর ভবিষ্যতের।

– তোমার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

– সময় হলে তুমি ঠিকই বুঝতে পারবে। এখন তোমার বাসায় যাওয়ার সময় হয়েছে।

এটা বলার সাথে সাথেই আসিফ নিজেকে তার রুমে আবিষ্কার করলো। সে অনেকটা অবাক হয়ে গেল। এত তাড়াতাড়ি সে নিজের রুমে কীভাবে চলে এলো? এটা সপ্ন নাকি সত্য তা সে বুঝে উঠতে পারছে না। আসিফ তার মোবাইল চেক করতেই বিষয়টা তার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। এটা সত্য ছিল। কারণ আসিফ যখন রনিদের বাসার পিছনে গিয়েছিল তখন সে মিস্টার শাহরিয়ারকে ফোন করেছিল। তার ফোনে অটো কল রেকর্ড হয়ে থাকে তাই সে রেকর্ডিং শুনে বুঝতে পারলো যা ঘটেছিল তা সত্যিই ঘটেছিল। কিন্তু আসিফের মাথায় এখন শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। এই কালো অবয়বটা আসলে কে? আর তার চেহারা একদম হুবহু আসিফের মতো কেন?

সকাল ১১ টা ৪৩ মিনিট।

আসিফ গান শুনতে শুনতে হেটে যাচ্ছিল রাস্তা ধরে। কিন্তু তখনি কেউ একজন তার মুখ চেপে ধরে তাকে পাশের গলিতে নিয়ে গেল। আসিফ দেখলো তার বয়সী একটা ছেলে তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটা বলল,

– খবরদার একদম চালাকি করার চেস্টা করবি না। তাহলে কিন্তু খবর আছে। এখন চুপচাপ আমার সাথে চল।

এরপর ছেলেটা আসিফকে জঙ্গলের মধ্যে একটি পুরোনো বাড়িতে নিয়ে গেল। বাড়িতে প্রবেশ করতেই আসিফ সেই ছেলেটার পিস্তলটাকে ধরে ফেলল এবং নাক বরাবর একটা ঘুষি দিল। এতে ছেলেটা একটু অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল আর এই সুযোগেই আসিফ ছেলেটার হাত থেকে পিস্তল টা ছিনিয়ে নিয়ে ছেলেটাকে সামনে মাটিতে ফেলে দিল এবং ছেলেটার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলল,

– বল তোকে কে পাঠিয়েছে?

তখনি আসিফ কারো হাসির শব্দ শুনতে পেল।

– কুল ডাউন আসিফ। এত উত্তেজিত হওয়ার কি আছে?

আসিফ দেখলো মিস্টার শাহরিয়ার তার সামনে তার দিকে পিস্তল তাক করে দাঁড়িয়ে। আসিফও মিস্টার শাহরিয়ারের দিকে পিস্তল তাক করলো। এটা দেখে মিস্টার শাহরিয়ার বলল,

– তুমি পিস্তল চালাতে পারো না আসিফ। তোমাকে আমি এটা শিখাইনি।

আসিফ মুচকি হেসে বলল,

– পিস্তল চালানো শিখতে হয় না মিস্টার শাহরিয়ার। শুধু আত্নবিশ্বাসের সাথে ট্রিগারে চাপ দিলেই হয়।

এরপর আসিফকে অবাক করে দিয়ে মিস্টার শাহরিয়ার সেই ছেলেটাকে পর পর তিনবার গুলি করলো। আসিফ বুঝতে পারলো না কি হয়েছে?

– একি আপনি ওকে মেরে ফেললেন কেন?

– এই অন্ধকার জগত সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা নেই। এখন ছেলেটাকে মেরে ফেলার অপরাধে তোমার শাস্তি হবে। আর আমি এটা নিশ্চিত করবো যাতে তোমার ফাসি হয়। ঠিক সেভাবেই তোমার মৃত্যু হবে যেভাবে রনিকে আমরা মেরেছিলাম।

আসিফ অবাক হয়ে মিস্টার শাহরিয়ারের কথাগুলো শুনলো। তখনি পিছন থেকে কেউ বলল,

– ইউ আর আন্ডার এরেস্ট মিস্টার আসিফ।

আসিফ পিছনে ফিরে দেখলো পুলিশ এসে গিয়েছে তাকে এরেস্ট করতে। মিস্টার শাহরিয়ারের কথামতো পুলিশ তাকে এরেস্ট করে নিয়ে গেল।

(আসিফ কী নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবে? নাকি বীনা অপরাধে তার ফাসি হবে?)

আজকের পর্বটি একটু ছোট হয়েছে তার জন্য আমি দু:খিত। তবে এর পরের পর্বেই এই গল্পের সমাপ্তি হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here