#তোকে_ঘিরে❤
#পর্ব_২৯
#ফাবিয়াহ্_মমো?
– তুমি! তুমি এখানে! এখানে কি করো?
– রাতে ভালোই কেটেছে তাইনা? থুতনি দেখি লাল করে দিয়েছে। লাভ বাইট!কপালে ওটা কি? ফুলে আছে কেন?
পূর্ণতা সকাল সকাল অনিশার মুখদর্শন পাবে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি! মাথায় ঢুকছেনা আনিশা এখন এই মূহুর্তে কীভাবে এই বাড়িতে আসলো! পূর্ণতা দরজা পুরোটা না খুলেই আনিশার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
– আপু তুমি এখানে কি করে?
– কেন? আসা নিষেধ? তোর বর রাগ করবে? নানাভাইয়ের সাথে এসেছি। নানাভাই মোজাম্মেল চাচার জমি সংক্রান্ত বিবাদের জন্য তোর দাদাশ্বশুড়ের সাথে আলাপ করতে এসেছে।
পূর্ণতা কিছু বলবে হঠাৎ আনিশার ডানপাশ থেকে মেয়েলি সুরে কৌতুহল গলায় বলে উঠলো,
– আরে আনিশা! এতো সকাল সকাল? কখন এলে?
আনিশা একগাল হাসি দিয়ে পূর্বিকার হাতে লম্বা হ্যান্ডল ধরা লাগেজ দেখে। দেখতেই হাসি চেপে বলে উঠে,
– এইতো আসলাম মাত্র। হাতে লাগেজ যে…
– পূর্ণতার লাগেজ গো। আর বলোনা, কাল রাতে তোমার বোনকে আমার সাথে রাখা নিয়ে যে বিরাট ধমক খেয়েছি। সে কথা বাদ। আসো আমার ঘরে আসো। পূর্ণতা? এইযে তোমার মালপত্র। কিছু লাগলে বিনা দ্বিধায় বলে দিও।
পূর্বিকা আনিশাকে আসতে বলে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। পূর্ণতা লাগেজ টেনে রুমে ঢুকিয়ে রাখতেই পূর্ব চোখ কচলাতে কচলাতে বারান্দা থেকে রুমে ঢুকলে আনিশার চোখ আটকে যায়! পূর্বের উন্মুক্ত বুকের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছে ওর। যেই বুকটা শার্ট, টিশার্ট ও পান্জাবীর নিচে ঢেকে থাকতো তা এভাবে সকালের দৃশ্যপটে অদ্ভুতভাবে এসে পরবে ভাবতে পারেনি ও। হাত আরো খিচে আসলো আনিশার, চোখমুখ কুচকে আসছিলো ক্রমান্বয়ে। পূর্ণতা ফ্লোরে ঝুকে লাগেজ খুলে পোশাক বের করতে ব্যস্ত পূর্বের আগমন টের পায়নি পেছন থেকে। পূর্বের সদ্য ঘুম ভাঙা চোখ দরজার বাইরে মানুষটার দিকে পরতেই চোখ কচলানো অটোমেটিক থেমে গেলো ওর। কপাল কুঁচকে মুখ শক্ত করে চেচিয়ে বললো,
– সাঝ সকালে তুমি এখানে কি করছো!
পূর্ণতা পূর্বের চেচামেচি শুনে হকচকিয়ে ফ্লোর থেকে উঠে দাড়াতেই দেখে পূর্ব আনিশার দিকে তাকিয়ে হট্টগোল বাজাচ্ছে। আনিশা এখনো অদ্ভুত দৃষ্টিতে পূর্বের আপাদমস্তক চোখ বুলাচ্ছে। পূর্ণতা জলদি দরজার কাছে গিয়ে অতিদ্রুত বলে উঠলো,
– আপু গোসল করবো লেট হচ্ছে। তুমি বসো। চা খাও, নাস্তা করো। আমি এক্ষুনি আসছি।
ধুম করে আনিশার মুখের উপর দরজা বন্ধ করলো পূর্ণতা। পূর্ণতা দরজা থেকে দ্রুত সরে পূর্বের সামনে এসে বলে উঠলো,
– রাগ ঝারো পূর্ব। সকাল সকাল রাগ করেনা। ফার্স্ট ইম্প্রেশন ইজ দ্যা লাস্ট ইম্প্রেশন তাইনা?
পূর্ব অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাগত সুরেই বলে উঠলো,
– সকাল সকাল তোমার চেহারাটা দেখা বাদ দিয়ে ওই শাকচুন্নির চেহারাটা দেখলাম! আমার দিন ভালো যাবে? কচু যাবে!
পূর্ব হিসহিস করতে করতে আলমারি খুলতে ব্যস্ত হলো। যা বাবা! দিনের শুরুতেই পূর্বের ধমক? আল্লাহ্ মালুম শেষটা কেমন হয়! পূর্ণতা ইতিমধ্যে ওয়াশরুমে যেতেই রুমের ভেতর থেকে জিনিসপত্র আছড়ে ফেলার শব্দ আসলো। পূর্ণতা ভেজা শরীরেই দরজায় কান পেতে শোনার চেষ্টা করলো। মনেহচ্ছে জিনিসপত্র আছাড় মেরে সব লন্ডভন্ড করে রাগ ঝারছে। পূর্ণতা তাড়াতাড়ি গোসল শেষ করে শাড়ি কোনোরকমে পেচিয়ে বাইরে এসে হতবাক! পুরো রুমের অবস্থা ‘হ-য-ব-র-ল’! সারা ফ্লোরে পূর্বের টিশার্ট, শার্ট, প্যান্ট, বেল্ট, টাওয়েল… সাথে কিছু টাকার নোটও টুকরো টুকরো হয়ে পরে আছে। পূর্ণতার লাগেজ যেখানে ছিলো সেটা আর জায়গামতো নেই…পূর্বের তোরফোর অবস্থার জন্য সেটা ড্রেসিংটেবিলের পাশে উল্টে পরে আছে। পূর্ণতা পরপর দুটো ঢোক গিলে চুলে তোয়ালে পেচিয়ে বিছানার দিকে তাকায়। বিছানায় উবু হয়ে শুয়ে আছে পূর্ব, চোখ বন্ধ কিনা বোঝা যাচ্ছেনা। পূর্ণতা ধীরগতিতে হেঁটে বিছানার কাছে এসে পূর্বের পাশে বসে। খুব সাহস করে পূর্বের পিঠে ঠান্ডা হাতটা রাখতেই এক ঝটকায় পূর্ব হাত সরিয়ে দিয়ে মুখ বাম থেকে ডানে ঘুরায়। আনিশার জন্য এমনটা হলো! কেন আসলো আনিশা? আনিশার চেহারাটা দেখেই পূর্ব রাগারাগী ছেনছেন করছে। পূর্ণতা ধীরে ধীরে খুবই নিঃশব্দে পূর্বের পিঠে চুমু দিতেই পূর্ব লাফ দিয়ে উঠে বসে। ভ্রু কুঁচকে কাঠিন্য মুখ করে বলে উঠে,
– সকালবেলা একটা চুমু দিয়ে উঠাতে পারলে না? এইটুকু সেন্স নেই? যদি হালকা একটা ধাক্কাও দিতে অন্তত ঘুমের ঘোরটা কেটে তোমার মুখটা চোখে পরতো! কার চেহারা দেখলাম আল্লাহ্! ছিঃ!
পূর্ব এমন ভাব করছে যেনো দূর থেকেই আনিশা ওকে জব্দ করে চুমু খেয়েছে! পূর্ণতা খানিকটা বিরক্ত হয়ে বললো,
– আমি কি জানতাম তোমার প্রাক্তন আসবে? আসছে ভালো কথা তোমাকে সে কিছু বলেছে? শুধু শুধুই চিল্লাহুল্লা করছো কেন?
পূর্ব অবাক হয়ে পূর্ণতার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,
– কি বললে? আমার সাথে ঝগড়া করছো?
পূর্ণতা কোনো কথা না বলে সোজা রুম থেকে বেরিয়ে যায়। পূর্ব একপানে কিছুক্ষণ খোলা দরজার দিকে তাকিয়ে শেষে মাথা নিচু করে বললো, আমার মন বলছে আনিশা নিছক কোনো কারনে এখানে আসেনি। ও এখানে এসেছে আমাকে দেখতে। আল্লাহ্ মাফ করুক…কোনো বাজে চিন্তাভাবনা যেনো ওর মাথায় না থাকে। আমি সত্যিই ওর উটকো ঝামেলায় ফাসতে ইচ্ছুক নই।
.
পূর্ণতা চুলার ধারে চা বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। পূর্বের মা ও দাদি মাটির চুলোতে রান্না করলেও পূর্ণতাকে গ্যাসের চুলায় রান্না করতে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন আজ। মাটির চুলোয় রান্না করা সহজ ব্যাপার না, প্রচুর দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হতে হয় চুলো ধরাতে, লাকড়ি সামাল দিতে, রান্না করতে। একটা ছোট্ট পাতিলে চায়েরপানি ফুটতে শুধু করলে পূর্ণতা এদিক ওদিক তাকিয়ে চাপাতা, চিনি, দুধের কৌটা খুজতে থাকে। রান্নাঘরের বাইরে দরজার আড়ালে দাড়িয়ে ফুয়াদ ও জাওয়াদ কোক খাচ্ছে। পূর্ণতাকে বুঝতে না দিয়েই চুপিচুপি দুজনে পূর্ণতাকে পর্যবেক্ষণ করছে। জাওয়াদ কোকের ক্যান থেকে একঢোক ঢিলে ফিসফিস করে বললো,
– শাড়ি এমন বোরকার মতো ঢাকছে কেন?ধুর..ঠিকমতো পেটও দেখা যায় না।
– পারবি পারবি অপেক্ষা কর।
ফুয়াদ বিশ্রী দৃষ্টিতে পূর্ণতা চুলের পানিতে ভিজে যাওয়া পিঠের দিকে তাকিয়ে আছে। চুলে তোয়ালে পেচানো থাকলেও বাড়তি পানিতে পিঠের ব্লাউজ ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে গেছে কিছুটা। ফুয়াদ কোক গিলে বাঁকা হেসে বলে উঠলো,
– উঁচু তাক থেকে চাপাতার বয়াম নামানোর সময় শাড়ি উপরে উঠবো! এরপরই দেখতে পারবি কাঙ্ক্ষিত জিনিস।
পূর্ণতা চাপাতার বয়াম নিতে হাত উচু করার ফলে শাড়ি যেই উপরে উঠতে যায় তখনই রান্নাঘরের বাইরে থেকে আনিশার ডাক ছিটকে আসে। পূর্ণতা থমকে গিয়ে মাথা ঘুরিয়ে দেখে দরজার দুপাশে দুই দেবর দাড়িয়ে কোক খাচ্ছে আর তাদের থেকে দূরে ঠিক পেছনে আনিশা দাড়িয়ে। আনিশাকে দেখে বিব্রত ভঙ্গিতে হাসতে হাসতে ওরা দুজন চলে গেলে আনিশা রান্নাঘরে ঢুকে। তাক থেকে চাপাতার বয়াম নামিয়ে চুলার কাছে রাখতেই বলে উঠে,
– চোখ কান খোলা রেখে সাবধানে কাজ করবি।
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলে উঠে, ‘কেন? ‘
– ওমা! রান্নাঘরে কাজ করবি আর চোখ খোলা রাখবিনা? ঘরে আগুন ধরলে কি করবি? সবসময়ের মতো পূর্ব বাঁচাবে? সাবধানে থাক।
পূর্ণতা আনিশার কথা আধা বুঝলো আর আধা না বুঝেই চুপ করে রইলো। ট্রে সাজিয়ে সকালের চা নিয়ে বসার ব্যবস্থা হিসেবে বারান্দার চৌকির কাছে টেবিলে রাখলো। চৌকিতে পূর্বের দাদা মূসা ওয়াসিফ ও পূর্ণতার নানাভাই একসঙ্গে বসে আছে। নানাভাই হাসিখুশি বলে উঠলো,
– নানু? সব ঠিকঠাক তো?
পূর্ণতা মিষ্টি হাসি দিয়ে চা এগিয়ে বললো,
– হ্যাঁ নানাভাই। সব ঠিক আছে।
– তা এখন নাস্তাটা খেয়েই রেডি হয়ে যাও। জামাইকে বলো নিচে চলে আসতে। একটু কথা বলি। গল্প করি।
– উনি আসছে নানাভাই। আপনি বসুন। এই এই আপনি মিস্টি বিস্কিট ধরবেন না! ওটা আপনার জন্য না। দাদাভাইয়ের জন্য দিয়েছি। আপনার যে ডায়াবেটিস ভুলে যান কেন?
পূর্ণতার হালকা শাসন রূপ দেখে ফিক করে হেসে দেয় মূসা ওয়াসিফ। বন্ধুর পিঠ চাপড়ে বলে উঠে,
– মেম্বার সাহেব আপনার দিন শেষ। এইবার আমার দিন শুরু…হা হা হা,
এ কথা শুনে পূর্ণতা লজ্জা পেয়ে চলে গেলে চৌকির বিছানায় দুজন মিলেই হাসিতে ফেটে পরে।
সকালের নাস্তা শেষে বউভাতের উদ্দেশ্য রওনা দিতেই ঠিক দশটা বাজার পাচঁ মিনিট আগে পৌছায় বাড়িতে। সাদরে সবাই নতুন জামাইকে বরণ করে নানাপদের বাহারি পিঠার আয়োজনে বর্ণিল পসরা সাজায়। পূর্বের তো বারো রকমের পিঠা দেখেই মাথা নষ্ট! এতোপদের পিঠা তাও পাচঁ/ছয়টা করে খেতে হবে শুনে পূর্বের এখন পালাতে ইচ্ছে করছে। কাছেপিঠে পূর্ণতাকেও দেখতে পাচ্ছেনা। কি করবে এখন? রাক্ষসের মতো পিঠা খাইয়ে আবার দুপুরে গরুর কালাভূনা, খাসির রেজালা, মুরগির ফ্রাই, মুরগির ঝোল, দোপেঁয়াজা, পোলাও এসব খাওয়ানোর ছোটখাট হুশিয়ারি দিয়ে গেছে। পূর্বের এখন মাথা চাপড়াতে ইচ্ছে করছে খাওয়ার লিস্ট শুনে! শ্রেয়া বড় হাড়ি থেকে চিতই পিঠা বেরে প্লেটের একপাশে মরিচের ভর্তা সাজাতেই পূর্ব উশখুশ গলায় ডাক দেয়,
– শ্রেয়া? এদিকে আসবে একটু?
– জ্বি ভাইয়া। কিছু লাগবে? কি ব্যাপার পিঠা যেভাবে দিয়েছে সেভাবেই রয়ে গেছে আপনি তো কিছুই টাচ করেননি!!
– শ্রেয়া আমাকে কি ভুখা রাক্ষস মনে হয়?
– এ্যা…কি? বুঝিনি ভাইয়া।
– দেখো তোমার বান্ধুবী আমাকে যেই লেভেলে ট্রিট আমাকে করে তাতে খাবার দাবার একসপ্তাহ না করলেও চলবে। প্লিজ এগুলো সরাও।
শ্রেয়া পূর্বের কথা প্রথম দফায় না বুঝলেও পরে মাথা ঘাটতেই বুঝে যায় ইঙ্গিত। থুবড়ে আসা হাসি কোনোরকমে চেপে বলে উঠে,
– ভাইয়া আপনি খুব ফানি। পূর্ণতা আপনার কেমন দশা বানাতে পারে তার একটু আধটু ধারনা আমার আছে। আচ্ছা আমি পিঠা সরিয়ে নিচ্ছি। আপনি কি একটু রেস্ট করবেন?
– বড় মেহেরবানি হবে।
– হা হা কি বলেন…আসুন, পূর্ণতার রুমে নিয়ে যাই। পূর্ণতা তো তানিয়ার সাথে লুডু খেলছে এখন আপনি ডাকলেও আসবেনা।
পূর্ব উঠে দাড়াতেই হকচকিয়ে বলে,
– লুডুর জন্য আসবেনা?
– হ্যাঁ। তানিয়া জম্পেশ খেলা জানে। একদিকে তানিয়া, সুহাস ভাই অন্যদিকে পূর্ণতা আর আয়মান। জুটি জুটি খেলছে। আপনি দেখবেন?
পূর্ব ক্লান্ত গলায় বললো,
– না একটু শুবো। রুমটা দেখিয়ে দাও।
.
– ওরে দেখোস না ছাগলের বাচ্চা আমার গুটি খাইতে আসে! ওরে ছাগলী পারতি না। তোর গুটি আজীবন আমার গুটির লেন্জুর ধইরা চলবো। খাইতে আর পারতো না।
আয়মানের কথা শুনে তানিয়া বিব্রত গলায় বলে,
– আয়মান ভাইয়া চিল্লাবা না। চুপ!
– তোমার কেনো জ্বলেরে বন্ধু…তোমার কেনো জ্বলে!! পাকা গুটি খাইয়া দিছি সুখে কুড়কুড় করে রে!! সুখে কুড়কুড় করে!!
আয়মানের তাচ্ছিল্যপূর্ণ গান শুনে তানিয়া বাদে সবাই দম ফাটা হাসিতে হেসে দেয়। একটু আগে আয়মান তানিয়ার পাকা গুটিকে ছক্কা পাচঁ মেরে চান্দে পাঠিয়ে দেয়। এই খুশিতে একটু পর পর গান ধরছে আয়মান। পূর্ণতা ফের চাল দিতেই ছক্কা দুই উঠে। আয়মান কোর্টের উপর ঝুঁকে ভাবুক চিন্তিত চোখে দুই সেকেন্ড অতিবাহিত করতেই এক চিৎকার দিয়ে উঠে,
– তোরা দেখ ! দেখ ! দেখরে চাহিয়া!! খাইয়া দিছি দুইটা গুটি, দেখরে তানিয়া!! আহা…পরান যায় জলিয়া রে…পরান যায় জলিয়া রে!!
আয়মানের কটাক্ষপূর্ণ গানে তানিয়া লুডুর কোর্ট উল্টে চলে যায়। সুহাস পেছন থেকে ওকে ডাকতে ডাকতে নিজেও উঠে দাড়ায়,
– ওই গাধি! খেলা পারিস না কোর্ট উল্টালি কেন? হারলেই খেলা নষ্ট করবি?….
আর শোনা গেলো না সুহাস বোঝাতে বোঝাতে তানিয়ার পিছনে বাঁধে চলে গেলো। আয়মান ভুবন রাঙানো হাসি দিয়ে বললো,
– অনেকদিন পর শান্তি পাইলাম পূর্ণতা। আবার কবে যে একসাথে খেলার সুযোগ হয় কে জানে?
পূর্ণতা মাটির উপর ছালা থেকে কোর্ট গুছিয়ে গুটিগুলো একত্র করে উঠে দাড়াতেই বলে উঠে,
– টেনশন নিস না। যখন ইচ্ছে করবে চলে আসবি। দরকার পরলে আমার দেবর একটাকে পাঠিয়ে তোদের আনতে বলবো বুঝলি?
– পূর্ণতা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
– এসব ফর্মালিটি কবে শিখলি বন্ধু?
– না ধুর! আজকে যে আনিশা তোর দাদা শ্বশুরের বাড়িতে গেলো কোনো গন্ডগোল করেনাই? ভাই দেখি ইলিশ মাছের পেটির মতো মুখ ফুলায়া বইসা আছে।
– আপুকে নিয়ে সকাল থেকেই আমার উপর রাগ। কথাও ঠিক করে বলেনা। কি যে বিশ্রী অবস্থা!
– আচ্ছা থাক। দুঃখের কথা বলিস না। তোর এই দুঃখ শুনলে আপনাআপনি আমার খিটখিটায়া হাসতে ইচ্ছা করে।
– কেমন অমানুষ তুই! হারামি কোথাকার!
– তোর জামাইর রাগ আমার কাছে কুয়ারা লাগে। আলগা ঢঙ!
‘ওহ্..কুয়ারা লাগে?’ পেছন থেকে প্রশ্নটা ছিটকে এলে আয়মানের ঠোঁট থেকে কর্পূরের মতো হাসি উবে যায়। আয়মান শুকনো মুখে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে, ‘তোর জামাই?’ পূর্ণতাও শুকনো গলায় ঢোক গিলে জোরপূর্বক হাসিতে আয়মানের পেছনে থাকা মানুষের দিকে একবার তাকায় আরেকবার আয়মানের দিকে তাকায়। আয়মান ইশারা বুঝতেই ধুপাধুপ দোয়া ইউনুস জপতে জপতে পেছনে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলে,
– ভাই আসসালামুয়ালাইকুম, ভালো আছেন নি?
– ওলাইকুমসসালাম ভালো তো আছি আলহামদুলিল্লাহ। তোমার ভালোটা যে দেখতে পাচ্ছিনা।
– কি বলেন ভাই..
– ওর সামনে কি জানি বললা?
– না বললাম যে, কুয়ারতে পানি খাওয়ানো উচিত। কি মিষ্টি পানি! একদম চিনি মিশানো। ওটার কথা বলছিলাম।
– আমি কি কানে ভুল শুনলাম?
– ছিঃ নাউযুবিল্লাহ। কি যে বলেন না। আপনার কান তো সাপ্লাই পানির মতো পরিষ্কার। ভুল শুনবেন কেন?
– তাই তো। এই পূর্ণতা? একটু আসো তো।
পূর্ণতা পূর্বের পিছু পিছু গেলে দেখে পূর্ব ওর শোবার রুমের দিকে চলে যাচ্ছে। পূর্ণতা আলতো একটা ঢোক গিলে রুমে ঢুকলে পূর্ব দরজা ঠেলে পিঠ লাগিয়ে পান্জাবির পকেটে হাত ঢুকায়। সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
– সকাল থেকে পালাচ্ছো কেন? ব্যাপার কি?
– আমি পালাচ্ছি না।
– তাহলে? ভাব বেড়ে গিয়েছে? আমার শার্টটা দাও। পান্জাবী খুলবো।
– কেন ভাব বাড়বে?
পূর্ণতা ছোট কাপড়ের ব্যাগ থেকে পূর্বের কালো শার্ট বের করে দেয়। পূর্ব বলে উঠে,
– ওহ্…তোমার ভাব বাড়েনি?
– বাইরে কাজ আছে পূর্ব। যেতে দাও।
– চুপ! স্বামী রেখে কিসের কাজ? আমি কি চলে যাবো? ডিরেক্ট বাড়ি ছেড়ে পার্টির অফিসে ঢুকবো! কি চলে যাবো?
– যেতে পারো।
– আমার প্রয়োজন শেষ?
– জানিনা। যেতে দাও পূর্ব।
– আমার কথার জবাব দাও!
– তোমার প্রাক্তন আনিশাকে জিজ্ঞেস করো না কেন? যার জন্য সকাল থেকে আমার উপর রাগ ঝারছো তাকেই জিজ্ঞেস করো।
পূর্ণতা সামনের দরজা ছেড়ে রুমের পেছনের দরজার দিকে চলে যায়। পূর্বকে চমকে দিয়ে কাঠের ডাসা টেনে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে যায়। পূর্ব রাগ থামানোর চেষ্টা করছে! প্রচুর রাগ উঠছে! সকাল থেকেই লুকোচুরি খেলছে পূর্ণতা! একটা সেকেন্ডও কাছে এসে বসছেনা! পেয়েছি কি? প্রয়োজন শেষ? পূর্ব রাগে থাবা দিয়ে সুইচ বোর্ডে ফ্যানের সুইচ টিপে দেয়! পান্জাবীর বোতাম পারেনা টেনে ছিড়ে ফেলার উপক্রম! দু হাতে পান্জাবী খুলে পূর্ণতার দেয়া শার্ট ছুড়ে কাপড়ের ব্যাগ থেকে অন্য শার্ট বের করে গায়ে দেয়। বোতাম সবগুলো লাগিয়ে হাতের ঘড়িটা খুলে আয়মানকে ডেকে বলে,
– পাশে ফার্মেসী আছেনা? এক পাতা প্রেজাল-২০ নিয়ে আসো!
– ভাই ঘুমের ট্যাবলেট খাবেন? মাথা ধরবোনা?
– ধরুক! তুমি আনবে নাকি আনবেনা!
– আল্লাহ্ ছি ছি…এমনে যে কেন বলেন। আমি আনি আপনে বসেন।
পূর্ব বিছানায় বসে সিলিংয়ে মুখ করে চোখ বন্ধ করে আছে। হঠাৎ দরজায় কেউ ঠকঠক করে উঠলে পূর্ব চোখ নামিয়ে দেখে দিহান মাথাটা উকি দিয়ে ভেতরে আসার জন্য অনুমতি চাচ্ছে। পূর্ব কপাল চুলকাতে চুলকাতে বিড়বিড় করে বললো, ‘আরেক পাগলের আমদানি’। পূর্বের কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে দিহান বিনয়ীসূচকে বলে উঠলো,
– ব্রাদার আসবো?
– আসুন। পূর্ব ভদ্রতার হাসিতে বললো।
নীলচে পান্জাবীতে সাদা প্যান্ট পরা
সুদর্শন দিহান দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পূর্বের পাশে বিছানায় বসে পরলো। ঠোঁটে অমায়িক হাসি রেখেই বললো,
– তো ব্রাদার, ডিস্টার্ব করলাম নাতো?
– না ডিস্টার্বের কিছু নেই।
– মাইন্ড না করলে কিছু বলতে চাই।পারমিশন আছে?
– আপনি বড় জামাই। এখানে আমার পারমিশন নেওয়ার কিছুই নেই। স্বচ্ছন্দে বলুন।
– আপনার আর শ্যালিকার কাটাকাটি দেখে মনেহচ্ছে ঝামেলা হয়েছে। আসলে ব্রাদার আপনার আর আমার একই দশা। বিয়ের দিন থেকে কেউই শান্তি পাইনি।
সকাল থেকেই পূর্বের মৃদ্যু ধাচের মাথাব্যথা ছিলো সেটা বাড়তে বাড়তে এখন তুখোড় হয়েছে। এই মূহুর্তে দিহানের কথা শোনার ইচ্ছা না হলেও ভদ্রতার লেশে কিছুই বলতে পারছেনা। পূর্ব জিজ্ঞেস করলো,
– ভাই আপনার সমস্যাটা বুঝলাম না। ভেঙ্গে বলবেন?
– আমার বিয়ের রাতে বউয়ের কাছে গেলাম। ও বললো ওর নাকি মেয়েলি সমস্যা বাসর করতে পারবেনা। আমি আর বাধা দেইনি। বললাম চলো গল্প করে কাটাই। ও তাতেও সায় দিলো না। ওর খুব ক্লান্ত লাগছে এখন ঘুমাবে। চিন্তা করলাম বিয়ে নিয়ে আমাদের যেমন স্বপ্ন থাকে ওদের তো মনে কষ্ট থাকে। বাবা মা ছেড়ে আসতে হয়, কতো ধকল নেওয়া লাগে, আরো কতো কি। ও ঘুমিয়ে পরলো। আমি আর সেদিন ঘুমাতে পারিনি। মেরিনের চাকরি তো জানেন ব্রাদার? জাহাজ, সমুদ্র নিয়েই আমাদের জীবন চলে। পরিবারের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ তেমন থাকেনা। একা একা থাকি, আশেপাশে তাকালে শুধু পানি আর পানি। কেউ নেই। কষ্ট লাগে ব্রাদার। সবার সাথে হাসিখুশি থাকলেও আমার বউয়ের কাছে নিজের একাকিত্ব ভাগাভাগি করতে পারিনা। বছরের মধ্যে দু’মাস ছুটি পাই কিনা সন্দেহ তাও যদি বাড়ি এসে শান্তি না পাই জীবনটা শূন্য লাগে।
পূর্ব মাথাব্যথায় চোখ ঝাপটাচ্ছে। দিহান অন্যমনস্ক হয়ে নিজের গল্প করলেও পূর্বের দিকে ধ্যান নেই। এদিকে দিহানের কোনো দোষ নেই। আনিশার মনে এখনো পূর্ব নামক ভ্রমর বসে আছে সেটা আর কেউ না জানলেও পূর্ব পরিস্কার জানে। পূর্ব বলে উঠলো,
– আপনি তো আমার বড়? ঠিক না?
– হ্যাঁ, মেবি তিন বছর।
– একটা সাজেশান দেই শুনেন। বউ আর স্ক্রু দুইটাই টাইট দেওয়া লাগে। ঢিলা হয়ে গেলে যন্ত্র ও জীবন নষ্ট করতে পারে।
– বউ পেটাবো?
– বউ পেটাবেন কেন? টাইট দেওয়া মানেই কি বউ পেটানো? বউকে শাষিয়ে রাখবেন পারলে নরমভাবে বোঝাবেন…যদি না শুনে সেটা অন্য হিসাব।
– ও তো শোনে না। হানিমুনে নিয়ে গেলাম তাও একদিন ওর সাথে কাটিয়েছি কিনা সন্দেহ। রাতে আমি কি যে ঘুম ঘুমাতাম। টের পাইনা।
– আপনি নিশ্চয়ই ড্রাগ খান না? খান?
– না।
– আপনি মাতালও না আবার ড্রাগ এডিক্টেড না। বোঝা উচিত ছিলো আপনার বউ নিস্তার পাওয়ার জন্য আপনাকে ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়াচ্ছে।
– কি ডেন্জারাস! কি বলেন?
– ভাই আমি মিছেমিছি এসব বলে আপনাকে কষ্ট দিচ্ছিনা। যা সত্য তাই বলছি। আমার কাজ তো জানেন নিশ্চয়ই?
– পলিটিক্স করো। শুনেছি। কিন্তু তুমি যে আমার চেয়েও ছোট হবে সেটা ভাবিনি।
– হা হা, আপনি পলিটিশিয়ান দিয়ে বুড়ো টাকলা ভুড়িওয়ালা বুঝেন? আমি ইয়াং জেনারেশন থেকে ভাই। তরুণ সমাজের পক্ষ থেকে দলে নেমেছি। কমিউনিস্টেও ছিলাম কিছুদিন, এখন আর নেই।
– কমরেড?
– কমরেড তো উঁচু পদ। আমি কমরেড নাও তো হতে পারি। তাছাড়া এখন তো আর কমিউনিস্টে নেই।
– তোমার চালচলন ‘কমরেড’ না হলেও কমরেডের মতোই।
– অনুমান সঠিক। একসময় ‘কমরেড’ ছিলাম। আপনার ওয়াইফের ব্যাপারে যা বললেন তা নিয়ে শুধু এটাই বলবো বউ চোখে চোখে রাখেন। সাবধানের উপর মার নেই।
– বুদ্ধি তো ভালোই দিলেন ব্রাদার! তো ভবিষ্যতে কবে নেতা দেখার সৌভাগ্য পাবো?
– পাবেন শীঘ্রই। ভাই আমার মাথাব্যথা হচ্ছে খুব। একটু ঘুমাবো।
– সে কি ব্রাদার? বিকেলে বড়বাড়ি যাবেন না? সবাই তো কোন্ আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্ল্যান করছে ।
– আমি যাবো না ভাই। মাথা ফেটে যাচ্ছে। আপনার শ্যালিকাকে বলে দিবেন স্বামীকে রেখে ঘুরে আসতে।
দিহান বিছানা ছেড়ে দরজা খুলে চলে যেতেই পূর্ব ধুম করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। মাথাব্যথায় কপালের দুপাশের রগ টানা দিচ্ছে।হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে কপালের দুপাশে চেপে ধরে কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করতেই আয়মান ট্যাবলেটের পাতা নিয়ে রুমে ঢুকে।
– ভাই দেরি করলাম। প্রাজেল-২০ এখানে পাওয়া যায়না। বাজারে যেতে হইছিলো। আমি পূর্ণতাকে ডাকবো?
– না। লাগবেনা। তুমি যাও।
পূর্ব বিছানা থেকে উঠে দুটো ক্যাপসুল গিলে বিছানায় উবু হয়ে ঘুমিয়ে পরে। প্রচণ্ড মাথাব্যথা থেকে রেহাই পাওয়া অত্যাবশ্যক! মাথা ছিড়ে যাচ্ছে উফ!
.
সন্ধ্যার বেগুনি আভায় ছেয়ে যাওয়া আকাশটা এখন রাতের কালো আধারে মিলিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। জানালাগুলো খোলা থাকলেও কোনো আলো আসছেনা ভেতরে। পূর্ব এখনো উবু হয়ে ঔষুধের ডোজে ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ মনে হলো কেউ রুমে ঢুকে ওর বিছানায় বসলো। পূর্ব টেনেও চোখের পাতা খুলতে পারছেনা। কেউ গায়ের শার্ট ধীরে ধীরে উপরে উঠাচ্ছে, পিঠে ঠোঁটের স্পর্শ বসাচ্ছে পূর্ব ষষ্ঠইন্দ্রিয় দ্বারা সব টের পাচ্ছে কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হাত পা নাড়াতে পারছেনা। পূর্ব কি ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখছে? অবচেতন মন পূর্ণতাকে কাছে টেনে এমনটা ভাবাচ্ছে? যদি স্বপ্ন হয়েই থাকে তাহলে স্বপ্নটা এক্ষুনি ভাঙ্গুক! পূর্ব সবকিছু ঘুমের ঘোরে না বাস্তবতার চোখে উপলব্ধি করতে চাচ্ছে। উপুড় হয়েই বিড়বিড় করে মাতালের মতো বলে,
– সারাদিন দূরে থেকে এখন আদর করছো? কথা নেই। আমি কথা বলবো না তোমার সাথে। আমার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করবেনা। রাগ ভাঙবেনা।তুমি চুমু দিতে থাকো লাভ নেই….
পিঠে অসংখ্য ঠোঁট ছুয়িয়ে পূর্বকে ঠেলে সোজা করে শোয়ায়। পূর্ব চোখে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা। পেটের উপর ভারি বস্তুর মতো ভার অনুভূত হচ্ছে ওর। আচ্ছা পূর্ণতা কি পেটের উপর বসেছে? বুকে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে কেন? রাগ ভাঙাতে? অসম্ভব! পূর্ণতার কোনো কথাই পূর্ব আজ শুনবেনা। নো মাফ! নো ক্ষমা! মাথা কেমন চিলিক দিয়ে ঝিমঝিম করছে। প্রত্যেকটা নার্ভ কারেন্টের মতো ঝিমুনি দিয়ে উঠছে। ঘুমের ঔষুধ দুটো খাওয়া একদম উচিত হয়নি পূর্ব তা ঘুমের ঘোরে ভাবতে লাগল। পূর্ব বারবার নিজেকে বোঝাচ্ছে সে এখনো ঘুমে আছে এসব যা হচ্ছে সবই অবচেতন মন দেখাচ্ছে। সচল মস্তিষ্ক অনুভব করছে কেউ ওর শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বুকের বোতামগুলোও খুলে ফেলেছে। কি অদ্ভুত! পূর্ব চেষ্টা করেও হাত পা নাড়াচাড়া করতে পারছেনা! হাত কেমন অবশ হয়ে আছে। চোখের পাতা খুব জোর দিয়ে খুলে আবছা আবছা যা দেখছে মনেহচ্ছে একটানে কেউ নিজের জামাটা খুলে ফেললো। পূর্ব মাথা ঝাকাতে চেষ্টা করছে এটা স্বপ্ন না! এটা হ্যালুসিনেশন হতেই পারেনা! পূর্বের ব্রেন খুব শার্প এইমুহূর্তে সে কোনো স্বপ্ন নামের হাবিজাবি দেখতে পারে না। স্বপ্ন ভাঙার উপায় একটাই যেকোনো উপায়ে শরীরে ব্যথা দেওয়া! চিমটি বা কামড় দিলেই মস্তিষ্ক ব্যথার সাইরেন পেয়ে স্বপ্ন ধুলিসাৎ করে দিবে! পূর্ব কিছু করবে তার আগেই সেই অজ্ঞাত মানুষটা পূর্বের উপর ভর ছেড়ে দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে! পূর্ব চমকে উঠে গা শিউরে কপাল কুচকে ফেলে! নিচের ঠোঁটে কামড় দিতেই পূর্ব তৎক্ষণাৎ ধড়ফড় করতে থাকে! সে কেউ একজনটা অবশ্যই পূর্ণতা না! ঘ্রাণেন্দ্রিয় সজাগ হয়েছে তার! পূর্ণতার গায়ের গন্ধ ও স্পর্শ সবটার সাথে পূর্ব পরিচিত কিন্তু এখনকার স্পর্শ পূর্ণতার না! পূর্ব ধাক্কা দিয়ে সরাতে নিবে তখন বুঝতে পারলো কঠিনভাবে জব্দ করেছে ওকে! চুলগুলো খামচে ধরেছে দুহাতে, যে ধরেছে তার শরীরে জামা নেই, পূর্ব যে হেব্বি ডোজের ঔষুধ খেয়েছিলো সেটাও সে জানে! পূর্ব কিছুটা স্থির হয়ে হঠাৎ এমন জোরে ধাক্কা মারে তাল বিগড়ে খাট থেকে ধপাস করে ফ্লোরে পরার শব্দ আসে! পূর্ব মাথা ধরে চটজলদি বিছানা থেকে নামে। অন্ধকারময় রুমে কিছুই পরিদৃষ্ট না, ক্ষনে ক্ষনে মাথাও চক্কর দিয়ে উঠছে। পূর্ব অনুমানের ভিত্তিতে হাতরাতে হাতরাতে দরজার ছিটকিনি খুলে। পেছনে তাকিয়ে অর্ধনগ্ন কে ছিলো সেটা দেখার মতো স্থিতিতে ও নেই! কতক্ষনে এই বিপর্যস্ত হামলা থেকে পালিয়ে উঠবে সে চিন্তা মস্তিষ্কে জেঁকে ধরেছে। মাথার চুল টেনে উঠোনে দাড়িয়ে চোখ খিচুনি দিতেই হঠাৎ কেউ বলে উঠলো,
– জামাই? কিছু হইছে? কিছু লাগবো?
পূর্ব চুলের হাত ঢিলে করে চোখ খুলে পিছনে তাকিয়ে দেখে পূর্ণতার মামী কুলা হাতে দাড়িয়ে আছে। পূর্ব গলা ভিজিয়ে বলে উঠে,
– ননা মামী। মাথাব্যথা তো…
পূর্ব গলা দিয়ে আর কিচ্ছু বের করতে পারেনা। চোখ বারবার বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস ছাড়ছে ও। পূর্ণতার মামীর প্রচুর খটকা লাগছে এখন। হাতের কুলা মাটিতে নামিয়ে তাড়াহুড়ো কন্ঠে বলে উঠে,
– আমি পূর্ণতারে ডাক পারি। তুমি খাড়াও।
পূর্ব একবার আকাশের দিকে মুখ করে শ্বাস নিচ্ছে আরেকবার হো হো করে শ্বাস নিচ্ছে।অযথা ঢোক গিলছে। মাথায় টনটন ব্যথা হচ্ছে। মাটিতে লুটিয়ে পরতে ইচ্ছে করছে ওর। ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি থেকে বেঁচে আসার পরও নিজেকে শান্ত করতে পারছেনা পূর্ব। চোখ বন্ধ করতেই ছায়ার মতো কেউ ওর পেটের উপর বসে চুমু খাচ্ছিলো সেই বিশ্রী দৃশ্য ভাসে! বাতাসের মধ্যে দাড়িয়েও পূর্ব লাগাতার ঘেমে নেয়ে ভিজে উঠছে। হঠাৎ বাড়িতে ঢোকার রাস্তা দিয়ে দেখে পূর্ণতা দৌড়ে ওর কাছে আসছে। এটা কি ভুল দেখছে? মাথা এমন করছে কেন? পূর্ণতা কাছে এসে পূর্বের গালে শরীরে হাত রেখে অস্থির গলায় বলে উঠে,
– তোমার কি হয়েছে? মুখ ফ্যাকাশে হয়েছে কেন? মামী না ডাকলে কি হতো!! পূর্ব শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে?
পূর্ব মুখ হা করে শ্বসনপ্রক্রিয়া চালানো ছাড়া কিছুই করতে পারছেনা। অদ্ভুত জড়তায় গলা দিয়ে কথাও বের হচ্ছেনা। পূর্ণতা পূর্বের শরীরের দিকে ঠিক করে তাকাতেই কপাল কুঁচকে যায়। শার্ট খোলা? পূর্ব ভুলেও বাইরের মানুষের সামনে শার্ট খোলা অবস্থায় বেরুনোর চিন্তা করেনা। পূর্ণতা পূর্বকে শান্ত করার জন্য হাত ধরে বাঁধের দিকে নিয়ে যায়। বাধেঁর মেটো রাস্তায় উঠে একটা পুকুর পাড়ের কাছে নিয়ে গাছের মোটা গুড়ির উপর বসায়। কড়ই গাছটা ঝড়ের তান্ডবে মাটি থেকে বিচ্যুতি হয়ে পরে গিয়েছিলো মাটিতে। পূর্ব পুকুরের দিকে নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে থম মেরে তাকিয়ে আছে। নিশ্বাস এখনো স্বাভাবিক হয়নি। পূর্ণতা পূর্বের মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে নরম গলায় জিজ্ঞেস করে,
– কি হয়েছে? আমাকেও বলবেনা? খারাপ স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙেছে?
পূর্ব নাক ফুলিয়ে মুখ হা করে এখনো অনবরত নিশ্বাস ছেড়ে যাচ্ছে। কপালের ঘাম কানের পাশ দিয়ে টপ টপ করে পরছে। পূর্ণতা শার্টে হাত লাগিয়ে বোতাম লাগাতেই বলে উঠে,
– তুমি শার্ট খুলে কখনো বাইরে বের হও না। বলো না কি হয়েছে? কেন তোমার শার্ট খোলা? কিছু না বললে আমি বুঝবো কি করে?
পূর্ব ঢোক গিলে চোখ বন্ধ করতেই আবারো সেই বীভৎস সিনটা ভেসে উঠে! সাথে সাথে ভয় পাওয়ার মতো চমকে উঠে ঝট করে চোখ খুলে পূর্ব। এবার পূর্ণতা নিশ্চিত! পূর্ব খারাপ কিছু দেখেছে নয়তো পূর্বের মতো বিচক্ষনতার মানুষ কখনো এমন শিউরে উঠেনা। পূর্ণতা মাথাটা টেনে জড়িয়ে ধরতেই মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠে,
– তোমার সাথে খারাপ কিছু হয়েছে? পূর্ব বলো? চুপ করে থেকো না।।
পূর্ব ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,
– পাপানি খাবো। পানি আনো।
পূর্ণতা বিষ্ময়সূচকে ছেড়ে দেয়। পূর্ব তোতলাচ্ছে? পূর্ণতার বুকটা ধ্বক ধ্বক করে উঠছে। পূর্ব ভালো নেই। একদম ভালো নেই। কেন ওকে একা রেখে বড়বাড়িতে গেলো! নাহলে পূর্ব এমন অস্বাভাবিক আচরণ করতো না। পূর্ণতা ওকে বসিয়ে রেখে শাড়ির কুচি আকড়ে পানি আনতে দৌড় লাগায়। তাড়াতাড়ি পানি আনার জন্য শ্রেয়ার রুমটা কাছে তাই ওর রুমে ঢুকে টেবিলের কাছে চলে যায়।। হৈচৈ শোনা যাচ্ছে বাইরে থেকে। সবাই বোধহয় ফিরে এসেছে। পূর্ণতা পানির গ্লাস হাতে পেছনে ঘুরতেই শ্রেয়ার সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়। শ্রেয়া অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে প্রশ্ন ছুড়ে বলে,
– কিরে পানি কার জন্য?
– পূর্বের জন্য দোস্ত। ও কেমন জানি করছে।
– ভাইয়া অসুস্থ?
পূর্ণতা জবাব না দিয়েই পা চালিয়ে বাইরে যায়। বাঁধে ঢুকে পুকুরপাড়ের কাছে যেতেই বুকটা কেঁপে উঠে! পূর্ব এখানে নেই! পূর্ব কোথায়? ও দুইমিনিটের মধ্যে কোথায় গেলো? পূর্ণতা হন্যে হয়ে চর্তুদিকে পানির গ্লাস হাতেই খুজঁলো। পূর্ব ছলচাতুরি করে বাহানা দেখিয়ে পানি আনতে পাঠিয়ে চলে গেল? পূর্ণতা ধপ করে গাছের গুড়ির উপর বসতেই ফুপিয়ে কেদেঁ দেয়। ঘন্টাখানেকের মধ্যে পূর্বের সাথে কি হয়েছে? পূর্ব স্বাভাবিক নেই, একদম ভালো নেই, ওর মুখটা খারাপের লক্ষণই প্রকাশ পাচ্ছিলো….
‘ চলবে ‘
#FABIYAH_MOMO ?
#ফটো_ক্রেডিট : @Mehazabien Muhurto.
( নোটবার্তা : ৩৭০০+ শব্দ )