Ex গার্লফ্রেন্ড
পর্বঃ২০
#আবির হাসান নিলয়
রেডি হয়ে সবার জন্য অপেক্ষা করছি তখন
জান্নাতের সাথে সাদিয়া বাসায় আসলো।
তবে হুট করেই জান্নাত বলল….
জান্নাতঃআগে যা হয়েছে ভুলে যা,কিন্তু এখন
যদি তুই নিলয়ের দিকে কুনজরে দেখিস
তাহলে কিন্তু তোর খবর আছে।
সাদিয়াঃআরে ধুর,ওসব আর কখনো হবে না।
জান্নাতঃহুম,এখন ওদের কাছে যা
সাদিয়াঃহুম..(চলে গেলো)
জান্নাতঃআপনার আবার এতো সুন্দর করে
সাজার কি দরকার ছিলো?
আমিঃকোথায় সাজলাম?
জান্নাতঃতো এগুলো কি?
আমিঃবাসায় লোকজন আসছে,সবার সামনে
কি পুরাণ ড্রেস পরেই থাকবো?
জান্নাতঃহুম,কারণ আমার ফ্রেন্ডরা সবাই
পেত্নী। যদি আমার থেকে কেড়ে নেয়..!
আমিঃতোমাকে ধরে রাখবো তাহলে কেউ
নিতে পারবে না।
জান্নাতঃচলো রুমে যায়
আমিঃএকটু পর কেক কাটবে হয়তো,তোমার
ফ্রেন্ড আর তুমি যদি না থাকো তাহলে কেমন
দেখাবে বলো তো।
জান্নাতঃহুম,দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে না
আমিঃসোফায় গিয়ে বসো
জান্নাতঃনা এখানেই থাকি,তুই যদি আবার
লুচ্চামি করোস।
আমিঃহোপ,আমি লুচ্চামি কোথায় করি?
জান্নাতঃতো সব মেয়ে তোর কাছে কেন আসে
আমিঃআমার শরিরে মধু লাগানো আছে,তাই
মেয়েরা মৌমাছির মতো কাছে আসে।
জান্নাতঃতাহলে চল এখনি সাবান দিয়ে
গোসল করবি।
আমিঃআচ্ছা আমি তোমার সাথেই আছি।
জান্নাতঃগুড বয় ফান্টু?
আমিঃআবার এই ফান্টু?
জান্নাতঃভালো লাগে কইতে হিহিহি
জান্নাতের সাথে কথা বলার মাঝে সুমু আর
রাত্রি আমার থেকে জান্নাতকে নিয়ে গেলো।
এদিকে রাফিও চলে আসছে।
রাফিঃকি খবর?
আমিঃতোর কি খবর?জয় কোথায়?
রাফিঃসালা নাকি আসতে পারবে না।
আমিঃওহ,তো তোর কি খবর?
রাফিঃআমার আবার কিসের খবর?
আমিঃপ্রেম টেম করিস নাকি?
রাফিঃহোপ ব্যাটা প্রেম করবো কেন?
আমিঃনা,এখন দেখি বেশিরভাগ সময় কানে
ফোন লাগিয়ে থাকিস।
রাফিঃএকটা ফ্রেন্ড
আমিঃমেয়ে ফ্রেন্ড?
রাফিঃআরে ছেলে মেয়ে কি আসে যায়
আমিঃহুম সেটাই,প্রেম না করাই ভালো।
রাফিঃকেনো?
আমিঃপ্রেম করার থেকে ডিরেক্ট বিয়ে করলে
সেটাই ভালো হয়।
রাফিঃতাহলে তুই প্রেম করছিস কেন?
আমিঃআমার তো ছোট বেলার প্রেম
রাফিঃহু
আমিঃতবে মাহি নিলুদের অ্যারেঞ্জ বিয়ে হবে
রাফিঃতুই কিভাবে জানিস?
আমিঃপাত্র আমি ঠিক করবো তাই
রাফিঃওহ
আমিঃহুম
রাফিঃআচ্ছা তুই থাক আমি জান্নাতের সাথে
একটু কথা বলে আসছি।
আমিঃহো যা
আমার থেকে রাফি চলে যেতেই হেসে দিলাম
সালা পাগল একটা।নিজের মুখে ভালোবাসি
বলবেও না,আবার মাহিকে নিয়ে পালিয়েও
যাবে না।দাঁড়িয়ে ফোন চালাচ্ছি তখন
জান্নাত এসে আমাকে রুমে নিয়ে গেলো।
আমিঃকি হলো গো?
জান্নাতঃঢং করো আমার লগে?
আমিঃতোমার লগে ঢং কেনো করবো?
জান্নাতঃহো দেখতেই পারছি,বাইরে আমাকে
দেখছিলিই না।
আমিঃএখন দেখি তাহলে..(জান্নাতের কোমর
ধরে কাছে টেনে নিয়ে আসলাম।)
জান্নাতঃথাক কিছুই করা লাগবে না।
আমিঃকেনো ভয় পাচ্ছো নাকি?
জান্নাতঃভয় পাবো কেনো শুনি?
আমিঃতো বললে কেনো কিছুই করা লাগবে না
জান্নাতঃআমার কাতুকুতু লাগতেছে?
আমিঃকিহহ?
জান্নাতঃচুপ
আমিঃএকটু আদর করি আমার পাগলিটাকে
জান্নাতঃবিয়ে করে আদর কইরেন,তখন
কেউ বাধা দিবে না।
আমিঃএখন কে বাধা দিবে শুনি?
জান্নাতঃআপনার হবু বউ
আমিঃআমার বউটার গায়ে শক্তি নাই
জান্নাতঃকইছে?
আমিঃএখন থেকে ভিটামিন লাভ খাবে।
জান্নাতঃসেটা কি?
আমিঃআমার কাছে আছে,দেবো?
জান্নাতঃদেখি কেমন ভিটামিন, দাও
আহ,এটার সুযোগেই তো ছিলাম আমি?
জান্নাতের থেকে কথাটা শুনে জান্নাতকে
আমার দিকে টেনে এনে দুজনের ঠোঁট এক
করে দিলাম।জান্নাত বার বার ছাড়াতে চেয়েও
যখন ব্যর্থ হচ্ছিলো তখন সব ছেরে দিয়ে
নিজেও আমার ভিটামিন লাভের নেশায় পড়ে
গেলো।বেশি কিছুটা সময় যাবার পর এবার
জান্নাতকে ছেড়ে দিতেই জোরে জোরে নিশ্বাস
নিতে শুরু করলো।পাগলিটার দিকে মুচকি
হাসছি তখন বললো….
জান্নাতঃআগে জানলে কখনোই বলতাম না
আমিঃকিন্তু এখন থেকে তো নিয়মিত দিতে
হবে আমার হবু বউটাকে।ভিটামিনের অভাবে
আমার বউটা একদম শুকিয়ে যাচ্ছে।
জান্নাতঃকোনো দরকার নেই,আমি এখন
এমনিতেই খাবার খেয়ে মুটকি হয়ে যাবো।
আমিঃহাহাহা
জান্নাতঃচুপ একদম হাসবি না কুত্তা
আমিঃতো কান্না করবো নাকি
জান্নাতঃযেটাই করবি কর,বাট নো হাসি
আমিঃআচ্ছা আমি কাদি?
জান্নাতঃওলে আমার বাবুতা,আচ্ছা কেদো না
আমিঃতাহলে একটা ভিটামিন লাভ দাও?
জান্নাতঃলুচু হারামি
আমিঃনা দিলে মনে রাখবো
জান্নাতঃহুম মনে রাখো,এখন আমি বাইরে
গেলাম।
আমিঃঠিক আছে।
জান্নাত চলে যাবে তখনি আবার দরজার
সামনে থেকে ফিরে আসলো।
জান্নাতঃআসল কথাটাই তো বলা হয়নি
আমিঃকিসের কথা?
জান্নাতঃতুমি রাফিকে কি বলছো?
আমিঃহাহাহা,তোমাকে নালিশ দিছে নাকি?
জান্নাতঃছেলেটা পুড়ো কান্না করে দিচ্ছিলো।
কি বলছিস ওকে?
আমিঃমাহি আর নিলুর অ্যারেঞ্জ বিয়ে দেবো
জান্নাতঃতুমিও হারামি কম না।
আমিঃহিহি?
জান্নাতঃছেলেটা মাত্র কাউকে ভালোবাসতে
শিখেছে।আর আপনি ওকে ভয় দেখাচ্ছেন।
খুব ভালো লাগছে তাই না?
আমিঃআচ্ছা সরি
জান্নাতঃচলো বাইরে গিয়ে কেক কাটি
আমিঃওকে চলো
জান্নাতঃতোমাকে কেউ খাইয়ে দিলে খাবে না,
যেটা আমি দেবো সেটা খাবে।
আমিঃকেনো?আমাকে দিলে আমি না খেয়ে
কাকে দেবো?
জান্নাতঃআমাকে☺
আমিঃপেটুক
জান্নাতঃহিহিহি
জান্নাতের সাথে বাইরে এসে দাঁড়ালাম।ওর
ফ্রেন্ড তাই অবশ্যই জান্নাত ওদের কাছেই
থাকতে হবে।আর এদিকে আমি আর রাফি
হলাম ওদের মাঝে ভাড়াটিয়া। দুজন আলদা
হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।যদিও আমাদের
মতো অনেক ছেলেই দাঁড়িয়ে আছে।তবে
সেখানকার কিছু ছেলেকে চিনি না।কারণ
তারা আমাদের কলেজেরই না।সবগুলো
হলো জান্নাতের ফ্রেন্ডদের বয়ফ্রেন্ড।তাদেরও
কিছুই করার নেই,মেয়েদের বার্থডে বলে কথা
—ভাই আপনারা কাদের বয়ফ্রেন্ড?
রাফিঃবয়ফ্রেন্ড মানে?
—না মানে এখানে যেসব ছেলে আছে সবাই
তো কারো না কারো বয়ফ্রেন্ড তাই না।
রাফিঃসবাই হলেও আমি না।
আমিঃআরে রেগে যাচ্ছিস কেনো?ছেলেটা
তো ভালো করেই কথা বলছে।
রাফিঃতাহলে তুই নিজেই কথা বল
আমিঃভাই ওর আসলে মাথায় সমস্যা
—ওহ,আপনার নাম জানতে পারি?
আমিঃনিলয়,আপনার?
—শুভ,আপনি কি সুমুর ফ্রেন্ড?
আমিঃফ্রেন্ড বলতে আমি ওর সিনিয়র
শুভঃতাহলে তো অনেক ভালো সম্পর্ক,কারণ
ওর ক্লাসমেট এবং আমাদের ছাড়া কাউকে
এখানে বলেনি।
আমিঃআমাকেও বলেনি
শুভঃবিনা দাওয়াতে চলে আসছেন?
আমিঃআসি নাই,ওরা নিজেরাই এখা…..
আর কিছু বলার আগেই জান্নাত আমাকে
নিয়ে ওদের কাছে গেলো।লক্ষ্য করলাম এখন
কেক কাটার পালা।সবাই বার্থডে উইশ করার
পাশাপাশি সুমু কেক কাটলো।প্রথমে ওর
ফ্রেন্ডদের খাইয়ে দিলো।যখন আমাকে দিবে
তখন জান্নাতের দিকে দেখলাম।জান্নাত হাসি
দিয়ে খাওয়ার জন্য সম্মতি জানানোর পর
খেয়ে নিলাম।তখন রাফি বলে উঠলো….
রাফিঃআমি কি দোষ করেছি?
জান্নাতঃতুই দোষ করবি কেনো?
রাফিঃনিলয়কে দিলি কিন্তু আমাকে দিলি না
জান্নাতঃতোকে তো অবশ্যই দিবে,আগে ওকে
তো খাওয়াতে হবে তাই না।
সুমুঃএদিকে আসো
রাফিঃহুম
আমাদের দিকে আসার পর সুমু রাফিকে
খাইয়ে দিলো।তখন শুভ ছেলেটার দিকে
লক্ষ্য করে দেখলাম ছেলেটা বেশ অবাক
হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমিঃজান আমি একটু আসছি
জান্নাতঃকোথায় যাবা?
আমিঃঐযে ঐ ছেলেটার কাছে
জান্নাতঃঠিক আছে
জান্নাতের থেকে এসে আবার শুভ-এর কাছে
আসলাম।
শুভঃজান্নাত আপুর বয়ফ্রেন্ড তাহলে আপনি।
তাই তো বলি,অন্য কাউকে তো এখানে আর
আসতে দিবে না।
আমিঃএই বাসাটাই আমার
শুভঃমানে?
আমিঃমানে হলো,ওরা বার্থডে পালন করার
দায়িত্ব আমাদের দুজনকে দিছিলো।আর
আমার বোনটা আমাদের বাসাতেই আয়োজন
করতে বলে।এদিকে আমিও রাজি হয়ে যায়।
শুভঃওহ
আমিঃআপনি এখানে?
শুভঃরাত্রির সাথে আসছি
আমিঃরাত্রিও বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে?
শুভঃঘুরতে আর পাড়লাম কই ভাই,অন্যরা
ঘুরলেও ওদের নাকি ঘুরতে ভালো লাগে না।
আর জান্নাত আপুর কিছু একটা হওয়ার
পর থেকে তো আমার সাথে তো ঠিকভাবে
কথাই বলে না।
আমিঃএখন থেকে বলবে
শুভঃভাই চলেন কোথাও থেকে ঘুরে আসি
আমিঃআমি যেতে পারবো না ভাই
শুভঃকেনো?
আমিঃঅনেক সমস্যা,অন্য একদিন বলবো
শুভঃঠিক আছে।
দুজন কথা বলছি তখন জান্নাত প্লেটে কিছু
খাবার নিয়ে এসে শুভকে দিলো।
আমিঃআমারটা কোথায়?
জান্নাতঃতুমি পরে,আগে সবাইকে দেয়
আমিঃহেল্প লাগবে?
জান্নাতঃআমরাই পারবো,তুমি কথা বলো।
আমিঃওকে,কতোদিনের রিলেশন আপনাদের
শুভঃদেড় বছর হবে হয়তো,আর আপনাদের
আমিঃক্লাস ১০ থেকে শুরু হয়ছে।
শুভঃভাই মিথ্যা বলছেন আপনি।
আমিঃবিশ্বাস না করলে ওর থেকেই শুনেন
শুভঃকখনো মনে হয়নি এই রিলেশন থেকে
নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে?
আমিঃঅনেকবার ব্রেকআপ হয়েছে আমাদের
তবুও দুজন এখন একসাথে আছি।
শুভঃঅনেক ভাগ্যবান
জান্নাতঃআমার মতো মেয়ে পেয়েছে তাই?
শুভঃআপনি উনার মতো ছেলে পেয়েছেন
জান্নাতঃআমরা এমনই,এখন রুমে চলেন।
আমিঃশুভ ভাইয়ের সাথে কথা বলছি তো..!
জান্নাতঃরাত্রি কথা বলবে এখন
আমিঃভাই তাহলে আমরা গেলাম
শুভঃআচ্ছা ভাই,তবে কথা বলে অনেক
ভালো লাগলো।
আমিঃআমারো
শুভকে ওখানে রেখে দুজন রুমে এসে খাটের
উপর দুজন সামনাসামনি বসলাম।জান্নাতের
হাতে থাকা খাবারের প্লেটটা আমাদের মাঝে
রেখে জান্নাত খাবারে হাত দিলো।
আমিঃপ্লেট কেনো??
জান্নাতঃখাবো তাই
আমিঃতাহলে একটা কেনো?
জান্নাতঃতো কয়টা হবে?
আমিঃসেখানে তো সবাইকে একটা করে
দিচ্ছিলে।তাহলে আমাদের দুজনের একটা
কিসের জন্য?
জান্নাতঃআমি ইচ্ছা করেই এনেছি।দুজন
এক প্লেটে খাবো।
আমিঃসেটা কেনো?
জান্নাতঃতুই খাবি কিনা তাই বল,না গেলে
প্লেট বাইরে রেখে দেবো?
আমিঃআরে রাগ করছো কেনো?
জান্নাতঃতো কি করবো,জানিস না কেনো
এক প্লেটে খাবার আনছি?
আমিঃনা বললে জানবো কি করে?
জান্নাতঃএক প্লেটে খাবার খেলে বরকত হয়
আমিঃসেটা তো বিয়ের পরে হয়
জান্নাতঃতাহলে চল বিয়ে করবো,করবি না
আমাকে বিয়ে?
আমিঃবিয়ে তো অবশ্যই করবো
জান্নাতঃতাহলে কথা বাদ দিয়ে খা।আর
কিছুদিন পর আমার বাসায় যাবি বিয়ের কথা
বলার জন্য।আব্বুকে কিছু বলার দরকার
নেই।যা বলার আম্মুকে বলবি সব।
আমিঃআচ্ছা।
জান্নাতঃহুম,এখন হা কর।
জান্নাত নিজে খাওয়ার পাশাপাশি আমাকেও
খাইয়ে দিতে লাগলো।যদিও আগে অনেকবার
খাইয়ে দিয়েছে তবে আজকের খাওয়াটা এক
অন্য রকম অনুভূতিতে ভরপুর ছিলো।
খাওয়া শেষ করে জান্নাতের কোলে বেশ কিছু
সময় মাথা রেখে কথা বললাম।জান্নাতের
বাসায় গিয়ে কি কি বলবো সেটা বলার সাথে
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো।তবে
বাইরে থেকে রাফির ডাক শুনে দুজন বাইরে
বের হয়ে আসলাম।এখন সবাইকে বিদায়
দেয়ার পালা।জান্নাত,রাত্রি এবং সুমু মিলে
ওদের অন্য সব ফ্রেন্ডসদের বিদায় দিয়ে
সুমু রাত্রিও চলে গেলো।জান্নাতের কপালে
একটা চুমু একে দিয়ে রাফির সাথে জান্নাত
এবং সাদিয়া চলে গেলো।
দুজনের ভালোবাসাতে খুব সুন্দর করেই
চলে যাচ্ছিলো দিনগুলো।
চলবে……..