Ex গার্লফ্রেন্ড
পর্বঃ১৩
#আবির হাসান নিলয়
সকালে চেঁচাচেচির কারণে ঘুম থেকে উঠলাম
সকাল সকাল আবার কি হলো…!শুয়ে না
থেকে উঠে রুমের দরজা খুলে দিতেই মাহি
বলতে শুরু করলো…
মাহিঃখালাম্মা তোমার ছেলের ঘুম ভাঙছে
আমিঃলাথি মারবো,এমন করে দরজা ধাক্কায়
মাহিঃতো ঘুম থেকে উঠিস না কেনো
আমিঃকি হয়েছে?
মাহিঃউনি এসেছে?
আমিঃকে..?
রুম থেকে উকি মেরে দেখলাম জান্নাতের
আম্মু আসছে।কিন্তু উনি আমাদের বাসায়
কি করতে আসছে..!
আমিঃকি বলছে রে?
মাহিঃকিছু নিয়ে কথা বলছে
আম্মুঃনিলয় এদিকে আয়
আমিঃহুম(উনাদের কাছে গেলাম)
আন্টিঃআজ আমাদের বাসায় আসো
আমিঃআপনার হাসবেন্ডকে দিয়ে আমাকে
মার খাওয়ানোর জন্য?
আম্মুঃনিলয়?
আমিঃসরি আম্মু
আন্টিঃসরি বলতে হবে না।আর আপা নিলয়
খারাপ কিছু বলেনি।ওর জায়গা অন্য কেউ
হলেও একই কথা বলতো।তবে তোমাকে
মার খাওয়াতে নয়,বাসায় একটা অনুষ্ঠান
আছে সেটার জন্য যেতে বলছি।
আমিঃকিসের অনুষ্ঠান?
আন্টিঃআজ রিহানের বার্থডে
আমিঃওহ
আন্টিঃতোমরা সবাই গেলে খুশি হবো।
আমিঃসরি আন্টি,আপনাদের বাসায় যেতে
আমার সমস্যা নেই।তবে আমি কোনোভাবেই
আপনার হাসবেন্ড কিংবা আপনার বাকি
ফ্যামিলির সাথে দেখা করতে চাই না।
আন্টিঃআমাদের জন্য এসো
আমিঃআব্বু আম্মু যাবে তবে আমি যেতে
পারবো না।
আন্টিঃতুমি সহ আসলে সবাই খুশি হবে।
আমিঃদেখি কি করা যায়।
আম্মুঃনিলয় যাবে চিন্তা করবেন না।
আন্টিঃএখন তাহলে উঠি
আম্মুঃকিছু খেয়ে যান
আন্টিঃআমি খেয়েই আসছি,অন্য একদিন
ঠিকই আসবো।তখন ইচ্ছামতো খাবো।
আম্মুঃঅপেক্ষায় থাকবো সেই দিনটার জন্য।
আন্টিঃখোদা হাফেজ
আন্টিকে আম্মু এগিয়ে দেয়ার জন্য উনার
পিছু পিছু গেলো।
মাহিঃবড়দের সাথে ভালো করে কথা বলতে
পারিস না?উনি গুরুজন আমাদের।
আমিঃতোরে বলছে
মাহিঃতোর জন্য খালাম্মা নিজেও কেমন
করছিলো।সব সময় বাজে কথা বলিস।
আমিঃসকালের খাবার বেরে দে?
মাহিঃপারবো না
আমিঃকেনো?
মাহিঃএমনেই পারবো না।তুই নিজেই বেরে খা
আমিঃদেনা বোন,অনেক ক্ষুধা লাগছে
মাহিঃদিমু না
দুজনের কথা বলার মাঝে আম্মু আসলেন।।
আম্মুঃকার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়
জানিস না?এখন উনি কি ভাববে বুঝতে
পারছিস?
আমিঃভাবার কি আছে?
আম্মুঃদেখ নিলয় আমাকে রাগাবি না।সব
কিছুর মাঝে জান্নাতের মায়ের সামান্যতম
দোষ নেই।তোদের জন্য নিজের সংসার আজ
দিনের পর দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু তুই কি
বললি?উনি তোকে মারার জন্য ডেকেছে?
আমিঃশুনো আম্মু….
আম্মুঃতুই আমার থেকে শোন,তোকে আর
জান্নাতকে এক করার জন্য বেচারি কতো
প্রকার কষ্ট সহ্য করছে শুধু তিনিই ভালো
জানেন।জান্নাতের বাবা তোকে মানবে না
বলে তিনি নিজেই জান্নাতকে আমাদের হাতে
তুলে দিয়েছেন।
আমিঃওর বাবার চোখ নেই,নিজের ভাইয়ের
মেয়ে এখন কি করে বেড়াই?
আম্মুঃসেটা তুই ওর আব্বুকে গিয়ে বল
আমিঃঠিক আছে আজ যাবো
আম্মুঃওখানে গিয়ে তুই প্রথমেই জান্নাতের
আম্মুর থেকে ক্ষমা চেয়ে নিবি।উনি তোকে
অনেক ভালোবাসে।
আমিঃআচ্ছা,এখন খাবার দাও
আম্মুঃবেরে খা
আমিঃবেড়ে খাওয়ার কি আছে?
আম্মুঃআজ তোর শাস্তি
আমিঃসরি তো বললামই
আম্মুঃতবুও
আমিঃযাও আমি একাই বেড়ে খেতে পারবো।
আম্মুঃগুড বয়
আর কোনো কথা না বলে সকালের নাস্তা
করে নিলাম।
সন্ধ্যার আগে বাসা থেকে বের হচ্ছি তখন
আব্বু ডাকলো…
আমিঃহ্যা আব্বু বলো
আব্বুঃযাচ্ছিস কোথায়?
আমিঃএইতো বাইরে যায় একটু
আব্বুঃএকটু পরে জান্নাতদের বাসায় যেতে
হবে।এখন আবার বাইরে কেনো?
আমিঃতোমরা বাসা থেকে যেও,আমি বাইরে
থেকেই চলে যেতে পারবো।
আব্বুঃতুই আলাদা কেনো যাবি?
আমিঃকিছু জিনিস কিনতে হবে।
আব্বুঃকিনে আয়,সবাই একসাথে যায়
আমিঃতোমরা যাও,আমি পাক্কা যাবো।
আব্বুঃসত্যি তো?
আমিঃহ্যা সত্যি
আব্বুর সাথে কথা বলা শেষ করে বাসার
বাইরে আসলাম।বাসার সামনে দাঁড়িয়ে
রাফির জন্য অপেক্ষা করছি তখন সুমুর
সাথে দেখা হলো।যদিও সুমু রিক্সা নিয়ে
আসছিলো তবে আমাকে দেখে থামালো।
সুমুঃজান্নাতদের বাসায় যাবে?
আমিঃনা
সুমুঃযাবে না?
আমিঃতোকে দাওয়াত কে দিছে?
সুমুঃজান্নাত
আমিঃআমাকে দেয়নি,তাই আমার যাওয়ার
কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
সুমুঃতোমাকে তো বলছে শুনলাম।
আমিঃকখন বলছে?
সুমুঃদুপুরে কল দিয়ে বললো,ওর আম্মু নাকি
তোমাদের বাসায় আসছিলো।
আমিঃআই নট জানি
সুমুঃসত্যি যাবে না??
আমিঃকমু না তোরে,তুই যা।
সুমুঃআমরাও আসবো না তোমার বাসায়।
আমিঃএখন থেকে আর কাউরে দাওয়াত
দিলে তো আসবি।সবাই চলে যাচ্ছি।
সুমুঃকোথায় যাবে?
আমিঃপরে শুনিস,এখন যেখানে যাচ্ছিস
সেখানে যা।
সুমুঃবাই
সুমু চলে যাওয়াত পর রাফি আসলো।ওকে
নিয়ে দুজন একটু বাজারে আসলাম।
আমিঃরিহানের জন্য কি কেনা যায়?
রাফিঃপিচ্চি ছবি আঁকতে পারে অনেক সুন্দর
আমিঃতাহলে আর্ট বক্স নেয়
রাফিঃচল সেটাই নেয়।আমাকেও কিছু কেনা
লাগবে।আব্বু আম্মু অবশ্য কিছু বলেনি।
তবে রায়হানের বন্ধু তাই রায়হানকে দিয়ে
কিছু দেয়ালে খুশি হবে।
আমিঃকি নিবি তুই?
রাফিঃপোলাপানকে কি দিলে খুশি হবে?
আমিঃআমি নিজেই জানিনা
রাফিঃচকলেট বক্স নিয়ে যায় চল
আমিঃদাঁত নষ্ট হয়ে যাবে
রাফিঃনিজের সালা তো তাই এমন বলছিস।
তুই নিজে যখন চকলেট দিস তখন কিছুই না
আমিঃসালা,চল কিনি।
দুজন কেনাকাটার পাশাপাশি একটা তিনটা
মেয়েদের ঘড়ি নিলাম।তিনটা নেয়ার কারণ,
নিলু,মাহি আর জান্নাত।ঘড়ি নিয়ে দোকান
থেকে বের হচ্ছি তখন মাহি কল দিলো।
আমিঃহ্যা বল
মাহিঃতুই আসবি না?
আমিঃগেছিস তোরা?
মাহিঃঅনেক আগেই
আমিঃএইতো আমিও আসছি
মাহিঃখালু কিন্তু রেগে যাচ্ছে
আমিঃবল কেনাকাটা করে মাত্র বের হলাম
মাহিঃতারাতারি আয়
আমিঃশোন
মাহিঃবল
আমিঃজান্নাত আছে?
মাহিঃজান্নাত আপুকে এখনো আমি দেখিনি।
হয়তো নিজের রুমে আছে
আমিঃওকে রাখছি
মাহিঃহুম
কল কেটে দিয়ে দুজন হাটতে শুরু করলাম।
বাসা থেকে বাজার বেশি দূরে না বলে হেটেই
চলাফেরা করি।কয়েক মিনিটের রাস্তা মাত্র।
জান্নাতদের বাসার সামনে এসে দেখলাম
অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে।দুজন বাসার
ভিতরে ঢুকে প্রথমেই নিজেদের পরিবারকে
খুঁজতে শুরু করলাম।রাফির থেকে আলাদা
হয়ে আব্বু আম্মুর কাছে আসলাম।
আমিঃকেউ কিছু বলেনি তো?
আব্বুঃকে কি বলবে?
আমিঃনা বললেই ভালো।এটা রিহানকে দিও
আব্বুঃআমরা আমাদের গিফট দিয়েছি।
আমিঃতাহলে এটা?
আম্মুঃতোর গিফট তুই দে
আমিঃআসছি ওয়েট
সামনের দিকে এগিয়ে যেতে আন্টির সাথে
দেখা হলো।
আন্টিঃতোমাকে দেখে খুশি হলাম নিলয়
আমিঃসরি আন্টি,আসলে সকালে কি থেকে
কি বলেছি।সেটার জন্য ক্ষমা করবেন।
আন্টিঃব্যাপার না
আমিঃএটা রিহানকে দিয়েন
আন্টিঃআর্ট বক্স?
আমিঃহুম
আন্টিঃতুমি এটা নিজ হাতে দিলে খুশি হবে।
আমিঃকোথায় আছে?
আন্টিঃজান্নাতের রুমে
আমিঃঠিক আছে
দাঁড়িয়ে না থেকে জান্নাতের রুমে গিয়ে নক
করার পর রাত্রি দরজা খুলে দিলো।
রাত্রিঃতুমি এখানে?
আমিঃরিহান কোথায়?
রাত্রিঃভিতরে
আমিঃসর সামনে থেকে
ভিতরে গিয়ে দেখলাম জান্নাতের ফ্রেন্ডগুলোর
সাথে রিহান আছে।হয়তো সবাই মিলে ওকে
গিফট করছিলো কিংবা অন্য কিছু।কারণ
জান্নাতের বিছানায় অনেক গিফট পরে আছে
সুমুঃতুমি না বললে আসবে না?
আমিঃআমার কথা বিশ্বাস করিস তাহলে?
সুমুঃএখন থেকে আর করবো না।
আমিঃনা করলে নাই,আর এটা তোর জন্য।
রিহানঃথ্যাংক ইউ
আমিঃআর এটা তোর।(জান্নাতকে ঘড়ি দিলাম)
রাত্রিঃবার্থডে রিহানের,জান্নাতের না।
আমিঃআমার ইচ্ছা,তগো কইতে বলছি?
রাত্রিঃআমাগো হাসি পাইতাছে
আমিঃমুখ বন্ধ করে হাস
জান্নাতঃআমাকে কেনো?
আমিঃদিতে মন চাইলো তাই
জান্নাতঃথ্যাংক ইউ
রিহানঃভাইয়া তুমি জানলে কি করে আমার
আর্ট বক্স ভালো লাগবে?
সুমুঃতোর বোন বলছে হয়তো
জান্নাতঃআমি বলিনি
আমিঃরাফি বলছে,তুই নাকি আর্ট সুন্দর
করিস।তাই এটা এনেছি।
রিহানঃঅনেক অনেক থ্যাংক ইউ
আমিঃহুম বাই
জান্নাতঃথাক এখানে কিছু সময়
আমিঃএখানে থেকে কি করবো?
জান্নাতঃকথা বলি
আমিঃনিচে আব্বু আম্মু আছে
জান্নাতঃআসছে সবাই?
আমিঃহুম
জান্নাতঃদোস্ত তোরা থাক আমি নিচে গেলাম।
আর কোনো কথা না বলে আমাকে রেখেও
রুম থেকে বের হয়ে গেলো।আমিও আর
রুমে না থেকে নিচে চলে আসলাম।নিচে
আসার পর দেখলাম জান্নাত আব্বু আম্মুর
সাথে কথা বলছে।এমন সময় জান্নাতের বাবা
আমাদের কাছে আসলো।আমাকে দেখলেও
কিছু বললো না।এতো ভিরের মাঝেও কারো
সাথে ফোনে আলাপ করছিলো।কিছু বলতে
চেয়েও বলতে পারছিলাম না।হঠাৎ রাফি
আসলো।
রাফিঃকি করছিস?
আমিঃএতো ভিরে কথা বলে লাভ নাই।এখন
তো মানুষজন ভিরের মাঝেই কথা বলতে
বেশি পছন্দ করে।
কথাটা বলে চলে আসতে যাবো তখন পেছন
থেকে ডাকার শব্দ পেয়ে থামলাম।অবশ্যই
জান্নাতের বাবা ডেকেছেন।
আঙ্কেলঃআমাকে কিছু বললে?
আমিঃআপনাকে কি বলতে যাবো?
আঙ্কেলঃতবে আমার মনে হলো তুমি আমাকে
মিন করে কিছু বললে।
আমিঃআপনি আমার কথা শুনছিলেন?
আঙ্কেলঃতোমার কথা কেনো শুনবো?
আমিঃতাহলে জানলেন কি করে?লুকিয়ে
কথা শোনা বন্ধ করুণ।
আঙ্কেলঃতোমার সাথে আমার এক্সট্রাভাবে
কথা আছে।
আমিঃকিন্তু….
জান্নাতঃকোনো দরকার নাই।তুই আমার
সাথে চল।আর আপনি অন্য কারো সাথে
গিয়ে আপনার কথা শেয়ার করুণ।
জান্নাত আমাকে সাথে নিয়ে আব্বু আম্মুর
কাছে নিয়ে আসলো।কিছু সময় পর বার্থডে
পার্টি শুরু হলো।কম বেশি অনেকেই মজা
করছিলো।সবার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে
আনন্দ মজা করে বার্থডে শেষ করলাম।
জান্নাতকে বলে বাসার বাইরে বের হবো তখন
একটা হৈচৈ শুরু হলো।ফ্যামিলি সহ আমি
ভাবলাম অনুষ্ঠান শেষ তাই এমন করছে।
তবে আসল ঘটনা পরেরদিন সকালে জানতে
পারলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে রুমের বাইরে এসে
দেখলাম জান্নাত চুপচাপ বসে আছে।
চলবে……….
সবার কাছে ১হাজার কমেন্ট চাই।আশা করি সবাই
পূরণ করবেন।