প্রণয় ডায়েরি পর্ব-৩২

0
446

#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ৩২

ঝলমলে অম্বরটা আঁধারে নিমজ্জিত হচ্ছে৷ দিন পেরিয়ে গোধুলিও শেষ প্রহর চলছে৷ মানুষের কোলাহল কমছে থমথমে হচ্ছে পরিবেশ৷
ছাদটা যখন পুরোপুরি ফাঁকা বাড়ির বড়রা তখন চেয়ার পেতে মাঝখানে বসলো৷
উদ্দেশ্য তদের ছোট ছেলের বিয়ের আলাপ সারবে৷ অবশেষে সবাই এক এক করে বসছে৷ তাফসিকে সাথে নিয়েই বসলো তিশান৷
সারা বিকেল হাত খানা শক্ত করে ধরে ছিলো এখনো ছাড়ছে না৷
এ ছেলের ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হয় হাত ছেড়ে দিলেই কেলেংকারী হয়ে যাবে মেয়েটা কোথাও চলে যাবে৷
তিশানের এহেন আচরণে বিরক্ত তাফসি মনে হয় ছেলেটা একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছে না?
ভালোবাসা ভালো কিন্তু ভালোবাসা যখন ভয়ংকর ভালোবাসায় পরিনত হয় তখন এক দিক দিয়ে ভালো লাগলেও অন্য দিকে বিরক্ত কাজ করে৷
তিশানের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাগলামি গুলো তাফসির চার দেয়ালের মধ্যে মন্দ না লাগলেও সবার সামনি অতি লজ্জা জনক আর বিরক্তের ব্যপার৷
তাফসির পাশেই চেয়ার টেনে কিঞ্চিৎ দুরত্ব রেখে বসলো মাহতাব৷ তা দেখে বাঁকা চোখে তাকালো তিশান পছন্দ হলো না মাহতাবে কাজ টা তিশানের৷
হৃদয় এসে মাহতাবের পাশে বসলো অতঃপর নিরবতা বিচ্ছিন্ন করে তাফসির বাবা গম্ভীর কন্ঠে তিশানের উদ্দেশ্যে বলে,
” কাল যা করেছিলে তা কি ঠিক হয়েছিলো? ”
” বেঠিক কি হয়েছিলো আংকেল?”
তিশানের এমন মুখের উপর উত্তরে সবাই বিস্মিত হলো ভরকালো অতঃপর সবাই তিশানের পানে দৃষ্টি দিলো৷ তিশানের মা বাবা ছেলের এমন কান্ডে ক্ষানিকটা লজ্জা পেলো৷ ছেলেটা বড়দের মুখে তর্ক করছে৷
তাফসিরো উত্তরটা পছন্দ হলো না৷ তিশান কে যতই ভালোবাসুক ওর বাবার মুখের উপর কেউ কথা বলুক তা ওর পছন্দ না একদম৷
সবাই অপছন্দ করলেও তাফসির বাবা মনে মনে প্রসন্ন হলো৷ মুখে তা প্রকাশ করলো না বা বুঝতে দিলো না৷ তিশান মুখের উপর উত্তর দিলেও ওর চোখে ভালোবাসার গভীরতা রয়েছে আত্মবিশ্বাস রয়েছে নিজের উপর যে ও কোন ভুল করেনি ও শুধু ওর ভালোবাসাকে পেতে এমন করেছে৷
আর তুলে নিয়ে বিয়ে করলেও কা-পুরুষের মত অন্য কোথাও নিয়ে যায়নি নিজের বউকে নিজের বাড়িতেই এনেছে৷
ছেলেটা স্পষ্টভাষী এমন ছেলেরা মন্দ হয় না৷
এ নিয়ে কিছু বললো না আর তাফসির বাবা৷ সে ফের অন্য কথা বললেন তিশানের বাবা কে,
“মেয়েকে নিয়ে যেতে চাই অতঃপর তিশান কোনো চাকরি পাওয়ার পর একটা তারিখ ঠিক করে তখন না হয় আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে টা হবে? এমনি কাল মেয়েকে কেউ না দেখে অনেক প্রশ্ন করেছে মেয়েকে না নিয়ে গেলে মেয়ের নামে সমালোচনা করবে তা আমি চাই না৷”
তিশান এবারো স্পষ্ট ভাবেই বললো,
“চাঁদ কোথাও যাবে না৷ এখানে ওয়ালিমাটা হোবে৷ কোনো চাকরি করবো না আমি৷ আমার যা আছে তা দিয়েই চাঁদ আমার কাছে থাকবে৷”
এই উত্তরটা পছন্দ হলো না তাফসির বাবার সে রেগে বলেন,
” বেকার ছেলের কাছে মেয়েকে রাখবো নাকি? শশুরের টাকায় খাবে নাকি মেয়ে? লোকে কি বলবে?আর আমার মেয়েকে নিয়ে সমালোচনা করুক মানুষ তা কি তুমি চাচ্ছো?”
তিশান ফের উত্তর দিলো,
“কে কি ভাবলো আমার তাতে কিছুই আসে যায় না৷ না আমার বউয়ের আসবে যাবে৷ ও তো ও বাড়ি আর যাবে না তো এতোসব চিন্তা করে লাব কি?আর রইলো কার টাকায় খাবে তাই তো? আমার বউ আমার টাকাতেই খাবে৷”
এবারো অসন্তোষ্ট হলো তাফসির বাবা সাথে বাকি সবাই তাফসির ও রাগ হলো৷ সাথে অবাকো ওর টাকায় খাবে কি করে? ও তাও কাজই করে না৷ এবার কি বেশি বেশি করছে না একটু? বড়দের মুখে মুখে তর্ক করছে৷
তিশানের বাবা আর ভাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে তিশানের দিকে৷ তারা এখানে আছে এই ছেলে তাদের কথা বলতে দিচ্ছেই না৷ ঝামেলা চায় নাকি ছেলেটা? আরাভ রেগে বলে,
“ভাই তোর কি মনে হচ্ছে না তুই বেশি বেশি করছিস?”
তিশান বাঁকা হেসে বলে,
“বাহ শশুর বাড়ির সাইড নিচ্ছিস? হুম মন্দ না৷ কিন্তু বাড়াবাড়ি কি করেছি? যা সত্যি তাই বললাম ওখানে আর ওকে কে যেতে দিবে? ওর উপর এখন আইনি আর ইসলামিক ভাবে শুধু আমার অধিকার ও নিজেও বলতে পারবে না৷”
ইশান ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলেন,
“বড়রা থাকতে তুই কথা বলছিস কেন? এক তো ভুল করেছিস এখন আবার এমন করছিস৷ বাবা চাচা কে তোর চোখে পরছে না? কেন যেতে দিবি না? আর আগেই বলেছিলাম বাড়ির ব্যাবসায় আমার সাথে কাজ কর কিন্তু তুই তো কানেই নিসনি৷”
তিশান কিছু বললো না৷ এই ছেলের বাড়াবাড়ির কারণ কেউ বুঝতে পারে না ছোট বেলা থেকে জালিয়ে আসছে মানুষ কে৷ বড় হয়েও ছাড় দিচ্ছে না৷ নিজের বিয়ের ব্যাপার এমন কেউ করে? বউ তো ওদেরো আছে এতো বাড়াবাড়ির মানে কি?
তাফসির বাবা বলেন,
” এই ছেলে কি বলছো তুমি? আমার মেয়ে আমার বাড়িতে যাবে না? দরকার পরে মেয়েকে সারাজীবন আমার বাড়িতে রেখে দিবো৷”
হৃদয় এবার আর চুপ থাকতে পারলো না রেগে বলে,
“কোনো বিয়ে হবে না তাফসি কে নিয়ে এখনি বাড়িতে যাবো আমরা৷ এ বাড়ির সাথে আর কোনো সম্পর্ক নেই৷”
হৃদয়ের কথায় ধক করে উঠলো তাফসির বুকটা আড়চোখে বাবার দিকে তাকালো৷ অতঃপর তিশানের দিকে এ ছেলেটা এমন কেন? সাধারণ একটা ব্যপারকে কত বড় বানাচ্ছে৷ কয়টা দিনেরই তো ব্যাপার এতোই যখন ওকে রাখতে চায় নিজের সাথে কিছু করলেই পারে সবাই যখন বেকারত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে কিছু করলেই হয় অফিসে গেলেই হয়৷ তিশানের মুঠো থেকে হাত টা ছাড়িয়ে নিতে চাইলো তাফসি ছারলো না তিশান৷ আরো শক্ত করে ধরলো৷ তাফসি আবার হাত টা ছাড়িয়ে নিতে চাইলো যা সবাই দেখলো৷ তিশান বাঁকা হেসে একবার হৃদয়ের দিকে আরেকবার তাফসির পানে তাকিয়ে বলে,
“রাগিয়ো না আমাকে চাঁদ ৷ কালকের কথাতো মনে আছে নিশ্চয়ই? তাহলে কালকের মতো অবস্থা হবে প্রতিদিন তোমার৷ অচেতন করেই না হয় আমার কাছে রেখে দিবো?”
তিশানের কথায় বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো তিশানের পানে সবাই৷ এই ছেলের অদ্ভুত অদ্ভুত আচরণের সাথে পরিচিত হচ্ছে আজকাল৷ এমন কেন ছেলেটা? বড্ড উন্মাদ এইটুকুতে এতো রিয়েক্ট?
হঠাৎ তাফসির বাবা থমথমে কন্ঠে বলেন,
“পুলিশ ইনফর্মা তুমি? আন্ডার কভার এজেন্ট তাইনা?”
থমকালো তিশান চমকে উঠলো নিজেই তাফসির হাতটা ঢিলে করে বিস্ময় চোখে তাকালো তাফসির বাবার পানে৷সবাই অভিভূত হলো৷
তিশান থতমত খেয়ে আমতা আমতা করে বলে,
“ক কি ব বলছেন আপনি?”
তিশানের থতমত চেহারা দেখে সবাই যা বোঝার বুঝে নিলো৷ তিশানের মায়ের এবার বোধগম্য হলো ছেলে কাজ না করেও এমন বাইরে থাকে কেন৷ তাফসিকে এতো টাকার শপিং করে দিলো কোত্থেকে তাকেও দামি শাড়ি দেয় মাঝে মাঝে৷
কিন্তু লুকিয়েছে কেন? তাফসির বাবা ফের প্রশ্ন করলো,
“আমার মেয়ে তোমার কাছে নিরাপদ তো?”
ফের শক্ত করে হাত ধরলো তাফসির৷ অতঃপর বললো,
“কি বলছেন এসব আপনি?”
“লুকিয়ে লাব নেই সত্যি নাকি বলো?”
তিশান হৃদয়ের পানে তাকালো ওরা জানে কি করে এটাই বুঝতে পারছে না৷
তিশান স্পষ্ট কন্ঠে উত্তর দিলো,
“সত্যি৷ আমি এসব জানাতে চাইনা কাউকে আন্ডার কভার তাই৷ আশাকরি এই বিষয়টি এখানেই স্থগিত করা হবে? এখন তো আপনাদের আর মনে হবে না আপনার মেয়েকে বেকারের কাছে বিয়ে দিচ্ছেন? আর রইলো নিরাপত্তার কথা?আমি থাকতে আবার বিপদ? এখানে কোনো বিপদ নেই৷”
স্বস্থি পেলো সবাই৷ সাথে খুশিও হলো তিশানের বাবার কিঞ্চিৎ খারাপ ও লাগলো এ ছেলেকে কতই না কথা শুনিয়েছে কাজের জন্য কিন্তু ছেলে কত ভালো একটা কাজ করছে৷ তাফসি অবাক নয়নে তিশানের পানে তাকিয়ে আছে৷
অভিমান হলো ওর ওকে এক বার বলতেও তো পারতো? কিন্তু বাবা জানলো কি করে?
তাফসি কৌতুহল নিয়ে জিগ্যেস করার আগেই তাফসির বাবাই উত্তর দিলো,
“আমার বন্ধু পুলিশ কমিশনার৷ স্বর্নার বিয়ের কার্ড নিয়ে গিয়ে ওদের বাড়ি থেকে বের হতে দেখেছিলাম তখন ওকে জিগ্যেস করে পরিচয় দেওয়ার পর ও বলেছিলো আমার সাথে হৃদয় ও ছিলো৷ তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো কেউ জানবে না৷ আমি ব্যপারটা জেনে ভেবছিলাম স্বর্নার বিয়ের পর তোমার বাবার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু এর আগেই তুমি এ কান্ড ঘটালে৷ আজ তাই চাকরি নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম দেখছিলাম তুমি কিছু বলো কি না কিন্তু তবুও বলছিলে না তাই আমি বললাম৷”
প্রসন্ন হলো তিশান যাক শশুর বুঝতে পেরেছে এই অনেক৷
তিশানের বাবা এবার খুশি খুশি বললো,
“এ সপ্তাহের মাঝেই তাহলে একটা তারিখ ঠিক করে অনুষ্ঠান টা করা হোক?”
তিশান কিছু বলবে এর আগে তাফসির বাবা বলে,
” না করো না বাবা৷ আমি চাই না আমার মেয়েকে নিয়ে কেউ কিছু বলুক একটা সপ্তাহেরই তো ব্যপার ফের না হয় তোমার চাঁদ তোমার কাছেই ফিরবে সসম্মানে? ”
কিছু বললো না আর তিশান সম্মতি জানালো অপ্রসন্নতার মাঝেও প্রসন্নতা ঝাপ্টালো ‘তোমার চাঁদ তোমার কাছেই সসম্মানে ফিরবে’ কথাটা গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিতো কপোত কপোতির মন৷ সবার প্রসন্নতার মাঝেও কারো মন আড়ালে আবডালে নিবিড় ভাবে ক্ষুন্ন হলো৷
কে যেন ক্ষুন্ন মনের অধিকারী যুবকটির কানে কানে বলে গেলো,
” কল্পনাতেও এ চাঁদ তোমার নয়”

চলবে,

[রিচেক হয়নি দুঃখিত]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here