প্রণয় ডায়েরি পর্ব-৩১

0
469

#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ৩১

হাজার চেনা মুখের মাঝে নতুন মুখের আগমন৷ নতুন কাউকে দেখে মানুষের কৌতুহলতার শেষ নেই৷ সেই নতুন মানুষটি কে, কার কি তাতে মানুষের আগ্রহ আকাশ তুল্য৷
আর বেশি আগ্রহ বাড়িয়ে দিচ্ছে নতুন বউয়ের সাথে মেয়েটির ও অনেক মিল রয়েছে৷
মেয়েটির সাথে সাথে আবার তিশানো রয়েছে৷ তিহান মেয়েটা নতুন মেয়েটিকে ভাবি ভাবিও বলছে৷ কারো কিছু বোধগম্য হলো না৷
তবে মেয়েটি মিষ্টি বেশ একজনের খুব করে মনে ধরলো বিবাহ যোগ্য পাত্র ও রয়েছে তাঁর এমন মিষ্টি মেয়ে হাত ছাড়া করা যায়? সে আবার তিহানের ডাকটি শুনেনি৷ নতুন বউয়ের বোন ভেবে এগিয়ে গেলো তিশানের মা আর আরাভের মায়ের দিকে অতঃপর প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,
“মেয়েটি কে রেনু? কি সুন্দর কি মিষ্টি৷”
তখনি মায়ের কাছে এলো তিশান৷ বউয়ের প্রশংসা শুনে ভালো লাগলো তিশানের৷ এ মহিলার স্বভাব জানা আছে তবুও বউয়ের প্রশংসা করায় ভালো লাগলো কিন্তু পরিশেষে তাঁর মন বিষিয়ে দিয়ে মহিলাটি বলে,
“নতুন বউয়ের বোন বুঝি? চেহারা মিল অনেক৷ এমন মেয়েই তো আমার ছেলের জন্য চাই নতুন বউয়ের বাড়ির লোক আসলে কথা বলিয়ে দিও৷ ”
তিশানের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো৷ মহিলার কি কানে পরছে না তিহান যে চেচিয়ে চেচিয়ে ভাবি বলছে?
তিশান রেগে ক্রুদ্ধ কন্ঠে কিছু বলবে তিশানের মা বললো,
“মেয়ের বাড়ির মানুষের সাথে কথা বলে লাব নেই৷ এই মেয়ে আমাদের এখন৷ আমার তিশানের বউ আর আমার আরেকটা মেয়ে৷”
মহিলাটি কথা শুনে থমকালো, ভরকালো৷ ইতস্ত হয়ে তাকালো সবার পানে৷
মহিলাটি কিছুটা হাসার চেষ্টা করে অপ্রস্তুত কন্ঠে বলে,
” তিশান বিয়ে করেছে? দুঃখিত আমি জানতাম না৷ ”
বলে উত্তরের আশা না করেই চলে গেলো এখান থেকে৷ তিশান রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো৷
তিশানের মা ছেলের রাগী দৃষ্টি দেখে আমতা আমতা করে বলে,
“দেখেছিস শাড়ি কেন পড়িয়েছি?”
তিশান গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিলো,
“শাড়ি পড়িয়েই বা বিশেষ লাব হলো কই?”
এর মাঝেই এক মহিলা কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে এসে বলে,
“তিশান বিয়ে করেছে? কবে? আর মেয়েটার সাথে তো নতুন বউয়ের অনেক মিল রয়েছে৷”
এই মহিলার দেখা দেখি প্রায় অনেকেই এদিকে এলো৷ তাফসি সবে তিশানের ইশারায় এদিকে এগিয়ে এসেছিলো৷ তিশানের মা মহিলার কথায় উত্তর দিলো,
“বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে হয়েছে তাই কাউকে জানানো হয়নি৷ আজই চলে যাবে ফের আমরা আনুষ্ঠানিক ভাবে নিয়ে আসবো৷ আর হ্যাঁ তাফসি নতুন বউয়ের বোন হয় চাচাতো বোন৷”
মায়ের কথায় অসন্তুষ্ট হলো তিশান৷ মিথ্যা বলে কেন? ঘরোয়া ভাবে কই হলো? কতো কাঠকয়লা খুইয়ে নিজের সাহসে এই মেয়েকে তুলে নিয়ে বিয়ে করলো৷
নয়তো ওর বাবা আর শশুর মিলে তো ওকে নিয়ে শরজন্ত্র করছিলো৷
আর যাবে মানে কি? কে যেতে দিবে ওর চাঁদ কোথাও যাবে না ও যেতে দিবে না৷ বিয়ে করেছে বউ ছাড়া থাকার জন্য নাকি? তিশানের ভাবনার কথাটা শুনে হয়তো তাফসি মেয়েটা লজ্জা পেতো?
তিশান গম্ভীর কন্ঠে মায়ের কথার ফোড়ন কেটে বলে,
“মিথ্যা বলছো কেন মা? ঘরোয়া ভাবে কই হলো? তুলে নিয়ে বিয়ে করেছি আমি৷ কালই হয়েছে আমাদের বিয়ে আর ও কোথাও যাচ্ছে না আমার সাথে থাকবে অনুষ্ঠান হলে এ বাড়িতেই হবে শুধু৷ আর কিছু জানতে চান? দয়া করে এসব নিয়ে সমালোচনা থেকে বিরত থাকুন৷”
তিশানের মা থতমত খেলো৷ এই ছেলেটা বেশি সত্যবাদী আর এই সত্যবাদিতার জন্যই মানুষ পিঠ পিছে কথা বলবে৷
ছেলেটা বড্ড অবুঝ সবসময়৷ উহু অবুঝ বললে ভুল হবে বেশি এক রুখে৷
সবাই প্রায় জেনে গেছে তিশানের বিয়ের কথা৷ তিশানের বন্ধুরাও এসেছে তাও প্রায় চমকেছিলো৷ বন্ধুর ভাইয়ের শালি ভেবে সবারি প্রায় মেয়েটাকে চোখে লেগেছিলো৷
তাফসি এমন পরিস্থিতিতে পরে লজ্জা পেলো সবাই এসে কথা বলছে কেউ ভাবি বলছে ছোট বাচ্চারা মামি বলছে কেউ তো চাচিও বলছে৷
তিশান আবার অন্য দিকে চলে গিয়েছিলো এমন ভারি সাজ সোজ্জায় ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে প্রায় এমন কৃত্রিম সাজগোজ খুব একটা এখন আর পছন্দ না কয়েকবার তো ভুল করে চোখ চুলকিয়ে ফেলেছিলো ভাগ্যিস নষ্ট হয়নি কিছু৷ ইশান এখান দিয়েই যাচ্ছিলো লক্ষ করলো মেয়েটাকে৷ আসার পর কথাই হয়নি মেয়েটার সাথে৷ বউয়ের মুখে তাফসির প্রশংসা শুনতে শুনতে সে পাগল হয়্ব যায়৷ মাঝে মাঝে বিরক্ত হয় ইশান৷ এমন মেয়েকে সবারি পছন্দ করার কথা৷ মেয়েটা ভদ্র অনেক৷ যাক আরেকটা বোন পেলো ভাইয়ের বউ তো কি হয়েছে? বোন হতেই পারে৷
মেয়েটার ভালো লাগছে না বুঝলো ইশান৷ ওর ভাইতো মেয়েটাকে চোখে হারায় তো হারামিটা এখন কোথায়? ভাবলো সে৷ অতঃপর ইশান সামনে গিয়ে বলে,
“খারাপ লাগছে তাফসি? খেয়েছো?খাবে তুমি?”
তাফসি হাসলো অতঃপর উত্তর দিলো,
“খাবো না ভাইয়া৷ খারাপ লাগছে না৷ ”
ইশান বুঝলো মেয়েটা লুকাচ্ছে একটা চেয়ার টেনে কোণে দিলো অতঃপর বললো,
“এখানে বসো তিশান কোথায় দেখছি৷ ”
তাফসি বসলো৷ ইশান ভাইকে খুঁজতে অন্যদিকে চলে গেলো৷ ভালো লাগলো তাফসির একেবারে হৃদয়ের মত কেয়ার করলো৷ হৃদয় ও এমন সব দিক খেয়াল রাখে চোখ ঝাপসা হলো তাফসির৷ ভাইয়াকে ভয় পেলেও আজ মিস করছে৷

এদিক ওদিক লক্ষ করে প্রিয় মুখটা না দেখে চোখ কুচকে এলো তিশানের৷ মেয়েটা কোথায় গেলো আবার? এ মেয়েকে নিয়ে পারা যায় না৷
মায়ের সামনে এলো মায়ের কাছেও পেলো না তিহান আফরার কাছেও নেই কোথায় গেলো? না পেরে মা কে জিগ্যেস করলো তিশান,
“আম্মু চাঁদ কই?”
ছেলের পানে পূর্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মা৷ ছেলের মুখে চাঁদ নামটা ভালো লাগে৷ কিন্তু চাঁদ কেন বলে তাই বুঝলো না এখনো সে৷
তিনি মুচকি হেসে বলে,
“ইশান ওই কোণে বসিয়ে তোকেই খুঁজতে গেছে৷ মেয়েটার ভালো লাগছে না হয়তো যা একটু দেখ গিয়ে৷”

তিশান এলো তাফসির সামনে অতঃপর প্রশ্ন ছুরলো,
“খারাপ লাগছে খুব?”
এখন কিছুটা স্বাভাবিক লাগছে তাই মুচকি হেসে উত্তর দিলো,
“ঠিক আছি আমি৷”
তিশান ফের কিছু বলবে এর আগেই তাফসির বাড়ি থেকে সবাই এলো৷
সবাইকে দেখে এক প্রকার দৌড়ে এগিয়ে গিয়ে ঝাপটে ধরলো বাবাকে৷
হঠাৎ মেয়ের এমন কান্ডে মৃদু হাসলেন উনি৷ ইসস মনে হচ্ছে কত বছর ধরে দেখেনা মেয়েকে থাকবে কি করে এই মেয়ে কে ছাড়া উনি?
উঠলো তাফসি বাবার বুক থেকে পূর্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন মেয়ের পানে৷ শাড়িতে মেয়েকে কি সুন্দর লাগছে তাঁর নজরি না পরে যায় আবার৷ তাফসির মা ও মেয়ের পানে তাকালো তাঁর ছোট্ট তাফসি কত বড় হয়ে গেছে৷ আর কেউ তাকে ওনাদের মতই ভালোবাসে৷ উনারা সবসময় মেয়েকে নিয়ে চিন্তা করতেন পাবে তো ভালো ছেলে যে ওনাদের মতই মেয়েটাকে আগলে রাখবে৷ কিন্তু আল্লাহ সত্যি তাদের মনের আশা পূর্রন করে দিলো৷
মেয়েটাকে নাক ফুলে মানায়৷ চোখ ফিরিয়ে নিলো তাফসির মা৷ মেয়ের যদি তাঁর নজর লেগে যায় তাই৷
মেয়েকে নিজের কাছে টেনে ললাটে চুমু খেলেন৷

হৃদয় এলো হাসি মুখে প্রশ্ন ছুরলো বোনের পানে,
“ভালো আছিস?”
জড়িয়ে ধরলো ভাইকে একটু আগেই মিস করছিলো তাই ফুপিয়ে কেদেই দিলো অতঃপর বললো,
“মিস করছিলাম তোমাদের৷”
হাসলো হৃদয়৷ দুই বোন এক সাথেই বিয়ে হয়ে গেলো তিশানের উপর একটু রেগে আছে তবুও সবার তাফসির মুখের উজ্জ্বলতা চোখ এড়ালো না৷ মেয়েটা এতো দিন কষ্টে ছিলো তবু টু শব্দ করেনি৷
আর এখন কত হাসি খুশি দেখাচ্ছে৷ সবাই স্বর্নার কাছে গেলেন মাহতাবের সাথে চোখাচোখি হলো তাফসির৷ তখন তিশান হৃদয়ের সাথে কথায় মত্ত্ব
মাহতাব দূর্বল হাসলো অতঃপর প্রশ্ন ছুড়ে দিলো তাফসির পানে,
“খুশিতো তুই?”
প্রশ্ন টা কেমন শোনালো এমন অদ্ভুর প্রশ্নের উত্তর দিলো তাফসি,
“হুম ভালো আছি৷ ”
মাহতাব আর কিছু বললো না অনু দিকে পা বাড়ালো অতঃপর বিরবির করে বললো,
“সে এখন নিষিদ্ধ প্রেয়সী৷ সে আমার নয়, তাঁর আঙিনায় আমার আনাগোনা নিষিদ্ধ৷”

চলবে,

[অন্তিম পর্ব ঘনিয়ে এসেছে হয়তো দুই বা একটা পর্ব হবে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here