প্রণয় ডায়েরি পর্ব-২৮

0
366

#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ২৮

অতঃপর মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে নামলো৷
তুমুল বর্ষণ সব ভেঙে আসছে৷ সেই দুপুর থেকে মন ক্ষুণ্ণ করে ছিলো বিশাল অম্বরটা৷ ধুসর রঙে নিমজ্জিত ছিলো চারোপাশ৷ মন ক্ষুণ্ণ করে রেখেছিলো তবুও পানির ফোটা হয়ে ঝরেনি৷ ওই তো গধুলি বেলা থেকে গর্জন করে উঠছে বারংবার৷ আর বিদ্যুৎ স্ফুরণ ঘটিয়ে নিজের আগমণে বার্তা জানান দিলো কতশত বার৷
অবশেষে মন খারাপের পাল্লা সমাপ্তি ঘটিয়ে মেঘ গুলো বৃষ্টি হয়ে ধরণির বুকে আগমন ঘটালো নিজের৷

আল্লাহ অতি খুশি হলে বৃষ্টি দিয়ে থাকে আজ আল্লাহ অনেক খুশি৷ বর্ষণ তাফসির বরাবরই বেশ পছন্দ তবে সেই অম্বরের ক্ষুণ্ণ মন প্রসন্ন হলেও বর্ষন দেখেও মন প্রসন্ন হলোনা তাফসি নামক মেয়েটির৷
বারান্দাটির কোণে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি পরবে তাঁর শিফনের কালো মসৃণ শাড়ি আর লাল ঢিলেঢালা জর্জেট ব্লাউজ৷
সামনেই পানসে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে তিশান সে বারান্দার অন্য কোণে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে৷ মাত্রই এলো এখানে৷ তাদের মাঝে চার ফিট দূরত্ব৷
রাগ হলো তিশানের অবাধ্য পাষাণ মেয়েটা কাছে আসছে না মিশছে না ওর বক্ষপিঞ্জিরায়৷ এসে কি সুন্দর করে বললো,
“আমার কাছে আসুন চাঁদ৷ ”
মেয়েটা শুনলো না? কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই অন্য কোণে গিয়ে দাঁড়ালো মেয়েটি৷
মেয়েটির কি হৃদয় নেই? হৃদয় হীনাকে ভালোবেসেছে৷ সে তো ক’দিন আগেই বুঝেছ যখন মেয়েটি এক ঘর লোকের সামনে বলেছিলো “তুমি যা বলবে তাই হবে বাবা৷ ”
তখন না হয় বাবার জন্য বলেছে কিন্তু আজ এমন শাস্তি দিচ্ছে কেন?
বললো তো নিচে সবার সামনে কালকে এলে মানিয়ে নিবে ওর বাবাকে তবুও কেন করছে এমন?
ও কি জানতো নাকি সবাই ওকে শায়েস্তা করার ফন্দি এটেছে?
ও কি জানতো শশুর আর বাবা মিলে শরযন্ত্র করছে?

বাবা মায়ের জন্য মন খারাপ থাকলেও এই ছেলের মুখ দেখে হাসি পেলো তাফসির৷ দাম্ভিক ছেলেটা মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে৷ মন্দ লাগছে না ব্যাপারটা৷
বারান্দার কার্ণিশ ঘেঁষে দাঁড়ানোর ফলে ইতিমধ্যে শরীর ভিজে একাকার তবুও দাঁড়িয়েই রইলো তাফসি৷
তিশান রাগে ফুসছে এবার মেয়েটা রাগ করেছে ভালো কথা তাতে বৃষ্টিতে ভেজার কি আছে?
এবার নড়েচড়ে দাঁড়ালো ঠিক মত অতঃপর কাছে পাশে এলো মেয়েটার৷ হাত শক্ত করে ধরে কন্ঠে গম্ভীর্যতা ফুটি বলে,
” ভিজে যাচ্ছো চাঁদ৷ ঘরে চলো ঠান্ডা লেগে যাবে৷ ”
কেঁপে উঠলো তাফসি মুখ তুলে তাকালো ছেলেটির পানে৷ ‘তুমি’ বললো প্রথম আজ৷
তিশানের কন্ঠে ‘তুমি’ সম্বোধন টা এতো মিষ্টি লাগে জানা ছিলো না তো? এর আগে কখনোই তুমি বলেনি৷
ঘোর লাগলো তাফসির অভিমান গুলো গলে পানি হলো লজ্জায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো সন্তপর্ণে৷ বিনা নিমন্ত্রণে মুখশ্রীর লাল রাঙা আভাটা নিমজ্জিত হলো৷
“চলো৷ ”
ফের কড়া কন্ঠে ধ্যান ফিরলো৷ মাথা নিচু করে নিলো অতঃপর হাত ছাড়িয়ে নিজেই ঘরে প্রবেশ করলো৷ বড় চকচকে আয়নাটির সামনে এসে দাঁড়ালো ড্রেসিং টেবিলের সামনে তিশানের জিনিসপত্রের সামনে নিজের ব্যাবহারের চেনা জিনিস গুলো দেখে অবাক হলো৷ এখানে সব কসমেটিকস রয়েছে ও নিজে যা যা ব্যাবহার করে৷ সবই নতুন ছেলেটা আনিয়েছে এমনকি পড়ার জন্য যা যা প্রয়োজন সব এনেছে স্বর্না বলেছে সব কি কি লাগে ওর৷ অবাক না হয়ে পারলো না তাফসি৷ ওর বোনো পাগল সাথে বোনের দেবর নামক ওর সদ্য হওয়া স্বামীটাও৷
সেখান থেকে চোখ সরিয়ে আরশিখানায় নিজের প্রতিবিম্বর পানে তাকালো৷ শাড়ি পরার পর নিজের পানে তাকায়নি শাড়িতে মন্দ লাগছে না৷ শাড়িটাও তিশান হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল তখন নয়তো রাতে শাড়ি পরে কে?

পিছনে কারো স্পর্শ পেতেই আয়নায় নিজের পিছনে তাকালো তাফসি৷ তিশান একেবারে পিঠ ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে৷
তাফসি সরে যেতে চাইলেই ফের হাত চেপে ধরলো ছেলেটা৷
রাগ করে নেই যে মেয়েটা তিশান নামক পুরুষটি বুঝলো না৷ হাসি পেলো তাফসির কিন্তু হাসলো না তখন তাঁর মাই তো বললো ছেলের উপর রাগ জারি রাখতে৷
তিশান হাত চেপে বললো,
“আমার বুকে এসো চাঁদ? আমাকে কষ্ট দিতে খুব আনন্দ হয় তোমার তাই না?”
কন্ঠটা কেমন শোনালো৷ খারাপ লাগলো তাফসির৷ ও যানে ছেলেটা ঘার বাকা স্বভাবের একে ভালো করার জন্যই ওর বাবা আর শশুর মিলে এমন বুদ্ধি এটেছিলো সে ছেলে নিজে কাজ না করে ওকে নিয়ে পালিয়েছে৷ ব্যাপারটা খারাপ হলেও ওকে তো বুঝানো হয়েছিলো ওদের সম্পর্ক তারা কখনো মেনে নিবে না তাই তো এমন করেছে ছেলেটা৷
রেগে নেই শাশুড়ির কথায় এমন করে আছে নয়তো ও কখনো কারো উপর এতো রেগে থাকতে পারে না সে যতই ভুল করুক৷ আর অভিনয় করা ওর পক্ষেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে অবাধ্য হাসি গুলো আটকে রাখতে পারছে না৷
তাফসির প্রতিক্রিয়া না পেয়ে রাগ হলো তিশানের অতঃপর প্রতিবারের মত রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না হাত ছেড়ে কোমর চেপে ধরে মিশিয়ে নিলো নিজের পানে৷
থমকালো, চমকালো মেয়েটা কেঁপে উঠলো তাঁর সর্বাঙ্গ হৃদ স্ফন্দন বিনা অনুমতিতে তীব্র বেগে শুরু হলো এই বুঝি প্রান পাখি উরে যাবে৷
ছেলেটা প্রথম আজ তাঁর অনুমতি ব্যাতিত ওকে নিজের বুকে আশ্রয় দিলো৷ মাথা নিচু করে চোখ খিঁচে বন্ধ করে মিশে ছিলো বক্ষপিঞ্জিরায়৷ ঠিক তখনই ছেলেটা তাঁর থুতনি ধরে মুখ উচিয়ে বললো,
“অবাধ্য হয়ে গেছো চাঁদ৷ পাষাণ হয়ে গেছো৷ ”
ফের কাপলো মেয়েটা৷ টের পেলো তিশান৷ ছেলেটা কি বুঝে না তাঁর এমন আচরণে মেয়েটা অশান্ত হয়ে যায়? নিরবে নিভৃতে থাকা অনুভূতি গুলো তীব্র রুপ ধারণ করে দূর্বল হয়ে পরে মেয়েটা আরো৷
ছেলেটা ফের কিছু বলবে এর আগে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাঁর চাঁদ তাকে৷ মেয়েটা জানে এই ছেলেটা মুখ খুললে এবার মৃত্যু নিশ্চিত৷ তাই কৌশলে নিজেই জড়িয়ে ধরলো নিজেকে বাচানোর জন্য৷
হাসলো তিশান প্রসন্ন হাসি প্রেয়সীর সাথে লেপ্টে রইলো বেশকিছু সময়, বেশ কিছু মিনিট৷
অতঃপর জড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই বললো,
“শাড়ি ভেজা৷ চেঞ্জ করে নাও৷ ”
উত্তর দিলো না মেয়েটা প্রতিক্রিয়াও করলো না৷
তিশান আবার বললো,
“ঠান্ডা লেগে যাবে চাঁদ৷ ”
এবারো মেয়েটা প্রতিক্রিয়া করলো না৷ তিশান ফের মোলায়েম কন্ঠে বললো,
“বউ?”
নড়েচড়ে উঠলো মেয়েটা৷ ঠিক হয়ে দাঁড়ালো তাতে হাসলো তিশান ফের কাছে আনলো মেয়েটাকে অতঃপর তার ললাটে দ্বিতীয় বারের মত উষ্ঠ ছোয়ালো৷ বললো,
“শাড়িটা পালটে এসো৷ ”
মহা বিরক্ত হলো মেয়েটা যার রেশ কপালে ফুটলো, আসার পর থেকে এই শাড়ি পাল্টাতে পাল্টাতেই অর্ধ জান শেষ৷
আলমারির দিকে এগিয়ে গেলো বিরক্ত নিয়েই৷ এতো শাড়ি দেখে অবাক হলো৷ সেখান থেকে একটা জামা বের করে বিরক্ত সহিত বললো,
“তখন শাড়ি পড়তে বলেছিলেন কেন? আর এতো শাড়ি এনেছেন কেন?”
পূর্ন দৃষ্টিতে তাকালো তিশান তাফসির পানে৷ যাক স্বস্তি পেলো, মেয়েটা আগের ন্যায় হয়েছে৷ অতঃপর উত্তর দিলো,
“প্রতিদিন রাতে শাড়ি পরবে তুমি৷ ”
নিঃসংকোচে আবদার না এ আবদার নয় একে আবদার বলা চলেই না৷ আদেশ সূচক শোনালো কথাটা৷ তাতে তাফসি ভরকালো৷ প্রতিদিন শাড়ি পরতে বললেও কথা ছিলো কিন্তু এই ছেলে বলছে রাতে পরতে শুধু কেন? কোন দুঃখে রাতে শাড়ি পরবে ও? ও শাড়ি পরে কোনো কালেই ঠিক মতো সামলাতে পারে না৷আবার রাতে? বিরক্ত নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,
“রাতে পড়বো মানে?”
“কারণ আমি দেখবো৷ ”
থমকালো তাফসি লজ্জা পেলো তিশান এগিয়ে এলো৷ ছেলেটা পাগল হলো নাকি? মুঠো খোপা করা চুল খানা খুলে দিয়ে মুচকি হেসে অধিকার সূচক কন্ঠে বললো,
“দিনে শাড়ি পড়া তোমার জন্য নিষিদ্ধ৷ শাড়িতে শুধু আমি দেখবো তোমায়৷ একান্ত আমি৷ ”

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here