#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ২৬
বিয়ে বাড়ি গমগমে পরিবেশ৷ সবার মুখশ্রীতে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট তবুও কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে সবার আপ্যায়ন করছে বড়রা৷
বড়রা চিন্তায় থাকলেও প্রানবন্ত হয়ে আছে ছোটরা৷ যেন কিছু হয়নি সব স্বাভাবিক৷ বর যাত্রি এসেছে সেই ঘন্টা খানেক আগে৷ তাদের মুখেও চিন্তার ছাপ৷
তাফসির বাবা এক কোণে চেয়ারে এসে বসলেন তাঁর শরীর হীম হয়ে আসছে৷
তাফসির বাবার পাশে সন্তপর্ণে বসলো তিশানের বাবা৷ তাঁর মুখশ্রীতে অনুতাপের ছাপ৷ সে আশেপাশে নজর বুলিয়ে মিনমিনিয়ে বললো,
“দুঃখিত ভাই সাহেব আমি জানতাম না আমার ছেলে এমন কিছু করবে আমি ভেবেছিলাম শুধরে নিবে নিজেকে৷ কাজ করবে কিন্তু তা না করে ও এমন একটা কাজ করলো৷”
তাফসির বাবা বললো না কিছু চুপ করে রইলো৷ তিশানের বাবা এহসান সাহেব আবার বললো,
“চিন্তা করবেননা ভাইসাহেব ওরা চলে আসবে আপনি,,৷”
বাকি কথা শেষ করতে পারলো না এহসান সাহেব এর আগেই হৃদয় এসে জানালো,
” ওদের খবর পাওয়া যায়নি চাচা৷ ”
থমকালেন, হতাশ হলেন তাফসির বাবা মাহমুদ সাহেব৷ অতঃপর এহসান সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“আপনার কথায় মেয়েটাকে এতো দিন কষ্ট দিলাম, মেয়েটার কাছে আমি দোষী আপনি বললেন তিশান অফিস জয়েন করার আগ পর্যন্ত ওদের বিয়ের কথা নাকোচ করতে কিন্তু এখন আপনার ছেলে আমার মেয়েকে নিয়ে পালালো৷ কোথায় খুঁজবো ওদের? কোথায় নিয়ে গেছে? আপনি তো জানতেন আপনার ছেলে এমন৷ ”
এহসান সাহেবের মন ক্ষুণ্ণ হলো সত্যি তিনি এখন অনুশোচনায় ভুগছেন৷ ছেলেটা এমন পাগলামি করবে কে জানতো? এ জন্যই ক’দিন যাবত চঞ্চল ছেলেটা শান্ত ঠান্ডা প্রকৃতির হয়ে থাকতো৷ সব সময় কিছু একটা ভাবতো৷ এহসান সাহেব তো ভাবতেন ছেলে বুঝি প্রেমের শোকে দেবদাসে পরিনত হচ্ছে কিন্তু না এই ছেলে তলে তলে ফন্দি আটছিলো৷ এমন শান্তশিষ্ট ছেলে যে লেজ বিশিষ্ট বের হবে এ ও কে জানতো? নাস্তানাবুদ করে ছারলো ছেলেটা৷ কোনো দিনই শান্তি থাকতে দেয়নি ছোট থেকে৷
তাফসির মা অসুস্থ হয়ে পরেছে মেয়েকে না পেয়ে৷ তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ বিয়ে বাড়ির আত্মিয়স্বজনরা এখনো টের পায়নি৷ কথাটা পাঁচ কান হলে ওনার মেয়েকেই সবাই দোষ দিবে কিন্তু মেয়েটাকে যে অচেতন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ মেয়ে কিছুই জানতো না এসব৷
স্বর্নাই নিজে এসে সবাইকে বলেছে৷ আর তিশানের সাহায্যযে ওরা সবাই করেছে এ ও বলেছে৷
অম্বর তখন ঘন কালো মেঘে ছেয়ে আছে৷ চারো দিকে আজান পরছে মাগরিবের আজান৷ বিয়ে বাড়ির শোরগোল কমে থমথমে হয়ে আছে৷ স্বর্নার বিদায় বেলা৷ এক মেয়ের বিদায় হচ্ছে আরেক মেয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে না সবাই ভেঙে পরেছে৷
হৃদয় চুপচাপ বসে আছে স্বর্নার সাথে কথা বলেনি৷ ছোট বোন গুলোকে নিজের হাতে বড় করেছে ও চাচাতো ভাই হলেও স্বর্নার মত সবাইকে সমান ভালোবেসেছে৷ আপন ভাইয়ের মত৷ কোনো ক্ষতি হতে দেয়নি কখনো৷ এই একটা ব্যাপারেই হৃদয় সব থেকে দূর্বল৷ বোনেদের সামনে কঠোরতা দেখালেও বোনেরা যে ওর প্রান৷
স্বর্না অশ্রুসিক্ত নয়নে ভাইয়ের পায়ের কাছে এসে বসেছে কত কথা বললো মেয়েগা কিন্তু হৃদয় টু-শব্দ করলো না৷
অতঃপর তাসনিম এসে নিয়ে গেলো স্বর্নাকে৷ ভাইয়ের এমন কঠোরতা দেখে ঢুকরে কেঁদে উঠলো স্বর্না৷
স্বর্নাকে নিয়ে যাওয়ার খানিক্ষন পর আরাভ এলো আরাভ কে দেখে দূর্বল হেসে উঠলো হৃদয় অতঃপর তাঁর হাত ধরে বলেন,
“আমার কলিজা ছিড়ে তোমায় দিয়ে দিলাম ভাই৷ ওকে আগলে রেখো৷”
আরাভ হৃদয়ের হাত আকড়ে ধরে বলে,
“চিন্তা করো না তুমি আমি ওকে ভালো রাখবো৷ আর তিশানের কথা চিন্তা করো না ওকে আমরা,,,৷ ”
পুরো শেষ করতে দিলো না কথা৷ মাঝ পথেই থামিয়ে দিলো আরাভ কে অতঃপর শক্ত কন্ঠ বলে,
“তোমার ভাইকে আমি ছাড়বো না আমার বোনের কিছু হলে বা কেউ আমার বোনকে নিয়ে কটু কথা বললে৷ ওর সাহস বেড়েছে চাচা আর বোনের জন্য কিছু বলছিনা নয়তো ওকে খুঁজে বের করে আমি খুন করে দিতাম৷ আমার বোনকে অচেতন করে নিয়ে পালানো ঘুচিয়ে দিতাম৷ ঠিক করলো না ও৷ সবাই মেনেই ছিলো শুধু ও কিছু করতো না তাই মথ্যে বলেছিলো কিন্তু ও নিজেকে না শুধরে এমন একটা কাজ করলো৷”
আরাভ হতাশ হয়ে ফিরে গেলো গাড়ির দিকে৷ কিছু করার নেই এমন একটা কাজ করেছে সবাই রাগারি কথা৷
অন্তরিক্ষ তখন গুরুম গুরুম করে বিকট শব্দ করে উঠছে৷ বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে৷ বৃষ্টি তাঁর আগমনী বার্তা আগাম জানান দিচ্ছে৷ তখন পূর্ন আঁধার ছেয়ে আছে অম্বর৷ কিছুটা ধুসর মেঘ জমে আছে কিছুটা সন্ধ্যে হয়েছে৷
বড় বারান্দাটায় থুতনিতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে তিশান কপালে তাঁর চিন্তার ভাজ৷ শয়নকক্ষে বিছানার উপর হাটুতে মাথা গুজে বসে আছে তাফসি৷ ফোলা ফোলা কান্নারত চোখে লেপ্টানো কাজল মুখে কৃত্রিম মেকাপের ছিটে ফোটাও নেই৷ পড়নে খয়েরী লাল লেহেঙ্গাটা৷ লেহেঙ্গার বড় উরনাটা এলোমেলো হয়ে আছে মসৃণ কোমরটা দৃশ্যমান৷
কি অদ্ভুত আজ তাদের খুশির দিন অথচ মেয়েটা কান্না করে ভাসাচ্ছে৷ এইতো বিকেলে নতুন সম্পর্কে জুরলো দুটি মানুষ৷ শুভ পরিণয় হলো৷ আর মেয়েটা এখন কাঁদছে? কেন?
বিয়ের সময় পাষাণ মেয়েটা বিয়ে করতে চাইনি কি কাঠকয়লা খোয়াতে হয়েছে এর জন্য ছেলেটার৷ কত রকম ভাবে ব্ল্যাকমেইল করিয়ে ওই সাদা কাগজে সাইন করিয়ে কবুল বলানো হয়েছে?
আচ্ছা বাক্য গুলো বলা আর লেখাটা কি খুব কঠিন? কই তিশানের তো কঠিন মনে হলো না? ওর তো সব থেকে শান্তিময় বাক্য মনে হয়েছে ওই ‘কবুল’ শব্দটা৷ আর যখন সাইন করলো তখন মনে হলো খুব বড় কিছু অর্জন করে ফেলেছে৷
হুম সত্যি তো বড় কিছুই তো অর্জন করেছে৷ ছাব্বিশ বছর জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি৷ আর ওই বিছানায় গুটিশুটি মেরে বসে থাকা মেয়েটা ওর একান্ত৷
মেয়েটার নিজের প্রতি যত না অধিকার রয়েছে তাঁর থেকে বেশি ওই মেয়ের ওপর ওর রয়েছে৷
মহান আল্লাহ তায়ালা নিজে ওই অধিকার ওর হাতে সপে দিয়েছে৷ মেয়েটা ওর অর্ধাঙ্গ, জীবন সঙ্গীনি, ওর জান্নাতের সাথী৷
নিজের নামে করতে পেরেছে মেয়েটাকে কিন্তু স্বাভাবিক করবে কি করে?
মেয়েটা ওর কষ্ট টা বুঝতে পারে না? ওর বাবা যে কঠোর হয়ে এমন দূরে রেখেছিলো কার এত কষ্ট সহ্য হয়? ও তো চেয়েছিলো চাকরি করে স্ব-সম্মানে নিজের অন্দরের রানীকে এ বাড়িতে প্রবেশ করাবে কিন্তু ওর ওই শশুর নামক ভিলেন টা বিয়ে দিতেই নাঁকোচ করে দিলো?
সে যদি বেকে বসতে পারে ও ওর ক্ষমতা কেন দেখাতে পারবে না?
সন্তপর্ণে প্রেয়সীর পায়ের কাছে এসে বসলো তিশান অভিমানী মেয়েটার অভিমান ভাঙাতে হবেতো নাকি? অতঃপর মিহি কন্ঠে বলেন,
“খুব রেগে আছেন চাঁদ?”
কেঁপে উঠলো তাফসি৷ মুখ উঠালো না ওমনি বসে রইলো৷ তিশান আবার বলে,
“আমার কষ্টটা বুঝছেন না আপনি? একটা মাস দূরে থেকেছি আপনার থেকে দুরত্ব আর সহ্য হচ্ছে না আমার৷ আমার কাছে থেকে যত খুশি শাস্তি দিন মাথা পেতে নিবো আমি৷ ”
এবারো কিছু বললো না মেয়েটা৷ মেয়েটা এমন নির্দয় কেন? সেও তো কষ্ট পাচ্ছে তবুও এমন করছে৷
তিশান আবার বলেন,
“বাবার সাথে কথা বলবেন চাঁদ?”
মেয়েটা শব্দ করে কেঁদে উঠলো এবার৷ ঝাপটে বুকে পরলো ছেলেটার৷ এমন আচমকা জড়িয়ে ধরার কারণে কিছুটা পিছিয়ে পরলো৷ আগলে নিলো প্রেয়সীকে মেয়েটা কান্নারত কন্ঠে শুধু অস্পষ্ট কন্ঠে বললো,
“আপনি খারাপ তিশান৷ অনেক বেশি খারাপ৷”
চলবে,
[ভ্যাক্সিন দ্বিতীয় ডোজ দিয়ে অবস্থা নাজেহাল আমার৷ না বিছানা থেকে উঠতে পারছি না কিছু করতে পারছি তবুও লিখে দিলাম৷ আশকরি ঘটনামূলক মন্তব্য করবেন? রিচেক হয়নি ভুল গুলো বুঝে নিবেন৷”]