প্রণয় ডায়েরি পর্ব-২৩

0
340

#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ২৩

মার্চের শেষ সপ্তাহ চলছে খাঁ খাঁ রোদ বাইরে৷ সোনার ন্যায় চিক চিক করছে৷ বের হলেই মনে হচ্ছে রোদে মগজ গলে গলে পড়বে এখনি৷ চৈত্র মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ চলছে৷ চৈত্রের রোদ তাই বোধহয় এমন প্রগাঢ়৷ ঝলসে দিচ্ছে যেন সব৷ ক’দিন যাবত কখনো তুমুল বেগে বৃষ্টি আবার কখনো কাঠ ফাটা রোদ৷
আম গাছের ডালে কাকটা বসে ‘কা কা ‘ করে যাচ্ছে সেই কখন থেকে৷ একটু আগেই ঘুরাঘুরি করে কাকটা আম গাছের ডালে এসে বসলো৷ রোদের উত্তাপে তাঁরো বুঝি কষ্ট হচ্ছে কাকটা বুঝি তৃষ্ণার্ত৷
কাকটাকে দেখে ছোট বেলার সেই ” Thirsty crow” গল্পটার কথা মনে পরলো তাফসির৷ হাসলো আনমনে৷ মধ্যাহ্ন শেষ ভাগ চলছে একটু পর আজান পরবে আসরের৷ তবুও রোদ কমার নামই নিচ্ছে না৷ সূর্য যেন আজ পন করেছে তাঁর উত্তাপ কমাবে না৷ ভাপ্সা গরম পরেছে৷ বাইরে আমেজি আমেজি পরিবেশ৷
বিয়ে বাড়ি বলে কথা আমেজি তো হবেই? আজ স্বর্নার মেহেন্দি অনুষ্ঠান৷ সবাই পার্লারে চলে গেছে দুপুর দিকেই৷ তাফসি ছাড়া৷ আজ তাঁর ভালো লাগছে না একটুও তাই যায়নি সে৷ সবাই জোরাজোরি করেছে অনেক৷ মা ও এসে বলে গেছে কয়েকবার৷
আসর আজান পরতে বারান্দা ছেড়ে বের হলো তাফসি৷ এখন তৈরি হতে না বসলে পরে দেরি হয়ে যাবে স্বর্না এসেই ওকে খুঁজবে ও তা ভালো করেই যানে৷ মেয়ে কাল বাদে পরসু চলে যাবে তাকে ছেড়ে ভাবতেই বুকটা চিন চিন করছে৷ কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে কত কথা৷ রাত করে ছাদে বসে আড্ডা দেওয়া চাঁদ রাতে দু’জন দু’জনের হাতে মেহেন্দি পরিয়ে দেওয়া৷ খুনসুটি, এক সাথে হাজার ভুল করা৷ ক্রাইম পার্টনার বলা চলে৷ কষ্ট হলেও কিছু করার নেই ভাগ্য সহায় হলে তারা আবার সেই খুনসুটিতে মাতবে নতুন পরিচয়ে পরিচিত হবে৷
আজ তাফসি সবুজ শাড়ি পরবে তিশানের দেওয়া সবুজ শাড়ি৷ সে দিন ছেলেটা প্রতিটা অনুষ্ঠানের জন্য নিজেই কিনে দিয়েছিলো৷ বাড়িতে এসে বলেছলো স্বর্না দিয়েছে কিনে৷ ভাগ্যিস স্বর্না সবাইকে কিনে দিয়েছিলো নয়তো সন্দেহ করতো৷
সবুজ শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যাবে তখনই কেউ প্রবেশ করলো তাঁর রুমে পিছনে ঘুরে দেখে ওর বাবা দাঁড়িয়ে আছে৷ বাবাকে দেখে কিছু বলবে এর আগে সে এসে মোবাইলটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
“অনুষ্টান বাড়ি এটার প্রয়োজন হবে তাই দিয়ে গেলাম৷ ”
বাবার হাতে মোবাইল দেখে যেন খুশি হয়ে গেলো তাফসি৷ হাতে চাঁদ পেলো যেন৷
মোবাইল দিয়েই ওর বাবা প্রস্থান করলেন৷ মোবাইলটা পেয়ে ভাবলো তিশান কে ফোন দিবে পরক্ষণে মন সায় দিলো না৷ এখন কেউ দেখে ফেললে আবার নিয়ে নিবে৷
উৎফুল্ল হয়ে শাড়িটা জড়িয়ে নিলো নিজের গায়ে অতঃপর সাজলো৷ মন ভরে৷
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায় মানুষের সোরগোল বাড়লো নিচে গানের আওয়াজ কানে এলো৷
নেমে গেলো নিচে স্বর্নাকে নিয়ে আসেনি এখনো পার্লার থেকে৷ নিচে আসতেই চোখা চোখি হলো মাহতাবের সাথে৷
তাফসি বিরক্ত নিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো মাহতাব সরালো না চোখ৷ সবুজ শাড়িতে প্রেয়সীকে দেখে যেন ধাক্কা খেলো মাহতাব৷
বেহায়ার মতো চেয়ে রইলো তাফসির পানে৷ অতঃপর কি মনে করে যেন বাঁকা হাসলো এগিয়ে গেলো তাঁর দিকে পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালো তা দেখে তাফসি রাগী কন্ঠ প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,
“আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন কেন? সরুন এখান থেকে৷”
সরলো না মাহতাব৷ উত্তর ও দিলো না কিছু বললো না৷ তাফসি রাগ নিয়ে নিজেই জায়গা থেকে সরে যেতে চাইলে ডান হাত চেপে টান দিলো নিজের দিকে আবার আগের জায়গায় দাঁড়া করালো৷
তাফসি দাতেদাত চেপে বলে,
“অসভ্যতামো করছেন কেন? ছাড়ুন আমার হাত৷”
ছাড়লো না হাত৷ তাফসি আবার বললো,
“আমি কিন্তু বাবাকে ডাকবো এখন৷ ”
মাহতাব হাসলো৷ বাঁকা হাসি অতঃপর বললো,
” ডাক তোর বাবাকে৷ বিয়ে দিয়ে দিবে এখনই আমারি ভালো হবে৷পরে তোকেই মানুষ বলবে এক মেয়ে দু-জনের সাথে প্রেম করে৷ আমি কিন্তু বলবো তখন তোকে আমি ভালোবাসি৷”
কেপে উঠলো ক্ষানিকটা তাঁর ‘ভালোবাসি” কথাটা শুনে৷ সাথে রাগ হলো তীব্র রাগ৷ কিছু বললো না তাফসি দাতেদাত চেপে দাঁড়িয়েই রইলো৷ তাঁর সাথে সে যে কখনোই পেরে উঠবো না তা সে জানে৷
ছেলেটা তাফসির দিকে তাকিয়েই রয়েছে৷ যার জন্য তাফসির অস্বস্তি হচ্ছে৷ মন ভরে দেখছে প্রেয়সীকে মাহতাব৷ কিন্তু বুক টা যে ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে বারংবার৷ প্রেয়সীর চোখে নিজের প্রতি বিরক্ত দেখে কার না খারাপ লাগে? সে যে তাঁর নয়, তাঁর হবে না৷ বেশক্ষানিক্ষণ পর গাড়ির শব্দে ধ্যান ভাঙলো মাহতাবের৷ আরাভ দের গাড়ি বাড়ির মেইন গেইট দিয়ে ঢুকছে৷
আরাভ এর বাড়ি থেকে মেহেন্দির তত্ত্ব এসেছে৷ কিন্তু ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা মানুষদেরটিকে দেখে ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো মেয়েটার৷ আতংকে বুক টা কাঁপছে আজ যদি দেখে এবার আর রক্ষে নেই৷
তিশান এসেছে সাথে তিহান আর ইশানের বউ৷ তাফসি ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে সরে গেল৷ অতঃপর স্বস্তির নিশ্বাস টানলো সে৷ দেখেনি তিশান৷ আজ দেখলে নির্ঘাত এখান থেকে উঠিয়ে আছার মারতো ওকে ৷
ভাবনার সুতো কেটে এর মাঝেই হৃদয় আর বড় চাচা এলো৷ বড় চাচা এসে বলেন,
” আম্মাজান তুমি আর হৃদয় ওদের খেয়াল রাখবে৷ দেখো ওদের সমস্যা হয় না যেন৷ ”
তাফসি আর চোখে তাকালো একবার হৃদয়ের দিকে৷ অতঃপর শুকনো ঢোক গিলে মিনমিনিয়ে বলি,
“উনি৷ মানে তিশান এসেছেন চাচা আমি কি করে? বাবা দেখলে,,,৷ ”
পুরো শেষ করতে না দিয়েই মাঝ পথে থামিয়ে দিলো তাফসির কথা৷ অতঃপর চাচা বললেন তাফসির উদ্দেশ্যে,
“কেউ কিছু বলবেনা তোমার চাচি বলেছে৷ ”
বলেই থামলো তাফসি হৃদয়ের দিকে তাকালো সে আবার রেগে নেই তো তা ভেবে৷ ভাইয়ার ভাবভঙ্গি বুঝলো না সে৷ চাচা আবার বললেন হৃদ্যের উদ্দেশ্যে,
“হৃদয় দেখো ওদের আর যা এনেছে ভিতরে নিয়ে যাও৷ ওদের নিয়ে বসাও৷ ”
হৃদয় সম্মতি জানিয়ে তাফসি কে ওর সাথে আসতে বলে এগিয়ে গেলো সে দিকে৷
তাফসি আশে পাশে নজর বুলিয়ে এগিয়ে গেলো গাড়ির দিকে৷ কারণ বড় চাচিও বলেছে কেউ নেই তাকে আর হৃদয়কেই ওদের বাড়ির মানুষের খেয়াল রাখতে হবে৷ শুনতে তো হবেই৷ কিন্তু তিশান এলো কেন বুঝতে পারছে না৷ এমনি তো ওকে নিয়ে ঝামেলা আজ না আসলেও পারতো৷
ছেলেটা সব সময় একটু বেশি বুঝে৷ তিহান এসে জড়িয়ে ধরলো অতঃপর ভাব বিনিময় করে বলে,
“কেমন আছো ভাবি?”
ভাবি ডাক শুনে ভরকালো তাফসি৷ তিশানের দিকে চোখ পরলো ছেলেটা বাঁকা হাসছে৷ অতঃপর হৃদয়ের দিকে তাকালো হৃদয় দাঁড়িয়ে আছে ধাতস্ত ভঙ্গিতেই৷ অতঃপর ইশানের বউ এসে জড়িয়ে ধরলো তাঁর সাথেও কুশল বিনিময় করলো৷ তাঁরা গাড়ির ডিকি থেকে জিনিস নামাতে গেলো হৃদয়ের সাথে৷ তিশান এগিয়ে এসে বাঁকা হাসি রেখেই বলেন,
“আমাকে জড়িয়ে ধরবেন না চাঁদ?”
তাফসি তিশানের কথায় ভাইয়ের দিকে আবার তাকালো হৃদয় তখন গাড়ি থেকে ডালা টা নিয়ে স্টেজের দিকে গেলো৷ চোখ রাঙিয়ে তাকালো তিশানের দিকে৷ তিশান দাত কেলিয়ে আসলো অতঃপর তার দৃষ্টি উপেক্ষা করে অগোচরে কোমর চেপে ধরে বলেন,
“আপনি না চাইলেও আপনাকে যে আমি জড়িয়ে নিবো চাঁদ৷ এভাবে চোখ রাঙাবেন না চাঁদ এমনি ডুবে আছি পরে দেখা যাবে পাগল হতে সময় লাগবে না৷”
বলে আশে পাশে তাকিয়ে আলতো করে মিশিয়ে নিলো নিজের সাথে অতঃপর ছেরে দিয়ে এগিয়ে গেলো স্টেজের দিকে৷ ব্যাপার গুলো এতো তাড়াতাড়ি ঘটলো কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো তাফসি৷
তিশান আবার কি যেন মনে করে পিছে এলো৷ সন্তপর্ণে তাফসির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলেন,
“শাড়িটা ঠিক মত পরুন চাঁদ৷ নিষিদ্ধ জিনিসের উপর চোখ চলে যায়৷
বাই দ্যা ওয়ে বিউটি বোনসের উপর ওই কালো কুচকুচে তিলটা সুন্দর অনেক৷ ঢেকে রাখুন ওটাকে আমি ছাড়া যেন কারো দৃষ্টিতে না পরে৷ আর ওকে বলে দিবেন আমাকে জ্বালাতে না৷”

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here