#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ২২
‘কোথায় যাচ্ছি আমরা?’
নিরবতায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো তিশানের পানে তাফসি৷
চুপ রইলো তিশান উত্তর দিলো না৷ মুখে গম্ভীর্যতা স্পষ্ট চোখে নীলাভো সান গ্লাস৷ কোন দিকে তাকিয়ে আছে বুঝা যাচ্ছে না৷ গাড়ি চালাচ্ছে যেহেতু সামনেই হয়তো দৃষ্টি৷
অতঃপর আবার প্রশ্ন ছুড়ে দিলো ব্যাকুল হয়ে মেয়েটা,
“আমরা কোথায় যাচ্ছি তিশান?
বলছেন না কেন? সবাই চিন্তা করবে৷ আরাভ ভাইয়ারা কি ভাববে? ”
তিশান স্টেয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে থমথমে কন্ঠে উত্তর দিলো,
“আমি কখনো কারো ভাবনার ধার ধারিনি আপনার বাবার মতো৷ ”
তাফসি ভরকালো৷ ছেলেটা আজ সব কথায় ওর বাবা কে টানছে কেন? অদ্ভুত তো৷
তাফসি মিনমিনিয়ে বলে,
“সব কথায় আমার বাবাকে টেনে আনছেন কেন আজ তাই তো বুঝতে পারছি না৷এখানে বাবা কি করলো?”
সে একই ভাবে বললো,
“আপনার বুঝতে না পারার কারণেই এতসব ঘটছে৷ কি বুঝেন আপনি? না আমাকে বুঝেন না নিজেকে৷ আর আপনার বাবা কি করেছে মানে? আমার বলে দিতে হবে?”
আবারো ভরকালো তাফসি৷ ছেলেটা আজ কি থেকে কি বলছে ওর বোধগম্য হচ্ছে না৷ কিন্তু এটা ঠিক বুঝতে পারছে এ ছেলের মাথা একেবারেই গেছে৷
তাফসি বিরক্তি কন্ঠে আবার প্রশ্ন ছুড়লো,
“কোথায় যাচ্ছি বলবেন প্লিজ?”
এবারো উত্তর দিলো না তিশান৷ এ ছেলে চুপ করে আছে কেন এই বুঝতে পারছে না কোথায় নিয়ে যাচ্ছে বলছেও না৷
তাফসি আবার প্রশ্ন ছুড়লো তিশানের পানে,
“অদ্ভুত৷ চুপ হয়ে আছেন কেন? কোথায় যাচ্ছি বলুন না?”
তিশানের ঠোঁট কোনে বাঁকা হাসি দেখা গেলো৷ সে হাসি টেনে সানগ্লাস টা চোখ থেকে খুলে হাতে নিয়ে বলেন,
“কাজি অফিস৷’
বলে থামলো৷ তাফসি ভরকালো, থমকালো বিস্ময় চোখে তাকালো তাঁর পানে৷ অন্তর আত্মা কাপছে তাফসির৷ কি বলছে এই ছেলে? পাগল হলো নাকি? তাফসি কিছু বলবে এর আগে তিশান আবার সানগ্লাসটা পরে মুচকি হেসে আবার রাস্তার দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলে,
” ভয় পেলে সুন্দর লাগে আপনাকে৷ আপনার ভিতু মুখটা মনে ধরলো আমার৷ কিন্তু পুরো কথাতো শুনুন আগেই থমকাচ্ছেন কেন?
আমি বলতে চাইছিলাম কাজি অফিস তো যেতে পারবো না৷ আপাদত একটু রিফ্রেশ দরকার আমার তাই খোলামেলা জায়গায় যাচ্ছি৷ পালাতে চাইলে পালাতে পারতাম কিন্তু না৷ শশুরের মেয়েকে শশুরের এলাকা থেকে নিয়ে এসেই বিয়ে করবো এখানে ব্যাপার টা জমবে না৷ ”
স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো তাফসি৷ এখনি হার্ট এট্যাক করতো নিশ্চিত৷ এই ছেলে ওকে মারার প্ল্যান করেছে নাকি?
তাফসি থমথমে কন্ঠে বলে,
“আপনার মত অদ্ভুত মানুষের মুখ থেকে অদ্ভুত কথা ছাড়া ভালো কিছু আসা করা যায় নাকি?
আর রইলো আপনার রিফ্রেশমেন্ট এর কথা? আমাকে শপিং মলে দিয়ে এসে যেখানে ইচ্ছে যান আমার সমস্যা নেই৷ ”
তিশান স্বশব্দে হেসে বলে,
“রিফ্রেশমেন্ট এর জন্যই আপনাকে দরকার চাঁদ৷ ”
কথাটা সুন্দর শুনালো বুক টিপ টিপ করে উঠলো তাফসির৷ অনুভূতি হানা দেওয়ার আগেই নিজেকে সামলে নিলো অতঃপর বললো,
“আমাকে দিয়ে আসুন৷ আপনার রিফ্রেশমেন্ট এর জন্য আমার পরে শপিং করা দেরি হয়ে যাবে তারপর বাড়িতে যেতে দেরি হবে৷ ”
“কে বলেছে আপনার শপিং করা দেরি হবে? আপনার শপিং করা দরকার নেই৷ ”
তাফসির রাগ উঠলো৷ কি বলছে এই ছেলে? সে রাগি কন্ঠে বলে,
“মানে? তাহলে এসেছি কেন? ভাইয়া আমাদের শপিং করে দিবে৷ ”
তিশান গাড়ি চালাতে চালাতে বলে,
“ভাইয়ার কাছ থেকে শপিং করার দরকার নেই আপনার কেনাকাটা হয়ে গেছে৷ ”
তাফসি অবাক কন্ঠে বললো,
“মানে? কেনাকাটা হয়ে গেছে মানে?”
তিশান ধাতস্থ ভঙ্গিতে উত্তর দিলো,
“মানে আমি সব করে ফেলেছি কালকেই৷ আপনারটা আমারটা৷ ভাইয়াদের ওই গাড়িতে আছে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবেন৷ ”
তাফসি অবাক হলো৷ এই ছেলে ওকে ছাড়া ওর শপিং করেছে? মানে টা কি? ও জানেও না?আর ও কেন করে দিয়েছে? এ ব্যাপারে কেউ কিছু টের পেলে কেলেম্কারি হয়ে যাবে৷
তাফসি থমথমে কন্ঠে বললো,
“আমি আপনার থেকে নিবো কেন? আমি ভাইয়ার থেকে নিবো৷ ”
কথাটা বলার সাথে সাথে ব্রেক কষলো তিশান৷ তাতে তাফসি ভয় পেয়ে গেলো যেন৷ শুকনো ঢোক গিললো অগোচরে৷ এই ছেলে গাড়ি থামালো কেন? মারবে নাকি? তিশান তাঁর সিট বেল্ট খুললো অতঃপর তাফসির সামনে কিঞ্চিত এগিয়ে এলো তাতে দুরত্ব কিঞ্চিত ঘুচলো৷ মুখোমুখি হলো দুজন৷ নিশ্বাস আছরে পরছে তাফসির কপালে৷
তিশান ঝুকে শক্ত কন্ঠে বলেন,
“আমার হবু বউ কে অন্য কেউ শপিং করে দিক তা আমি চাইনা৷ তা যদি আমার ভাই বা বাবা ও হয় তাও না৷ ”
থমকালো, চমকে উঠলো তাফসি৷ বুক কেমন ধক ধক করছে তিশানের কাছ থেকে বউ কথাটা শুনে৷ কেন এমনটা হলো?
বউ? আদৌ কি তিশানের বউ হতে পারবে সে? তিশান নিঃশব্দে নামলো গাড়ি থেকে৷ সে দিকে তাকালো তাফসি৷ অতঃপর অপর দিক দিয়ে দরজা খুলে তাফসিকেও নামালো তিশান৷
ততক্ষণে মাগরিব আজান পেড়িয়েছে৷ আঁধার মেখে আছে চারোপাশ৷ খোলামেলা নিভৃত স্থান বেশ৷ মন্দ লাগছে না জায়গাটা রাস্তার পাশের মৃদু আলো এখানটাও আলোকিত হয়ে আছে৷
ঠেস দিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়ালো তিশান সে দিকটা অন্ধকার৷ অতঃপর মিহি কন্ঠে বলেন,
” আমার বুকে আসুন চাঁদ৷ অনেক কষ্ট দিয়েছেন সেই কষ্ট গুলো আজ আপনাকেই মোচন করতে হবে৷ সে কষ্ট মোচনের জন্য আপনাকে আমার বক্ষপিঞ্জিরায় প্রয়োজন চাঁদ৷ আসুন জলদি৷ দাঁড়িয়ে আছি তো আপনার অপেক্ষায় আসছেন না কেন?”
গেলো না তাঁর চাঁদ তাঁর বক্ষস্থলে৷ ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো একই স্থানে৷ মেয়েটা কি ওকে ধুঁকে ধুঁকে মারতে চায়? সে কি বুঝে না তিশান এতে কষ্ট পাচ্ছে?
তিশান আবার বললো,
“আসুন চাঁদ৷ ঠিক হয়ে যবে সব কথা দিচ্ছি৷ আপনি আমারই হবেন আর আমি আপনার৷ ”
কথাটা শেষ হতে দেরি হলেও তাফসি তিশানের বক্ষপিঞ্জিরায় আবদ্ধ হতে দেরি করলো না৷ কে যানে কি হয়েছে ওর৷ লেপ্টে রইলো প্রগাঢ় ভাবে তিশানের বক্ষে৷ নেই কোন জরতা নেই কোনো লজ্জার ছিটেফোঁটাও৷ লজ্জা কে আপাদত ধারে ঘেষতে দিলো না৷ এটা এখন যেন ওরো প্রয়োজন ছিলো৷ নিমেষেই সব চিন্তা ভাবনা দূর হয়ে গেলো৷ ক্লান্ত ছিলো সে খুব বেশি ক্লান্ত ছিলো তিশান কে ছাড়া৷
চলবে না ওর তিশান কে ছাড়া কি করে বুঝাবে সবাই কে? ভালোবাসে নিজের থেকে বেশি৷ কবে যে ভালো বেসে ফেললো এতোটা এই ছেলেটা কে বোধগম্যই হলো না৷
তিশান তাঁর চাঁদ কে পেয়ে ঝাপ্টে ধরলো সন্তপর্ণে৷ বক্ষপিঞ্জিরায় যেন এখনি ঢুকিয়ে রাখবে মেয়েটাকে৷ এই মেয়েটাকে ছাড়া আজকাল কিছু মাথায় আসে না ওর৷ ইস দীর্ঘ এক মাস প্রেয়সীর ছোয়া, প্রেয়সীর কন্ঠ শুনতে পায়নি মন মস্তিষ্ক কিছু চলছিলো না৷ এক মাস কয়েক জুগ মনে হয়েছে৷
আজ যেন দেহে প্রান পেলো ফিরে৷ হুম মেয়েটা যে ওর প্রান ওর অন্তর আত্মা৷
হঠাৎ লজ্জা এসে আষ্টেপৃষ্টে জরালো তাফসি কে লজ্জার সাথে সাথে বিনা নিমন্ত্রণে মুখশ্রীর লাল আভাও এসে হাজির হলো৷ লজ্জাটা যেন মায়াবতী বানালো মেয়েটাকে৷ ক্ষানিকটা আলগা হলো ছেলেটির থেকে কিন্তু সরলো না৷ মুখ ডুবিয়েই রইলো ছেলেটির বুকেই৷ আপাদত লজ্জা থেকে বাচার জন্য এই স্থানটাই সঠিক মনে হলো তাঁর৷
হঠাৎ কি মনে করে যেন তিশান স্ব-শব্দে হাসলো৷ এতে ব্রু কুচকে এলো তাফসির লজ্জায় আরো আড়ষ্ট হলো৷ লজ্জা বাড়লো৷ ছেলেটা কি ওকে আরো গভীর, নিবিড় লজ্জায় জড়ানোর জন্য হাসছে?
বেশ পাজি তো লোকটা৷ ইচ্ছে করে লজ্জায় ফেলছে৷ তিশান সন্তপর্ণে তার এক হাত তাফসির পিঠ থেকে সরিয়ে ঘন কালো চুলে হস্ত ডুবালো অতঃপর বললো,
“আমার কাছে লজ্জা পেয়ে আমার বুকেই মুখ লুকাচ্ছেন চাঁদ? বেশ ভালো তো৷ এরপর তো আমি হাজারবার শতবার বারংবার আপনাকে লজ্জা দিবো৷ আপনাতে মিশে থাকতে যে আমার ভালো লাগে চাঁদ৷”
চলবে,