প্রণয় ডায়েরি পর্ব-২১

0
320

#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ২১

অন্তরিক্ষ তখন ঘন কৃষ্ণ কালো মেঘ জমেছে সময়টা দুপুর তিনটা বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট৷ সেই কখন থেকে বৃষ্টি আসবে বলেও এলো না৷ অন্তরিক্ষ কাদবে বলেও কাদলো না আজ বোধহয় পন করেছে মন ক্ষুণ্ণ করে রাখবে তবুও বৃষ্টি হয়ে ঝরবে না৷
আঁধার মাখা চারোদিকে তখন দিন বলে যেন মনেই হচ্ছে না৷ ঠান্ডা হাওয়া বইছে মিষ্টি হীম হাওয়া৷
মন শরীর ফুরফুরে করে তুলতে যথেষ্ট ছিলো কিন্তু না কারো মন যে ফুরফুরে হওয়ার নয়৷
সে অন্তরিক্ষের মত মন কৃষ্ণ বর্ন হয়ে আছে তাফসি নামক মেয়েটির৷ মন আজ বেজায় খারাপ তাঁর৷ ক্ষুণ্ণ মন নিয়ে কি কিছু ভালো লাগে নাকি?
মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের শেষ দিন আজ৷ বৃহস্পতিবার৷ এখন থেকেই বেশ বিয়ে বিয়ে আমেজ শনি বার থেকে মেহমান আসা শুরু করবে বাড়িতে৷ স্বর্নার বিয়ে৷ তিশানের সাথে কথা হয় না এক মাস হয়ে এসেছে প্রায় আর হয়তো হবে না?
কি করেই বা হনে? মোবাইলটা যে নিয়ে নিয়েছে ওর মা৷ যদিও ওর বাবা অনেক দিতে বলেছিলো কিন্তু ওর মা দেয়নি৷
ছোট্ট মন টা অভিমানে ভরে উঠেছে তাফসির৷ তিশান কি খারাপ ছেলে? সে তো বলেছিলো সে চাকরি করবে তবুও কেউ শুনলো না৷
মন ক্ষুণ্ণ থাকলেও আকাশটা উজ্জ্বল, ঝলমলে হতে শুরু করলো কৃষ্ণবর্ণ মেঘ কাটছে সন্তপর্ণে অন্তরিক্ষ থেকে৷ অন্তরিক্ষর ন্যায় মনটা ও যদি ঝলমলে, উজ্জ্বল হয়ে যেতো ভালো হতো হয়তো?
কিন্তু মন কি আদৌ ভালো হবে? মন যার জন্য এমন হয়ে আছে তাঁর সাথে তো আর কথা হবে না?
ভালোবাসা এতো কষ্টের কেন?
এতো কষ্টের তো না হলেও পারতো? সবার ভালোবাসা কেন পূর্ণতা পায় না?
পরক্ষণেই ভাবলো হয়তো সে তাঁর বাবাকেও ভুল বুঝছে? বাবা মা পরিবার তো কোন সন্তানের খারাপ চায় নাকি? তাঁরা যেটা ভালো মনে করেছে তাই করেছে হয়তো?
তারা ঠিক মত তিশান কে চিনে না তাই হয়তো এমন করছে? ভাবলো তাফসি৷ আজকাল এসব চিন্তাই মাথায় ঘুরে খাওয়া দাওয়া ও ঠিক মত করে না ঘুমায় না কতদিন হয়ে গেলো৷ শান্তির ঘুম হয় কি এ সময়?
হঠাৎ তাফসির ভাবনার সুতো কাটলো হৃদয়৷ হৃদয়ের কন্ঠে পিছন ফিরলো তাফসি৷
এ সময় ভাই কে দেখে ঠিকঠাক হয়ে বারান্দা থেকে ঘরে প্রবেশ করলো৷
হৃদয় তাফসির রুমে এসে বলে,
“তাফু তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে আমরা বের হবো৷ ”
ভাইয়ের কথায় ভ্রু কুচকে এলো তাফসির অতঃপর একবার জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে অতঃপর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“কোথায় যাবো ভাইয়া? মেঘ করেছে আকাশে৷ ”
হৃদয় মুচকি হেসে বলে,
“আকাশে মেঘ কেটে যাচ্ছে৷ শপিং করতে যাবো তোদের নিয়ে৷ আরাভরা ও আসবে খালামনি ফোন দিয়ে বললো তোদের সাথে নিতে৷ আরাভ শপিং করে দিবে তোদের৷ ”
শপিং এর কথা শুনে যেন নিমেষে ক্ষুণ্ণ মন ভালো লাগায় পূর্ণ হলো৷ না শপিং করবে তাই নয় আজ হয়তো তিশানের সাথে দেখা হবে? তাই ভেবে৷
কিন্তু পরক্ষণেই ভাইয়ের কথা শুনে মন টা আবার বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো৷
হৃদয় গম্ভীর কন্ঠে বলেন,
“তিশান আসতে পারে সেখানে৷ দূরে দূরে থাকবি৷ ”
বলেই প্রস্থান করলো তাফসির রুম থেকে৷ ভিজে এলো চোখটা বুকের মাঝে ব্যাথা অনুভব করলো৷
কি অদ্ভুত৷ তাঁর সাথে দেখা হবে কিন্তু দূরে দূরে থাকতে হবে৷
যেতে ইচ্ছে করছে না ওর কিন্তু ও যানে হৃদয় যখন বলেছে যেতে হবেই৷ বেশক্ষানিক্ষণ পর তাফসির মা ঘরে এলো সে এসেই রাগী রাগী কন্ঠে বলেন,
“তোকে যেতে দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো না৷ হৃদয় বলেছে তাই দিচ্ছি৷ শুন বলে দিলাম দূরে থাকবি ওই তিশান থেকে৷”
বলেই ওর আম্মুও প্রস্থান করলো রুম থেকে৷
তাফসি রেডি হয়ে বাইরে এলো মাহতাব ও আছে৷ তাসনিম, তাফসি স্বর্না যাচ্ছে৷ ভেবে ছিলো মাহতাম আর হৃদয় দিয়ে আসবে ওদের নিয়ে কিন্তু আরাভ গাড়ি পাঠিয়েছে ওদের নিতে৷
তাফসি নিচে আসতেই মাহতাব এর সাথে চোখাচোখি হলো৷ তাতে মাহতাব দীর্ঘশ্বাস ফেললো আর তাফছি তাচ্ছিল্য হাসলো৷ যে হাসি সবার চোখের আড়াল হলেও মাহতাবের চোখ এড়ালো না৷
তাফসির মাহতাব কে সহ্য হয় না, ও এখন খুশি হয়তো? ওর পথ যে ফাঁকা হয়ে গেছে৷ তিশানের সাথে সম্পর্কটা কেউ মেনে নেয়নি৷
কিন্তু মাহতাব যে পুরছে গভীর ভাবে পুরছে৷ তাঁর কষ্ট কি আদৌ কেউ বুঝবে?
প্রেয়সী চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা ছিলো না তাঁর এতে কষ্ট ছিলো না কিন্তু প্রেয়সীর চোখে নিজের জন্য রাগ,ঘৃনা দেখাটা যে কষ্ট দায়ক৷ কেউ কি বুঝে তা?
তার মুন তাকে আর পছন্দ করে না৷ ‘তাঁর মুন?’ সত্যি কি মুন তাঁর ছিলো কখনো?
কল্পনায় শুধু নিজের করে পেয়েছে কিন্তু বাস্তবে? ভালোবাসা কত কষ্টের তাই না? যে যাকে চায় তাকে পায় না৷
রাস্তায় এসে তিশান কে দেখে বুকটা কেঁপে উঠলো তাফসির৷ ঝাপটে ধরতে ইচ্ছে করছে লোকটাকে তাঁর৷ কিন্তু এই প্রথম দু-জন দু-জনের সাথে অচেনা ব্যবহার করলো৷
তিশানের পানে চেয়ে রইলো তাফসি তিশানো এক পলক তাকালো৷ তাঁর চোখে রাগ অভিমান স্পষ্ট৷ করুক রাগ করুক অভিমান৷ আর তো তাদের মিলন হবে না দুরত্ব টা না হয় বারুক? একজন কষ্ট পাক আরেকজনে অভিমানী হয়েই থাকুক? একজনের কষ্ট তো অন্তত লাঘব হবে?
কিন্তু আদৌকি অভিমান করে থাকলে কষ্ট লাঘব হয়?
না!
কষ্ট হয়তো দ্বিগুণ হয়?
তাফসি এসে গাড়ির সামনে দাঁড়ালো মাথা নিচু করে তাশনিম আর স্বর্না গাড়ির পিছনের সিটে উঠে বসে পরেছে৷
তাশনিম আর স্বর্না মেকি হেসে বলে,
“বোন তুই তো জানিস গাড়িতে উঠলে আমাদের মাথা ব্যাথা করে একটু সামনে বস না৷”
তাফসি করুন চোখে তাকালো৷ ও জানে ওর দু’বোন ইচ্ছে করেই ওকে সামনে বসতে দিয়েছে৷ এটা আজ না করলেও পারতো এতে যেন কষ্টটা কিঞ্চিৎ বাড়িয়ে দিলো৷
তিশান গাড়িতে উঠলো৷ তাফসিও৷ তিশান গাড়িতে উঠে স্বর্না কে বলে,
“কেমন আছো ভাবি?”
ভাবি সম্বোধনে লজ্জা পেলো স্বর্না৷ মুচকি হেসে বলে,
“ভালো তুমি?”
“আছি ভালো৷ ”
কেমন শুনালো কথাটা৷ তপ্ত শ্বাস টানলো স্বর্না৷ স্পষ্ট বুঝলো সে ভালো নেই৷ ভালো থাকার কি কথা ছিলো? তিশানের দিকে এক বার ও তাকায়নি তাফসি তবে তিশান অভিমান চোখে নিয়ে অনেকবার তাকিয়েছে৷ কি ক্ষতি হতো সে দিন ওর বাবা কে বলতে যে হ্যা ও তিশান কে বিয়ে করতে চায়? অভিমান হওয়া কি স্বাভাবিক নয়?
কিন্তু আপাদত অভিমান টা কে সরিয়ে রাখলো ভাবলো ও অভিমান করে থাকলে এই মেয়ে কে কখনোই পাওয়া হবে না৷ আপাদত যা করার ওকে করতে হবে পরে না হয় অভিমান করবে?
শাস্তি দিবে ভাবলো তিশান নিজের করে নিয়ে গভীর শাস্তি দিবে৷
স্টেয়ারিং থেকে এক হাত সরিয়ে তাফসির কোলের উপর থাকা মুঠোয় বন্ধি হাত দুটো ধরলো৷ চোখ বন্ধ করে নিলো মেয়েটা৷ বুকে তীব্র, গভীর ব্যাথা হচ্ছিলো ব্যাথাটা আরো নিঙরে দিলো ছেলেটা৷
চোখের পানি গড়িয়ে পরবে পরবে ভাব কিন্তু না পড়তে দিলো না তাফসি চোখ বন্ধ করে শ্বাস টেনে হাত দুটো ছাড়িয়ে নিলো৷ দেখলো তা তাশনিম আর স্বর্না৷
লুকিং গ্লাস দিয়ে স্বর্নার দিকে তাকালো তিশান করুন চোখে৷ স্বর্না ইশারা করলো বললো৷ স্বাভাবিক হতে আর চেষ্টা চালিয়ে যেতে৷
তিশান এবার তাফসির ডান হাতটা টেনে শক্ত করে মুঠোয় বন্দী করে নিলো৷ছাড়াতে পারলো না তাফছি গড়িয়ে পড়লো চোখের পানি৷
এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করেছে তিশান৷সারাটা রাস্তা হাত ধরেই ছিলো৷ বসুন্দরা শপিং কমপ্লেক্স এর সামনে এসে থামলো কালো গাড়িটা৷ তাশনিম আর স্বর্না কেন যেন এক প্রকার তাড়াহুড়ো করে নামলো গাড়ি থেকে৷ ততক্ষণে তাফসি সবে সিটবেল্ট খুললো৷
নামবে এর আগেই চাবি দিয়ে লক করে দিলো গাড়িটা তিশান৷
চমকালো, ভরকালো, অবাক হলো তাফসি৷ দাতে দাত চেপে বললো,
‘লক করলেন কেন? লক খুলুন গাড়ির আপুরা কি ভাববে?’
খুললো না লক বাহু টেনে নিজের দিকে ঘুরালো অতঃপর বললো,
“কেউ কিছু ভাববে না তাদের আইডিয়া এটা৷ আর কেন এমন করছেন চাঁদ? নিজেও কষ্ট পাচ্ছেন আমাকেও দিচ্ছেন৷ সে দিন হ্যা বলে দিতেই পারতেন৷”
তাফসি হাসলো অতঃপর বললো,
“যারা আমায় জন্ম দিয়েছে তাদের কষ্ট দিতাম কি করে আমি? ভুলে যান আমায় তিশান৷ ভুলে যান৷ ”
বলেই চোখের পানি ছেড়ে দিলো তাফসি৷ তা এবার দেখলো তিশান অতঃপর প্রেয়সীকে নিজের পানে ঘুরালো মিহি কন্ঠে বললো,
” জানেন চাঁদ৷ ভালোবাসা বৃষ্টির পানির মত বৃষ্টির পানি যেমন আকাশ থেকে মাটিতে পড়লে তা আর আকাশে ফেরত যায় যায় না তেমন ভালোবাসলেও কাউকে ভোলা যায় না৷ আপনি আমারি হবেন চাঁদ৷ আপনাকে আমি আমার নামে করবো বলে দিয়েন আপনার বাবাকে৷ ”

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here