#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ১৩
“আমার ভাইকে দেখছি এইটুকু সময়েই পাগল করে ছাড়লে শালিকা৷ তা এই কাজ করলে কি করে জাদু টাদু জানো নাকি?”
আরাভ ভাইয়ার এহেন কথায় লজ্জা যেন আরো আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো আমায়৷ আপুর সামনে এমন কথা বলছে আপু না জানি কি মিনে করে৷ সব কি এক নাকি ওদের বাড়ির? কোথায় কখন কি বলবে তা ঠিক থাকে না৷ মানুষ কে শুধু লজ্জায় ফেলার ধান্দা এটে থাকে নাকি?
আমি একবার আপুর দিকে দৃষ্টিপাত করলাম৷ সে হাসছে আমি যেন আরো বেশি লজ্জায় পরে গেলাম এক প্রকার দৌড়ে নিচে চলে এলাম৷
নিচে আসতেই মাহতাব ভাইয়ার মুখোমুখি হলাম৷ সে কিছু বললো না আমায়, হন হনিয়ে ভাইয়ার দিকে এগিয়ে গেলো৷ তিশান কে দেখছি না সে আবার কোথায় গেলো? এদিক ওদিক তাকিয়ে বসার জন্য আপুর রুমে আসলাম এখানে আসতেই দেখি তিশান বিছানায় ঠেস দিয়ে বসে আছে৷
তাঁর কাছে এসে যেন বেশি লজ্জায় পরে গেলাম৷ আমাকে দেখে সে হাসলো ঠোঁট এলিয়ে৷ আমি এক গুচ্ছ অস্বস্তি নিয়ে বাইরের দিকে এগিয়ে যাবো ঠিক তখনই গম্ভীর কন্ঠ ভেসে এলো,
“যাবেন না চাঁদ৷ ”
কেঁপে উঠলাম আমি, তাঁর মুখে চাঁদ নামটা শুনে যেন আমি প্রতিবারই লজ্জায় পরে যাই লোকটা কি বুঝে না? তবে তাঁর মুখে চাঁদ নামটা বেশ মানায়৷ ভালোলাগা কাজ করে অদ্ভুত৷
আমি দাঁড়ালাম তবে পিছন ঘুরলাম না৷ সে আবার বলে,
“আমার কাছে আসুন চাঁদ৷ ”
শুকনো ঢোক গিললাম৷ এখন তাঁর পানে তাকানোর শক্তি আমার নেই এমনি লজ্জায় আমি অর্ধমৃত হয়ে আছি৷ আবার তাঁর দিকে তাকাবো কি করে?
সে বললো,
“এখানে আসুন চাঁদ৷”
জোরে জোরে শ্বাস টেনে আস্তে আস্তে মাথা নিচু করে ঘুরলাম৷ অতঃপর এগিয়ে গেলাম তাঁর দিকে৷ সে তাঁর পাশে ইশারা করে বলেন,
“বসুন এখানে৷”
আমি আমতা আমতা করে বলি,
“চাচি এসে পরবে৷ ”
সে মুচকি হেসে বলে,
” আন্টি আমাকে এখানে বসিয়ে গেছে বলেছে আপনাদের পাঠাচ্ছে৷ যাক চাচি শাশুড়ী আমার কষ্ট টা বুঝতে পেরেছে হয়তো৷ ”
তাঁর কথায় তাঁর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকালাম৷ তাঁর ওষ্ঠ যুগলে মিশে আছে বাঁকা দুষ্টু হাসি৷ আমি তাঁর এমন হাসিতে আরো লজ্জায় পরে গেলাম৷ সে আবার চোখের ইশারায় বসতে বললো৷ আমি জরতা নিয়ে বসলাম পাশে সে আমার পানে এক দৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছে তা দেখে আমি মাথা নিচু করলাম সন্তপর্ণে৷
সে মিহি কন্ঠে বলে,
” এভাবে ঘায়েল করবেন আমায় চাঁদ৷ নিষিদ্ধ কিছু করে বসলে পরে হয়তো আপনি আমায় নির্লজ্জ পদবি দিয়ে বসবেন৷ ”
তাঁর কথা কর্ণকুহরে আসতেই কিছুক্ষণ থম মেরে রইলাম৷ কি বললো বুঝলাম না এখন আবার কি করলাম আমি?
লোকটাকে কি নিশিতে পেয়েছে নাকি? সে আবারো মোহ মাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“এমন লজ্জা মাখা মুখশ্রী দেখতে হলেও আপনাকে আমার চাই চাঁদ৷ ”
এবার কেঁপে উঠলাম আমি৷ বুকের ভেতর কেউ যেন হাতুরি চালাচ্ছে এখান থেকে না উঠলে মরেই যাবো আমি৷
আপু ও আসছে না৷ হঠাৎই কানে আজানে ধ্বনি ভেসে এলো স্বস্তি পেলাম যেন আমি তাড়াহুড়া করে উঠে “নামাজ পড়বো৷ ” বলে এক প্রকার দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম৷
আপুর রুম ছেরে আসতেই আপুকে দেখলাম৷ আপু আর আরাভ ভাইয়া ছাদ থেকে আসলো সবে, আপুর মুখটাও লজ্জা মাখা৷
আরাভ ভাইয়া ড্রইং রুমে বড়দের সাথে বসলো৷ আমি আর আপু চাচির রুমে এসে নামাজ পড়লাম সাথে তিশানের মা আর আরাভ ভাইয়ার মাও ছিলো৷ নামাজ পরে বাইরে এসে দেখলাম তিশান ড্রইংরুমে বসেছে আমার সাথে চোখা চোখি হলো সে হাসলো আমায় দেখে৷ চোখ নামিয়ে নিলাম আমি ছেলের হাসি দেখে তিশানের মা ও আমার দিকে তাকালো তাতে আমি যেন আরো ভয় পেলাম৷ আন্টি কিছু বুঝে যায় নি তো?
আপুর রুমে তাসনিম আপুর কন্ঠ পেয়ে এগিয়ে গেলাম আপুর রুমের দিকে৷ তাসনিম আপু আর রাইসা এসেছে আমার মেঝো চাচার মেয়ে বিকেলে তারা নানু বাড়িতে ছিলো৷ স্বর্না আপুর দশ মাসের ছোট তাসনিম আপু তাসনিম আপুর দুই বছরের ছোট আমি আমার দুই বছরের ছোট রাইসা৷ আর রাইসার চার বছরের ছোট আমার ছোট বোন অনি৷
আপুর রুমে আড্ডা জমেছে জম্পেশ৷ ব্যাস্ততায় সব কাজিন অনুষ্টান ছাড়া এক হতে পারি না আজ অনেক দিন পর আবার কাজিন মহলের আড্ডা জমেছে ফুপাতো ভাই বোনেরাও আছে৷
এর মাঝেই হৃদয় আর মাহতাব ভাইয়ার সাথে আরাভ ভাইয়া তিশান আর তিশানের ছোট বোন এলো৷
ওরা সবার সাথে পরিচিত হলো তিশান এইটুকু সময়ে সবার সাথে এমন ব্যাবহার করছে যেন অনেক সময়ের চেনা৷ তাঁর এমন আচরণ মনে ধরলো প্রগাঢ় করে৷ ছেলেটা সত্যি অমায়িক৷
মাহতাব ভাইয়া হঠাৎ আমাকে চমকে দিয়ে আমার পাশে এসে ধপ করে বসলো৷ সাথে সাথে আমি তিশানের দিকে দৃষ্টি দিলাম৷
তিশান ও আমার দিকে তাকালো এই বুঝি চোখ দিয়েই আমাকে মেরে ফেলবে৷
তখনি হঠাৎ তিশানের ফোন বেজে উঠলো ফোন তুলার আগে গম্ভীর মুখ করে আমার দিকে তাকালো৷ তাঁর দৃষ্টি যেন বলছে “উঠুন চাঁদ নয়তো আপনার কপালে দুঃখ আছে৷ ”
আমি উশখুশ করতে থাকলাম৷ কে যানে মাহতাব ভাইয়া বুঝলো কি না৷ সে আমার দিকে শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো অতঃপর অগোচরে আমার হাতে দুইটা চকলেট গুজে দিয়ে মিহি কন্ঠে বলে,
” স্থির হয়ে বস মুন৷ উঠে যাবো আমি৷ অসান্ত লাগছিলো নিজেকে তাই একটু বসলাম৷ উঠে যাবো আমি এর পর আর তোর ধারে কাছেও ঘেঁষবো না কথা দিচ্ছি৷ একটু শান্তি চাই আমার৷ একটু বসি?”
আমি বুঝলাম না তাঁর কথার মানে৷ তাই সম্মতি জানালাম বসার জন্য৷ বুঝলাম না কিসের অশান্তি তাঁর? তিশান এলো আপুর বারান্দা থেকে এবারো ভয়ার্ত চোখে তাকালো আমার পানে৷ উঠে গেলো মাহতাব ভাইয়া অতঃপর কৌশলে আমার পাশে তিশান কে বসিয়ে দিলো৷ তিশান যেন এতে কিছুটা অবাক হলো কিন্তু কিছু বললো না৷ নিজের মতো স্বাভাবিক ভাবেই সবার সাথে কথা বলছে তিশান আপুরাও বেশ হেসে হেসি কথা বলছে৷ যে মানুষ টা মিনিটে পাঁচ ছয়বার আমার দিকে তাকায় সে এখন এক বার ও আমার দিকে তাকালো না আর৷
রেগে আছে কি? এর তো হুট হাট রাগ উঠে৷ ছেলেটা জ্বালাতেই পারে শুধু৷ এই অদ্ভুত মানুষ টার সাথেই জুরে গেছি আমি৷ মাহতাব ভাইয়াকে তো আর আমি বসতে বলিনি এতো রাগার কি আছে?
অভিমান হলো আমার৷ সে যদি এমন করে আমিও করবো তাঁর রাগ আছে আমার কি রাগ নেই? কিন্তু মাহতাব ভাইয়ার কথাটা মাথায় ঘুরছে৷ এমন লাগলো কেন ভাইয়া কে?
তাহলে তিশান যা বলেছে তা কি সত্যি? হায় আল্লাহ এমনটা যেন না হয়৷ আমি চাই না এমনটা৷
মাহতাব ভাইয়া রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেছে তিশান একবার সে দিকে তাকালো অতঃপর আমার দিকে৷
আমি অন্য দিকে তাকালাম৷ শুধু রাগ করবে আর আমি বসে থাকবো? সে বুঝে না তাঁর এমন কন্ঠ এমন দৃষ্টি আমার অন্তর আত্মা কাপিয়ে তুলে?
এমন করলে যে কোনো সময় যে আমি হার্টের রোগী হয়ে যাবো তখন কি সে আমার আরোগ্য হবে?
বেশ ঘন্টাক্ষানেক এখানে আড্ডা দিলাম সবাই৷ সারে আটটা বাজতেই সবাইকে খেতে ডাকলো৷ তিশান দের যেতে সময় লাগবে তাই এতো তাড়াতাড়ি খেতে বসিয়ে দিবে৷
সবাই এক এক করে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে আপুকে তার শাশুড়ী এসে নিয়ে গেছে৷
আমি বিছানা থেকে নেমে রুম থেকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবো তখনি হেচকা টান মেরে আবার বিছানায় বসিয়ে দিলো তিশান৷
অতঃপর দাতে দাত চেপে শান্ত কন্ঠে বলে,
“না করেছিলাম তো? ও আপনার পাশে বসেছিলো কেন?কি বলছিলো? আমি আমার ব্যাতিত অন্য জনের চোখে আপনার জন্য ব্যাকুলতা দেখতে চাই না চাঁদ৷ আমাকে রাগাবেন না চাঁদ৷ আপনি আমার মানে একান্ত আমার৷ ”
চলবে,