প্রণয় ডায়েরি পর্ব-১২

0
484

#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ১২

তখন পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পরেছে৷ আকাশের রঙ কমলা আর শুভ্র রাঙা৷ অকৃত্রিম হলেও দেখতে একেবারে কৃত্রিমই লাগছে, মনে হচ্ছে এই বুঝি কেও রঙ তুলি দিয়ে অঙ্কন করে রেখে গেছে৷ এ যেন এক প্রেমময় আকাশ অতিথি পাখি গুলো উরছে এখনো আকাশেই একটু পর যে সন্ধ্যা নামবে সে দিকে তাদের খেয়াল কোথায়?
তাঁরা যেন খুব ব্যাস্ত এক দন্ড ও বসার সময় নেই৷ তিশান আমার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে তাঁর দৃষ্টি পশ্চিম আকাশেই তাঁর বলিষ্ট হাত জোরা আমার বাম বাহুতে৷
নিরবতা চারপাশ বিরাজমান৷ সে চুপ আছে আর আমি বরাবরের মতো কোনো কথাই খুঁজে পাচ্ছি না৷
বেশক্ষানিক্ষণ পর সে নিরবতা বিচ্ছিন্ন করে শান্ত কন্ঠে বলেন,
“মাহতাব থেকে দূরে থাকবেন চাঁদ৷ ”
তিশানের এমন কথায় প্রশ্ন বোধক চাওনি দিয়ে তাকালাম তাঁর পানে৷ মাহতাব ভাইয়া আবার কি করলো? ভাইয়ার সাথে তো কথা বললো তখন৷ এখন আবার কি হলো?
“কেন?”
সে কিছুটা কঠিন কন্ঠে আবারো বললো,
” আমি চাই না আমি ব্যাতিত আপনার দিকে কেউ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাক৷ আমি চাই না আমি ব্যাতিত আপনাকে কেউ তাঁর করে চাক৷ আপনি আমার চাঁদ৷ আপনি আমার, আপনি শুধু আমার হয়েই থাকবেন আপনার হাসিতে শুধু আমি মুগ্ধ হবো৷ আপনার নেত্রপল্লব এর প্রেমে শুধু আমি পরবো৷ আপনার দহনেও শুধু আমি পুরে ভস্ম হতে চাই চাঁদ৷”
আমি তাঁর কথা অবাক হয়ে শুনলেও বুঝলাম না কিছুই৷ মাহতাব ভাইয়া কি আমার দিকে তাকিয়েছে নাকি যে এমন কথা বলছে? কি হয় লোকটার মাঝে মাঝে? কিন্তু তাঁর কথায় যেন লজ্জায় পরে গেলাম৷
সে আমায় আজ মেরেই ফেলবে মনে হয় তাঁর কথার জালে ফাসিয়ে৷ এমন করে কথা বলে আমায় দূর্বল বানায় কেন লোকটা?
আমার অনুভূতিগুলো তান্ডব শুরু করে দিয়েছে যেন৷ এ অনুভুতিতে পরিপূর্ণ আমি যেন তাতে আসক্ত হয়ে পরছি প্রতিবার, প্রতিক্ষণ৷ তাকে ছাড়া চলা যেন আমার দুষ্কর হয়ে পরছে দিন দিন তা কি সে জানে? আমার মন, মস্তিষ্ক এমনকি শরীরটা ও তাঁর করে নিয়েছে৷ এ কি অন্যায় নয়? এ যে ঘোর অন্যায়৷
সে আমার অনুমতি ব্যাতিত আমার মন নিজের নামে করেছে৷ তাঁর এমন কথার ইন্দ্রজালে বাজে ভাবে পরে গেছি৷
আমাকে প্রাণনাশিণী বলে সে? প্রান তো আমার নাশ করেছে সে৷ ক্ষণে ক্ষণে আমার থেকেই আমাকে কেড়ে নিচ্ছে সে৷ এ কি অপরাধ নয়? এ যে দণ্ডনীয় অপরাধ৷
আমি চুপ করে রইলাম৷ তাঁর কথার পরিপেক্ষিতে কি বলা উচিত বুঝতে পারছি না৷
কি বলবো? কিছু উত্তর না পেয়ে মৌনতাকেই বেছে নিলাম৷ আপাদত মৌনতাই শ্রেয় বলে মনে হলো৷ সে আমার মৌনতা দেখে কিঞ্চিত হেসে বলে,
“আপনি কি শুধু ফোন না করাতেই অভিমান করে আছেন চাঁদ?”
আমি এবারো কিছু বললাম না৷ কেন বলবো অভিমান করেছি কেন? সত্যি কি অভিমান আছে তাকে নিয়ে কোন? মনে মনে হাসলাম আমি৷
ভাবলান ভালোবাসার জন্য আবার দিন প্রয়োজন হয় নাকি? আমার জন্য তো প্রতিটা দিনই রঙিন বসন্ত৷
সে আমার কানের কাছে এসে সন্তপর্ণে চুল গুলো ফু দিয়ে সরিয়ে হিসহিসিয়ে বলে,
“আপনি অবুঝ কেন চাঁদ? কেন আপনাকে সব মুখে বলতে হবে? বুঝে নিন না কিছু জিনিস৷ বুঝে নিন না আমার না বলা কথা গুলো৷ আমি তা মুখে বলে নয় আমি আমার কাজে সে কথা বুঝিয়ে দিতে চাই৷ বুঝবেন তো চাঁদ?”
আমি ক্ষীণ হাসলাম তাঁর কথায়৷ ভাবলাম সত্যি সব কি মুখে বলা প্রয়োজন নাকি? ভালোবাসার কথা মুখে বললেই কি ভালোবাসা প্রমান হয়ে যায় নাকি? ভালোবাসি ভালোবাসি বললেই তো তাকে ভালোবাসা বলে না৷ ভালোবাসা তো প্রকাশ পায় কাজে কর্মে তাঁর আচরণে৷
সে আমার পাগলাটে প্রেমিক৷ পাগলাটে প্রেমিক এর বর্ণনা সে যেন আমাকে দেখিয়ে দিচ্ছে বারংবার৷ পাগলাটে প্রেমিক কি শুধু তার জন্য বিচলিত হয়ে পরা তাকে পাওয়ার জন্য পাগলামি করাকে বলে নাকি? পাগলাটে প্রেমিক তো তার প্রেমের নতুন নতুন ভালোবাসা পূর্ণ কাজ কে বোঝানো হয়৷
সে নিজেও পাগল হয়ে যে আমাকেও পাগল বানিয়ে দিলো৷ ‘ভালোবাসি’ তাকে আমি৷ আর তাকে ছাড়া চলবে নাকি আমার?
আঁধার প্রগাঢ় হচ্ছে আস্তে আস্তে লালাভো রঙটা কেটে যাচ্ছে পাখিরা নীড়ে ফিরছে ৷ নিচের সোরগোল শোনা যাচ্ছে বড়রা হাসাহাসি করছে৷
পাশেই আমাদের ছাদ৷ আমাদের উচু কবুতরের বামের উপর থেকে থেকে ডানা ঝাপটে নিচে নামলো কালো সাদা কবুতর গুলো৷ তখনই হঠাৎ ধুলো এসে চোখে পরলো মৃদু “আহ” করে আর্তনাদ করে চোখে হাত দিলাম৷
তখনই আমার পাশের সুঠাম দেহের অধিকারী মানুষটি তাঁর বলিষ্ঠ হাত জোরা আমার বাহু থেকে সরিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললেন,
“চাঁদ? কি হিয়েছে আপনার?
চোখে কিছু গেছে? দেখি দেখতে দিন আমায়৷ ”
হাত সরালাম না চোখ থেকে৷ সে আমার হাতে হাত রাখলো চোখ চুলকাতে যাবো তখনি সে থামিয়ে দিলো৷ থামিয়ে দিয়ে বলেন,
“চুলকাবেন না৷ দেখতে দিন আমায় নয়তো পানি পরবে চোখ থেকে, জ্বালা করবে পরে৷ ”
বলে এক হাত আমার গালে রাখলো আরেক হাত দিয়ে আমার হাত সরালো৷ অতঃপর চোখ দেখতে লাগলো৷ আমি স্থির হয়ে রইলাম তাঁর নিশ্বাস আমার মুখে পরছে৷ শরীরে কম্পন শুরু হয়ে গেলো মৃদু আকারে৷ সে সন্তপর্ণে তাঁর শুভ্র রাঙা মসৃন রোমাল দিয়ে চোখ থেকে ধুলোটা বের করে আনলো জ্বলছে চোখ কিছুটা৷ পানিও পরছে টপ টপ করে৷
সে আমার চোখ থেকে হাত সরিয়ে গালে হাত রেখে মলিন কন্ঠে বলে,
“জ্বালা করছে খুব চাঁদ? ”
আমি তাঁর চোখের দিকে দৃষ্টি দিয়েও চোখ নামিয়ে নিলাম৷ তাঁর চোখে ব্যাস্ততা আমার জন্য৷ সেই চোখে তাকানোর সাধ্যি আমার নেই৷ আমি তাকে শান্ত করার জন্য কিছু বলবো ঠিক তখনই আরেকটা পুরুষালী কন্ঠ বেসে এলো৷
“আরে ভাই আমার বিয়ে হওয়ার আগেই নিজের জায়টা সেট করে নিচ্ছিস নাকি?”
আরাভ ভাইয়ার কন্ঠ শুনে আমি কিছুটা দূরে সরে গেলাম৷ ভাইয়ার এমন কথায় লজ্জা লাগলো আমার৷ কিন্তু তিশানের কোনো ভাবান্তর ঘটলো না৷ সে বেপরোয়া হয়ে আমার ডানহাত টা ধরে আছে৷
আরাভ ভাইয়া এবার আমাদের হাতের দিকে দৃষ্টি দিলো সাথে আপুও৷ আমি তা দেখে লজ্জায় নুয়ে পরলাম৷ ইস কি ভাবছে তারা? লোকটা ছাড়ছে না কেন? আপুর মুখে বিস্ময়ের ছাপ ভাইয়ার মুখে চঞ্চল হাসি৷ ভাইয়া হেসে হেসে দুষ্টুমির ছলে বললেন,
“তিশান আমার শালিটাকে পটানোর ধান্দায় আছিস নাকি? আমি কিন্তু তোর কাছে আমার শালির প্রেম করতে দিচ্ছি না তাই পটিয়ে লাব নেই৷ ”
তিশান আমার হাত আরেকটু শক্ত করে ধরলো অতঃপর আমার পাশে এসে দাঁড়ালো তাতে আমাদের মাঝে আমার করা দুরত্ব টা ঘুচোলো সে মুচকি হেসে বলে,
“ভাইয়া কি যে বলিস না তোর শালি কে আমি পটাতে যাবো কেন? সে তো এমনি পটে গেছে৷ ”
শেষের কথাটুকু একেবারে আমার সামনে মুখ এনে বললো৷ অতঃপর আবার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে,
“আরে তোর শালিকে একটু দেখা শুনা করে রাখছিলাম বাচ্চা মানুষ ছাদ থেকে পরে টরে গেলে তাই আর কি৷ ও সব তোর গোবর পড়া মাথায় ঢুকবে না তুই বরং ভাবির সাথে প্রেম কর৷”
এইটুকু বলে আমার হাত ছেড়ে ভাইয়ার কিছুটা কাছে গিয়ে চোখ টিপে বলেন,
“আর কি জানি বললি তুই প্রেম করতে দিবি না? প্রেম করবে কে? আর আমিও প্রেম ট্রেম করবো না তো৷ সময় হলে এমনি না চাইলেও জোর করে নিজের নামে দলিল করে নিয়ে যাবো৷ বাধা দিবে কে?”

চলবে,

(ভ্যাক্সিন দিয়ে কুপোকাত হয়ে গেছি৷ তাই গল্প দিতে দেরি হলো৷)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here