#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ০৫
চোখ দিয়ে আমার অনবরত পানি পরছেই কান্না আসছে আমার আবার কল করলাম রিং হচ্ছে দুইবার হলো বুক ধক ধক বেড়ে গেছে আমার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ফোন তুললো কেউ৷ অন্য পাশ থেকে সফট মিউজিক এর আওয়াজ আসছে৷ এটা তিশান তো? কথা বলছে না যে? আমার যেন কান্নার পরিমান বাড়ছে কিয়ৎ সময় পর সে অপর দিক থেকে বলে,
“আসসালামু আলাইকুম৷ কে? ”
কেমন অদ্ভুত প্রশান্তি বয়ে গেলো শরীর আর মন জুরে৷ এ যে চেনা কন্ঠই৷ তবুও বুকের ধুকপুকানি আর কান্নার জন্য মুখ দিয়ে কিছু আসছেই না৷ আমি চাইছি কিছু বলতে কিন্তু পারছিনা৷ জোরে জোরে শ্বাস টেনে কান্নারত কন্ঠে এক গুচ্ছ আবেগ নিয়ে অস্ফুটস্বরে “হ্যালো ” বললাম৷ কে যানে ওপাশের ব্যাক্তিটি চিনতে পারলো কিনা বুঝলাম না৷ সে কি চিনেনি আমায়?তাঁর জোরে জোরে শ্বাস টানার শব্দ আসছে৷
আমি চোখ মুখ মুছে সন্তপর্ণে আবার মৃদু স্বরে বললাম,
“তিশান?”
“মিস.বোম্বাই মরিচ?”
তাঁর কন্ঠ ধ্বনি বিচলিত শুনা গেলো৷ আর যেন অবাক হলো আমার সর্বাঙ্গ কেমন কেঁপে উঠলো৷ইসস এ কেমন অনুভূতি৷ নিজেকে হাপানি রোগী পদবী টা দিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে এমন শ্বাস দেখে৷ আমি কোনো মত মুখ থেকে “হু” শব্দটা বের করলাম৷
ওর কি হলো কে জানে? চুপ হয়ে গেলো৷ আমিও শব্দ ভান্ডার খুঁজেও কোন শব্দ পেলাম না ওনাকে বলার জন্য৷
উনি আমায় মনে রেখেছিলেন? আচ্ছা কি বলবো এরপর কি প্রশ্ন ওনাকে আমি? কিয়ৎ প্রহর পেরোলো কানে আজানের ধ্বনি স্পষ্ট শুনতে পেলাম তার ওখান থেকে সফট মিউজিক থেমে গেছে৷ সে ও কি আমার মত শব্দ ভান্ডারে শব্দ খুঁজতে ব্যাস্ত? রেখে দিবো কি?
লোকটা কিছু বলছেও না রাখছেও না ঘুমিয়ে গেলো কি? আমি কিছু বলবো এর আগেই উনি বললেন৷
” সতেরো দিন মানে বুঝেন মিস বোম্বাই মরিচ? চৌদ্দ লক্ষ আটষট্টি হাজার আটশ সেকেন্ড আমাকে অপেক্ষা করালেন৷ এর শাস্তি কি দেওয়া যায় বলুন তো?”
“অপেক্ষা ” কথাটা শুনে অবাক না হয়ে পারলাম না, সে ও আমার অপেক্ষায় ছিলো? আমার সাথে কথা বলার অপেক্ষায় ছিলো সে?সত্যি?
উনি আবার বললেন,
“দেখা হচ্ছে খুব শীগ্রই৷ ”
বলেই ফোন টা রেখে দিলেন আমিও নির্বোধ এর মত বসে রইলাম৷ এক নাগারে নিজেই সব বসে গেলো আবার নিজের রেখে দিলো৷ এমন কেন ছেলেটা? ওকে না রাগালে হয় না কি?
একটু পরি টুং টাং নোটিফিকেশন এলো ওয়াইফাই অন ছিলো৷ হোর্টসাপ নোটিফিকেশন৷
নোটিফিকেশন দেখে রীতিমতো অবাক হোর্টসাপে এড হয়ে গেছে৷ আমার ফোনে হোর্টসাপ খোলা ছিলো তাই হয়তো এড হতে সময় লাগলো না৷ তিশানের সাথে পুরো নাম “তিশান মাহমুদ”৷
একটু পরই একটা স্ক্রিনশট এর ছবি এলো তিশান ওর ফেইসবুক আইডি স্ক্রিনশট দিয়ে পাঠিয়েছে৷ এই ছেলে তো শুরুতেই কত এগিয়ে ভাবা যায়৷
আমার হার্ট এতো দ্রুত বিট করছে যেন এখনি হার্ট বেড়িয়ে আসবে৷
আইডি টা খুঁজে পেতে বেশ সময় লাগলো ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট নিজ থেকেই পাঠালাম যদিও জরতা কাজ করছিলো তবুও পাঠালাম৷ অচেনা এই ছেলেটার জন্য এমন অনুভূতি, এমন অদ্ভুত কাজ কেন করছি নিজেও জানি না৷
অতঃপর ফোনটা সাইডে রেখে নামাজ পরতে গেলাম৷ ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরতে পরতে কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল টা একটু আলোর রেশ দেখা যাচ্ছে কিন্তু চারোপাশ ধুসর হয়ে আছে৷
সারা রাত না ঘুমালেও আজকের সকালটা অনেক বেশি সুন্দর৷ নাকি আমার কাছেই এতো সুন্দর লাগছে?
নামাজ পরেই ফোনটা নিয়ে বসলাম, না ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করেনি৷ বেশ কিছুখন পর আবার নোটিফিকেশন এলো ” Tishan Mahmud accepted your friend request” হাত পা কম্পন আরো বেরে গেছে৷ ইস আমার আবেগ প্রবণ অনুভূতিতে মাখা মন টা নিয়ে কি করবো আমি? সত্যি মরে যাবো আমি৷
কিয়ৎ ক্ষণ পর ম্যাসেজ এর শব্দ এলো তিশান লিখেছেন,
“ঘুমাও”
আমি হাসলাম৷ এখন অনেকটা শান্তি লাগছে, আচ্ছা একই অনুভূতি কি ওর হচ্ছে? ও কি আমায় মিস করেছিলো? কিন্তু কেন করেছিলো?
আচ্ছা এখান থেকেই কি নতুন কিছুর সূচনা হলো?
ঘুম আসছে না অনেকটা শান্তি লাগছে তবুও ঘুম আসছে না৷ তিশান কি ঘুমিয়ে গেছে?
এর মধ্যেই ফোনটা নড়ে চড়ে বাইব্রেশন করে কাঁপতে শুরু করলো৷
উফফ বাবা খুব জোর বেচে গেছি বাইব্রেশন না করে রাখলে কুয়ালে দূঃখ ছিলো৷
তিশান ফোন করেছে বুক টা ধক ধক করছে৷ ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নিচু স্বরে কথার আওয়াজ ভেসে আসলো,
“ঘুমিয়ে পরেছো কি?”
কয়েকটা বকা দিতে ইচ্ছে করলো এখন, ঘুমিয়ে পড়লে কেউ ফোন ধরে কি করে? আমি বললাম,
“না”
আবার দু-জনের মাঝেই নিরবতা কিয়ৎ সময় পার হওয়ার পর নিরবতা ভেঙে সে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
“দেখা করতে চাই এড্রেস সেন্ড করো৷ ”
আমি থম মেরে রইলাম, কি বলবো কি বলা উচিত? দেখা কি করে করবো লকডাউন চলছে কলেজ ও বন্ধ৷ সে আবার বললো,
“আমি না শুনতে পছন্দ করি না মিস বোম্বাই মরিচ, আশা করি এড্রেস পাঠাবেন৷ ”
কি অদ্ভুত বাবা এক পাক্ষিক কথা বলেই যচ্ছেন৷ আমি ইতস্ততা কাটিয়ে মিনমিনিয়ে বলি,
“কিন্তু,,,৷ ”
সে আবার বললো,
“আপনার অপরাধের পাল্লা ভারি হচ্ছে মিস.কি নাম জানি? তাফসি রাইট? আইডিতে তো তাই দেওয়া আছে৷”
আমি মিনমিনিয়ে অভিযোগ সুরে বলি,
“হুম আমার নাম বোম্বাই মরিচ না তাইয়েবা আফসি৷ ”
সে হয়তো হাসলো৷ অতঃপর বলেন,
“আপনার সাথে বোম্বাই মরিচটাই বেশি যায়৷ ”
আমি কিছু বললাম না আমি প্রসঙ্গ পালটে বললাম,
“লকডাউনে কি করে,,,৷ ”
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই তাঁর গম্ভীর কন্ঠ ভেসে এলো আবার,
“আমি ওতো কিছু জানতে চাইনি এড্রেস চেয়েছি শুধু৷”
বলেই ফোনটা কেটে দিলো৷
যাক বাবা এ কেমন পাগলের পাল্লায় পরলাম আমি? আস্ত একটা ঘাড় বাঁকা ছেলে৷ এখন কি করবো আমি? বাড়ির এড্রেস দিবো? হায় আল্লাহ বাড়ির এড্রেস দিলে যদি বাড়িতে এসে হাজির হয়? কি করতে চাইছে এই ছেলে? আচ্ছা সে কি আমাকে একটুও বুঝবে না? এমন পাগলামোর মানে আছে?
সে কি বুঝে না তাঁর জন্য আমার অবাধ্য মন এমনি বেকুল আবার এমন আচরণ৷ আমাকে কি মারতে চায় সে?
“টং” করে আবার ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ এলো আমি দেখতে যাবো তখনি আম্মুর ডাক পরলো৷
আম্মুর ডাক শুনতেই রুহ কেপে উঠলো, হায় আল্লাহ কথা বলতে শুনে ফেলেনিতো? আজ তাহলে আমার রক্ষে নেই ফোন টা ও তাহলে হয়তো নিয়ে নিবে? এখন কি হবে? যাবো কি? নাকি ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকবো?
আমি শুয়ে পরলাম আম্মু আবার ডাকলো৷ আমার শরীর কাপছে, আম্মু আমার রুমে সামনে ভিতরে এসে বলে,
“এই কুয়াশা উঠ নামাজ পরবিনা? আল্লাহ এই মেয়ে কে একদিন ও উঠাতে পারি না৷ ”
আমি স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে কম্বলটা সরিয়ে বললাম,
“আম্মু ডাকছো কেন? সবে নামাজ পরে ঘুমালাম আর এখনি ডাকা ডাকি শুরু করলো৷ ”
আম্মু অবাক হয়ে বলে,
“তুই আজ না ডাকতেই উঠে পরলি?বাহ বেশ উন্নতি হয়েছে দেখছি৷”
আমি বিরক্ত নিয়ে আবার নাকে মুখে কম্বল জরালাম আম্মু বেড়িয়ে গেলো৷ আমি জোরে জোরে শ্বাস নিলাম যাক বাবা খুব জোর বেচে গেছি৷
আজ কাল আম্মু ডাকলে কলিজায় পানি থাকে না, তখন মনে হয় হায় আল্লাহ ডাকলো কেন তখন দুনিয়াতে এতো দিন যত ভুল করেছি সব কিছু কথা মাথায় ঘুরতে থাকে৷
আমি কোলবালিশ জরিয়ে মোবাইলটা হাতে নিতেই ম্যাসেজ অন করে অবাক৷
সে ম্যাসেজ এত্তো গুলো ম্যাসেজ দিয়েছ৷ আমি রীতিমতো অবাক এ ম্যাসেজ নাকি ছোট খাটো থ্রেট বুঝলাম না কিছু৷ রিপ্লে নেওয়ার আগে আবার টুং করে ম্যাসেজ এলো,
“আপনি খুব বড় ভুল করেছেন মিস তাফসি৷ ভুল গুলোর শাস্তি আপনাকে পেতে হবে৷ একজন কে না জানিয়ে তার হৃদ গহীনে জায়গা করে নেওয়া ঘোর অন্যায়৷ আপনি আমার মন মস্তিষ্ক সব কিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন এক একটা জিনিসের হিসেব আমি বুঝে বুঝে নিবো মিস তাফসি৷ জাস্ট ওয়েট এন্ড সি৷”
চলবে,