সে আদরের অন্য নাম পর্ব-৭

0
446

? #সে_আদরের_অন্য_নাম ?
৭ম পর্ব

হিয়ার শরীর আবার খারাপ করতে শুরু করেছে,গায়ে প্রচন্ড জ্বর আসছে,হাত পাঁ কাঁপছে,সবাই তো চিন্তায় পড়ে গেল রাত ১০টায় বাস কি করে হিয়া এ শরীর নিয়ে ফিরবে,উজান রুপমকে ফোন করলে রুপম বলে ওরা ফিরছে আর জাস্ট আধাঘন্টার মতো হয়তো লাগবে,উজান একবার এসে হিয়াকে দেখে নিয়ে তুষার কে নিয়ে বাহিরে বের হয় যদি কোনো ডক্টরের খোঁজ পাওয়া যায়,কিন্তু এ-ই জায়গায় ডক্টর কোথায় পাওয়া যাবে হসপিটাল তো একটু দূরে আর ডক্টর কে বললেই কি ডক্টর আসবে,উজান সকালে অবন্তী কে যে ডক্টর টা দেখিয়েছিলো তার কাছে গিয়ে অনেক রিকুয়েষ্ট করে বলে যদি একবার ওদের কটেজে এসে হিয়াকে দেখে দেন উনি,ডক্টর টা প্রথমে রাজি হোন না কিন্তু উজান অনেক টাকা ওফার করলে উনি বলেন ঠিক আছে উনি যাবেন,ডক্টর এসে হিয়াকে দেখে যায় যদিও হিয়া জ্বরের ঘোরেও অনেকবার বারণ করেছিলো এসব ঝামেলা না করতে কিন্তু হিয়ার কথা শুনে কে,ডক্টর এসে নাপা আর তার সাথে একটা এন্টিবায়োটিক আর গ্যাসের ঔষধ প্রেসক্রাইব করে দিয়ে কতো গুলো টেস্ট দেয়,এখন কথা হচ্ছে টেস্ট হবে কোথায় এখানে না বাড়ি ফিরে,উজান চেয়েছিলো যে করে সম্ভব হোক এখান থেকে টেস্ট করিয়ে তবে ফিরতে দরকার পড়লে হিয়াকে না হয় হসপিটালে এডমিট করিয়ে ট্রিটমেন্টের যদি ব্যবস্থা করা যায় কারণ যদি একটা দিনের লেটেও বাড়াবাড়ি কিছু হয়ে যায় তখন কিন্তু হিয়া রাজি হয়নি হিয়ার আর কোনো ভাবে এখানে থাকতে ইচ্ছে করছে না এই অসুস্থতা নিয়ে,সে বাড়ি ফিরতে চায় তাই উজান আর হিয়াকে জোর করে না__তোতোক্ষনে রুপম-রা সবাই এসে কটেজে উপস্থিত আর কিছুক্ষণ পর ফেরার পালা

রাতে বাসে ওঠার এক ঘন্টা আগে সন্ধি আর রাইসা মিলে হিয়াকে জোর করে দু লোকমা ভাত খাইয়ে ঔষধ গুলো খেতে দেয়,তারপর সবাই জার জার ব্যাগ নিয়ে রেডি হয়ে পড়ে__কিন্তু সমস্যা বাঁধে রুপমের, রুপম আজ ফিরতে পারবে না ওর চাচ্চু আর ভাইয়া আসছে আজ রাতের গাড়িতে তাই সে কটেজে থেকে যেতে বাধ্য হয়,বাস গুলো নিজস্ব এ্যাজেন্সির বলে কোনো সমস্যা হয় না__আসার সময়কার কথা মতো মেয়েরা এক বাসে ফেরার কথা থাকলেও সবটা এলোমেলো হয়ে যায় তাই আগের নিয়মে সবাই বসে পড়ে আর এতো রাতে সব মেয়েকে এক বাসে ফেরার রিস্ক টা কেউ নিতে চায় না,ছেলে মেয়ে এক সাথে থাকলে সাহস টা বাড়ে

রুপমঃ সরি রে তোদের সাথে যেতে পারছি না,খুব আর্জেন্ট না হলে আমি তোদের সাথেই ফিরতাম

সন্ধিঃ ইটস ওকে রুপম আমরা বুঝি,তোকে আমাদের কাছে এতো ফর্মালিটি করতে কেনো হচ্ছে আমি তো সেটাই বুঝছি না,এই আমাদের তুই জিগরি দোস্ত বলিস

রুপমঃ থ্যাংকস রে__আর অবো বাসে একদম চুপচাপ হয়ে বসে থাকবি কোনো এপাশ-ওপাশ সামন-পেছন নড়াচড়া করবি না

অবন্তীঃ ধুর যাও তো কোথায় ভাবলাম যাওয়ার সময় আরো ৫০০টাকার একটা নোট গুনবো তা আর হলো কোথায়

সন্ধিঃ (অবন্তীর মাথায় একটা টোকা দিয়ে) চল, বেশি পাকনি,নে হাত ধর

রুপমঃ আর ম্যাজিক কুইন আমি যেনো বাড়ি ফিরে দেখি তুমি একদম সুস্থ হয়ে গেছো ওকে

হিয়া কোনো উওর দেয় না উওর দেওয়ার মতো কোনো শক্তি ওর আপাতত নেই,সন্ধি অবন্তী কে ধরে বাসে বসিয়ে দিলে রাইসা হিয়াকে নিয়ে আস্তে করে বাসে উঠে

রুপমঃ হিয়ার খেয়াল রাখিস প্লিজজজ তবে বোনের মতো ওক্কে

উজানঃ না বউয়ের মতো রাখবো হ্যাপি

রুপমঃ তোকে তো শালা আমি

উজানঃ সার তো,তাড়াতাড়ি ফিরিস ভার্সিটিতে ভোট চলছে আর মাস্টার্স ফাইনালের প্রিপারেশন টাও তো নিতে হবে নাকি

রুপমঃ হুম ফিরবো
___________________

বাসের মধ্যে উঠে সন্ধি উজান কে ডেকে বলে হিয়ার পাশে বসতে,রাইসা ওপাশের সিটে অবন্তীর সাথে আছে,সন্ধি গিয়ে হিয়ার পেছনে তুষারের সাথে বসবে

সন্ধিঃ ভাবিস না আমি তুষারের সাথে বসবো দেখে তোকে হিয়ার পাশে বসতে বলছি,মেয়েটার এই শরীরে তোকে ওর দরকার

উজানঃ কিন্তু তুই থাকলে বুঝতি ওর কি লাগ-তো না লাগ-তো আমি কি করে

সন্ধিঃ এখানে বোঝাবোঝির তো কিছু নেই,আর না বুঝলে বুঝতে শেখ,আমি আছি হিয়ার পেছনে,ডাকলেই আমি চলে আসবো

উজানঃ ঠিক আছে

সন্ধি তুষারের পাশে গিয়ে বসলে উজান হিয়ার পাশে বসে পড়ে কিন্তু ঝামেলা শুরু করে তাসফিয়া,ও জেদ ধরে যে ও উজানের সাথে একসাথে বসে বাসে করে ফিরবে,এই নিয়ে শুরু হয় ওর ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যান,উজান যে এতোবার করে বলছে ওহ ওর সাথে বসবে না তাও তাসফিয়া কথা গায়েই মাখছে না

হিয়াঃ ঠিক আছে আপু আপনি এখানে এসে বসুন আমি সামনে যাচ্ছি

তাসফিয়াঃ হ্যা তাই ভালো উঠো তো ফটাফট

হিয়া উঠে দাঁড়িয়ে বের হয়ে সামনে যেতে ধরলে উজান উঠে হিয়ার হাত ধরে হিয়াকে থামিয়ে দেয়

উজানঃ হিয়া যেখানে বসে ছিলে ওখানে গিয়ে বসো

হিয়াঃ আমি ঠিক আছি আপনি বরং আপুর সাথে

উজানঃ হিয়া আমি তোমাকে বসতে বলেছি

হিয়াঃ আমি আছি তো আর ঔষধ গুলো খেয়ে এখন একটু বেটার লাগছে সত্যি,আমি পারবো একা ওখানে

উজানঃ হিয়া তুমি খুব ভালো করে জানো আমি এক কথা একবারি বলা পছন্দ করি so যেটা বলছি সেটা করো

তাসফিয়াঃ আমি বুঝতে পারছি না তুমি বা ওকে এতো জোড় করছো কেনো ও তো বলছে ও পারবে

উজানঃ I said come here hiya

হিয়াঃ আমি তো বললাম আমি পারবো আপনি কেনো তারপরো

উজান এবার দুম করে সিট থেকে উঠে হিয়াকে চিৎকার করে ঝারি দিয়ে উঠে

উজানঃ I said come & sit Down here damn it

উজানের চিৎকারে পুরো বাস থমকে উঠে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে,অবন্তী ওর ভাইয়ের এরকম চিৎকার শুনে এক হাতে কোন রকমে পানির বোতল খুলে ঢকঢক করে পানি গিলতে থাকে,এমনিকি নীলিমা পর্যন্ত উজানের এরকম বিহেভিয়ারে অবাক__ওদিকে হিয়া তো ভয়ে মাথা নিচু করে উজান কে পাশ কাটিয়ে ওর জানালা বরাবর সিটের কাছে গিয়ে দাঁড় হয়

তাসফিয়াঃ তুমি এরকম চিৎকার করছো কেনো উজান,স্ট্রেন্জ

উজানঃ লিসেন তাসফিয়া আমার তোমার সাথে,একসাথে,পাশে বসে ফেরার কোনো ইচ্ছে নেই__তাসফিয়া তুমি বাচ্চা না সবটা বোঝো__হিয়া অসুস্থ ওর গায়ে অতিরিক্ত জ্বর ওদিকে আমার বোনের হাতে ফ্রাকচার সেও অসুস্থ তুমি এরপরো কি করে এরকম অন্যায় আবদার করছো,এটুকু মানবতা তো নিজের মধ্যে রাখো__প্লিজ নিজের সিটে গিয়ে বসো আর আমাকে বিরক্ত করবা না,হিয়া আমার পাশে বসেই ফিরবে

তাসফিয়া এই মুহুর্তে ঠিক কি রিয়াকশন দেওয়া উচিৎ সেটা বুঝতে না পেরে হিয়ার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে হাজার টা ক্ষোভ ছুঁড়ে দিয়ে নিজের সিটে গিয়ে বসে পড়ে

উজানঃ কি হলো তুমি দাঁড়িয়ে দেখছো কি,বসতে বলিনি আমি(ঝারি দিয়ে)

ঝারি খেয়ে হিয়া চুপচাপ ওর সিটে বসে পড়ে

হিয়াঃ এরকম করে উনি আমাকে সবার সামনে ঝারি দিতে পারলো,কি কি করেছি আমি,শুধু তো ঔ আপু টাকে বলেছি ওনার পাশে বসতে আপু টা সেই বাসে উঠছি থেকেই বলছিলো একসাথে ফিরবো তাই জন্য তো আমি__আর কি উনি তখন মানবতার কথা বললো মানে উনি আমাকে মানবতার খাতিরে কেয়ার করছে,শুধু দায়িত্ববোধ থেকে,সব বুঝেছি আমি,আমি আর একটা কথাও বলবো না ওনার সাথে একটাও না হুহ

হিয়া গাল মুখ ফুলিয়ে জানালার দিকে মুখ করে থাকে,এতোক্ষণে যাই বা একটু জ্বর কমেছিলো মুহুর্তে সেটা আবার নাড়া দিয়ে বাড়তে থাকে,এদিকে গত দু ঘন্টা ধরে বাস চলছে আর এর মধ্যে মিনিমাম উজান হিয়াকে দশটার মতো প্রশ্ন করে ফেলেছে কিন্তু হিয়া কোনো টারি উওর দেয় নি,শেষে বাধ্য হয়ে উজান হিয়ার কোমড় ধরে হ্যাচকা টেনে হিয়াকে ওর বুকে নিয়ে ওর বড়ো চাদরটার তলায় জাপ্টে ধরে

উজানঃ কিসের রাগ দেখাচ্ছ তুমি আমার উপর,এভাবে গাল মুখ ফুলিয়ে রাগ দেখার কি মানে হিয়া

হিয়াঃ ছাড়ুন আমাকে কেউ উঠলে দেখে ফেলবে

উজানঃ চলন্ত বাসে কেউ নিজের সিট ছেড়ে উঠবে না

হিয়াঃ আচ্ছা মুশকিল তো কেউ না উঠুক ওপাশে রাইসা আপুরা বসে আছে ওরা দেখলে

উজানঃ আই ডোন্ট কেয়ার

হিয়াঃ বাট আই কেয়ার,আর আমি কাউকে বলিনি মানবতার খাতিরে আমার সাথে এসব করতে হুহ

উজানঃ হোয়াট,হোয়াট ডিড ইউ সে আমি মানবতার খাতিরে তোমাকে

হিয়াঃ তা নয় তো কি তখন তো ঔ আপু টাকে আপনি তাই বলছিলেন

উজানঃ আমি তাসফিকে তাই বলেছি ইডিয়ট একটা( চাদরের তোল দিয়ে হিয়ার মাথায় একটা গাট্টা মেরে)

হিয়াঃ তো বলেননি মনে করে দেখুন তো ভালো করে

উজানঃ আমার মনে করতে হবে না আমি জানি আমি ওকে ঠিক কি বলেছি

হিয়াঃ কি বলেছেন শুনি

উজানঃ বলেছি ওর মানবিকতার কথা আমার না,ও যেনো একটু ওর মানবিকতার খাতিরে আমাকে আর ডিস্টার্ব না করে

হিয়াঃ ইয়ে মানে,হ্যা ঠিক আছে বুঝেছি কিন্তু আমি তাও আপনার সাথে কথা বলবো না

উজানঃ আবার কি করলাম আমি

হিয়াঃ আপনি আমাকে বাস ভর্তি লোকের সামনে বকেছেন,হিয়া সিট ডাউন বলে আমাকে ঝারি দিয়েছেন

উজানঃ তা ঝারি দেবো না,তুমি ঝারি দেবার কাজ করলে আমি ঝারি দেবো না,কে বলেছিলো তোমাকে নিজের সীট ছেড়ে উঠে যেতে

হিয়াঃ হ্যা তাই বলে ওভাবে

উজানঃ হ্যা ওভাবে

হিয়াঃ যতো আদর যত্ন নিয়ে আপনি আমাকে দেখে রাখেন তার সিকিভাগ টুকুউ যদি?

উজানঃ কি কি বললা

হিয়াঃ কিছু না,কিছু না, কোথায় কি বললাম

উজানঃ চুপ এখন,আমার বুকে মাথা রেখে ঘুম দেও কোনোরকম সাউন্ড ছাড়া

হিয়াঃ উনি বললো আর আমাকে সেটা শুনতো হবে হু

উজানঃ জ্বরের মধ্যে আছো বলে কি দুনিয়ায় রাজ্যের সব আবোলতাবোল বকতে হবে,ইডিয়ট

হিয়াঃ (উজানের বুকে একটা চিমটি দিয়ে)আপনি ইডিয়ট

উজানঃ আআআআ লাগে না

হিয়াঃ লাগুক,আপনার লাগাই উচিৎ

উজানঃ আবার কথা,ঘুমোতে বলছি কিন্তু

হিয়া একটা ভেংচি কেটে উজানের বুকে মাথা রেখে ঘুম দেবার চেষ্টা করে,এদিকে উজান হিয়ার মাথার তালুতে ওর থুতনি ঠেকিয়ে বাহিরে তাকিয়ে,জানালা টা হালকা খোলা তাও ওতোটুকু খোলাতেই শিরশির করে বাতাস ঢুকছে,উজানদের মাথার কাছের লাইট টা একটু আগে নিভে গেলো শুধু শেষের দিকের লাইটটা জ্বলছে আর তার আবছা আলো উঁকি দিচ্ছে উজান আর রাইসাদের সিটের মাঝ বরাবর

মাঝে মাঝে গাড়ি হালকা ব্রেক কষছে,সামনের সীটে সাব্বিরের জানালা টা খোলা থাকায় মাঝে মাঝে বাহিরের আলো দেখা যাচ্ছে,আর এরকম একটা পরিবেশে হিয়া উজান একি চাদরের তোলে,উজান ওর এক হাত বের করে হিয়ার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে হিয়াও ব্যস্ত জ্বরের ঘোরে উজানের এই যত্ন মাখতে,হিয়ার হালকা ঘুম চলে আসলে হিয়া উজান কে ওভাবে দু হাতে আকড়েই ঘুমিয়ে পড়ে,প্রায় ২,৩ঘন্টা যাবৎ হিয়া উজানকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে,রাত প্রায় তখন ২ঃ৩০এর কাছাকাছি উজানের ফোন টা কারো ফোনে ভাইব্রেট করে উঠলে উজান ফোন টা রিসিভ করতে গেলে হিয়া একটু নড়েচড়ে বসে মানে হিয়ার ঘুম টা একটু পাতলা হয় আর কি

উজানঃ হ্যা এই বাসে সবাই ঠিক আছে,ঘুমোচ্ছে সবাই মনে হয়

রুপমঃ কোনো ধরনের সমস্যা হলেই কিন্তু আমাকে ফোন দিস

উজানঃ ও নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না,তুই একা ওখানে একটু সাবধানে থাকিস

রুপমঃ হ্যা কেয়ার টেকারের সাথে আছি,একটু পর হয়তো ভাইয়ারাও এসে পড়বে

উজানঃ হুমম

রুপমঃ হিয়ার শরীর কেমন এখন,জ্বর কমেছে

উজানঃ না আগের মতো আছে,দেখি ফিরে আগে ওকে আর অবো কে ডক্টরের কাছে আরো একবার চেকআপ করিয়ে নেবো

রুপমঃ হুমম ওটাই ভালো হবে,আচ্ছা ঘুমো তাহলে রাখছি

উজানঃ হুমম

উজান ফোন রাখে,তোতোক্ষনে হিয়া চাদরের ভেতর থেকে ওর মুখ টা বের করে উজানের গলা বরাবর মাথা টা রেখে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকে যদিও গভীর কুয়াশা আর অন্ধকার থাকায় বাহিরের কিছুই দেখা সম্ভব না তার উপর জানালা অল্প খোলা,তবু হিয়া তাকিয়ে থাকে

উজানঃ হিয়া (অস্ফুটে)

উজানের মুখে আবার ওরকম কন্ঠে হিয়া ডাক টা শুনে হিয়া এবার রেগে যায়,রেগে গিয়ে ওর গায়ে আঁকড়ে থাকা উজানের দু হাতের সামনের হাত টায় জোরে করে চিমটি কেটে দেয়

উজানঃ কি করছো লাগে তো

হিয়াঃ আর কখনো আমাকে এরকম করে হিয়া বলে ডাকবেন না

উজানঃ হিয়া বলে ডাকবো না তো কি বলে ডাকবো আজব

হিয়াঃ যা ইচ্ছে ডাকুন কিন্তু ঔ ওরকম করে হিয়া ডাকবেন না

উজানঃ আমি ডাকবো,আমার ওরকম করে হিয়া ডাকতে ভালো লাগে

হিয়াঃ নাআআআআ আপনি ডাকবেন না

উজানঃ ডাকবো

হিয়াঃ আমি কিন্তু তাহলে সন্ধি আপুর কাছে চলে যাবো

উজানঃ সাহস থাকলে যাও দেখি

হিয়াঃ সন্ধি আপুউউউ?

হিয়ার ডাকে সন্ধি তড়াৎ করে উঠে পড়ে

সন্ধিঃ হ্যা হ্যা আপু বলো

হিয়াঃ আমি তোমার পাশে বসবো,ভাইয়া আমাকে শুধু বকা দিচ্ছে

উজানঃ সন্ধি তুই তোর জায়গায় গিয়ে বস তো,জ্বরের ঘোরে ও কি থেকে কি বলছে ওর হুশ নেই কোনো?

সন্ধিঃ আচ্ছা কিছু দরকার হলে বলিস আমি জেগে আছি

উজানঃ আর তুষার

সন্ধিঃ ব্যাটা আমার কাঁধ ব্যাথা করে দিয়ে আরাম করে ঘুমোচ্ছে

উজানঃ হা হা উল্টো কাহিনি গুড

সন্ধিঃ গুড না ছাই,আচ্ছা হিয়ার খেয়াল রাখিস বেশি বকিস না ওকে,আর কিছু খেলে বিস্কুট,কেক আছে ওখানে খাইয়ে দিস

উজানঃ হুমম

_______________
রাত চারটার দিকে গাড়ি গিয়ে থামে ফুড ভিলেজে,হিয়ার গায়ে তখনো তীব্র জ্বর,গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে,আর হিয়া থেকে থেকে শিউরে উঠছে যেনো মনে হয় গায়ে আরো কিছু গরম কাপড় দিলে হয়তো ভালো হতো,শীত টা একটু কমতো

উজানঃ সন্ধি তোরা কি নামবি

সন্ধিঃ হ্যা

উজানঃ আচ্ছা তুই একটু কিছুক্ষণ হিয়ার পাশে বস আমি একটু নিচ থেকে আসছি

সন্ধিঃ হ্যা যা

উজান নিচ থেকে ওয়াশরুমে গিয়ে কোনো রকম ফ্রেশ হয়ে তড়িঘড়ি করে আসার সময় আরো কিছু কেক,বিস্কুট নিয়ে আসে সাথে

উজানঃ যা এখন আমি আছি,অবো

অবন্তীঃ হ্যা ভাইয়া

উজানঃ কিছু খেলে সন্ধিদের সাথে যা নাহয়

অবন্তীঃ ঠিক আছে,তুমি থাকবে তো হিয়ার পাশে

উজানঃ হ্যা আমি আছি তোরা যা,টাকা টা রাখ

রাইসাঃ কিসের টাকা দিচ্ছিস ওকে তুই,আমরা কি ওকে খাওয়াতে পারবো না নাকি আজব

উজানঃ আমি সেটা বললাম কখন

সন্ধিঃ বলতে হয় না রে,টাকা আছে দেখে কি একবারে সব কিছুতে সেটা দেখাবি

উজানঃ একটা সিম্পল কথা কে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস তোরা__অবো রেস্টুরেন্টে যা আছে সব খাবি সন্ধি আর রাইসা কারো ব্যাগে যেনো বাস থেকে নামার পর একটা টাকা না থাকে ক্লিয়ার

অবন্তীঃ হে হে ডান যাও

সবাই এক এক করে বাস থেকে নেমে পড়ে বাস এখন পুরো ফাঁকা,শুধু উজান আর হিয়া,হিয়া জ্বরের চোটে আরো নিশ্চুপ হয়ে গেছে__উজান অনেক কষ্টে হিয়াকে দুটো বিস্কুট খাইয়ে দিয়ে এখন হিয়াকে নিয়ে চাদর জরিয়ে বসে আছে,নীলিমা নামবার আগে একবার ওদের কে ওভাবে দেখে নিয়ে ভ্রুকুচকে চলে যায়,মাথার উপর লাইট টা জ্বলছে,হিয়া উজানের দিকে ঘুরে একটা হাসি দিয়ে উঠে হিয়ার জ্বর বাড়ছে জ্বরের ঘোরে কি থেকে কি বলছে ওর হুশ নেই,এদিকে হিয়ার এই অবস্থা দেখে উজানের চোখ দিয়ে অটোমেটিক পানি চলে আসছে

উজানঃ কি দেখছো

হিয়াঃ আপনি কাঁদছেন

উজানঃ হ্যা কাঁদছি,তোমার কি তাতে,কতো করে বললাম আজ না ফিরে,ওখানে কোনো একটা হসপিটালে এডমিট হয়ে যাই__কেনো শুনো না তুমি আমার কথা,কি হয় শুনলে, এখনো আরো কতোক্ষণ বাসে থাকতে হবে জানো,এর মধ্যে যদি তোমার কিছু একটা হয়ে যায় আমি কি করবো তখন হ্যা(কাঁদতে কাঁদতে)

হিয়াঃ কিচ্ছু হবে না আমার,আপনি প্লিজ কাঁদবেন না

উজানঃ তুমি বুঝো না তোমার কিছু হলে আমি__কেনো শরীর খারাপ নিয়ে তুমি আসতে গেলে মানা করতে পারো নি তখন অবন্তীকে,কাল কখন নামবো কখন ডক্টর দেখাবো আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না

হিয়াঃ হে হে

উজানঃ তুমি হাসছো,আমার এই কষ্ট দেখে তোমার হাসি পাচ্ছে

হিয়াঃ আপনাকেও না কাঁদলে অনেক সুন্দর লাগে জানেন__আমি এখন আপনার এই চোখ গুলো খাবো,কি সুন্দর পানি দিয়ে ভর্তি,অনেক মজা লাগবে না খেতে বলুন,দাড়ান আমি টেস্ট করে দেখি

হিয়া একটু উপর হয়ে উজানের মুখের দিকে এগিয়ে উজানের দু-চোখে ওর ঠোঁট গুলো স্পর্শ করে সব পানি শুষে নেয়

হিয়াঃ নোনতা নোনতা লাগছে তো?

উজানঃ কি করছো হিয়া বাসে কেউ উঠে পড়বে

হিয়াঃ আপনি তো বললেন চলন্ত বাসে কেউ উঠবে না

উজানঃ বাস এখন চলছে না হিয়া,আমরা এখন ফুড ভিলেজে বসে আছি

হিয়াঃ কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে বাস চলছে

উজানঃ না চলছে না

হিয়াঃ আমার না খুব শীত করছে আপনি আমাকে আরো একটু জরিয়ে ধরবেন প্লিজ

উজানঃ ধরেই তো আছি আর কতো

হিয়াঃ যেভাবে জরিয়ে ধরলে আমার শীত কমে যাবে

উজানঃ হিয়া আমাকে আর তুমি দূর্বল করে দিও না প্লিজ

হিয়াঃ ঠিক আছে লাগবে না জরিয়ে ধরা,লাগুক আমার শীত,আসুক আমার জ্বর,জ্বরে যেনো আমি পাগল হয়ে মরে যাই

উজানঃ (হিয়ার মুখ চেপে ধরে)চুপ একদম চুপ আর কখনো এরকম কথা মুখে আনলে কিন্তু আমার চাইতে খারাপ কেউ হবে না হিয়া কেউ না এই আমি তোমাকে বলে রাখলাম
হিয়াঃ তাহলে আমি যা বলছি তা করুন
__________________
সকাল আটটার দিকে গাড়ি এসে থামে সিলেটে,উজান বাস থেকে নেমেই অবন্তী আর হিয়াকে নিয়ে সন্ধি আর তুষারের সাথে মিলে ভালো একজন ডক্টর দেখিয়ে নেয়__দুদিন পার হয় হিয়া এখন পুরো সুস্থ

ভার্সিটি ক্যাম্পাস;

উজানঃ সবাই আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো,স্ট্রেন্জ

সাব্বির দৌড়ে এসে

সাব্বিরঃ ভাই খুব বাজে একটা কাহিনি হয়েছে আজ আপনাকে নিয়ে

উজানঃ হোয়াট কাহিনি?

সাব্বিরঃ ভাই আপনার সাথে কেউ খুব খারাপ একটা প্রাঙ্ক করেছে

উজানঃ কি সব বলছিস সাব্বির,এই ভার্সিটিতে কারো সাহস আছে আমার সাথে মজা করার তাও আবার তুই যেভাবে বলছিস

সন্ধিঃ সাব্বির ঠিকি বলছে উজান,আমার মনে হয় কাজ টা সৈকতের

উজানঃ আরে কি কাজ,কি প্রাঙ্ক খুলে বলবি তো নাকি আর এখানে সৈকতেই বা কেনো আসতে যাবে আজব

সন্ধিঃ ধর,দেখ,তোর আর হিয়ার এই ছবি গুলো পুরো ক্লাসরুমের দেওয়াল জুড়ে মাখামাখি করছে

উজান সন্ধির হাত থেকে ছবি গুলো নিয়ে যেনো পুরো আকাশ থেকে পরে,উজানের চারপাশ অন্ধকার হতে শুরু করে উজান শ্বাস নিতে পারে না দম আঁটকে উঠে তার,এসব কি করে__বাসে সেদিন যখন উজান হিয়াকে জড়িয়ে ধরে ছিলো তখন কেউ ইচ্ছে করে খুব সতর্কভাবে ওদের এই মুহুর্ত টার ছবি তুলে নিয়েছিলো আর এখন সেগুলো দিয়ে উজানকে সবার সামনে ছোট করার চেষ্টা করছে

এদিকে ভিপি স্যার উজান কে ডেকে পাঠিয়ে ওনার চেম্বারে যা নয় তাই বলে অপমান করা শুরু করে,শুধু উজান ভার্সিটির একজন ভালো আর সবার খুব প্রিয় পরিচিত মুখ হওয়ার ওকে রেস্ট্রিকেট করতে পারে না,উপরন্তু অন্য সব স্যার রা উজানকে খুব ভালোবাসে বলে ভিপি কে রিকুয়েষ্ট করে ছেলেটা এই সামনে ফাইনাল দিচ্ছে এখন যেনো কোনোভাবে ওকে কিছু না করা হয়__ভিপি স্যার সবার কথায় আস্বস্ত হয়ে বলে ঠিক আছে।

উজানের আজ রাগ হচ্ছে না ওর চিন্তা হচ্ছে আর চিন্তা টা নিজেকে নিয়ে না হিয়াকে নিয়ে,যদি কোনোভাবে হিয়া এসব কিছু জানতে পারে,উজান অবন্তী কে ফোন করে বলে হিয়া কোথায়,অবন্তী বলে হিয়া ওর সাথে বাড়িতে,উজান যেনো তখন আরো আঁতকে উঠে কারণ এই খবর টা উজানের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে যে বেশিক্ষণ লাগবে না এই কথাটা সে খুব ভালো করেই জানে,তাই উজান বিন্দুমাত্র দেড়ি না করে অবন্তী কে বলে হিয়া যেনো এখনি ওর হোস্টেল ফিরে যায়,ইটস এ অডার__ওদিকে অবন্তী আর হিয়া কেউই এরকম একটা আদেশের মাথামুণ্ডু কিছু খুঁজে না পেয়ে বাধ্য হয়ে উজানের কথা মেনে নেয়__এদিকে তো এসব খবর বের হতে বেশি সময় নেয় কি নেয় না__হিয়া অবন্তী দের বাড়ি থেকে বের হবার সময় পাশের বাসার আন্টি টা কেমন করে জানি হিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে আসলে ওনার মেয়েও উজানদের সাথে একি ভার্সিটিতে পড়ে আর ওনার মেয়ে ওনাকে একটু আগে ওসব দেখিয়েছিলো সত্যি আজ-কাল যুগের মেয়েদের লজ্জাশরম বলে কিছু নেই,আন্টি টা হিয়াকে দেখে বোঝার চেষ্টা করছিলো আসলে এই মেয়ে টা ছবির মেয়ে টা কি না

সৈকতঃ আরে ক্রাশবয় আজ আড্ডা না দিয়েই চলে যাচ্ছে স্ট্রেন্জ

উজানঃ কেনো করলি এরকম একটা কাজ তুই

সৈকতঃ তোকে সেদিন বলেছিলাম না আমার সাথে লাগতে আসিস না দেখলি তো আমি তোর হাতে তোরি ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট ধরিয়ে দিলাম

উজানঃ তোর শত্রুতা তো আমার সাথে ছিলো আমাকে নিয়ে লড়তি দরকার পড়লে মেরে ফেলতি আমাকে কিন্তু আমার সাথে জরিয়ে একটা মেয়েকে তুই কি করে,তুই কি মানুষ

সৈকতঃ ঔ মেয়েটার জন্যেই তো আমার গায়ে হাত তুলেছিলি ওকেই বা ছাড়তাম কি করে আমি বল

উজানঃ তোর জন্য যদি হিয়ার কিছু হয় সৈকত আমি তোর এমন অবস্থা করবো তুই আয়নায় নিজের চেহারা দেখার সাহস অবধি মনে আনতে পারবি না

সৈকতঃ আগে নিজে আয়নার সামনে আই মিন হিয়া বা তোর ফ্যামিলির সামনে গিয়ে কি করে দাঁড়াবি সেটা তো সামলা তারপর না হয়ে আমাকে নিয়ে ভাবিস
___________

আজ এক সপ্তাহ পরঃ

উজানদের বাড়ি টা আর আগের মতো নেই,ওসব শোনার পর থেকে বাড়ির কারোরি মন মেজাজ কিচ্ছু ভালো না,উজান কে আর কি বলবে ওর বাবা মা,ছেলে বড়ো হয়েছে গায়ে হাত তুলে তো শাসনো করতে পারছে না তারা,উজানের বাবা শুধু মুখ দিয়েই উজান কে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিয়েছে যেটা গায়ে হাত তোলার চাইতে বেশি আঘাত দিয়েছিলো উজানকে,আর চারদিন পর ফাইনাল পরীক্ষা শুরু উজান কি করবে এখন,তারউপর সেদিনের পর থেকে হিয়ার নেই কোনো খোঁজ,না আছে কোনো ফোন,অবন্তী প্রত্যেক মিনিটে মিনিটে হিয়াকে ফোন করছে কিন্তু হিয়ার ফোন বন্ধ,সাথে ওর মা রো,অবন্তীর কিচ্ছু ভালো লাগছে না আগে যে মেয়ে একটা সেকেন্ড কথা না বলে থাকতে পারতো না সে কি না আজ সারাদিনে শুধু শুয়ে বসে কান্না করছে,তার বায়না করার জন্যেই কি আজ এতো কিছু হলো!!

এদিকে উজান পাগল হয়ে যাচ্ছে,রুপমো এখনো ফিরে নি যে ওকে সামলাবে,সন্ধি এসে শান্তনা দিচ্ছে সব ঠিক হবে তুই একটু পড়ায় কনসেন্ট্রেট কর,কিন্তু হিয়ার খোঁজ না পাওয়া অবধি যে তার শান্তি হচ্ছে না

অবন্তীঃ মা মা কোথায় তুমি মা শোনো না

বাসবিঃ কি হয়েছে তুই এরকম করে কাঁদছিস কেনো

অবন্তীঃ মা কিছু একটা করে এই বিয়ে টা আটকাও মা,এই বিয়ে হলে হিয়ার পুরো জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে

বাসবিঃ হিয়ার বিয়ে মানে কেনো,কবে

অবন্তীঃ আমি জানি না মা,মা ছেলেটা বিবাহিত তার নাকি আগের ঘরের একটা বাচ্চাও আছে আঙ্কেল কি করে হিয়াকে এরকম একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিতে পারছে মা

বাসবিঃ হিয়া তো এখনো ছোট অনেক,উনি আমাদের সাথে কোনো কথা না বলে কিছু না বুঝে কি করে হিয়াকে

অবন্তীঃ সব সব টা আমার জন্য হচ্ছে আমি যে কেনো সেদিন আমাদের সাথে হিয়াকে__মা হিয়ার ঔ লোকটার সাথে বিয়ে হলে আমি কোনোদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না আমি সারাজীবন হিয়ার চোখে ভাইয়ার চোখে নিজের চোখে অপরাধী হয়ে থাকবো মা,প্লিজ তুমি কিছু একটা করো মা প্লিজ

বাসবিঃ আচ্ছা চুপ কর,আমি দেখছি,হিয়াদের বাড়িতে যোগাযোগ করা যাবে এমন একটা নাম্বার দে আমাকে তাড়াতাড়ি

অবন্তী দৌড়ে ওর ফোন থেকে হিয়ার ভাইয়ার নাম্বার টা এনে বাসবি কে দেয়,বাসবি হিয়ার ভাইয়ার সাথে কথা বলে হিয়ার বাবা মার সাথে দেখা করতে চায়,সিয়াম হিয়ার ভাইয়া নিজেও চায় না হিয়ার সাথে ঔ ছেলের বিয়ে টা হোক,তাই সে বাসবিকে বলে ঠিক আছে আপনি বাসায় আসুন

২০২১এ দাঁড়িয়ে বাসবি আজ যা সিদ্ধান্ত নিলো তা সব মায়েদের জন্য আদর্শ,বাসবি জানে উজান ওকে কখনো মিথ্যে বলবে না,হিয়া উজান দুজনে যে নিরপরাধ সে জানে,তবুও সে প্রস্তাব দেয় হিয়ার যদি বিয়ে দিতে হয় তবে সেটা উজানের সাথেই হোক,কারণ জেনে হোক আর না জেনে হিয়ার চারপাশে এখন যেটা ক্রিয়েট হয়েছে এটা শুধুমাএ তার ছেলের জন্য,হিয়ার বাবা প্রথমে না করলেও পরে অনেক ভেবে চিন্তে বাসবির প্রস্তাব গ্রহন করে হাজার হোক কোনো বাবাই চাইবে না এরকম একটা ছেলের ঘরে মেয়েকে বিয়ে দিতে যে ওলরেডি ম্যারিড,আর উজান কে ফিরে দিলেও যে সে তার মেয়ের জন্য কোনো ভালো ছেলে আনতে পারবে না সেটা আশেপাশের মানুষের কথা শুনে তিনি খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছেন

বাসবি বলে ওদের কোনো দাবিদাওয়া নেই,শুধু যেনো হিয়ার বাবা খাবারের আয়োজন টা ভালো করে কারণ ঘরোয়া ভাবে হলেও বাসবিদের ফ্যামিলি সার্কেল অনেক বড়ো কম করে হলেও অনেকেই আসবে তাই উনি কথা টা বলেন,হিয়ার বাবা বলে আপনারা যতো জন লাগে আসুন উনি সব ব্যবস্থা করে নেবেন কালকের মধ্যে

আজ হিয়ার বিয়ে,কিন্তু হিয়া এখনো জানে না ওর বিয়ে টা আসলে কার সাথে হচ্ছে কারণ বাসায় এখন এমন একটা পরিস্থিতি যে হিয়ার সাথে তো কেউ কথা বলেই না হিয়া নিজেও আর যেচে কিছু জানতে চায় না কিই বা জানতে চাবে ওর হবু বরের বাচ্চাটার কি নাম,বয়স কতো!!

উজানঃ মা আমি হিয়াকে বিয়ে করতে পারবো না

বাসবিঃ কি বললি আর একবার বল

উজানঃ মা প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করো আমি আর হিয়া তো জাস্ট

উজান কিছু বলার আগেই বাসবি উজানের গালে একটা চড় বসিয়ে দেয়

বাসবিঃ শোন উজান আমি তোকে এ ব্যাপারে কিছু বলি নি তার মানে এই না যে আমি তোকে মা হয়ে শাসন করতে পারি না?___মেয়েদের জীবনটা কি তোদের ছেলেদের কাছে এতোই স্বস্তা লাগে__হিয়ার সাথে ওসব করার সময় এটুকু খেয়াল ছিলো না যে এর পরিণাম কি হতে পারে

উজানঃ মা আমি হিয়ার সাথে কিছু করি নি ওর শীত করছিলো তাই আমি

বাসবিঃ চুপ কর, তোর লজ্জা করে না নিজের মাকে এসব বলতে

উজানঃ মা আমি

বাসবিঃ আর কোনো কথা না উজান,ভুল করে হলেও তুই এসবের জন্য দায়ী কথা টা মনে রাখিস,সৈকত নামের ছেলেটা হিয়াকে নিয়ে ওসব করার আগে ভাবলো না,হিয়ার বাবা হিয়াকে ঔ বিয়ে করা লোকটার সাথে বিয়ে দেবার আগে ভাবলো না,এদিকে তোর বাবা পড়ে আছে হিয়াদের স্টাটাসের সাথে নাকি আমরা কোনোভাবে যাচ্ছে না,আর এখন তুই,মানে তোরা ছেলেরা যা ডিসিশন নিবি তাই ঠিক__তোদের ভাইবোন কে দেওয়া আমার শিক্ষা টা কি এতোই ঠুনকো ছিলো উজান

উজানঃ মা তা না,মা তুমি জানো না রুপম

বাসবিঃ এখানে রুপম কোথা থেকে এলো

সন্ধিঃ কোথাও থেকে না আন্টি?

উজানঃ সন্ধি তুই

সন্ধিঃআপনি শেরওয়ানি টা আমাকে দিন আন্টি আমি উজান কে তৈরি করে গাড়িতে করে নিয়ে আসছি

বাসবিঃ ঠিক আছে

উজানঃ তুই ও জানতি সবটা

সন্ধিঃ অবন্তী বলেছে

উজানঃ সন্ধি আমি রুপমকে সকাল থেকে এতো ফোনে ট্রাই করছি বাট ওর ফোন সুইচঅফ বলছে আমি এখন কি করে

সন্ধিঃ দেখি তোর ফোন টা দে

উজানঃ কেনো

সন্ধিঃ দে না

উজানঃ দিলাম,এখন

সন্ধিঃ ফোন টা আমার কাছে থাক তুই হিয়াকে নিয়ে যখন এ বাড়িতে ফিরবি তখনি আমি তোকে ফোন টা ব্যাক করবো

উজানঃ এটা তুই ঠিক করছিস না সন্ধি

সন্ধিঃ আমি জানি আমি ঠিক কি করছি__তুই ভাবিস না তোর কথা ভেবে আমি এসব করছি বা রুপমের কথা ভেবে,আমি এসব করছি একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের কথা ভেবে ,হিয়া তোকে ভালোবাসে আমি ওর চোখে শুধু তোকেই দেখেছি আর এখন হিয়ার মানসম্মান পুরোটাই তোর হাতে কথা টা মনে রাখিস_____নে শার্ট খোল সেভো তো করিস নি সেভ করবি না আমি রেজার নিয়ে ধরবো

উজানঃ তোরা সবাই পাগল হয়ে গেছিস,এতে কেউ আমরা সুখি হবো না দেখে নিস,কেউ না

সন্ধিঃ হে হে এক পাগল বলছে আরেক পাগলের কথা হু
_______________
হিয়া বসে আছে ওর রুমে,বিয়ের কনে যেভাবে সাজে সেরকম কোনো গর্জিয়াস কিছু নেই হিয়ার সাজে,বড় ভাবী যা পাড়ছে ওভাবেই সাজিয়ে দিয়েছে হিয়াকে,মন্দ না ভালোই লাগছে,আত্মীয় স্বজনরা সব আস্তে আস্তে করে আসছে,ছোট বাচ্চা গুলো ঘিরে ধরেছে হিয়াকে,এসেছে হিয়ার বয়সী আরো অনেক মেয়ে,তবে কেউ আর ভার্সিটির ব্যাপার টা নিয়ে হিয়ার সামনে কানাঘুষা করছে না যাক তাও শান্তি___একটা মেয়ে এসে বলে যায় বর এসে গেছে কিন্তু হিয়ার কোনো হেল দোল নেই,নিজেকে হিয়ার নিজের কাছে ঘৃনা লাগছে ভীষণ,মনে হচ্ছে ওকে কেউ কিনতে আসছে বাড়িতে রাখা একটা বিবাহিত বউ আর বাচ্চার বিনিময়ে__কিছুক্ষন পর হিয়া একটু হলেও বুঝতে পারে ছেলেটা হয়তো ঔ ছেলে না যার সাথে ওর বিয়ে হবার কথা কিন্তু নতুন ছেলে হলেও বা কি সেও হয়তো অন্য কিছুর বিনিময়ে হিয়াকে কিনতে আসছে

একটা মাঝবয়েসী মেয়ে এসে হিয়ার সামনে আর সবাই কে ছেলের চেহারার বিবরণ শোনালে হিয়া কিছুটা আঁতকে উঠে,ওপাশ থেকে অবন্তী আর সন্ধি মিলে হিয়ার গেটের দিকে আসতে ধরলে বাসবি গিয়ে ওদের থামিয়ে উপরে উজানের কাছে চলে যেতে বলে

হিয়াঃ মেয়ে টার কথা শুনে আমার বুকটা এরকম করে উঠলো কেনো,চেহারার বিবরণ একই হলেই কি মানুষ টা উনি হয়ে যাবেন__আমিও না__আচ্ছা উনি কি জানেন আজ আমার বিয়ে__উনি জানলে কি কষ্ট পাবেন!!কেনো সেদিন জ্বরটা আসলো আমার কেনোই বা আমি ওনাকে বললাম আমাকে জড়িয়ে ধরতে তাহলে কি আজ এভাবে_____ওটা কে ছিলো অবোর মতো লাগলো না,ধুর আমিও কি ভাবছি পাগলি টা আবার এখানে কি করবে,ওর বাড়িতেও হয়তো এতো বড় একটা ঘটনার পর ওকেও আন্টি ঘরবন্দী করে রাখছেন___অবোর হাত টা কি ঠিক হয়েছে,মেয়েটা এতো ছটফটে কেনো,ওর বর যে কি করে ওকে সামলাবে___অবোর কতো ইচ্ছে ছিলো না আমাকে ওর বড় ভাবী বানাবে ও নাকি হবে আমার জল্লাদ ননদ আচ্ছা অবো যখন জানতে পারবে আমার অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে গেছে ওর মনটা ভেঙে যাবে না তো,আমার আর ভাইয়ার বাসর নিয়েও তো ওর হাজার টা প্লানিং ছিলো ইসস সন্ধি আপুটাকে কি না কি বলে আমাকে লজ্জায় ফেলে দিতো সবসময়, ধরে তো ওকে চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করতো___খুব ইচ্ছে করছে ওনাকে একবার দেখতে ওনার ঔ নেশাভরা কন্ঠে হিয়া ডাক টা শুনতে!!কখনো আমাদের দেখা হলে উনি এরকম নেশাভরা কন্ঠে আমাকে ডাকবেন তো নাকি সেদিন ওনার কন্ঠের ঔ নেশা টা কেটে যাবে!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here