? #সে_আদরের_অন্য_নাম ?
৬ষ্ঠ পর্ব
পরের দিন সবাই সকাল সকাল উঠে তৈরি হয় বলগা লেক দেখবার উদ্দেশ্যে,কিন্তু ঔ যে অঘটন আর এবার অঘটন টা হিয়া না ঘটালেও ঘটায় আমাদের তিড়িংবিড়িং করে লাফিয়ে বেড়া অবন্তী__খুব সকালে রেডি হয়েই কটেজের সিড়ি দিয়ে দৌড়ে দৌড়ে নামতে গিয়ে পায়ে ব্যালেন্স হারিয়ে দুম করে সিঁড়ির মাঝ থেকে পড়ে যায়,পড়ে গিয়ে পায়ে যতোটা না আঘাত পায় তারচেয়ে বেশি আঘাত পায় হাতে,মানে বাম হাত টা মচকে একবারে যাচ্ছে তাই অবস্থা,এবার হলো তো নেচে নেচে বেড়ানোর ফল,উজান হিয়া রুপম সন্ধি আরো কজন মিলে অবন্তী কে পাশের একটা হসপিটালে নিয়ে গিয়ে হাতে প্লাস্টার করে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দেয়,বেচার অবন্তী না পারছে কিছু বলতে না পারছে ব্যাথা সইতে,উজান তো রাগে একবারে লাল হয়ে আছে কিন্তু বোনের এই অবস্থায় কি তাকে বকা যায়
রুপমঃ হলো তো এবার,কতো করে সবাই বলে অবন্তী একটু আস্তে একটু আস্তে,সে কথা কি আর তোর ভালো লাগে
সন্ধিঃ আহ ওর কি দোষ ও এ বয়সে লাফালাফি করবে না তো আমরা করবো,আর উজানটাকেও দেখছি তখন থেকে কি রকম দাঁত-মুখ খিচে আছে
রুপমঃ আরে ওরি তো বেশি ইন্টারেস্ট ছিলো ঘুরতে আসার,এখন সবাই গিয়ে লেক থেকে ঘুরে আসবে আর মহারানী কি না শুইয়ে শুইয়ে ব্যাথায় কাতরাবে
রাইসাঃ হয়েছে অনেক লেকচার,এবার তোরা যা,আমি আর সন্ধি দুজনে অবন্তীর কাছে আছি আমাদের ওসব লেক টেক দেখা লাগবে না
রুপমঃ এটা কোনো কথা হলো
সন্ধিঃ হ্যা হলো,দেখ রুপম আমরা এ কজন এখানে ঠিক ম্যানেজ করে নিতে পারবো তুই জাস্ট যাবার সময় আমাদের দুপুরের লাঞ্চের ব্যাবস্থা টা করে যাস___দেখ তুই যেহেতু ট্যুরে বাকিদের নিয়ে এসেছিস এটা এখন তোর দায়িত্ব তুই ওদের কে ঠিকঠাক মতো ঘুরিয়ে আনবি,অবন্তীর জন্য তো ওরা মানবে না,পরে এই নিয়ে অনেক কাটাছেঁড়া হবে যেটা আমি রাইসা উজান বা আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের কেউই চাই না__তুই যা
উজানঃ সন্ধি ঠিকি বলছে আর তাছাড়া রাতের গাড়িতে তো আমরা ব্যাক করছি তুই আমাদের জন্য কেনো বাকিদের ঘুরতে আসা টা ওয়েস্ট করবি অল্প করে হলেও কিন্তু ওরা টাকা দিয়েছে
রুপমঃ (একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে) তাহলে থাকছে কে কে রাইসা সন্ধি অবন্তী আর
উজানঃ আমি আছি আর সন্ধি না গেলে তুষারো যাবে না
সন্ধিঃ তিশা রাসেলও মেবি যাবে না ওদের কাজ আছে
রুপমঃ ওদের আবার কি কাজ
সন্ধিঃ স্পেশাল কাজ বাচ্চাকাচ্চা দের সামনে বলা যাবে না(ফিক করে হেসে দিয়ে)
রুপমঃ ঠিক আছে আমি সব বলে যাচ্ছি এখানে,তোরা নিজেদের মতো করে একটু সামলে নিস__হিয়া
হিয়াঃ জ্বী
রুপমঃ তুমি তো যাবে নাকি বাকিদের সাথে,না তুমিও এখানে
হিয়াঃ জ্বী ভাইয়া আমি এখানেই থাকবো,অবোকে ফেলে আমি যেতে পারবো না
সন্ধিঃ আমরা আছি তো হিয়া,তুমি চাইলে কিন্তু
হিয়াঃ না আপু,আমি এখানে শুধু অবোর জন্যেই এসেছি আর ওকে ছাড়া কোথাও ঘোরা আমার পক্ষে সম্ভব না
রুপমঃ তাহলে আর কি করার,দিলি তো আমার পুরো দিন টা মাটি করে এখন সকালে যে নোট টা নিয়েছিলি ওটা রিটার্ন দে
অবন্তীঃ ব্যাগে আছে(কাঁদো কাঁদো গলায়)
রুপমঃ থাক মা আমার লাগবে না,আপনি জলদি ঔষধ খেয়ে সুস্থ হোন, গাড়িতে যাবার সময় দয়া করে আর কোনো ঝামেলা পাকাবেন না
অবন্তীঃ হে হে
রুপম ওদের বিদায় দিয়ে বাকিদের নিয়ে বলগা লেকের দিকে রওনা দেয়__এদিকে কটেজে যে আর একটা ফ্যামিলি ছিলো ওরাও সকাল সকাল বাহিরে বেড়িয়ে যায়__পুরো কটেজ টা এখন নিশ্চুপ শুধু ছেলেদের রুমে উজান তুষার আর রাসেল আর মেয়েদের রুমে হিয়া অবন্তী সন্ধি রাইসা তিশা এই পাঁচ টা মেয়ে__কটেজ টা কেমন মুহুর্তে নির্ঝুম হয়ে গেলো
অবন্তীঃ এই মেয়ে কি করছিস__আরে__ এরকম দোয়া দুরুদ পড়ে ফু দিলে বুঝি আমি একদিনে সুস্থ হয়ে যাবো
হিয়াঃ এতো কথা কেনো তোর,এতো জোড়ে আঘাত পাবার পরো তো দেখছি মুখ দিয়ে কথা কম বের হচ্ছে না
অবন্তীঃ এতোক্ষণ তো ভাইয়ার ভয়ে চুপ করেই ছিলাম তাও এভাবে আমাকে কথা শুনাচ্ছিস
হিয়াঃ হ্যা শুনাচ্ছি__প্লিজ একটু চুপ করে বসে আমাকে আমার কাজ টা করতে দে__প্লিজজজজ
অবন্তীঃ ওকে ওকে
সন্ধিঃ আ হা এরকম দৃশ্য তো খুব কমি দেখা যায় আজকাল,ননদ বিছানায় পড়ে কাতরাচ্ছে আর ভাবী কি না দোয়া দুরুদ পড়ে তাকে ঝেরে দিচ্ছে__সত্যি অবন্তী তোর কপাল আছে বলতে হবে
অবন্তীঃ (মুখে এক বালতি হাসি নিয়ে)আছে না বলো__যাক আমি তো ভাবলাম ভাইয়ার মনের আবভাব শুধু আমি ধরতে পেরেছি তোমরা তো দেখছি আমার থেকেও দুই কদম এগিয়ে__জানো আপু আমি তো এখন থেকেই ঠিক করে রেখেছি ভাইয়া আর হিয়ার বাসরে ক্যামেরা সেট করে রাখবো তারপর যা হবে না
সন্ধিঃ শুধু ক্যামারা সেট করবি খাটের তলায় লুকোবি না,দেখ খাটের তলায় কিন্তু আমি থাকবো এটা আমি আগে থেকেই বলে রাখলাম ওকে
অবন্তীঃ আরে ভাইয়ার খাট বড়ো আছে,ব্যাপার না আমার তোমার রাইসা আপু সবারি জায়গা হয়ে যাবে
অবন্তী আর সন্ধির পাকা পাকা গল্পে হিয়া এতোক্ষণ কান দেয় নি ও ওর দোয়া দুরুদ পড়া নিয়ে ব্যস্ত কিন্তু এবার ঠাস করে দোয়া পড়তে পড়তে অবন্তীর মাথায় দুম করে একটা বাড়ি মেরে দেয়
অবন্তীঃ আউচচ মারলি কেন বেয়াদব
হিয়া চোখের ইশারায় বলে এগুলো কি গল্প করছিস
অবন্তীঃ যা করছি বেশ করছি আরো করবো থাম এবার
হিয়ার দোয়া দুরুদ পড়া শেষ হলে অবন্তীর গা সুন্দর মতো করে ঝেরে দিয়ে,হিয়া নামায এ বসে যায় আর এ-র মধ্যে উজানরা সবাই তিনজন মিলে মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে এসে সন্ধিদের রুমে দুপুরের খাবার টা নিয়ে আসে__এই নিয়ে দুবার উজান এই রুমে আসলো প্রথমে যখন এসেছিলো হিয়া গোসলে ছিলো তাই হিয়াকে এক নজর হলেও সে দেখতে পারে নি এখন যখন এলো এখনো তো হিয়া নামাযে,,বেচারা উজান
সন্ধিঃ হয়েছে না খাবার দেওয়া যা এখন,পড়ে আসিস,এসে হিয়াকে দু চোখ ভরে দেখে যাস কেমন(চোখ টিপে দিয়ে)
উজানঃ তুই একটু বেশি বুঝিস ইদানীং
সন্ধিঃ হে হে
উজান সন্ধিকে চোখ রাঙিয়ে ওদের রুম থেকে চলে গেলে সন্ধি সবার খাবার বেড়ে দেয় তোতোক্ষনে হিয়ার নামায শেষ হয়,সবাই যার যার মতো খেয়ে নিয়ে একটু রেস্ট করবে বলে শুইয়ে পড়ে তিশা ওদিকে রাসেলের কাছে চলে গেলে রুমে থাকে চার জন__এক খাটে সন্ধি আর রাইসা কম্বল মুড়িয়ে গল্প করছে তো অন্য খাটে অবন্তী আর হিয়া মিলে গল্প করছে
অবন্তীর বাম হাতে ফ্রাকচার হওয়ার বেচারি সোজা হয়ে কম্বল গলা পর্যন্ত ঢেকে শুয়ে আছে,আর হিয়া ঔ কম্বলের তল দিয়ে অবন্তীর ডান দিকে শুইয়ে অবন্তী কে এক কাইত করে জরিয়ে ধরে আছে
অবন্তীঃ বল তো তিশা আপু এখন কোথায় গেলো?
হিয়াঃ কোথায়
অবন্তীঃ রাসেল ভাইয়ার সাথে কটেজের একটা ফাঁকা রুমে
হিয়াঃ তোর কি তাতে,গেলে যাক
অবন্তীঃ আরে আমি তো তোকে জাস্ট বললাম,তবে তুই আর ভাইয়া চাইলে কিন্তু
হিয়াঃ অবোওও
অবন্তীঃ সরি সরি____শোন না ভাইয়া কিন্তু তখন থেকে দুবার এলো তোকে দেখতে বাট দু বারই
হিয়াঃ তোকে কে বললো উনি আমাকে দেখতে,ওনার তো খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই উনি ওনার অসুস্থ বোনকে ছেড়ে আমাকে দেখতে আসবে
অবন্তীঃ হ্যা রে হ্যা,তুই এমনিতে এসব ব্যাপারে কতো বুঝিস বল তো আর এদিকে আমার ভাইয়ার মন টাই কি না এখন পর্যন্ত বুঝে উঠতে পারছিস না
হিয়াঃ তোর ভাইয়া যেনো আমার মন টা খুব বুঝতে পারছে!!!!
অবন্তীঃ দিয়ে দিলি তো সব দোষ এখন আমার ভাইয়ার উপরে,তা তুই বলে দে না তুই ভাইয়াকে
হিয়াঃ শোন অবো উজান ভাইয়া তোর ভাইয়া সে হিসেবে উনি আমারো ভাইয়া so stop all this okk
অবন্তীঃ stop all this মানে যতো ন্যাকা
হিয়াঃ হ্যা ন্যাকা,এখন আমাকে ঘুমোতে দে তো শরীর টা আবার কেনো জানি খারাপ লাগছে জ্বর আসবে কি না বুঝতেও তো পারছি না
অবন্তীঃ কই দেখি,ভাইয়া কে ডাকবো বলবো তোর খারাপ লাগছে,আমি সিরিয়াস হিয়া এটা হেলাফেলার বিষয় না ডাকবো ভাইয়াকে
হিয়াঃ আবার ভাইয়া__আর একটা কথা না__ এখন আমি আমার এই তিড়িংবিড়িং ফড়িং টাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো সো নো ডিস্টার্ব ওক্কে
অবন্তীঃ ওক্কে ডার্লিং
___________
তুষারঃ রাসেলের কপাল টা মামা
উজানঃ কেন হিংসে হচ্ছে,তোরো লাগবে নাকি? রুম লাগলে বল পাশের টা ফাঁকা আছে
তুষারঃ না ভাই__সবেমাএ একটা দিন হলো প্রেম করছি এখনি সন্ধিকে গিয়ে এই অফার টা দিলে আমার মানইজ্জত কোথায় থাকবে ওর কাছে ভাব তো,ও তো আমাকে সামনের পাহাড় টা থেকে দুম করে পিছনে দুটো লাথি মেরে ফেলায় দিবে
উজানঃ সন্ধি ইস এ ডেঞ্জারাস লেডী তুষার!!ওর মন চাইলে এখনি এসে তোর কলার টানতে টানতে পাশের রুমে নিয়ে যাবে,ইটস ওল এ্যাবাউট হার মুড সো বি কেয়ারফুল
তুষারঃ সাহস না দিতে পারলে ভয় দেখাস কেন কুত্তা(উজানের পিছনে একটা লাথি মেরে)
উজানঃ সরি সরি
তুষারঃ হাসবি না একদম হারামি
উজানঃ একটা সিগারেট ধরা না খাই
তুষার একটা সিগারেট ধরিয়ে উজানের পাশে গিয়ে বসে পড়ে
তুষারঃ হিয়াকে তুই খুব ভালো বেসে ফেলছিস তাই না রে
উজানঃ ধ্যাত না
তুষারঃ না বললেই আমি বিশ্বাস করবো,ইনফেক্ট শুধু আমি কেনো আই থিংক সন্ধিও বিশ্বাস করবে না তোর এই কথা
উজানঃ রুপম হিয়াকে ভালোবাসে তুষার
তুষারঃ রুপমের টা ভালোবাসা না উজান,এটা তুই ও খুব ভালো করে জানিস,হিয়াকে জাস্ট ওর চোখে ধরেছে এর বেশি কিছু না
উজানঃ সে যাই হোক বাদ দে এখন ওসব কথা__আচ্ছা ভার্সিটির ভোটের কি খবর কথা হয়েছে স্যারের সাথে বলেছিস না আমরা আজ ফিরছি
তুষারঃ হুম বলেছি
___________
বিকেলের দিকে সবার রেস্ট নেওয়া শেষ হলে,সন্ধি বায়না ধরে ওরা এখন কালকের শপিং মল টা থেকে আদিবাসীদের মতো যেই পোশাক গুলো কিনেছে ওগুলো পড়বে বলে আর পড়ে কাটেজের সাথে যে বড়ো ব্যালকুনি টা আছে ওখানে দাঁড়িয়ে সবাই মিলে ছবি তুলবে__এর মধ্যে তিশাও এসে যায় এখন সবাই ঝোঁক তুলে ওরা ওসব ড্রেস পড়বে আর সেটা এক্ষুনি কিন্তু সমস্যা বাঁধে অবন্তী নিয়ে,ওকে কি করে পড়াবে ওর হাতে যে ফ্রাকচার কিন্তু রাইসা বলে ড্রেস গুলোর তো হাতা নেই ওটা ম্যানেজ হয়ে যাবে,মানে ড্রেস গুলোর বিবরণ দিলে এমন দাঁড়াবে যে ড্রেস গুলোর নিচের পার্ট টা কোমর থেকে নিচ অবধি পুরো ঢাকা কিন্তু উপরের পার্ট টা পেট অবধি ঢাকা হলেও উপর টা পুরো ফাঁকা মানে আদিবাসীদের ওকেশনাল জামা গুলো যে রকম হয় আর কি__আর কটেজে এই মুহুর্তে কোনো ছেলে না থাকায় সবাই রাজি হয়ে যায় উজান তুষার এরাই তো ওরা কোনো ব্যাপার না__তিশা সন্ধি আর রাইসার ড্রেসের রঙ টা লাল রঙের আর অবন্তী হিয়ার মেজেন্টা রঙের কিন্তু সেইম ডিজাইন সেম স্টাইপের কাজ কিছুটা মনিপুরী কাপড়ের মতো
এদিকে অবন্তী কে ড্রেস পড়াতে গিয়ে সন্ধি আর হিয়ার নাস্তানাবুদ অবস্থা,রাইসা তো বলেই খালাস,নিজে তৈরি হচ্ছে কিন্তু অবন্তীর দায়িত্ব দিয়ে দিছে এ দুজনের উপর__সন্ধি আর হিয়া অবন্তীকে তৈরি করছে আর অবন্তীর ছটফটানি দেখে রাগে হাজার টা গালি ছুড়ছে
সন্ধিঃ আহ অবন্তী নড়িস না,ঠিক করে পড়াতে দে নাহলে হাতে চোট পেয়ে যাবি তো সোনা
অবন্তীঃ তুমি এএএএরকম সুরসুরি কেনো দিচ্ছ
সন্ধিঃ আআ আমি ধরতেই এতো কাতুকুতু লাগছে বর ধরলে কি করবি
হিয়াঃ কি আর করবে তখন তো আরাম লাগবে ম্যাডামের??(রাগে)
অবন্তীঃ অসভ্য মেয়ে কথা কম বলে ঠিকঠাক করে আমাকে ড্রেস পড়া??
রাইসাঃ নে আমি রেডি দেখতো কেমন লাগছে
সন্ধিঃ আরে ব্যাচ পুরাই এটম বোম লাগছে তা??আমাদের বিলেতি জিজুকে একটু এই ড্রেস পড়া কয়েকটা ছবি পাঠাবি না
রাইসাঃ সে আর বলতে__কিন্তু আমি কি ভাবছি বল তো এখানকার মানুষ গুলো কি রকম ব__ ছাড়া এগুলো পড়ে গলা হাত সব তো খালি
কথা টা বলেই রাইসা হো হো করে ব্যাআক্কালের মতো হেঁসে দেয়,ওর সাথে সাথে বাকি সবাই হেঁসে উঠে
সন্ধিঃ ওটা আর পড়ে কি হবে এমনিতেই তো যে টাইট,ঠিক জায়গায়ই তো থাকে সব টা
তিশাঃ বাচ্চা দুইটা মেয়ের সামনে কি থেকে কি বলছিস সত্যি উজান ঠিকি বলে তোদের দুটোর
কোনোদিন আক্কেল হবে না
অবন্তীঃ ওওওও আপু গো হাসাহাসি থামিয়ে আমাকে তাড়াতাড়ি জামা টা পড়াও না__ আজ সবাই আমার সব টা দেখে ফেললো ইসস
হিয়াঃ আআ বেশি কথা
সন্ধিঃ ঠিক আছে না রে হিয়া,আর তো কিছু করতে হবে না
হিয়াঃ না আপু ঠিক আছে
সন্ধিঃ নে অবন্তী রেডি,এবার আমি টপাটপ আমার টা পড়ে নেই,আজ তুষার কে একটু চমকে দেবো জাস্ট
সন্ধি লজ্জা লজ্জা মুখে কথা টা বললেই সবাই সন্ধির দিকে তাকায় “অঅঅঅ”বলে হেসে উঠে,সন্ধি লজ্জায় আরো লাল হয়ে শেষমেশ ওর ড্রেস টা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়,এদিকে তিশা আর রাইসার হয়ে গেলে ওরা ক্যামারা নিয়ে সামনের ব্যালকুনিতে চলে যায় আর এদিকে হিয়া তখনো অবন্তীকে সাজাতে ব্যাস্ত,একবার এই কানের দুল তো ওটা ভালো না লাগলে আরেকটা কানের দুল,এই লিপিস্টিক সাথে ঔ লিপিস্টিক হেনা তেনা অবন্তীর যতো প্রকার আবদার__এই সব আবদার মিটিয়ে হিয়া অবন্তীকে একদম পাহাড়ি কোনো রাজকন্যার মতো সাজিয়ে দেয় যেনো কোনো পাহাড়ী কুইন,হিয়া অবন্তীকে ধরে ধরে খুব সাবধানে তিশাদের ওখানে দিয়ে আসে__এখন হিয়ার সাজার বাকি,হিয়া রুমে এসে দেখে সন্ধি এর মধ্যে ড্রেস টা পড়ে বেড়িয়েছে এখন আয়নায় সে সাজতে ব্যাস্ত,হিয়া এসে ওর ড্রেস টা নিয়ে ভাবতে থাকে পড়বে কি পড়বে না যদি কোনোভাবে উজানের সামনে পড়ে যায় কি একটা পরিস্থিতি হবে তখন,শেষে সন্ধির আদরমাখা ঝারি খেয়ে হিয়া টপাটপ ড্রেস টা পড়ে নেয় এর মধ্যে সন্ধির সাজগোজো প্রায় শেষের দিকে
সন্ধিঃ হিয়া কি আর কিছুই সাজবে না
হিয়াঃ না আপু শরীর টা ভালো লাগছে না
সন্ধিঃ কি বলো জ্বর-টর আসলো নাকি আবার দেখি দেখি
হিয়াঃ না আপু জ্বর না তবে আসবে হয়তো__আপনি রেডি
সন্ধিঃ হুম রেডি__আর তো কিছু নেবার নেই না
হিয়াঃ না
সন্ধিঃ যাই তাহলে
হিয়াঃ এক মিনিট আমি ফোন টা নিতে ভুলে গেছি আমার,ওয়েট একটু
সন্ধিঃ হুম হুম নেও
হিয়া ফোন বের করতে গেলে ওর হাতে চলে আসে ওর ঔ এক পিচ মেজেন্টা রঙের লিপস্টিক টা,আর ওটা দেখেই হিয়ার কেনো জানি খুব ইচ্ছে হলো ওটা আজ ঠোঁটে দেবার
হিয়াঃ সন্ধি আপুউউ
সন্ধিঃ হ্যা আপু বলো
হিয়াঃ আমি এই লিপিস্টিক টা দেই দেখো কি রকম আমার ড্রেস টার সাথে পুরো ম্যাচিং
সন্ধিঃ ও মা এতে আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে,এমনি তে তো কিছু সাজলে না
হিয়া লিপিস্টিক টা দিয়ে নেয় আর তাতেই যেনো এক অন্য হিয়াকে চোখে দেখছে সন্ধি
সন্ধিঃ আরেএএ এ আমি কাকে দেখছি!!হিয়াআআআআ লিপিস্টিক এর রঙ টা কিন্তু বেশ লাগছে তোমায়,আমি তো পুরো ঘায়েল হয়ে গেলাম
হিয়াঃ যাও আপু কি যে বলো,চলো যাই এখন
সন্ধি হিয়াকে নিয়ে বের হতে ধরলে হিয়া সন্ধিকে থামিয়ে দিয়ে বলে আপু তুমি হাঁটতে ধরে আমি একমিনিটে আসছি,সন্ধি মুচকি হাসি দিয়ে সামনে হাঁটতে ধরলে হিয়া টুক করে রুমে ঢুকে ওর ব্যাগ থেকে সেদিনের ঔ মেলার মাঠে পছন্দ হওয়া চুড়ি গুলো টপাটপ ওর দুহাতে পড়ে নিয়ে রুমের দরজা লক করে সামনে হাঁটতে ধরে
এদিকে সামনে হাঁটতে হাঁটতে সন্ধি দেখে উজান ওদের দিকেই আসছে,সন্ধির কাছে এসে উজান কিছু বলতে যাবে তার আগেই উজানের চোখ পড়ে সন্ধির ড্রেসের উপর,আর উজান টপাটপ ওর চোখ নামিয়ে পেছন ফিরে সন্ধিকে রাগ করতে শুরু করে
উজানঃ এসব কি জামাকাপড় পড়েছিস অর্ধেক আছে অর্ধেক নেই,(রাগে)
সন্ধিঃ আরে নেই মানে পুরোটাই তো আছে শুধু উপর টা জাস্ট ফাঁকা__আরে এদিকে ঘোর না দেখ না আমাকে,বল না কি রকম লাগছে আমাকে,হট না??
উজানঃ সন্ধি মজা করিস না তো সরে যা সামন থেকে,অবন্তী রা কোথায়?
সন্ধিঃ ওরা ঔতো ব্যালকুনির ওখানে ছবি তুলছে,ওরাও কিন্তু সবাই এ-রকমি ড্রেস পড়ছে হে হে
উজানঃ হোয়াট!!
সন্ধিঃ হিয়াও কিন্তু পড়েছে,ওর দিকেও তাকাবি না মুখ ফিরেই থাকবি
কথা টা বলেই সন্ধি হেসে উঠে এদিকে হিয়া ওর হাতের চুরি গুলো ঠিক করতে করতে তাড়াহুড়ো করে হাঁটতে হাঁটতে সন্ধির দিকে আসে এদিকে যে উজানো সন্ধির সাথে দাঁড়িয়ে আছে সেটা সে খেয়ালি করেনি,হিয়া সন্ধির পাশে দাঁড়িয়ে সন্ধি আপু বলে কিছু বলতে যাবে ওমনি উজান কে দেখে হিয়া পুরো চুপ হয়ে যায়,উজান হিয়াকে দেখবার জন্য হলেও এবার সামনে ফিরে,আর সামনে ফিরেই তো ওর একদম হয়ে যায়__হিয়াকে পুরো নিচ থেকে উপর পর্যন্ত মন ভরে দেখে নেয়,হিয়া তো কিচ্ছু সাজে নি শুধু ওর কোমড় অবধি চুল গুলো পুরো ছেড়ে দিয়েছে,ঠোঁটে গাঢ় মেজেন্টা রঙের লিপস্টিক,আর হাত ভর্তি চুরি,গলার আর বুকের উপরের কাছের হিয়ার শরীরের যে স্ক্রিনটোন টা আছে ওটা যেনো এই মেজেন্টা ড্রেসের সামনে আরো সাদা হয়ে চোখে ভাসছে আর এতেই হিয়াকে কোনো পরীর থেকে কম লাগছে না হয়তো তার থেকে বেশি এমনি কি আর উজান কালকে সাব্বির কে বলেছিলে এটা একটা পরী!!হিয়া যতোটা পারছে চেষ্টা করছে ওর হাত দিয়ে যতো টুকুই পারা যায় ঢেকে নেবার,কিন্তু উজানের চোখ কিছুতেই নামছে না❤️
সন্ধি হালকা কেশে এবার উজানকে খোঁচা দিয়ে উঠে
সন্ধিঃ চোখ দিয়েই কি পুরোটা গিলে খাবি মেয়েটাকে,এবার তো চোখ টা নামা?
কথাটা বলেই সন্ধি ফিক করে হেঁসে দিয়ে সামনে দৌড় দেয় এদিকে হিয়া কি করবে না করবে কোনো কূল না পেয়ে সন্ধির পেছন পেছন যেতে ধরলে উজান হিয়াকে থামতে বলে
উজানঃ হিয়া(অস্ফুটে)
হিয়াঃ আবার এতো নেশাভরা কন্ঠে ডাকছে,উফফ এই লোকটাকে নিয়ে আমি আর পারি না,এতো আদর ভরে মায়া ভরে ডাকলে কি আমি না দাঁড়িয়ে থাকতে পারি
উজানঃ দাঁড়াও
উজান হিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওর পকেট থেকে ফোন টা বের করে তারপর আলতো হাতে হিয়ার গালে লেগে থাকা চুল গুলো কানের কাছে গুঁজে দিয়ে টুক করে হিয়ার একটা ছবি তুলে নেয়
উজানঃ আর কখনো আমার সামনে এরকম করে ঠোঁটে রঙ লাগিয়ে আসবে না
হিয়াঃ এটা রঙ না এটা তো
উজানঃ জানি____যাও এখন আর হ্যা সন্ধি রাইসা এদের সাথে সাথে থাকবা একা কোথাও যেনো তোমাকে আমি না দেখি
হিয়াঃ আমি একা একা কোথাও যাই না
উজানঃ জানি
কটেজের এই ব্যালকুনি টা অনেক বড়,থাই খুলে দিলে পাহাড়ের এক অন্যরকম দৃশ্য চোখে ভাসে দূর থেকে,দেখা মেলে সাদা মেঘের এক অন্য রকম ছড়াছড়ি,নীল আকাশের আবরন সাথে কোথাও পাহাড়ের সবুজ বা কোথাও লাল আভা__ব্যালকুনির এক পাশের দেওয়াল জুড়ে আছে সবুজ লতায় জড়ানো পাতাবাহার,আছে বিভিন্ন অর্কিড সহ টবে লাগানো কিছু পাহাড়ি গাছ বলা চলে ছবি তোলার জন্য একদম পারফেক্ট প্লেস
পাঁচ নারী মিলে এখন এই ব্যালকুনি নামক রাজ্যের রাজত্ব দখল করে নিয়েছে,কি সুন্দর লাগছে এই পাঁচ নারী কে,অবন্তী কে থাই এর সাথে লাগানো উঁচু থাক টায় বসিয়ে দিয়েছে সন্ধি এতেই অবন্তী হাজাররকম পোজে ছবি তুলছে,অবন্তীর পাশে দাঁড়িয়ে সন্ধি,রাইসা আর তিশার আগে আগে অনেক ছবি তোলা শেষ তাই ওরা এখন এদের ছবি তুলে দেওয়াতে ব্যাস্ত,এপাশে হিয়া দাড়িয়ে একটু ইতস্তত হয়ে পড়ছে কারণ সামনে উজান-রা দাঁড়িয়ে__এই পাঁচ নারী কে এভাবে দেখলেই যেনো পুরো পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখা যায়__সত্যি বাঙালিরা যে কোনো সাজেই নিজেদের সুন্দরতম আকর্ষনে মেলে ধরতে সক্ষম!!
হিয়াঃ এই লোকটাকে নিয়ে আমি কি করি,কেনো দাঁড়িয়ে আছে উনি ওখানে আমি তো একটু হাসি দিয়েও কয়েকটা ছবি তুলতে পারছি না,ধুর জ্বালা খুব অসহ্য লাগছে
অবন্তীঃ আরে কি হলো তোর,হাসতে বলছি হাস না আর এভাবে না এরকম করে দেখ সন্ধি আপু কি রকম করে দাঁড়িয়ে আছে
হিয়াঃ তোরা ছবি তোল আমি আর তুলবো না
অবন্তীঃ সে কি কেনো আমি এরকম ভাঙ্গা হাত পা নিয়েও ছবি তুলছি আর তুই কি না
হিয়াঃ তোর ভাইয়া আমার দিকে ওরকম ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে কেনো?উনি বুঝতে পারছে না উনার জন্য আমি আনকমফর্টেনল ফিল করছি
অবন্তীঃ এটা কোনো কথা হলো,আরে তোর তো কপাল রে আমার ভাইয়ার মতো ইয়ে পেয়েছিস যে তোকে এখন শুধু চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে, আমি তো ভাবছি তোদের বাসরের কথা ওদিন ভাইয়া তোকে আর কি কি দিয়ে গিলে খাবে কে জানে ইসস কি লজ্জা
সন্ধিঃ তুই কিন্তু এক্সট্রা পেকে গেছিস অবোওও(অবন্তীর মাথায় একটা টোকা দিয়ে)
অবন্তীঃ হে হে
সন্ধিঃ এই রে তোর ভাইয়া আই মিন উজান তো দেখছি এদিকেই আসছে
অবন্তীঃ এবার না আমাকে বকা দিয়ে দেয়,ও সন্ধি আপু ভাইয়া বকা দিলে কিন্তু তুমি সামলে নিও প্লিজজজ
উজান আচমকা এসেই সবার মাঝ থেকে হিয়ার হাত টা ধরে ওদের রুমের দিকে হিয়াকে টানতে থাকে,এদিকে হিয়া উজানের এই কাজের কোনো মাথামুণ্ডু না বুঝে বোকার মতো উজানের মুখের দিকে তাকিয়ে উজানের পাশাপাশি হাঁটতে থাকে__উজান যে ওরকম ঝড়ের মতো এসে হিয়াকে আচমকা হাত ধরে টান দিয়ে ছো মেরে নিয়ে যাবে এটা উপস্থিত কারোরি মাথায় আসে নি,ওরা চার জন থ মেরে উজান হিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে কিছুক্ষণ পর খিলখিল করে হেঁসে উঠে
হিয়াঃ ভাইয়া আম-রা কোথায় যাচ্ছি___ভাইয়া ওদিকে সবাই দেখছে___ভাইয়া ওখানে অবন্তী একা
হিয়া ওর কথা টা শেষ করবার আগে উজান হিয়াকে ওদের রুমে নিয়ে গিয়ে গেট লক করে দেয়,হিয়া তো পুরো অবাক কি হলো এটা!!উজান হিয়ার দিকে তেড়ে এসে হিয়ার দু বাহু নিজের গায়ের সর্বশক্তিদিয়ে ধরে টানতে টানতে হিয়াকে জানালার কাছে নিয়ে গিয়ে চেপে ধরে,হিয়া অকপটে জানালার পর্দা ওর দু হাতে খামচে নেয়, উজানের এরকম কান্ডে তো হিয়ার হার্ট এমনি বিট করছে এই বুঝি হার্ট টা খুলে হাতে চলে আসলো,উজানের দু চোখ আজ অন্য রকম লাল এটা কি রাগ না নেশা!!
উজানঃ কে তোমাকে বেশি ভালোবাসে হিয়া আমি না রুপম
হিয়া উজানের কথার কোনো উওর না দিয়ে নিচে তাকিয়ে থাকে
উজানঃ কি হলো হিয়া উওর দেও
হিয়াকে চুপ থাকতে দেখে উজান হিয়ার কোমড় ধরে হ্যাচকা টেনে ডান হাত দিয়ে আলতো করে হিয়ার মুখ টা তুলে ধরে,হিয়া চোখ তুলতেই ওর চোখ পরে উজানের চোখে মুখে
হিয়াঃ ওনার চোখ গুলো এরকম লাল হয়ে আছে কেনো?উনি কি আমার সাথে রাগ করে আছে?কেনো কি করেছি আমি?___না এটা ওনার চোখের রাগ না আমি ওনার চোখের রাগ চিনি তাহলে এটা কি ওনার চোখে,নেশা!!এখন তো আমার এটা মনে হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত নেশাদ্রব্য গিলেই উনি আমাকে হিয়া বলে ডাকেন না, উনি তো এই মুহুর্তে পৃথিবীর সমস্ত নেশাদ্রব্য গিলে এসে এখন আমাকে দেখছে__হ্যা এটা নেশা,নেশা কি?না এটা নেশা না এটা রাগ,না না এটা নেশা
উজানঃ হিয়া প্লিজ চুপ করে থেকো না,Answer me হিয়া
হিয়াঃ ওনার মুখ টা কি রকম লাগছে দেখো,সাদা সাদা ক্রীমের মতো মুখ টায় লাল আভা,টিকালো নাক টা কি রকম লাল স্টোবেরির মতো হয়ে আছে মন তো চাচ্ছে দুম করে ওনার নাক টা টিপে দেই__কি সুন্দর লাগছে ওনাকে আচ্ছা রাগ করলে কোনো ছেলেকে এতো সুন্দর লাগে এনাকে না দেখলে তো আমি জানতামি না
এদিকে হিয়া নিজ মনে উজানের দিকে তাকিয়ে বকবক করছে আর এপাশে উজান সমান তালে হিয়াকে প্রশ্ন টা করেই চলছে,এবার উজানের প্রচন্ড রাগ উঠে হিয়া কেনো চুপ করে আছে, কেনো তার কথার উওর দিচ্ছে না তার মানে কি হিয়া রুপমকে,উজান আর কিছু না ভাবতে পেরে হিয়ার দু বাহু আরো শক্ত করে চেপে ধরে হিয়াকে ঝারি দিয়ে উঠে
উজানঃ Answer me damn it কেনো চুপ করে আছো তুমি(ঝারি দিয়ে)
উজানের ঝারি খেয়ে হিয়ার সেন্স ফিরে
হিয়াঃ কি কি কি-সের উওর
উজানঃ কেনো তুমি শুনতে পারোনি আমি কি জানতে চাইছি
হিয়াঃ আমার হাতে লাগছে
উজানঃ লাগুক আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দেও
হিয়াঃ এই প্রশ্নের উ-ত্তর তো আ-পনি ভালো দি-তে পারবেন
উজানঃ আমি তোমার মনের কথা শুনতে চাই তোমার মন কি বলে,তুমি কি রুপম কে ভালোবাসো
হিয়াঃ না
উজানঃ তাহলে কাকে ভালোবাসো আমাকে
হিয়াঃ জানি না
উজানঃ কেনো জানো না
হিয়াঃ জানি না
উজানঃ তোমাকে জানতে হবে হিয়া
হিয়াঃ পারবো না
উজানঃ তোমাকে পারতে হবে হিয়া
হিয়াঃ আমি তো বললাম আমি পারবো না
উজানঃ তুমি আবার আমার উপর কথা বলছো তোমাকে বলেছি না আমি কিছু করতে বললে আমাকে কখনো উল্টো প্রশ্ন করবে না
হিয়াঃ আমি তো কোনো প্রশ্ন করছি না,আমি তো শুধু বলছি আমি পারবো না
উজানঃ কেনো পারবে না তুমি,উওর দেও,কেনো তুমি জানো না তুমি আমাকে ভালো বাসো কি না কেনো হোয়াই,তোমাকে এর উওর আমাকে দিতে হবে আর সেটা এক্ষুনি এই মুহুর্তে
হিয়াঃ বললাম তো আমি পারবো না____তবে আমি এটা জানি আমার মন কি চায়
উজানঃ কি চায় তোমার মন
হিয়াঃ আমা-র মন চায় যে-আমাকে এই চুড়ি গু-লো যে মানুষটা (হাত তুলে উজানের বুকের কাছে ধরে)এনে দিয়েছিলো তার সাথে সারাটা জীবন আমি কাটিয়ে দেই,সে যেনো আমি বলার আগে এভাবেই আমার প্রয়োজন টা বুঝতে পারে,আমি ভুল করলে আমাকে শাসন করতে পারে,আমার জন্য গোটা পৃথিবীর সাথে তর্ক করতে পারে____আমার মন হয়তো তাকে ভালোবাসে
উজানঃ কে এনে দিয়ে ছিলো তোমাকে এই চুড়ি
হিয়াঃ আপনি বলুন কে এনে দিয়েছিলো
উজানঃ কে
হিয়াঃ আপনি সত্যি জানেন না সেই মানুষ টা কে
উজানঃ লিসেন মিস হিয়া মুনতাসীর আহমেদ,তুমি যদি ভেবে থাকো তোমাকে মেলার মাঠে ঔ স্টোলের বাহিরে চুড়ি গুলোর দাম নিয়ে দরকষাকষি করতে আমি দেখছিলাম বা ঔ মেহেদী বা টিপ কিনবার সময় আমি তোমাকে ফলো করছিলাম তাহলে সেটা তোমার ভুল ধারণা,আমার মোটেই সে সবের জন্য কোনো সময় নেই
হিয়া একটা প্রশান্তির হাসি দিয়ে উজানকে জাপ্টে ধরে❤️
হিয়াঃ আপনি তো সবটা বলে দিলেন এ-র পরো আমাকে বলছেন আমার জন্য আপনার সময় নেই,ইডিয়ট টা আসলে কে আমি না আপনি
____________________
সন্ধিঃ (একটু কেশে দিয়ে)আসতে পারি
উজানঃ কি চাই তোর
সন্ধিঃ নিজের মনের ক্ষুধা মেটাতে একটা বাচ্চা মেয়ের উপর এরকম করে টর্চার করতে পারলি তুই
উজানঃ কি সব বলছিস সন্ধি
সন্ধিঃ কি ভুল বললাম,এদিকে আয়
উজানঃ আসলাম
সন্ধিঃ তোর শারররর্টে যে হিয়ার লিপিস্টিকের দাগ বসে আছে আমি সেই টর্চারিং এ-র কথা বলছিলাম আরকি
সন্ধির কথায় উজান একবার ওর শার্টটা ভালো করে দেখে নেয়
সন্ধিঃ এমা ঘাড়ের কাছেও রঙ লেগে আছে দেখছি
উজানঃ সন্ধি যা তো তুই এখান থেকে
সন্ধিঃ যাচ্ছি যাচ্ছি তবে যাওয়ার আগে একটা কথা বলি যদি সত্যি মনে করিস তুই মেয়েটাকে ভালোবাসিস তাহলে এতো হেজিটেশন না করে সরাসরি বলে দে
উজানঃ রুপম হিয়াকে ভালোবাসে সন্ধি
সন্ধিঃ এই শোন উজান,তাকা আমার দিকে,তাকা
উজানঃ হোয়াট
সন্ধিঃ রুপম জাস্ট হিয়াকে লাইক করে জাস্ট লাইক,রুপম যা করে সেটাকে ভালোবাসা না ওটাকে ফ্লাটিং বলে,কোথায় আজ তো ও নেই কিন্তু একবারো তোকে বা আমাকে বা অবন্তীকে তো অন্তত ফোন করে জিঙ্গেস করতে পারতো হিয়া কি করছে,হিয়া খেয়েছে কি না,হিয়া ঠিক আছে কি না,করে নি উজান করে নি,কিন্তু তুই করেছিস অবন্তী তোর বোন হয় ওর এতো বড়ো একটা ফ্রাকচারেও কিন্তু তুই যতোটা ওর খোঁজ নিয়েছিস ততোটাই নিখুঁতভাবে তুই হিয়ার আজ তুই খেয়াল রেখেছিস__তাহলে তুই আমাকে বল না কোনটা ভালোবাসা তোর টা না রুপমের টা,ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড উজান হিয়াকে তুই ডিজার্ভ করিস অন্য কেউ না
উজানঃ স-ন্ধি তুই
সন্ধিঃ এ-র পরো যদি তুই বলিস ইউ নট ডিজার্ভ ফর হিয়া,দেন লেট মি টেল,তুই হিয়াকে নিয়ে এই ফাঁকা রুমে এতোক্ষণ যেটা করলি সেটাকে আমার চোখে হিয়াকে শুধু তোর বিছানায় ব্যবহার করা দেখায়,অন্য কিছু না কিচ্ছু না
উজানঃ সন্ধি স্টপ,,হিয়ার সাথে আমার কিচ্ছু হয়নি,তুই চুপ কর
সন্ধিঃ না আমি চুপ করবো না,তাহলে কেনো তুই হিয়াকে সবার সামনে থেকে ওভাবে টেনে নিয়ে আসলি,তোর কথা থাকলে আমাদের সামনেই বলতে পারতি,কি এমন কথা ছিলো তোর যে তোকে হিয়াকে ওভাবে নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করতে হলো
উজানঃ সন্ধি তুই প্লিজ চুপ কর আমি আর নিতে পারছি না
সন্ধিঃ হ্যা তা পারবি কেনো সত্যি টা কড়া হলে তো সেটাকে কেউ সহজে নিতে পারে না তুই ও পারছিস না
উজানঃ সন্ধি প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দে
সন্ধিঃ হিয়াকে ঠকাস না
উজানঃ আমি হিয়াকে ঠকাচ্ছি না সন্ধি আমি তো হিয়াকে
সন্ধিঃ আমি তো হিয়াকে কি?বল কি?চুপ করে আছিস কেনো বল না?উজান উওর দে আমাকে?আমার উওর চাই?তুই ভালোবাসিস হিয়াকে তাই তো?বল,বল না,উজান প্লিজ টেল মি যে তুই হিয়াকে
উজানঃ ভালোবাসি!!❤️হ্যা হ্যা হ্যা আমি হিয়াকে ভালোবাসি খুব ভালোবাসি খুব__সেই প্রথমদিন থেকে আমি হিয়াকে ভালোবাসি,হিয়া ছাড়া আজ অবধি অন্য কোনো মেয়ের উপর আমার এসব ফিলিংসই আসে নি,আমি হিয়াকে ভালোবাসি সন্ধি,হিয়াকে আমার দরকার
বলতে বলতে উজান ওর বিছানায় বসে পড়ে,উজানের চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে কয়েকফোটা পানি,সন্ধি উজানের সামনে গিয়ে উজানের কাঁধে ওর হাত রাখলে উজান সন্ধির হাত ধরে কেঁদে উঠে সন্ধিকে ওর পাশে বসিয়ে দেয়
উজানঃ সেই প্রথম দিন থেকে আমি হিয়াকে ভালোবাসি,সেদিন অবন্তীদের কলেজের রি-ইউনিয়নের ফাংশন ছিলো আর হিয়া আর অবন্তী মিলে কোন একটা রবীন্দ্র সংগীত এ নাচ করবে বলে প্রিপারেশন নিয়েছিলো,আর আমি সেদিন গিয়েছিলাম অবন্তীকে কলেজ থেকে আনতে যদিও আমি ওদের নাচ টা দেখতে পারি নি কিন্তু দেখেছিলাম আমার জীবনের সব চাইতে দামি মানুষ টাকে হিয়াকে!!সেদিন হিয়া একটা লেমন রঙের শাড়ি পড়েছিলো কি মিষ্টি লাগছিলো জানিস ওকে দেখতে,তখন তো আরো বাচ্চা ছিলো একদম বাচ্চা❤️আর অবন্তী কে বাই বলার সময় ওর ঔ হাসি টা আমি তো পারলে ওখানেই এ্যাটাক করে বসতাম জানিস❤️তারপর একদিন হঠাৎ করে বাড়ি ফিরে অবন্তীর রুমে ঢুকতেই দেখি হিয়া,আমি তো পুরো ঠান্ডার্ড হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন,হিয়া এখানে পরে ধীরে ধীরে জানতে পারলাম হিয়া আর অবন্তী একে অপরের বেষ্ট বন্ধু একে অপরকে এক মুহুর্ত না দেখলে চোখে হারায়__জানিস সন্ধি আমি হিয়াকে একবার দেখার জন্য ঠিক কি কি করতাম,আম্মুকে বলতাম আম্মু আজ তোমাকে অবন্তীকে আনতে যেতে হবে না আমি যাবো যদি এর ফাঁকে হিয়ার ঔ মায়া মাখা মুখ টা একেবারের জন্য হলেও দেখতে পাই আমি___সেদিন ছাঁদের উপর নিজেকে সামলাতে না পেরে ওর গালে আমি,তারপর জানিস রবীন্দ্র জয়ন্তী তে রাস্তা কিন্তু খারাপ ছিলো না আমি ইচ্ছে করে হিয়াকে ঘুরিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে,আরো কতো কি, কিন্তু যখন জানতে পারলাম রুপম হিয়াকে____রুপম আমার লাইফে কি তুই তো জানিস রুপমের জন্যেই হয়তো আমি এখানে তোর পাশে বসে হিয়াকে ভালোবাসার কথা টা বলতে পারছি আর সেই আমি কি না ওর থেকে ওর ভালোবাসা কে,না সন্ধি আমি এতো বড় অকৃতজ্ঞ হতে পারবো না,কখনোই না
সন্ধিঃ আর হিয়া তার কি হবে মেয়েটা যে তোকে ওর সব ভেবে বসে আছে
উজানঃ না হিয়াকে বুঝতে হবে আমি ওর জন্য সঠিক না____আজ কেনো যে আমি নিজেকে আটকাতে পারলাম না আমার এখন নিজের উপর নিজের ঘৃনা হচ্ছে খুব ঘৃনা হচ্ছে,আমি আমি খুব খারাপ তাই না রে সন্ধি,আমি একটা খারাপ ছেলে আমি আমি কেনো আজ হিয়াকে ওভাবে নিয়ে এসে এতো প্রশ্ন করলাম কেনো ও যখন আমায় জরিয়ে ধরলো আমি ওকে আটকালাম না
কথাটা বলেই উজান ওর মাথার চুল গুলো দু হাতে খামচে ধরে
সন্ধিঃ এটাকে খারাপ বলে না উজান,হিয়াকে তুই ভালোবাসিস আর ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষের উপর একটা অধিকার বোধ কাজ করে আর আজ তোর সেটাই হয়েছে
উজানঃ না সন্ধি আমি হিয়ার জীবন টা নষ্ট করতে পারি না,হিয়া অনেক ভালো একটা মেয়ে
সন্ধিঃ আচ্ছা ধরে নিলাম হিয়া তোকে ভুলে গেলো কিন্তু তুই,তুই পারবি তো হিয়াকে ভুলতে
উজানঃ না পারবো না আজকে আমরা দুজন এতো কাছাকাছি আসার পর থেকে হয়তো আর কখনোই আমি হিয়াকে ভুলতে পারবো না__ভালোবাসি তো খুব ভালোবাসি হিয়া থাকবে না হয় আমার অস্তিত্বজুড়ে এতোদিন যেভাবে ওকে দূর থেকে ভালোবেসে এসেছি সেভাবেই না হয় বাকি টা জীবন❤️
সন্ধিঃ এটা কোনো বাংলা সিনেমা না উজান আমি ফিল্মেটিক ডায়লগ দিলাম আর হয়ে গেলো,এটা বাস্তব জীবন আর আমাদের জীবনের বাস্তবতা অনেক কঠিন সেটাকে ইমোশনাল কথা বলে চালিয়ে দেওয়া এতো সহজ না!!____যাগ দেখি এদিকে তাকা
উজান তাকালে সন্ধি উজানের চোখের পানি গুলো মুছে দিয়ে উজানকে নিয়ে মজা করতে শুরু করে
সন্ধিঃ জানিস আজ না তিশারাসেল তার উপর তোকে আর হিয়াকে ইয়ে করতে দেখে আমারো খুব ইচ্ছে করছিলো তুষার কে নিয়ে__ভাগ্যিস করি নি তুষারো যদি ওসব করে তোর মতো ডিনে করতো আমাকে তখন
উজানঃ আমার সাথে হিয়ার ওভাবে কিছু হয়নি সন্ধি কতোবার বলবো
সন্ধিঃ কিস তো হয়েছে কিসের উপরে আর যা হয় তা তো হয়েছে তার উপর আর?
উজানঃ তুই কি থামবি__তুষার কি করে তোর মতো একটা মেয়ের প্রেমে পড়লো হায় রে আমার তুষারের কপাল?
সন্ধিঃ আমি বলেছি নাকি আমার প্রেমে পড়তে হু___ও হ্যা একটা কথা যেটা বলতে এসেছিলাম হিয়ার শরীর টা আবার খারাপ করছে মনে হয় জ্বর বাড়ছে
উজানঃ হোয়াট তুই আমাকে আগে কেনো বলিসনি
সন্ধিঃ বললে কি আর এতোকিছু জানতে পারতাম___আচ্ছা ওসব মজা বাদ এখন তুই রুপম কে তাড়াতাড়ি আসতে বল হিয়া আর বেশিক্ষণ এখানে থাকতে চাইছে না আমারো ভালো লাগছে না আমিও বাড়ি যাবো
উজানঃ তুই হিয়ার কাছে যা আমি রুপম কে ফোন দিয়েই আসছি____
_________________?__________________