সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-২২

0
524

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
২২
সালমান অনেকক্ষণ বসে রুমার অপেক্ষা করলো কিন্তু রুমা আসছে না।
রুমা টাকা দেয়ার মতো মেয়ে না ভেবেই সালমান অফিসে চলে গেলো।গাড়ি থেকে নামতেই শ্রমিকরা ঘিরে ধরলো।
-আমাদের কষ্টের টাকা মেরে খেতে দিবো না,আমাদের টাকা দিতে হবে।
-দিয়ে দিবো তোমরা আমাকে কিছুদিন সময় দাও।
-আজকেই দিতে হবে। আমরা থানায় যাবো,আপনাদের মতো বড়লোকরা আমাদের রক্ত চুষে খাচ্ছে।

সালমানের অনেক চেষ্টা করে বৃথা হলো।শেষমেষ নিজের কেবিনে গিয়ে বসে আছে দরজা বন্ধ করে। অনেক ফ্রেন্ডকে ফোন করলো কারো কাছেই এই মূহুর্তে এতো টাকা নেই।
চোখ বন্ধ করে মনে করলো, রুমার চেকবই কোথায় থাকে।ওয়ারড্রবের ভিতর ছোট্র ড্রয়ারে থাকে।এবার খাতায় রুমার সাইন কপি করছে।
রুমা খুব সহজ করে সাইন দেয়, দু বার ট্রাই করেই সাইন ঠিকঠাক হলো।
সহজ ভাবে কাজ হয়নি যখন বে আইনি পথ বেছে নিতে হবে।
রুমার ব্যাংক ম্যানেজারকে ফোন করলো সালমান।ছেলেটা ওর পূর্বপরিচিত ওর হেল্প নিতে হবে। না হলে ব্যাংক থেকে রুমাকে ফোন করলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।

– আসসালামু আলাইকুম স্যার।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। একটা হেল্প করতে পারবে?
-জ্বি স্যার বলুন।
-আমি রুমার একাউন্ট থেকে টাকা তুলতে চাই আমি খুব বিপদে আছি।তুমি শুধু এইদিক দেখবে যাতে ব্যাংক থেকে রুমাকে ফোন না করে।
-স্যার আপনি ম্যাডামের একাউন্ট নাম্বার বলুন আমি চেক করে দেখছি কত টাকা আছে।

সালমান, রুমার একাউন্ট নাম্বার বললো।
-স্যার ম্যাডামের একাউন্টে মাত্র ১লক্ষ টাকা আছে।উনি গত দুই সপ্তাহ আগে ১০লাখ তুলেছেন।
-টাকা তুলে নিয়েছে?
-জ্বি স্যার।

সালমান ফোন রেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।শেষ ভরসা বলতে আর কিছু নেই।যেখানে রুমা টাকা দিচ্ছে না সেখানে স্বপ্নার কাছে টাকা চাওয়া বেহায়াপনা।
আচ্ছা রুমা টাকা তুলে কি করলো নাকি অন্য একাউন্টে রাখলো।
সালমান চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছে।বাইরে চিল্লাপাল্লার আওয়াজে কান বন্ধ করে মাথা নুইয়ে বসে আছে।

টিভিতে লাইভ দেখাচ্ছে সালমানের অফিসের বাইরে কর্মচারীরা বেতনের জন্য আন্দোলন করছে।
স্বপ্না টিভিতে দেখছে ওর শাশুড়ী কে ডাকলো।
-মা তোমার ছেলের এই দিন আসলো।
-পাপ রে মা পাপ।
-কিন্তু মা কর্মচারীদের বেতন দেয়ার টাকা কি উনার কাছে নেই?
-তোকে বলেছিলাম না তুই ১৮বছরে যে বিলাসিতা করিসনি রুমা ১বছরে তার চাইতে বেশিই করছে।
-তাই বলে আজ এরকম অবস্থা।
-টিভি বন্ধ করে দে।

শাশুড়ীর কথায় টিভি বন্ধ করলো ঠিকই কিন্তু শান্তি পাচ্ছে না।
সালমানের মা ভিতরে ভিতরে ছেলের জন্য কষ্ট পাচ্ছেন কিন্তু দেখাতে পারছেন না।
স্বপ্না বাইরে গেলো তরীর জন্য কেক আনবে।আধা ঘন্টার ভিতর ফিরে আসে স্বপ্না।কেক ফ্রিজে রেখে মায়ের রুমে গেলো।
-মা আপনি আমার কথা রাখবেন।
-কি কথা বল?
-মা আমি একাউন্ট থেকে ১০লক্ষ টাকা তুলে আনছি তুমি প্লিজ উনাকে দিয়ে আসো।
-তোর মাথা খারাপ হয়ছে?
-মা,টাকাগুলো উনার, টাকার মালিক উনি।এই টাকা আমি রেখে কি করবো যদি বিপদে উনি টাকা নাই পেলেন।আমি আল্লাহর কাছে কি জবাব দিবো। টাকা থাকা সত্ত্বেও যদি জেলে যেতে হয় উনাকে।
-তুই বলদ রয়ে গেলি সারাজীবন।
-এতো মারপ্যাঁচ আমি বুঝি না মা।তুমি প্লিজ টাকাগুলো দিয়ে আসো।
-তোর ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ।
-সব ভালো হবে।ভালো মানুষের জন্য আল্লাহ খারাপ কিছু রাখেন না।আরো তো ৫লাখ আছে আমার ছেলের ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে পারবো।আমার রিদ্ধ ওর ভাই বোনকে ঠিক আগলে রাখবে।
-তোর সত্যিই ভালো হবে।

উনি বোরকা বের করে পরে নিলেন।তিনি নিজেও ভাবছিলেন কি করে ছেলেটার পাশে দাঁড়াবেন।
টাকাগুলো নিয়ে সালমানের অফিসের দিকে গেলেন।রহমান বাইরে সবাইকে বুঝাচ্ছে তখনি তিনি গিয়ে রহমান কে ডেকে টাকাগুলো দিলেন সালমানকে দেয়ার জন্য।

-স্যার দরজা খুলেন।
সালমান এসে দরজা খুলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
-আমি কিছুতেই টাকার ব্যবস্থা করতে পারছিনা।
-স্যার মা জননী এসে টাকাগুলো দিয়ে গেলেন।
-মা!! টাকা দিয়ে গেছেন।
-এই নেন স্যার।

সালমান ব্যাগ হাতে পেয়ে আকাশের চাঁদ পেলো।১০লাখ টাকা দেখে অনেক খুশি হলো।এতো বড় মন স্বপ্না ছাড়া আর কারো হতে পারে না।আমি জানি মা কখনোই টাকা চাইবেন না স্বপ্না নিজে থেকেই দিয়েছে।
সালমান ছুটে গিয়ে সবার পাওনা বুঝিয়ে দিলো।সবাই নতুন করে কাজে যোগদান করলো।
কেবিনে এসে রিলেক্স হয়ে বসলো আজ ওই বাসায় যাবে স্বপ্নার কাছে ক্ষমা চাইবে স্বপ্না নিশ্চয়ই ক্ষমা করবে।

**তরী ক্লাস শেষে বের হতে গেলেই অরুনা চৌধুরী ডাক দিলেন।
উনার ডেস্কে যেতেই সবাই এক সাথে হেপি বার্থডে তরী বলে উঠলো। সামনে কেক রাখা উনি হাত ধরে তরীকে সেখানে নিয়ে গেলেন।
-আন্টি আমার জন্য এতোকিছু।
-হুম তোমার জন্য,এবার আসো কেক কাটবে।
ওহ ওই যে আমার ছেলে হিমেল চৌধুরী, হিমেল ও হচ্ছে তরী।
-হাই
-হ্যালো।
হিমেল তুই ও আয় কেক কাটবি।
-মম আমি কেনো?
-আয় না।
হিমেলকে তরীর পাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন।৬ফিট লম্বা হিমেল সুদর্শন ছেলে।বয়স প্রায় ২৮বছর হবে।
অরুনা দূর থেকে হিমেল আর তরীকে দেখছেন মনে মনে বলছেন পাশাপাশি খুব মানিয়েছে।
কেক কাটার পর অরুনা সবাইকে খেতে দিলো। সুযোগ করে হিমেল আর তরীকে পাশাপাশি বসালো।আলাপ করানোর জন্য তরী খুব শান্ত মেয়ে অযথা ও কথা বলবে না।এদিকে হিমেল ফোন নিয়ে ব্যস্ত। অরুনা যে জন্য এতোকিছু করছে কিছুই তো হচ্ছে না।
-তোমরা চুপচাপ বসে আছে কেনো? নিজেদের মধ্যে কথা বলো।
হিমেল আড়চোখে তাকাতেই তিনি চলে গেলেন।
তরী গ্লাসে ড্রিংক ঢেলে হিমেলকে দিলো।
-খেয়ে নিন।
-থ্যাংকস।
আবার দুজন চুপচাপ। হিমেল ড্রিংকস খেয়ে উঠে চলে যেতে গিয়ে তরীর দিকে তাকালো।
-মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ ডে হ্যাপি বার্থডে।
-থ্যাংক ইউ।
হিমেল চলে গেলো অরুনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে।

**সালমান কফি খাচ্ছিলো খুশ মেজাজে তখনি একটা ভিডিও আসলো ফোনে।ভিডিও ওপেন করতেই দেখতে পায় রাসেলের সাথে রুমা চুম্বন দৃশ্যে।
সালমানের মাথা ঘুরে যাচ্ছে এসব কি?সালমান সাথে সাথে ওই নাম্বারে ফোন দিলো ফোন সুইচড অফ।
রুমার ফোন অনবরত বেজে যাচ্ছে।বিরক্ত হয়ে ফোন রিসিভ করলো।
-তোকে বলেছিলাম মুখ বন্ধ রাখতে,তুই অহনাকে সব বলে দিয়েছিস।
-আমি বলিনি অহনা তোর,আমার কথা শুনেছিলো।
-ম***তুই জানিস অহনা আমার ভালোবাসা ওর সাথে আমার ৭বছরের প্রেম শেষে বিয়ে।
-কুত্তার বাচ্চা আমার সাথে অভিনয় করেছিলি কেনো।
-তোর জন্য অহনা চলে গেছে আমাকে ছেড়ে।তুই ও আর স্বামীর ঘর করতে পারবিনা।
-মানে?
-সালমানকে আমি ভিডিও পাঠিয়ে দিয়েছি।ওয়েট কর সালমান আসছে।
-শুয়োরের বাচ্চা কেনো এসব করলি?
-এবার বুঝ মজা।

রাসেল ফোন কেটে দিলো,রুমা অস্থির হয়ে যাচ্ছে কি করবে। মাথায় কিছুই আসছেনা তখনি মাকে ফোন দিলো।
-মা,তুমি তাড়াতাড়ি বাবাকে নিয়ে বাসায় আসো আমার খুব বিপদ।
-কি হয়েছে।
-কথা বলে সময় নষ্ট করো না তাড়াতাড়ি আসো।
রুমা ফোন রেখে দিতেই রুমার মা ওর বাবাকে বললেন।ওর বাবা বললেন থানায় গিয়ে পুলিশ নিয়ে যেতে হবে।বিপদে আছে মানে নিশ্চয়ই খারাপ কিছু আগে পুলিশকে জানাতে হবে।

সালমান গাড়ি বের করে পাগলের মতো ড্রাইভ করে আসছে।রুমা এতো খারাপ, এতো খারাপ সালমান নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here