#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
১৯
রুমা বিছানায় যাওয়ার পর থেকেই ছটফট করছে কি করে সালমানের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করবে।
রুমার ছটফটানি দেখে সালমান ভাবছে রুমা আজকের এসবের জন্য চিন্তা করছে।
সালমান আস্তে রুমার মাথায় হাত রাখলো রুমা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
-যা হয়েছে ভুলে যাও রুমা,এমনটা আর হবে না।
-আমি কি করে ভুলবো সালমান।আমার বারবার মনে হচ্ছে তুমি বোধহয় আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।
-তুমি কি বিশ্বাস করতে পারছো না আমাকে?
-না পারছিনা।
-কেনো?
-ঘর পোড়া গরু তো তাই।
-উফফ রুমা প্লিজ।
কান্নার গতি বেড়ে গেলো।
-কি করতে হবে কি করলে বিশ্বাস করবে?
-আমি জানিনা, আমি কিচ্ছু জানিনা।
-আচ্ছা এখন ঘুমাও।সকালে কথা বলবো।
সালমান ঘুমিয়ে যাওয়ার পর শেষরাতে রুমা অনেকক্ষণ ওয়াশরুমে গিয়ে জলে ভিজলো।যার ফলস্বরূপ সকালে সর্দি করেছে।শরীর কিছুটা গরম হয়ে আছে।
সকালে সালমান ডাকছে রুমা উঠছে না।রুমার গাঁয়ে হাত দিতেই সালমান দেখলো ওর শরীর গরম।
রুমা কেঁপে কেঁপে কথা বলছে,
-আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে,তুমি প্লিজ চা খেয়ে অফিসে চলে যাও।
-চিন্তা করতে গিয়ে অসুখ বাঁধিয়ে দিয়েছো তুমি।
-তুমি অফিসে যাও সালমান,যাওয়ার আগে একটা কাজ করবে?
-কি বলো।
-মা কে একটু ফোন দিয়ে আসতে বলো।
-আচ্ছা আমি মাকে ফোন দিয়ে আসতে বলছি।
-তুমি কিছু খেয়ে যাও।আমি উঠতে পারছিনা মাথাটা ভারী হয়ে আছে।
-তুমি শুইয়ে থাকো,আমি চা করে আনছি।
রুমা শুইয়ে আছে,সালমান চা বানাতে বানাতে রুমার মাকে ফোন দিয়ে আসতে বললো।
এরমাঝে চম্পা চলে আসছে,ও চা কাপে ঢেলে দুজনকে খেতে দিলো।
সালমান চা খেয়ে অফিসে চলে গেলো।রুমা তখন উঠে নাস্তা খেয়ে নিলো।
রাসেলকে ফোন করে জানালো বিকালে টাকা ম্যানেজ করতে না পারলে আগামীকাল টাকা দিবে।
রুমার মা, রুমার অসুখ শুনে তিনি সমস্ত কাজ ফেলে চলে আসলেন।
-মা আমার মা, আমার মেয়ে, সোনা বাচ্চা কি হয়ছে তোর।
রুমার মায়ের, মেয়ের প্রতি আধ্যিকেতা একটু বেশিই।মেয়ে স্বামীদের টাকা দিয়ে মায়ের শখ আহ্লাদ পূরণ করে বলে কথা।
-মা চিন্তা করো না, আমি ঠিক আছি।
-জামাই বাবা বললেন তুই অসুস্থ, শুনেই আমার কলিজা কেঁপে উঠলো।ছুটে চলে আসলাম।
-মা আমি কিছু জরুরি কথা বলবো।তুমি মন দিয়ে শুনবে।
-কি হয়েছে বল তো?
-আগে শুনবে পরে কথা বলবে।
-আচ্ছা বল।
-মা, তোমাদের জামাই ওই পরিবারের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইছেন নতুন করে।
ওই পক্ষের তিন ছেলে মেয়ে যদি ওদের সাথে সব ঠিক হয়ে যায়।তবে সালমানের সমস্ত ব্যাংক ব্যালেন্স ওদের দখলে চলে যাবে।
ওই ছেলেমেয়েরা বদের হাড্ডি,বাবাকে ভুলিয়ে সব নিয়ে নিবে।
-তুই কি করতে চাইছিস বল তো?
-মা আমার তো সালমান ছাড়া কোনো গতি নেই।ও যদি আমাকে ছেড়ে যায় আমি কোথায় যাবো বলো তো?
-না না তুই ওর জন্য নিজের সংসার ছেড়েছিস ও তোকে ছাড়বে আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো।
-মা,তুমি আজ কিছু অভিনয় করতে পারবে?
-কি করতে হবে বল।
-আজ সালমান আসলে তুমি তুলকালাম বাঁধাবে।
-কি রকম?
-তুমি সালমানকে বলবে।তোমার কাছে আমার মেয়ে নিরাপদ না।তুমি আমার মেয়েকে ছেড়ে দিবে যে কোন সময়।আমার মেয়ের জীবনের নিরাপত্তা কি?
-সালমান যদি রেগে যায়?
-সেটা আমি ম্যানেজ করবো।তুমি ঘাবড়ে যাবে না বরং রাগে গজগজ করবে,হুংকার দিবে।
-তারপর?
-সালমান যখন বলবে আপনাকে কি প্রমাণ দিতে হবে,আপনার মেয়েকে আমি কখনোই ধোঁকা দিবো না।
তখনি তুমি বলবে,আমার মেয়ের একাউন্টে ১৫লক্ষ টাকা জমা রাখতে হবে।
-যদি রাজি না হয়।
-তখন তুমি বলবে, আমার মেয়েকে আমি নিয়ে যাচ্ছি,দরকার হলে আইনের আশ্রয় নিবো।
মাকে অনেকক্ষণ বুঝিয়ে বললো রুমা।তিনি সব শুনে রিহার্সেল করছেন।
বিকেলে সালমান চলে আসলো।
-মা আপনি খেয়েছেন?রুমা এখন কেমন ফিল করছো?
রুমা মাথা নাড়িয়ে ভালো বুঝালেও রুমার মা চুপ করেই আছেন।
-মা কি হয়েছে?
-আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিনা জামাই বাবা তোমার কাছে আমার মেয়ে কষ্টে আছে।
-মা রুমা বাচ্চামি করছে,আপনি ওর কথায় স্বায় দিবেন না।
-না না সেটা তো হয় না।আমার মেয়ে নিজের সংসার ছেড়েছে তোমায় ভালোবেসে।
-মা আমি ওর সাথে কোনো অন্যায় করছিনা।
-প্রমাণ দিতে পারবে?
-কি করতে হবে।
-আমার মেয়ের নামে১৫লক্ষ টাকা একাউন্টে রাখতে হবে।
-কিসব বলছেন।
-রাখবে কি না যদি রাখতে না পারো তবে রুমাকে নিয়ে আজই চলে যাবো।দরকার হলে আইনে যাবো।
-আপনি বুঝতে পারছেন না আমার বর্তমান যে অবস্থা আমার নিজের একাউন্টে ১৫লক্ষ টাকা নেই।
-সেটা তো বিশ্বাস হয় না।
-আমি কি করে বুঝাবো।আমার বিজনেস লস হচ্ছে বারবার।
-যদি রাখতে পারো তবে রুমাকে নিতে আসবে নয়তো না।
-রুমা তুমি মাকে বুঝাও।
-মা টাকা দিয়ে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না,যদি না সেই সম্পর্কে ভালোবাসা থাকে।
-রুমা জ্ঞান দিবি না।এই ছেলেকে বিশ্বাস নেই।
-আচ্ছা আমি ১০লক্ষ দিবো ম্যানেজ করে।
-নাহ বাবাজি ১৫লক্ষ দিতে হবে।
-আমি কি ডাকাতি করে টাকা দিবো।পাবো কোথায়?
-তোমার এতো জায়গাজমি টাকা থাকবে না,তাই কি হয়?
-মা,আপনি বাচ্চাদের মতো কথা বলছেন সত্যি বর্তমানে আমার অবস্থা খুব খারাপ।
-তাই তো বলছি,তোমার কাছে টাকা থাকলে তুমি অকাজে ব্যয় করবে,তাই রুমার কাছে থাকলে নিরাপদে থাকবে।
অনেক কথার পর সালমান ১২লক্ষ দিতে রাজি হলো।রুমা মাকে ইশারা দিলো মেনে নিতে।
তিনি বললেন আজই টাকা দিয়ে দিতে।
সালমান চেক সাইন করে রুমার হাতে দিলো।
-রুমা, তুমি বিশ্বাস করবে কি না জানিনা এটাই আমার শেষ সম্বল।আমার বিজনেসে ইনভেস্ট করার মতো আর কিছুই নেই আমার।
-আমি এক পয়সা নষ্ট করবো না।বরং তোমার বিপদে তোমার হাতেই তুলে দিবো।
রুমা চেক হাতে পেয়েই ছুটে গেলো রান্নাঘরে।সবার জন্য খাবার টেবিলে সাজিয়ে দিলো।
**আজ তরী একটা কোচিং সেন্টারে গেলো ভর্তি হওয়ার জন্য।মেডিকেলে পরিক্ষা দিবে তাই কোচিং করতে হবে।
ভর্তি হয়ে মোটামুটি ভালো লাগছে এখানকার সবাই খুব ভালো। বিশেষ করে কোচিং সেন্টারের পরিচালক একজন মহিলা।খুব ভদ্র আর সাবলীল করে কথা বলেন।বয়স ৪৫বছরের উর্ধ্বে হবে তবুও কত স্টাইলিশ।নিজের একটা পার্সোনালিটি আছে। এরকম মহিলা দেখতে তরীর খুব ভালো লাগে।তাই তরী গিয়ে গল্প জুড়ে দিয়েছে।
তরীর সাথে গল্প করলেন অনেকক্ষণ তরীকে আন্টি ডাকতে বললেন।তিনি এখানে ক্লাস করান না, ক্লাসের জন্য টিচার আছে।
মহিলার নাম অরুনা চৌধুরী উনার স্বামী একজন ডক্টর। বাসায় বসে থাকতে ভালো লাগে না তাই এই কোচিং সেন্টার খোলা।
চলবে