#ইরিনা_ইরিন
পর্ব ঃ- ০৫
হাসপাতালের বারান্দায় বসে আছি। ডাক্তার বলেছে ভয়ের কিছু নেই তবুও আমার খুব ভয় করছে। কী করে হলো এমন ঘটনা! ঈশানের এখনো জাগে নি। ওকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে রাখা হয়েছে। এমন সময় সুজয়কে দ্রুত পায়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখলাম।
“ঈশান, কী হয়েছে ঈশানের?”- হাঁপাতে হাঁপাতে বললো সে।
” জানিনা আমি কী করে কী হলো। একটা শব্দ শুনে ঈশানের রুমে ঢুকে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় ও ফ্লোরে পড়ে আছে।”
” এসব কিছু তোর জন্য হয়েছে। তোর এসব কাজের জন্য হয়েছে। কতোবার বলেছি এসব থেকে দূরে থাক, না তুই সর্বদাই তোমমর একরুখ্যতা নিয়ে থাকবি। আজ যদি ঈশানের বড় কোনো বিপদ হয়ে যেত আমি তোকে কখনই ক্ষমা করতাম না।”
” এমনভাবে বলছিস যেন ঈশান তোর সবকিছু আর আমার কিছুই না!”
” আমি ওর কেউ না হলেও আমি ওকে নিজের সন্তানের চেয়েও বেশী ভালবাসি, কিন্তু তুই ওর মা হয়েও এতোটা ভালবাসিস কিনা সন্দেহ, নয়তো নিজের আর ঈশানের জন্য প্রতিনিয়ত শত্রু বৃদ্ধি করার কাজ করে যেতি না।”
আমি আর কিছুই বললাম না চুপচাপ বসে রইলাম। সবার অভিযোগ শুনতে শুনতে আমি অভস্ত, ওসব আর এখন আমার তেমন গায়ে লাগে না। তবে এর পিছনে কে আছে তা আমি খুঁজে বের করবই।
পরের দিন সকাল,
ঈশানকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসলাম।
সুজয়ও আসলো আমাদের সাথে।
” ঈশান তোমার মাথায় কীভাবে আঘাত লাগলো? “- সুজয়।
” আমি জানি না হঠাৎ কিছু একটা মাথায় এসে প্রচন্ড জোরে আঘাত করলো। তারপর আর কিছু বলতে পারি না।”
” তোমার ঘরে কী কেউ ঢুকেছিলো?”- সুজয়।
” না বাইরে থেকে হয়তো কিছু ছুরে মেরেছে।”
“ঈশান আমি যখন তোমার রুমে আসি তখন তোমার ঘরের দরজা জানালা সব বন্ধ ছিল। তারপরও যদি জানালা দিয়ে কিছু আসতো তাহলে জানালার কাচ ভাঙা থাকতো। “- ইরিন।
” তুমি কী বলতে চাইছো আমি মিথ্যা কথা বলছি?”-ঈশান।
“ইরিন তুই কিন্তু এবার বেশি বেশি করছিস। তুই কী তোর আহত ছেলেকে বাদ দিয়ে দরজা জানালা দেখছিলি?”
” যে যা কাজ করে তা বুঝার জন্য তাকে আলাদাভাবে তদারকি করতে হয় না। এক ঝলকেই সব দেখে নেওয়া যায়।” আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি নাস্তা বানিয়ে আনছি।
নাস্তা সেড়ে সুজয় চলে গেল। আমি আবার ঈশানের কাছে আসলাম। আমি আসতেই ও বললো –
” তোমার জন্যই এসব কিছু হচ্ছে। সুজয় আংকেলও এখন আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। বলেছিলাম বার বার সুজয় আঙ্কেলকে বিয়ে করে ফেলো, যদি করতে তাহলে আর আমাদের এরকম দিন কাটাতে হতো না।”
” সুজয় তোমাকে একটু কেয়ার দেখায় বলেই তুমি আবেগের বসে এতোকিছু ভেবে বসো। সমাজ, বাস্তবতা যদি ফেস করতে তবে বুজতে পারতে যে আমি যা করেছি সবসময় তোমার ভালোর কথা ভেবেই করেছি।”
“আমি বিকেলে চলে যাব”
” তুমি এখনো অসুস্থ। ২ দিন এখানেই থাকবে। ”
” এখানে থাকলে আমি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বো।”
“ও, তাহলে তুমি যা ভালো বুঝো করতে পারো। আমি একটু বাইরে যাব। তুমি কী কিছু খেতে চাও?”
” না।”
” আচ্ছা।”
একটা চাপা কষ্ট নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে এলাম। ছেলেটা আজকাল আমাকে একদম বুঝতে চায় না!
৫ দিন পর,
আমি রিয়াদ সাহেবের বাসায় বসে আছি। রিয়াদ সাহেব খুবই উদিগ্ন হয়ে আমার সামনে বসে আছেন। কারণ আমি বলেছি যে আমি উনার স্ত্রীর মৃত্যুর কারণ বের করে ফেলেছি।
“ম্যাডাম আপনি কিছু বলছেন না কেন। কে হত্যা করেছে আমার পিয়াসাকে।”
” আপনি বার বার এতো সিউর হন কীভাবে যে এটা আত্মহত্যা নয় হত্যা?”
” জানিনা, আমার মন এটাই বলে তাই…… ”
” রিয়াদ সাহেব এমন একটা ঘটনা ঘটেছে যে আমি ঠিক কাকে অপরাধী করে কী শাস্তি দেওয়া যায় আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।”
” কী বলছেন এসব আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
” আপনি বলেছিলেন পিয়াসা প্রকৃত সুখী মহিলা। আপনি কখনো ওকে ঠকান নি। কিন্তু তা ভুল আপনি ওকে ঠকিয়েছেন। কিন্তু আমি জানি এতে আপনার হয়তো দোষ ছিল না কিন্তু পিয়াসার মনে এটা একটা কষ্ট হয়ে থেকে যায়। ”
আমার কথা শুনে রিয়াদ সাহেবের মুখ শুকিয়ে গেল। উনি বুঝতে পারছেন আমি কী বলেছি কিন্তু এটা বুঝতে পারছেন না যে এতো গোপন কথা আমি কীভাবে জানলাম।”