ইরিনা_ইরিন পর্বঃ৪

0
480

#ইরিনা_ইরিন
পর্ব ঃ- ০৪

“আমি ঠিক বুঝতে পারছি না ম্যাডাম আপনি কীভাবে জানলেন এসব। তবে জেনেই যখন গেছেন আমি আর কিছু আপনার থেকে আড়াল করবো না। আসলে রিয়া যখন আমাদের বাসায় ছিল তখন ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। পিয়াসাই আমায় বলে ওকে বুঝাতে। আমি তাই কয়েকদিন ওর সাথে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলাম। তারপর ও শুধু আমার সাথে কথা বলতে চাইতো। পিয়াসার প্রতি আমার ভালবাসা কেয়ার এসব দেখে ওর নাকি আমাকে ভালো লাগতে শুরু করে। এভাবে ও আস্তে আস্তে আমার প্রতি দূর্বল হতে শুরু করে। আমি ওকে এসব বিষয়ে একদম পাত্তা দিতাম না। তবুও ও বার বার আমাকে ফোন দিত। আপনি কল লিস্ট দেখলে বুঝবেন যে আমি ওকে ফোন দিতাম না ওই আমাকে দিত। যাক অবশেষে ও চলে যায়। কিন্তু ২ বছর পর ওর বিয়ে আবার আমার খালাত ভাইয়ের সাথেই হয়। তাই পিয়াসার চলে যাওয়ার পর আমি ওকে প্রশ্ন করলে ও কিছু করে নি বলে এবং এসব বিষয়ে ওকে না জড়ানোর জন্য খুব অনুরোধ করে। তাই আর আমি ওর বিষয়ে কাউকে কিছু বলি নি।”

” আচ্ছা বুঝলাম, তাহলে এখন আর ওর সাথে দেখা করতে গেছিলেন কেন?”

” আপনি বলার পর আমি ওর সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারি ও ঢাকায় আছে। তাই আজ ওকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসার জন্যই আমি ওর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আবার ও এসব বিষয়ে ওকে না জড়ানোর জন্য বললো আর ওর বাচ্চা অনেকক্ষণ একা আছে বলে চলে গেলো।”

” এ কথা তো আপনি আমায় প্রথমেই বলতে পারতেন। ”

” আসলে আমি আমার খালার প্রতি অনেক ঋনী। তাই ওদের পরিবারে আমার জন্য কোনো ঝামেলা হোক তা আমি চাই না বলেই ওর কথাগুলা আড়াল রাখার চেষ্টা করি।”

” আপনার যুক্তি আমি ঠিক মিলাতে পারছি না রিয়াদ সাবেব। যাই হোক আপনি আমায় ওর ফোন নাম্বারটা দিয়েন। ”

“আচ্ছা।”

” আমি কী আপনার বাসা একটু ঘুরে দেখতে পারি?”

“হ্যা, অবশ্যই। ”

তিন বেড রুমের একটি সুন্দর বাসা। একটি ড্রয়িং, একটি ড্রাইনিং ও কিচেন। রুমগুলোর সাথে বাথরুম আছে। আমি সবকিছু ভালোভাবে ঘুরে ঘুরে দেখলাম। কিন্তু ভেতরের দিকের দরজা সব বন্ধ থাকলে বাইরে থেকে কেউ আসতে পারার কোনো রাস্তা দেখতে পেলাম না। প্রধান দরজা একটাই বাসার।

“রিয়াদ সাহেব আজ তাহলে আসি।”

“আচ্ছা মেডাম কিছু জানতে পারলে জানাবেন।”

” ও হ্যা, একটা কথা জিজ্ঞেস করা হয়নি। আপনাদের বসায় কী কোনো কাজের লোক ছিল?”

” একজন খালা ছিল যিনি প্রতিদিন ৩ ঘন্টা কাজ করতেন এসে।”

” উনি এখন কোথায় থাকেন জানেন?”

” না ম্যাডাম।”

” উনার নাম কী ছিল আর আগে কোথায় থাকতেন?”

” নাম ছিল হাসনা, বয়স ৩৫-৩৬ এর মতো ছিল, আমাদের সামনের গলির পরে যে বস্তির মতো কিছু জায়গা আছে খুব সম্ভবত ওখানেই থাকতেন।”

“আচ্ছা, ধন্যবাদ। ”

বাসায় ফিরতে ফিরতে ওই কাজের মহিলার কথাই ভাবছি। এসব মানুষ যেখানে কাজ করে সেখানের অন্রক কিছুই জানে সাধারণত। ”

বাসায় ফিরে বেশ অবাক হলাম! বারান্দায় ঈশান বসে আছে। আমাদের বাসাটা আমার বাবার তৈরী। খুব শখ করে এটা বানিয়েছিলেন বাবা। একটি শৌখিন দুতালা ঘর। সামনে বড় বারান্দা, সেখানে একপাশে বসার জায়গা, অন্যপাশে ঘাসের কার্পেট বিছানো, আমরা যাতে ওখানে বসে খেলতে পারি তাই এমন ব্যবস্থা করেছিলেন। বাসার সামনে অনেকটা খালি জায়গা। এর একপাশে ছিল অনেক সুন্দর ফুলের বাগান। বাগান এখনো আছে কিন্তু বাবার সেই মনোমুগ্ধকর বাগানের কাছে এসব কিছুই না। ঈশান আজ বাসায় আসার কথা না। এসেছে যখন আমায় ফোন না দিয়ে এখানে কেন বসে আছে বুঝতে পারছি না।

“ঈশানি কখন এসেছো?”

” ২০ মিনিটের মতো।”

” আমায় ফোন দিলে না কেন?”

” এখানে বসতে ভালোই লাগছিল, এখন অবশ্য দিতাম।”

” এসো ভেতরে এসো।”

“তোমাকে কতোবার বলেছি এসব কাজ ছেড়ে দিতে।”

“এটার পর আর করবো না।”

” প্রত্যেকবারই তুমি এটা বলো।”

” কী জানি এমন সব কেস আসে যা না করতে পারি না।”

” এরপর আর কোনো কেস নিলে আর আমি তোমার সাথে যোগাযোগ রাখবো না।”

” সে তোমার যা ইচ্ছা তাই করতে পারো।”

” তার মানে কী আমার চেয়ে তোমার কাজ তোমার কাছে বেশি? ”

” তোমার এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি ইচ্ছুক নই। এসো ভেতরে।”

আমার এই উত্তরে ঈশান বেশ বিরক্ত হলো। আমি তা তোয়াক্কা না করেই কিচেনে গিয়ে চায়ের জল বসালাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে ঈশানকে চা দিলাম। ঈশান আর আমার সাথে কোনো কথা বললো না।

রুমে এসে আমি রিয়াদ সাহেবের বাসার পাশের ফ্ল্যাট এ থাকা মহিলাকে ফোন দিলাম।

” হ্যালো কেমন আছেন?”

“ভালো, আপনি কে?”

“আজ বিকেলে আমাদের কথা হয়েছিল। আপনি কী পিয়াসা সম্পর্কে আর কিছু বলতে পারবেন? আপনার এটা কী মনে হয় আত্মহত্যা না খুন?”

” সত্যি কথা বলতে গেলে পিয়াসা ভাবি আত্মহত্যা করেছে এটা আমার ও বিশ্বাস হয় না। ”

” আপনার কী কাউকে সন্দেহ হয়?”

” ঠিক সন্দেহ না, তবে আমাদের বাসার মালিক এর এক শালা আছে ওই ছেলেটা বেশি সুবিধার না। ও বেশ কয়েকবার পিয়াসার সাথে কথা বলার ওর বাসায় গিয়ে গল্প করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পিয়াসা ওকে পাত্তা দেয় নি। ”

” বুঝেছি? সে কী আপনাদের মালিক এর বসায়ই থাকে? সারাবছর থাকে না, তবে বছরের ৭/৮ মাসই এখানে থাকে। আমি যে এসব বলেছি আপনি প্লিজ কাউকে বলবেন না। ”

“আচ্ছা। আপনি কী আর কিছু বলতে পারেন?”

” না।”

” আচ্ছা রাখি।”

এবার রিয়াকে ফোন দিলাম।

” হ্যালো কে?”

” আমি ইরিন বলছি, আপনি কী রিয়া?”

“হ্যা কী প্রয়োজন? ”

” আমি আপনার বান্ধবী পিয়াসার কেস নিয়ে কাজ করছি। ”

” আমি কতোবার বলেছি এসব বিষয়ে আমায় আর না জড়াতে। আর কতো বিরক্ত করবেন? আমি কী তখন দেশে ছিলাম। দয়া করে আমায় শান্তি দিন। “- বলেই ফোনটা কেটে দিল রিয়া। বেশ অবাক হলাম আমি। আমি কিছু বলার আগেই এতো রিয়েক্ট করার কী হলো বুঝলাম না। এই মেয়েটাকেই আমার সন্দেহ হচ্ছে।

হঠাৎ ঈশানের রুমে কী একটা শব্দ হলো। আমি ছুটে এলাম। এসে যা দেখলাম তা দেখে আমার মাথা ঘুরতে শুরু হলো। ঈশান রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে আছে!

বি.দ্র. পরিক্ষার কারণে দুইদিন গল্প দিতে পারি নি। এখন থেকে নিয়মিত দেওয়ার চেষ্টা করবো। আশা করি সবাই পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here