এক_চিলতে_রোদ Part_51
#Writer_Nondini_Nila
সকাল সকাল ইহান ভাইয়া চলে গেছে অফিসে। আমি বিছানায় বসে গিফট গুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছি। আমার পাশে বসে গল্প করছে লতা। তার গল্প হচ্ছে কাল সে একটা প্রপোজ পেয়েছে। সেসব বলছে আর ব্লাসিং হচ্ছে। আমি ওর কথা শুনে কম ভাবছি বেশি। কালকে রিহান কে দেখেছি। সে তীক্ষ্ণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমি কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভাইয়া তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলো আমি একা হতেই রিহান আমার কাছে আসে আর জিজ্ঞেস করে,
‘ শুভ জন্মদিন ঊষা। কেমন আছো?’
আমি জড়োসরো হয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, ‘ জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?’
‘ এইতো মুটামুটি।’
আমি পেছন ঘুরে চলে আসতে চাইলাম। রিহান বলে উঠলো,
‘ তোমার সাথে একটু কথা ছিলো।’
আমি থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। রিহান এগিয়ে এসে বললো, ‘ তুমি…
রিহান কথা শেষ করা আগেই ইহান ভাইয়া এগিয়ে এলো। আর রিহানকে দেখে চেয়াল শক্ত করে ফেললো। রিহান ভাইয়াকে দেখে আমার থেকে চলে গেলো। আমি রিহানের দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘ আরে কোথায় যাচ্ছেন? কি যেন বলতে চেয়েছিলেন?’
কিন্তু রিহান থামলো না চলে গেলো। ইহান ভাইয়া এসে আমার কাছে জিজ্ঞেস করলো,
‘ ও কি বলছিলো তোকে?’
আমি সব বললাম।
ইহান ভাইয়া বললো,,, ‘ ওর সাথে আর কখনো কথা বলবি না।’
আমি আচ্ছা বলে মাথা নাড়ালাম।
ফারিয়া একটা চেয়ারে চলে রাগে গজগজ করেছে আমাদের দিকে তাকিয়ে।
সবার খাওয়া শেষ এখন বাকি আছে শুধু ওই খালাতো ভাই ( দিহান) এর। সকাল দশটা না হলে তিনি ঘুম থেকে উঠে না। চাচির আওয়াজে আমাদের ভাবনা বন্ধ হলো।
তিনি হাক ছেড়ে আমাকেই ডাকছেন। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে এলাম লতাও এলো।
চাচি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ ওই যে দিহান বসে আছে। ওকে খেতে দে।’
আমি আচ্ছা বলে সেদিকে পা বাড়ালাম। লতা আমার সাথে আসতে গেলে চাচি লতাকে ডেকে বলে,,
‘ তুই কোথায় যাচ্ছিস?’
লতা বললো, ‘ ঊষার সাথে খাবার এনে দেয়।’
‘ নাহ তুই আমার সাথে আয়।আমার পা টিপে দিবি।
আমি খাবার এনে টেবিলে রাখলাম। দিহান মাথা নিচু করে ফোন টিপে যাচ্ছে কোন দিক তাকাচ্ছে না। কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আমি তা দেখার জন্য ওর দিকে তাকালে দেখতে পায় নিচের দিকে তাকিয়ে ফোন ঘাটছে। আমি তারাতাড়ি খাবার রেখে রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
এই ছেলের আসে পাশে আমার আসতে মন চায়না।
আমি রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে বাসন মাজতে লাগলাম। বাসন ধুয়ে রেখে পেছন ঘুরতেই চমকে উঠলাম। আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে দিহান। আমার দিকে লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ঢোক গিলে বললাম,
‘ আপনি এখানে কেন?’
দিহান সাথে সাথে বললো, ‘ লবণ লাগবো নিতে এলাম।’
আমি বললাম, ‘ কিহ? লবণ তো ওইখানেই আছে।’
দিহান এক পা এগিয়ে আসতেই আমি ভয়ে আতকে উঠলাম, এই ছেলেকে দেখলেই আমার ভয়ে আত্না শুকিয়ে আসে। তখন লতার আওয়াজ পেয়ে আমি হাফ ছেড়ে বাঁচি।
লতা পেছনে থেকে বললো,
‘ এখানে কি হচ্ছে?’
দিহান আমার পাশে থেকে লবণ হাতে নিয়ে তা দেখিয়ে চলে যায়। আমি বুকে ফূ দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। তার মানে এই লবণের জন্য এগিয়ে এসেছে।আর আমি কি না কি ভাবলাম?
এদিকে দিহান ইচ্ছে করেই ওইখানে গিয়েছিলো। কতোদিন কোন মেয়ের শরীর ভোগ করতে পারেনা। আর আম্মু এনে এখানে ওকে বন্দি করে গেলো। কিন্তু এখানে এসে এমন যুবতী দুটো মেয়ে দেখে ওর তো সব এলোমেলো হয়ে গেছে। নিজেকে অনেক কষ্টে স্বাভাবিক রেখেছে। এদের একজন কে হলেও ওর চাই।
দুটোই কাছের মেয়ে সমস্যা হওয়ার কথা না। টাকা দিলে কি না হয়।টাকা দিয়ে মুখ অফ রাখবো।
শয়তানি হাসি দিয়ে দিহান খাওয়া শেষ করে।
বিকেলে ফারিয়ার রুমে দাড়িয়ে আছি। ফারিয়া আমাকে দাড় করিয়ে বলতেছে,
‘কাল খুব আনন্দ হচ্ছিল তোমার তাইনা।’
আমি বললাম, ‘ আনন্দ তো হবেই কাল আমার জন্মদিন ছিলো যে। আর কতো সারপ্রাইজ ভাইয়া দিয়েছে আমাকে।’
‘ আমার জিনিস তুমি ছিনিয়ে নিয়েছো।’
‘ আপনার জিনিস?’
‘ হুম। ইহান আমার। ওকে তোমার আগে থেকে আমি ভালোবাসি।’
‘ এসব নিয়ে আমার সাথে ঝামেলা কেন করেন। যা বলার ভাইয়াকে বলেন।’
‘ ইহানকে তো তুমি বশ করে ফেলেছো ও কি বুঝবে। আমি ভালো মতো বলছি তুমি ইহানকে ছেড়ে দাও।’
‘ আমি পারবো না।’
ফারিয়া রেগে এগিয়ে আসতে গেলে চাচি এগিয়ে আসে আর আমাকে রুমের বাইরে বের করে দেয়। আজ ভেবে রেখেছি ভাইয়া এলে সব বলে দেবো। রাতের অপেক্ষা শুধু।
ছাদে এলাম কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিচে নেমে এলাম।আসার সময় গেস্ট রুমের যেটায় দিহান কে থাকতে দিয়েছি সেটায় নজর দিলাম। কি যেন খাচ্ছে। আমি উঁকি মেরে চলে এলাম। বাজে দুর্গন্ধ।
রাতে ভাইয়া এলো অনেক দেরিতে। আমি পেছনে গেলাম ভাইয়া ফ্রেশ হয়ে এসেই বিছানায় শুয়ে পরলো। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম,
‘ খাবেন না?’
ভাইয়া চোখ বন্ধ করেই বললো, ‘ আমি খুব ক্লান্ত ঊষা। আমার খাবারটা এখানে নিয়ে আয়না প্লিজ। দুইদিনের কাজ করতে হয়েছে আজ।’
আমি নিঃশব্দে বেরিয়ে এলাম। আমার জন্য কাল ভাইয়া অফিস যেতে পারেনি।এতো বড় আয়োজন করেছিলো।চাচা কঠিন কিছু কথা বলার জন্য বসে ছিলো কিন্তু ভাইয়া আসতে লেট হওয়ায় কিছু বলতে পারিনি। আমি ভাইয়ার খাবার নিয়ে যাব তখন দিহান কে দেখতে পায়। ও
ডাইনিং টেবিল এ থেকে পানি খাচ্ছে আর আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। আমি দেখলাম তার দৃষ্টি খারাপ আমি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি বুকে থেকে ওরনা সরে গেছে। কিন্তু হাতে প্লেটের জন্য ওরনা ঠিক করতে পারছি না।
দিহানের খারাপ দৃষ্টি দেখে আমি চমকে দ্রুত গতিতে সিঁড়ির কাছে চলে এলাম। ভয়ে আমার বুক ধুকপুক করছে। ভাইয়া কাছে এসে খাবার রেখে আগে বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নিলাম।
‘ কি হয়েছে? ওইভাবে বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’
আমি চমকে উঠলাম। ভাইয়াকে এই কথা বলতে হবে এই দিহানকে আমার একটু ও ভালো লাগে না। ওর বাজে মতলব আছে।
কিন্তু এখন না ভাইয়া এখন ক্লান্ত পরে বলবো।
আমি হালকা হেসে বললাম,’ কিছু না তো।’
ভাইয়া সন্দেহ চোখে তাকিয়ে রইলো। আমি ঢোক গিলে এগিয়ে এলাম।
‘ খান।’
ভাইয়া বললো,,
‘ আমি পারবো না তুই খাইয়ে দে।’
আমি কিছু না বলে হাত ধুয়ে এলাম। আর বিছানায় বসে ভাইয়াকে খাইয়ে দিতে লাগলাম।
ভাইয়া খাচ্ছে আর আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ওরনা মাথায় দিয়ে ছিলাম। ভাইয়া আমার ওরনা মাথা থেকে ফেলে খোঁপা খুলে ছিলো। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
‘ এটা কি করলেন? এখন তো চুল আমার মুখে এসে বিরক্ত করবে আমাকে!’
‘ করবে না।’
‘ এই যে আমায় বিরক্ত করছে।’
চুল উড়ে এসে আমার চোখে মুখে এলো তা মুখ দিয়ে ফূ দিয়ে সরানোর চেষ্টা করে বললাম।
ভাইয়া তা দেখে আমার দিকে আরেকটু ঝুঁকে এসে চুল কানে গুঁজে দিয়ে বলল,,
‘ এসব দেখার দায়িত্ব আমার। তুই আমাকে খাইয়ে দে তো।’
আমি আর কি বলবো। খাইয়ে দিতে লাগলাম। আর ভাইয়া আমার চুল সামলাতে লাগলো। খাওয়া শেষ হতেই আমি হাত ধুয়ে এলাম। প্লেট নিচে রাখতে যাব কিন্তু ভাইয়া আটকে দিলো।
‘ ওটা রেখে দরজা আটকে আয়।প্লেট আর রাখতে হবে না। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।’
আমি বললাম, ‘ তো ঘুমান। আমি যাই।’
‘ যাই মানে তুই ছাড়া আমার ঘুম হবে নাকি!’
আমি দরজা আটকে এলাম। ভাইয়া আমাকে বিছানায় বসিয়ে আমার হাটুতে মাথা রেখে শুয়ে পরলো। আমি চমকে উঠলাম। আমার সারা শরীর কেঁপে উঠলো। ভাইয়া আমার হাত টেনে তুলে দিয়ে বললো,
‘ তোর এই নরম তুলতুলে হাতের আমার মাথা ব্যাথা কমিয়ে দে তো।’
আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। ভাইয়া চোখ বন্ধ করে রইলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাইয়ার নিঃশ্বাস ঘন হয়ে এলো। ভাইয়া ঘুমিয়ে পরেছে অতিরিক্ত ক্লান্তি তে তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পরেছে। আমি ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। ভাইয়া হুট করেই নড়ে উঠলো আর বেকা হয়ে আমার কোমর দুহাতে আকড়ে ধরে পেটে মুখ গুঁজে দিলো। আমি হকচকিয়ে গেলাম। ভাইয়া নিঃশ্বাস আমার জামা ভেদ করে শরীরে গিয়ে ঠেকছে আমি থরথরিয়ে কাঁপছি। বুকের হার্টবিট বেড়ে গেছে অনেক।
এদিকে দিহান নিচে বসে আছে নেশা করে।ও বসে আছে ঊষার জন্য। খাবারের প্লেট দিয়ে আবার আসবে তখন ও শিকারীকে ধরবে। কিন্তু বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে গেলো ওর শিকারী এলো না। ও রেগে রুমে চলে এলো। আর নেশার মাঝে ভাবতে লাগলো ইহানের সাথে এর কোন সম্পর্ক আছে নাকি। ইহানের রুমে রাতে থেকে গেলো কেন?
মাতাল দিহান ছটফট করতে করতে ঘুমিয়ে পরলো।
#চলবে
( ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন। )