এক_চিলতে_রোদ Part_46
#Writer_Nondini_Nila
‘ ফারিয়া তুমি হঠাৎ এখানে এসে হাজির কেন হলে?’
ইহান ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল।
ফারিয়া বললো, ‘ কেন আসতে পারিনা? এটা তো আমার ও দেশ। হুম আমার জন্য বিদেশে হয়েছে কিন্তু আমার বাবার জন্ম তো এই বাংলাদেশেই হয়েছে। ‘
‘ আসতে পারবে না কখন বললাম! কিন্তু তুমি যে বাংলাদেশ পছন্দ করো না সেটা আমি জানি। কখনো এখানে আসতেই চাওনা সেটা তুমি নিজেই বলেছিলে।’
‘ হ্যা বলেছিলাম। কারণ তখন এই বাংলাদেশে আমার প্রিয় কেউ ছিলো না। তাই এখানে আসার কোন রকম ইচ্ছা ও ছিলো না। কিন্তু এখন আমার অত্যন্ত প্রিয় মানুষ এইখানে বসবাস করে তার জন্য তো চলে এলাম।’
ফারিয়ার কথা ইহানে পছন্দ হলো না। ও বিরক্ত হয়ে বলল,,’ তোমার আসা ঠিক হয়নি। আমি তোমাকে ফোনে সব বলেছিলাম। সব শুনে ও কেন এলে। জোর করে ভালোবাসা হয় না আমি তোমাকে বলেছি।’
‘ আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি ইহান।’
‘ তুমি ভালোবাসলেই তো হবে না। আমার তোমার প্রতি কোন ফিলিংস আসে। তোমাকে শুধু একজন বন্ধু হিসেবে ভালোবাসি এর থেকে বেশি না।’
ফারিয়া ছলছল চোখে আমার চোখের দিকে বললো,
‘ আমি কি দেখতে এতোই খারাপ? আচ্ছা তুমি যাকে ভালোবাসো সে কি অনেক বেশি সুন্দর? আমি তাকে দেখতে চাই।’
‘ এখানে সুন্দর এর প্রশ্ন হচ্ছে না ফারিয়া। ভালোবাসা সুন্দর দেখে হয় না!’
‘ তুমি বলো কে বেশি সুন্দর? আচ্ছা না বললে মেয়ে টাকে আমাকে দেখাও আমি দেখবো তাকে। আমার এতো দিনের এতো ভালোবাসা ও তোমার মনে জায়গা করতে পারলো না।আর এইখানে এসে কিছুদিনে সে তোমার মনের রানী হয়ে গেলো।’
‘ তুমি তাকে উল্টা পাল্টা কিছু বলবে না তো?’
‘ না বলবো না।’
আমি অনেক ক্ষন ধরে ইহান ভাইয়ের দরজার আড়ালে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কান খাড়া করে আছি কিন্তু ভেতরে কি কথা হচ্ছে আমার কান আবদ্ধি পৌঁছাচ্ছে না। ইহান ভাই আর ফারিয়া মেয়েটাকে দুপুরের খাবার খেয়েই রুমে ঢুকে কি যেন গুজুরফুজুর করেই যাচ্ছে। আর আমি সেই থেকে এই ভাবে দাড়িয়ে আছি। ভেতরে কি কথা হচ্ছে জানার জন্য। ভাইয়া যদি তখন না বলতো এই ফারিয়া আমার ইহান ভাইকে ভালোবাসে তাহলে হয়তো এটা আমি করতাম না। কিন্তু ভালোবাসে এটা জানার পর থেকে তাদের এক সাথে দেখলেই আমার গাঁ জ্বলে উঠে। মনে হয় এই বুঝি ফারিয়া আমার কাজ থেকে ভাইয়া কে কেড়ে নিলো।
আমি চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে আবার দরজার কান পাতলাম। কথা স্পষ্ট না কিন্তু বুঝা যাচ্ছে এরা কথা বলছে।
‘ঊষা ভেতরে আয় তো।’
আচমকা ভাইয়া ডাক শুনে আমি চমকে উঠলাম। মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ালাম। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপতে লাগলো। ভাইয়া ডাকছে কেন? তিনি কী বুঝে গেছে আমি তার ঘরে আড়ি পাতছিলাম। হায় আল্লাহ এখন আমার কি হবে?
ভাইয়া আবার ডাকতেই আমি কাঁপা হাতে দরজা খুললাম।
আর চোখ মেলে সামনে তাকালাম। বিছানায় বসে আছে ফারিয়া আর ভাইয়া সোফায়। দু’জনে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভয়ার্ত চোখে এক নজর ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। তিনি শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে। আমি ধীর পায়ে মাথা নিচু করে ভেতরে গেলাম।
ভাই এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে টেনে ফারিয়ার সামনে এনে দাড় করালো। আমি কিছু বুঝতে পারছি না। মনে মনে ভাবছি ভাইয়া কি আমাকে বকবে? এসবের জন্য। ফারিয়া ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ভাইয়া এক হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,,
‘এই হলো আমার ভালোবাসা। আমার জীবন। সব কিছু।’
ভাইয়ার কথা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। আমি নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম মাথা নিচু করে। এখন বিস্মিত হয়ে মাথা তুলে ভাইয়ার চোখের দিকে তাকালাম।
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে গভীর ভাবে। আমি অবাক হয়ে সামনে ফারিয়ার দিকে তাকালাম। তিনি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে চোখ বড়বড় করে। তার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না মুখ দেখে স্পষ্ট। আমি ঢোক গিলে তাকিয়ে আছি।
এবার চরম বিষ্ময় নিয়ে ফারিয়া মুখ খুললো, ‘ হোয়াট? তুই বাড়ির কাজের মেয়ে কে ভালোবাসিস?’
আমি শুকনো ঢোক গিলে ভাইয়ার দিকে তা কি তাকালাম। তিনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো,
‘মানে! কি বলছো কে কাজের লোক?’
ফারিয়া আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বললো,’ কেন? ওই তো কাজের মেয়ে? ‘
কাজের মেয়ে শুনে রাগে ভাইয়ার কপালের রগ ফুলে উঠে। দাঁত চেপে বললো,
‘ কে বলেছে ঊষা কাজের লোক।’
‘ ও নিজেই তো বলেছে?’
‘ কিহ ও নিজের মুখে বলেছে?’
আমি বোকা চোখে তাকিয়ে আছি। এসব কথা বলছি আমি নিজেকে কখন কাজের মেয়ে বললাম। মিথ্যা কেন বলছে?
ফারিয়া বললো, ‘ না ও নিজের মুখে বলেনি কিন্তু আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। ও তো স্বীকার করেছে?’
ভাইয়া আমার দিকে গরম চোখে তাকিয়ে বললো,
‘ তুই নিজেকে কাজের মেয়ে বলে স্বীকার করেছি ?’
আমি ঢোক গিলে বললাম, ‘ কই না তো। আমি তো কিছু বলিনি উনি জিগ্গেস করেছে আমি চুপ ছিলাম।’
ফারিয়া বললো, ‘ হুম তোমার চুপ থাকা আমি সম্মতি ভেবেছিলাম। ইহান তুই এই মেয়েকে ভালোবাসিস?’
ভাইয়া আমার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো, ‘ হুম। ‘
ফারিয়া কিছু বললো না শান্ত চোখে তাকিয়ে থেকে বললো, ‘ গুড। আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি গেলাম।’
বলেই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো আর সোজা হেঁটে বেরিয়ে গেলো। আমি ঘাড় বাঁকিয়ে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ফারিয়া দরজার কাছে গিয়ে ফিরে তাকালো আমি তাকিয়ে ছিলাম বিধায় চোখে চোখ পরলো তার দৃষ্টি গভীর ছিলো। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম উনি আড়াল হতেই।
ভাইয়া ফারিয়া যেতেই আমার দিকে রক্ত চোখে তাকিয়ে বললো,
‘ তুই নিজেকে কাজের মেয়ে বলে স্বীকার করেছিস?’
আমি আঁতকে উঠে ছুটাছুটির চেষ্টা করছি। ভাইয়া শক্ত করে আমার কোমর চেপে ধরেছে ব্যাথা পাচ্ছি। আমি হাত দিয়ে ছুটানোর চেষ্টা করলে ভাইয়া আরেক হাতে আমার হাত ধরে বলে,
‘ এ্যান্সার মি।’
আমি ব্যাথা কুঁকড়ে ওঠে বললাম, ‘ আমি স্বীকার করিনি সত্যি বিশ্বাস করেন। উনি জিগ্গেস করেছিলো আমি কিছুই বলিনি।’
‘ কেন কিছু বলিস নি?’
‘আমি কি বলতাম?’
‘ তুই এই বাড়ির বউ এটা বলতি?’
আমি অবাক চোখে তাকালাম। ভাইয়া আবার বললো,
‘ তোকে কেউ কাজের মেয়ে বললো আর তুই সুন্দর মেনে নিলি।মুখের উপর কিছু বলতে পারলি না!’
আমি চুপ করে আমি আমার চোখে জল চলে এসেছে। আমি ব্যাথা পাচ্ছি খুব ভাইয়া আমার চোখে জল দেখে ফট করেই ছেড়ে দিলো।
রেগে বিছানায় বসলো।
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি।
‘আমার সামনে থেকে যা। রাগে কি করতে মন চাইছে তোকে বুঝাতে চাইছি না।’
আমি ঢোক গিলে ভয়ার্ত কন্ঠে বললাম, ‘ সরি।’
ভাইয়া আমাকে টেনে নিজের কোলের উপর বসিয়ে দিলো। আমি আঁতকে উঠে যেতে চাইলাম ভাইয়া শক্ত করে চেপে ধরে আছে। হুট করেই আমার ঘাড়ে কামড়ে ধরলো আমি চোখ খিচে মৃদু চিৎকার করে উঠলাম।
ভাইয়া বললো, ‘ আমি কতোটা লজ্জিত হলাম তুমি বুঝতে পারবি না। যাকে আমি এতো ভালোবাসি মনের মধ্যে জায়গা দিয়েছে তাকে কেউ এমন কাজের লোক বলে গেলো। আর তুই সেট বলার সাহস দিয়েছিস। নেক্সট এমন করলে আমি তোর সাথে কি করবো কল্পনাও করতে পারবি না। নিজের সম্মান রক্ষা করতে শেখ না হলে সবাই এইভাবে তুচ্ছ করবে তোকে।’
বলেই আমাকে টেনে দরজার বাইরে বের করে নিজে দরজা আটকে বসে রইলো।
#চলবে