এক_চিলতে_রোদ Part_45
#Writer_Nondini_Nila
ভাইয়া শুকনো মুখটার দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়াকে ক্লান্ত লাগছে খুব। তার এক হাত জরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা মর্ডান মেয়ে। যার পরনে ছোট পোশাক। আর কোঁকড়ানো চুল গুলো কাঁধ পর্যন্ত খুলে রেখেছে। চুল কালারিং করা। ভাইয়া চাচির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আম্মু ও হচ্ছে ফারিয়া। আর ফ্রেন্ড কিছুদিন এখানে থাকবে।’
ইলিনা বেগম ফারিয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। পুতুল এর সুন্দর মেয়েটা। ওর দিকে চোখ ছোট করে তাকিয়ে আছে। ইহান কথা শেষ করতেই হাই বললো। ইলিনা বেগম বেগম ছেলের দিকে স্মিত হেসে বললো,
‘ এইটা কোন ফ্রেন্ড? আগে তো দেখি নি?’
‘আম্মু ও দেশের বাইরে থেকে এসেছে।’
‘ তুই যেখানে থাকতি সেখানে থেকে।’
ভাইয়া মাথা নাড়ায়। ফারিয়ার মেয়েটাকে বাহু থেকে ছাড়িয়ে নেয় ভাইয়া। আমি পাশেই দাঁড়িয়ে তাকিয়ে ছিলাম। ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এসে বললো,
‘ ঊষা ফারিয়াকে গেস্ট রুমে নিয়ে যা।’
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। ভাইয়া গটগট করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল। আমি ফারিয়া মেয়েটাকে বলে গেস্ট রুমে নিয়ে গেলাম। তিনি ইংরেজিতে কথা বলছে। আমার নাম জিজ্ঞেস করলো কে আমি জিজ্ঞেস করলো। আমি নাম বললাম কে বলতে যাব তখন তিনি ইংরেজিতে বললো। আমি কাজের লোক নাকি। আমি চমকে তাকালাম কি বলবো মেয়েটা আমার কথার তোয়াক্কা না করে বললো আমি ফ্রেশ হয়ে ঘুমাবো কেউ ডিস্টার্ব করো না।
আমি নিঃশব্দে বেরিয়ে এলাম। মুখ কালো করে চাচির সামনে দিয়ে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছি। চাচি মুখে কেমন হাসি রেখে তাকিয়ে আছে। আমি তার ওমন হাসির কারণ বুঝতে পারলাম না। রান্নাঘরে গিয়ে কফি করে ভাইয়ার রুমে গেলাম। ভাইয়া শুধু ট্রাউজার পরে খালি গায়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে তুললো। আমি কফি নিয়ে ভাইয়াকে দিলাম ভাইয়া কফিতে চুমুক দিলো দাঁড়িয়েই। কফিতে চুমুক দিতে দিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছি।
আজ ভাইকে কতো কিছু বলতে চাইছিলাম। কতো আশা ছিলো দেখা মাত্র জরিয়ে ধরবো। কিন্তু ওই ফারিয়ার জন্য সব গোলমাল হয়ে গেলো। ভাইয়ার হাত কেমন করে জরিয়ে ধরে ছিলো। আমার একটুও ভালো লাগে নি।
‘এমন গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’
ভাইয়ার কথায় আমি মাথা তুলে তাকালাম।
ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি কিছু বলছি না।
ভাইয়া আরেক চুমুক দিয়ে কাপে জিজ্ঞেস করলো,,
‘ আমাকে দেখে কোথায় ভেবেছিলাম খুশি হবি তা না মুখ গোমড়া করে রেখেছিস? আচ্ছা আমাকে দেখে কি তুই খুশি হসনি? তার মানে বাসার বাইরেই থাকলেই তোর ভালো লাগে।’
আমি স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছি বোকা চোখে। আমার মন খারাপ কি জন্য আর উনি কি ভাবছে? হায় আল্লাহ।
ভাইয়া আমার তাকিয়ে থাকা দেখে কাপ ড্রেসিংটেবিলের উপর রেখে আমাকে কাছে টেনে কোমড় জড়িয়ে ধরলো আমি নির্বিকার ভাবে দাড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার কষ্ট কেন হচ্ছে ভাইয়া কেন বুঝছে না?
ভাইয়া আমার মুখ উঁচু করে তুলে ধরে। আর বলে,
‘ ফারিয়ার জন্য মন খারাপ করেছিস?’
আমি চমকে উঠলাম। অবাক হয়ে ভাইয়ার চোখের দিকে তাকালাম। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি তো শুধু একটা কারণ এ মন খারাপ করিনি।অনেক কারনে করেছি কাল আসার কথা ছিলো আজ এলো কেন?
আমি এবার মুখ ছোট করে বললাম,,
‘ আপনার তো কাল আসার কথা ছিলো। আর ওই মেয়ে আপনাকে ওমন করে ধরে ছিলো কেন?’
‘কাল আসতে পারিনি ওর জন্য ই ও কাল এসেছে রাতে ও কে নিয়ে আসতে হয়েছে ইয়ারফোর্ট থেকে। আর ও আমাকে ভালোবাসে তাই ধরে ছিলো।’
আমি বিস্মিত হয়ে তাকালাম। কি বলছে ওই মেয়ে ভাইয়াকে ভালোবাসে? আমি বড় চোখ করে তাকিয়ে বললাম,
‘ কিহ!’
‘আচ্ছা সব পরে বলবো। এখন আমি খুব ক্লান্ত রে ঊষা। আমি একটু ঘুমাবো। আমার ঊষাকে জরিয়ে না করবি না প্লিজ।’
আমি কিছু বলার ভাষা পেলাম না। খালি কানে বাজছে ও আমাকে ভালোবাসে। এটাই বাজছে।ভাইয়া আমার নাকের ডগায় চুমু খেয়ে বসলো আমি চমকে উঠলাম। ভাইয়া ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে টেনে বিছানার নিয়ে এলো।
আমি বাধা দিয়ে বললাম,
‘ আমি ঘুমাবো না।’
‘ তোর ঘুমাতে হবে না আমি ঘুমাবো।’
আমি বললাম, ‘ ওই মেয়ে আপনাকে ভালোবাসে?’
ভাইয়া বললো, ‘ হুম।’
‘ আপনিও কি …
‘ পরে সব বলবো বললাম তো। এখন মাথা ব্যাথা এতো কথা বলিস না।’
বলেই ভাইয়া খাটে শুয়ে আমাকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে জরিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
আমি ঘুমাতে পারছি না। ওই মেয়ে ভাইয়াকে ভালোবাসে তাকে ভাইয়া বাসায় নিয়ে এলো কেন ? আবার চাচি কে বললো ফ্রেন্ড।ভাইয়া তো আমাকে ভালোবাসি বলে তাহলে ওই ফারিয়াকে… এই ফারিয়া নামটা আগেও শুনেছি কোথায় শুনেছি মনে পরছে না কেন? মনে করার জন্য ছটফট করছি তখন ভাইয়া চোখ মেললো আর আমাকে বুকে থেকে উঠিয়ে গালে হাত দিয়ে বললো,
‘ এতো টেনশন করিস না। আমি শুধু তোকেই ভালোবাসি। আর তোকেই ভালোবাসবো।’
বলেই একটা কাজ করে বসলো ভাইয়া যা এর আগে কখনো করেনি। আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। ভাইয়া আমার ঠোঁটে কিস করলো। আর জরিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। আমি মূহুর্তে কি হয়ে গেলো ভেবে থমকে গেলাম। অনেকটা সময় লাগলো আমার চমকানো কাটাতে। আমি ভাইয়ার বুকের সাথে লেপ্টে আছি। ভাইয়া বোধহয় ঘুমিয়ে গেছে তার নিশ্বাস ঘন হয়েছে। আমি এটা ভেবে শান্তি পাচ্ছি ভাইয়া শুধু আমাকেই ভালোবাসে।
মনে একটা আনন্দের ঢেউ বয়ে গেলো আমার। ফারিয়া নাম আমি ভাইয়ার মুখে শুনেছিলাম। ভাইয়া তো ফোনে কথা বলতো এই নামে। হুম আমি যাকে ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড ভাবতাম। এই সেই মেয়ে। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুম ভাঙল যখন আমি ভাইয়ার সাথেই মিশেই আছি। ভাইয়াকে ডেকে নিজে উঠে পরলাম। ভাইয়া আমাকে ছেড়েই ঘুম। আমি এক নজর তাকিয়ে বাইরে চলে এলাম। বাইরে এসে ওই ফারিয়াকে খাবার টেবিলে দেখলাম। খাচ্ছে আমি গিয়ে পাশে দাঁড়ালাম। আমার দিকে লতা তাকিয়ে বললো,
‘ এইটারে কতো খাবার দিলাম কিন্তু উনি ইহান ভাইজান রে ছাড়া খাবে না। তিনবার আমাকে ডাকতে পাঠিয়েছে। কিন্তু ভাইজান তো দরজা আটকে আছে কি করি? ‘
আমি হকচকিয়ে গেলাম। দরজা আটকানো না থাকলে লতা আমাকে ভাইয়ের সাথে দেখে নিতো সর্বনাশ।
আমি বললাম,
‘খাবে না কেন?’
‘একা খাবেনা।’
আমার দিকে ফারিয়া তাকিয়ে বললো, হেই ঊষা ইহান কে ডেকে আনো প্লিজ। আর না হলে ওর রুম আমাকে দেখাও আমি ডেকে আনছি।’
আমার একটু এই মেয়ের কথা বার্তা ভালো লাগছে না। আসলে একেই আমার ভালোয় লাগছে না। লাগবে কি করে এ যে আমার ইহান ভাইকে ভালোবাসে এটা জানার পর কি করে একে আমি সহ্য করতে পারবো কিন্তু কি বলার সাহস আমার নাই। মনে মনে হাজার টা গালি দিয়ে বললাম,
‘ ভাইয়া এখন ঘুমাবে। আপনি খেয়ে নিন ভাই পরে খাবে।’
ফারিয়া বললো, ‘ ভাই বলছো কেন? মালিককে স্যার বলবা। আর ইহান আমার সাথে আগে খাবে পরে ঘুম।’
বলেই উঠে দাঁড়ালো। আর বললো,
‘নিয়ে চলো ওর কাছে আমাকে।’
ভাইয়া বিছানায় খালি গায়ে শুয়ে আছে আমি সেখানে কি করে এটাকে নিয়ে যাবো।
কিন্তু এ তো নাছোড় বান্দা। তখন চাচির আগমন ঘটলো।
তিনি সুন্দর হাসি দিয়ে বললো,,
‘ ঊষা নিয়ে যা ইহানের রুমে। ‘
‘কিন্তু এখন তো ভাইয়া ঘুমাচ্ছে!’
‘ তো কি ওর ফ্রেন্ড ওকে ডাকছে ও কি না আসবে নাকি। আর ওকে নিয়ে যা বলছি!’
চাচির কথার প্রেক্ষিতে কিছু বলতে পারলাম না। আমি ফারিয়া মেয়েটাকে নিয়ে ভাইয়ার রুমে এলাম। ভাইয়া এখন বুকে ভড় করে ঘুমিয়ে আছে। তার উন্মুক্ত ফর্সা পিঠ দেখা যাচ্ছে। আমি সেদিকে থেকে চোখ সরিয়ে। ফারিয়া মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি হা করে তাকিয়ে আছে। আর গটগট করে ভেতরে চলে গেলো।
আমি যেতে গেলে বলে,
‘তুমি চলে যাও।ওকে নিয়ে আমি আসছি।’
আমি থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। আমি দরজার আড়ালে লুকিয়ে উঁকি দিচ্ছে ফারিয়া শয়তান মেয়ে ভাইয়া পাশে বসে হা করে মাথা বাকিয়ে ভাইয়ার মুখের দিকে পিঠের দিকে তাকিয়ে আছে।
হুট করেই নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো ভাইয়ার মুখের দিকে আমি বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি। আর সহ্য করতে না পেরে দরজা শব্দ করে খুলে ভেতরে গিয়ে বললাম,
‘ তারাতাড়ি আসুন খাবার ঠান্ডা হয়ে গেল তো।’
আমি চেঁচিয়ে বললাম। যাতে ভাইয়া জেগে উঠে। তাই হলো সাথে ফারিয়া ভয়ে দাঁড়িয়ে পরেছি।ভাইয়া আড়মোর ভেঙে উঠে বসেছে। এখন চোখ কচলাতে কচলাতে বললো,
‘ঊষা তোকে বললাম তো আমি ঘুমাবো। তাহলে এমন চেঁচিয়ে আমাকে ডাকার মানে কি?’
আমি ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,’ আমি বাকি না তো। আপনার ফ্রেন্ড আপনাকে ছাড়া খাবে না তাই উনি এসেছে ডাকতে।’
ভাইয়া ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তুমি একাই খেতে পারতে আমি পরে খাবো ঠিক করে ছিলাম। ক্লান্ত লাগছে আমার।’
‘ ইহান আমার একা ভালো লাগছে না। তুমি আসো আমার সাথে!’
#চলবে