হৃদয়ের সুখ আপনি পর্ব ১৩

0
480

#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-১৩
#Nishi_khatun

আমার বিষাক্ত জীবনটা যে, সেদিন রাতের পর বদলে যাবে আমি বুঝতে-ই পারি নাই। পরেরদিন সকালে স্কুলে যাবার জন্য গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
তখন রাতের সেই আপনি সামনে এসে দাঁড়ায়।
মামা আহীদ কে দেখে বলে,”আরে আহীদ বাবা যে!
এদিকে কোথায় যাচ্ছ?”

আহীদ মামা কে উদ্দেশ্য করে সালাম দিয়ে বলল-
“আঙ্কল আমি এপথে কলেজে যাচ্ছি। কিছুদিন আগে স্বপ্ন পূরণের জন্য যেখানে পরিক্ষা দিয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ্‌ সে কলেজে চান্স পেয়েছি। ”

তখন মামা তাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আলহামদুলিল্লাহ্‌ এ তো খুশির খবর। তোমার কাছে মিষ্টি পাওনা রইলো কিন্তু! ”

-জি আঙ্কল! লেখাপড়া কমপ্লিট করে যেদিন সরকারি ভাবে কালো কোর্ট গায়ে জড়াতে পারব, সেদিন অবশ্যই আপনাকে এসে মিষ্টি মুখ করিয়ে যাব।

আমি তাদের দু’জনের কথার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। তবে এটুকু বুঝেছি উনি আমার থেকে অনেক বড়।
আর বড় কোন কলেজ অথবা ভার্সিটি তে পড়েন।

হঠাৎ কথার মাঝে মামা আমাকে দেখিয়ে বলে,

-“আহীদ আমার ভাগ্নি রিমশা, দশম শ্রেণীর ছাত্রী সে।
তুমি তো এখন থেকে রেগুলার এ পথে যাবে। যদি একটু কষ্ট করে মেয়েটা কে তোমার সাথে নিয়ে যাওয়া আসা করতে তাহলে বাবা আমার বড় উপকার হত। দেশের যে অবস্থা সেখানে মেয়েটা কে যার তার সাথে যেতে দিতে পারি না। এতোদিন ধরে আমি এসব করেছি। তবে বেশ কিছুদিন শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। তুমি যদি আমার এই উপকার করতে তাহলে খুব উপকৃত হতাম।”

আহীদ বলে,” আপনি যে বিশ্বাস করে আপনার ভাগ্নির দায়িত্ব আমাকে দিতে চাচ্ছেন এটাই অনেক বড় বেপার আঙ্কল। ”

মামা বলে,”তোমার মত ছেলের উপর চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায় বুঝলে বাবা। এখন দেখো তুমি দায়িত্ব নিবে কি না ”

আহীদ বলে,”জি আমার কোন সমস্যা হবে না। তবে যে যাবে তার মতামত একটু জানবেন না আঙ্কেল?”

মামা রিমশার দিকে তাকাতে বলে,”আমার কোন সমস্যা নেই মামা। আপনার বিশ্বাসের উপর আমার ভরসা আছে।
সব পুরুষ যে একরকম হবে এমনটা নয়।”

এরপর মামার থেকে বিদায় নিয়ে আমি
আহীদের সাথে রিক্সা তে উঠে পড়ে।

এই প্রথম বার কোন অপরিচিত পর পুরুষের পাশে বসেছি।
এক রাশ ভয়, লজ্জা, আর জড়তা এসে আমাকে জেঁকে ধরেছে। আমি তার থেকে যতোটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে বসতে চেষ্টা করছিলাম।

উনি হয়তো আমার অবস্থা সম্পর্কে অবগত হয়।
তখন উনি বলেন,

“আমি বাঘ বা ভাল্লুক কোনটাই না। তা-ই আমাদের দূরে বসতে যেয়ে রিক্সা থেকে নিচে পড়ে আমার মানসম্মান নষ্ট করে দিও না । ”

আমি তখন প্রতিউত্তরে বলি,

“মামার কথা মতো আপনার সাথে এসেছি তার মানে এই নয় যে একদম আপনার শরীরের সাথে লেপ্টে থাকবো। যাতায়াত করতে হবে তবে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব রেখে। যেনো মানুষেরা খারাপ কিছু না মনে করে।”

আহীদ ভ্রূ কুঁচকে আমার দিকে দৃষ্টিপাত করে বলে,”এইটুকু মেয়ের মুখে কত বড়বড় কথা ভাবা যায়?”

-আপনি আমার সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
যখন জানবেন তখন অবাক হয়ে যাবেন।

আহীদ বলে,

“এইটুকু পিচ্চি সম্পর্কে এতো কিছু জানার ইচ্ছা আমার নাই।’

সেখানে রিমশা একটু অপমানিত বোধ করে। তা-ই সে আর কোন কথায় বলে না।
দেখতে দেখে রিমশা স্কুল চলে আসে।
আহীদ রিমশা কে নামিয়ে দিয়ে নিজের গন্তব্যের পথে রওনা করে।

রিমশা স্কুলের গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই একটা ইন্টার পড়ুয়া ছেলে এসে রিমশা’র সামনে হাটুগেড়ে বসে প্রপোজ করে।

রিমশা ভ্রু কুঁচকে বলে,”এসবের মানে কি?”

ছেলেটা বলে,”আমার তোমাকে ভালো লেগেছে!
তোমার সাথে একটা সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছি। ”

রিমশা হুট করে ছেলেটা’র গালে থাপ্পড় দিয়ে বসে।

ছেলেটা রেগে চিৎকার দিয়ে বলে,

“তোমার সাহস তো কম না। তুমি আমাকে থাপ্পড় দিলে কেনো?”

রিমশা বলে,
“কোন সাহসে আমাকে প্রপোজ করতে আসেন?
আমি ছোট দেখে আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে আপনার প্রতি আসক্ত করবেন? তারপর সুযোগ বুঝে আমাকে আপনার চাহিদা মাফিক শারীরিক ভোগের বস্তুতে পরিণত করবেন?
কি মনে হয় ছোট বলে কিচ্ছু বুঝবো না? আমি বাকি মেয়েদের মত অবলা না। আপনার আমার কোন ভবিষ্যৎ নেই। না দু বছর পর বিয়ে হবে এর কোন গ্যারান্টি। তা-ই এসব হারাম কাজ হতে নিজে বিরত থাকুক অন্যকে বিরত রাখুক। নিজে ঠিকঠাক মতো আমাকে ভোগ করবেন। কিন্তু বিয়ে আর করতে পারবেন না। তা-ই যে সম্পর্কে কোন পবিত্রতা নেই সে সম্পর্কে রিমশা যায় না।”

ছেলেটা বলে,”এতো বড় বড় ডায়লগ সবাই দিতে পারে।
দু দিন পর যখন নিজে কারো প্রতি আসত্ত হবে। তখন নিজেই তার কাছে সবটা বিলিয়ে দিবে। অযথা এসব নাটকের কোন মানে হয় না।”

রিমশা বলে,”আমি রেগুলার নামাজ কায়েম করি। আল্লাহ কে ভালোবাসি। আর যে আল্লাহ কে ভালোবাসে তার এসবের দরকার হয় না। হ্যা আমি তার প্রতি আসক্ত হব যার সাথে আমার বিয়ে হবে। তাকে নিয়ে মৃত্যুর আগপর্যন্ত সুখে থাকবো। সে যদি খারাপ হয় তাকে ঘাঁড়ধরে সোজা পথে আনবো তবুও তাকে কোনদিন ছেড়ে যাব না। আর সে যদি একান্ত খুব খারাপ ব্যক্তি হয় তাহলে রাতে গলাটিপে মেরে দিব।”

ছেলেটা বুঝতে পারে সে এক উন্মাদ পাগলের কাছে এসেছে প্রেমের প্রস্তাব নিয়ে। তা-ই তো সে আর কোন কথা না বাড়িয়ে দ্রুত প্রস্থান করে।

তখন পেছন থেকে আহীদ বলে ওঠে,”বাব্বাহ এই টুকু মেয়ের দেখছি স্বামী নিয়ে সংসারের স্বপ্ন দেখা কমপ্লিট। তা তোমার মামাকে বলবো না কি ভাগ্নির জামাই লাগবে বিয়ে দিয়ে দিতে?”

রিমশা পেছনে ফিরে বলে,”আপনি এখানে কেনো? কি দরকার আপনার? আর কখন আসলেন আপনি?”

আহীদ বলে,”ছেলেটা যখন প্রপোজ করছিল তখন এসেছি। ওহ হ্যা তুমি রিক্সাতে টিভিন বক্সটা ভুলে ফেলে রেখে আসছিলে তা-ই দিতে এসে তোমার সম্পর্কে অনেককিছু জানতে পারলাম। ”

আমার হাতে টিভিন বক্সটা ধরিয়ে দিয়ে উনি দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।

আমি কেনো জানি তার উপস্থিতিতে খুব অস্বস্তি বোধ করছিলাম। আল্লাহ জানে লোকটা আমাাকে কি না কি ভেবে বসে আছে। হয়তো আমাকে উচড়ে পাকা মেয়ে ভাবছে। তবে তিনি আমার সম্পর্কে কিছুই জানে না। থাক তাকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে আমার কোন লাভ নেই।

সব কিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ক্লাসে মনোযোগ দিলাম।

এদিকে স্কুল ছুটির পর বাড়িতে ফেরার পথে দেখে আহীদ স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

রিমশা আহীদ কে দেখে মাথা নিচু করে রাখে। আহীদ বলে,”এভাবে মাথা নিচু করে রাখলে হবে? সব সময় মাথা উঁচু করে চলতে হয়। একমাত্র আল্লাহ সামনে ছাড়া অন্যকারো সামনে মাথা নত করবে না।”

আহীদের মুখে এমন কথা শুতে তরিত গতিতে তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে সে মুচকি হাসছে।

এরপর দু’জনে নিরবতা পালন করে সামনের পথে হাঁটতে শুরু করে। কিছুটা দূরে আসার পর আহীদ রিক্সায় ওঠে। বাড়ির সামনে এসে রিমশা কে নামিয়ে দিয়ে সে তার বাড়িতে যেয়ে নামে।

রিমশা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেই আগে স্কুলে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা তার মামীর কাছে বলতে শুরু করে। মামী রিমশা কে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমার আম্মাজান কোন ভুল করে নাই। ঐ ছেলেকে উচিৎ জবাব দিয়েছো। আজকাল এসব রিলেশন করে ছেলে মেয়েরা সমাজটা কে একদম নষ্ট করে দিচ্ছে। বিয়ের যোগ্যতা অর্জন করার পূর্বে তারা হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। সাথে সামনে থাকা ব্যক্তিকে হারাম কাজ করতে আগ্রহী করে। আমি মনে করি তোমার বয়সি সকল মেয়েকে সঠিকভাবে সব কিছু তার পরিবারে বলা উচিত। যাতে করে তার তাদের এই উঠতি বয়সের আবেগে ভেসে হারাম সম্পর্কে জড়াবে না। তা-ই তো আমি নিজে তোমার সামনে সবটা ক্লিয়ার করে বলেছি। যাতে তুমি তোমার আবেগের বসে ভুল না করে বসো। তুমি তোমার জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারো।”

এরপর মামীর কাছ থেকে উঠে নিজের রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে হালকা কিছু খাবার খেয়ে লেখাপড়া করতে শুরু করি।

এইভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায়। আমার প্রথম সাময়িক পরিক্ষা শেষ। এখন সামনে টেস্ট পরিক্ষা।

সেদিনের পর থেকে আমি রোজ আহীদের সাথে স্কুলে যাতায়াত করি। তবে উনি কখনোই আমাকে পারসোনাল কোন কথা জিজ্ঞাস করে না। সে এমনিতে আমাকে নানারকম উপদেশ মূলক কথা বলতে থাকে। রাতের বেলা আমার কোন পড়াতে সমস্যা হলে সোজা বারান্দায় যেয়ে তাকে বলি। সে আমাকে সুন্দর ভাবে বুঝি দেয়। এভাবে মনের মধ্যে তার জন্য প্রচুর সম্মান তৈরি হতে শুরু করে। সমাজের সবাই যদি ভোগের নজরে না দেখে একটু সম্মানের দৃষ্টিতে দেখত তাহলে কতো সুন্দর না হতো আমাদের চারপাশের পরিবেশ।




চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here