#হৃদয়ের এপিঠ ওপিঠ
পর্ব ঃ- ০৩
~আঁখি দেব তৃপ্তি
ইরা,
“সুজয় শোনোনা”
“কী?”
“পাশের বাসার আন্টির কাছ থেকে কাঁচামরিচ নিতে গিয়েছিলাম। আঙ্কেল খবরের কাগজ পড়ছিলো। আমাকে একটা বিজ্ঞাপন দেখালো, নেহাল চৌধুরী নামের একজন ব্যক্তি উনার স্ত্রীর দেখাশোনা করার জন্য একজন মহিলা চান। ”
“তুমি কী কারো বাসায় চাকরি করতে চাও ইরা!”
“তাছাড়া আর কিছু আছে কী আমার জন্য? এভাবে আর কতোদিন সুজয়? দুদিন পরতো না খেয়ে থাকতে হবে।”
“কিন্তু তাও..”
“কোনো কিন্তু না সুজয়, আমি ইন্টারভিউ দিতে যাব। যদি চাকরিটা পেয়ে যাই তাহলে করবো।”
কথাটা শোনার পর সুজয় একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে, মন খারাপ করে আমার সামনে থেকে চলে গেল। কীবা বলার আছে ওর। সংসারের যা অবস্থা নিজে তো কিছু করতে পারছে না। আমি না হয় সুযোগ পেলে করবো। পেটের ভাত যেখানে জোটানো কষ্টকর সেখানে সম্মান অতি তুচ্ছ জিনিস। ক্ষিদের জালায় মানুষ কিনা করে। কাল সকাল ১০ টায় ইন্টারভিউ। নিশ্চয়ই খুব নিচু শ্রেণির কাজ হবে না তাহলে এভাবে বিজ্ঞাপন দেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল! তার উপর শিক্ষিতও হতে হবে বলেছে।
সুজয়,
এই দিনই দেখার বাকি ছিল। ইরা মানুষের বাসায় কাজ করতে চাইছে। আমি এতোই অক্ষম যে ঘরে বসে আছি কিছুই করতে পারছি না আর আমার স্ত্রী মানুষের বাসায় কাজ করবে! না ইরাকে আমি এসব কাজ করতে দিতে পারি না। বুক ফুলিয়ে ওকে কথা দিয়েছিলাম সারাজীবন রানীর মতো করে রাখবো। রানীর মতো রাখতে নাই পারি ওকে দাসী হতে দেই কী করে? না আমাকে কিছু একটা করতে হবে। লকডাউন খুলার অপেক্ষা করে লাভ হবে না। নতুন কিছু ভাবতে হবে। প্রয়োজন হলে আমি মানুষের বাসায় কাজ করবো তবুও ইরাকে করতে দিব না। আর ও কাজে চলে গেলে ইতুকে কে দেখবে? আমি তো এতোই অপদার্থ বাবা যে মেয়েকে নিজের কাছে বেশীক্ষণ রাখতেই পারি না। মেয়েটা শুধু মা মা করে কান্না করে।
তিয়া,
সকালে খবরের কাগজ পড়া আমার অভ্যাস। কাগজের এককোণে একটি বিজ্ঞাপন দেখে অবাক হলাম। নেহাল আমার দেখাশোনার জন্য লোক চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছে! আমি কী অসুস্থ নাকি পাগল যে আমার দেখাশোনার জন্য লোক লাগবে! কী শুরু করেছে ও? আমার সমস্যা কী ও বুঝতে পারে না! অন্য লোক দিয়ে আমি কী করবো আমার তো ওকে প্রয়োজন। আজ ফিরুক বাসায়। কোনো কিছু বলি না বলে ও যাতা করতে শুরু করেছে। এসবের কোনো মানে হয় না।
নেহাল,
খুব ক্লান্ত লাগছে। বাসায় ফিরতে আজও দেরী হয়ে গেল কিন্তু তিয়া কোথায় ওকে দেখছিনা যে!
তিয়া তিয়া…
অবশেষে ছাদে ওকে আবিষ্কার করা গেল।
“কী ব্যাপার এতোক্ষণ ধরে ডাকছি শুনতে পাচ্ছো না?”
তিয়া কোনো জবাব দিল না।
“কী হলো তিয়া।”
“কিছুনা বলো কী বলবে।”- আস্তে আস্তে বললো তিয়া।
” ক্ষিদে পেয়েছে খেতে দাও।”
“কেন আজ বাইরে খাওয়া হলো না?”
“রোজ রোজ আমি বাইরে খাই নাকি?”
“টেবিলে সব রাখা আছে। যা ভালো লাগে নিয়ে খেয়ে নাও।”
“তুমি খেয়েছো?”
“না।”
“কেন?”
“ক্ষিদে নেই।”
“কী শুরু করেছো তুমি বলো তো?”
“আমি কী শুরু করবো, শুরু তো তুমি করেছো।”
“আমি কী করলাম।”
“কীসের বিজ্ঞাপন দিয়েছো কাগজে?”
“ও হ্যা, তোমাকে তো বলাই হয়নি। তোমার সাথে গল্প করার জন্য আমি তোমার মতই বয়সী কাউকে রেখে দিতে চাই।”
“তোমাকে কে বলেছে যে আমার গল্প করার লোকের প্রয়োজন? ”
“সবকিছু বলতে হয় নাকি। আমি কী বুঝতে পারিনা।”
হঠাৎ করেই তিয়া আমার কাছে চলে আসলো। এসে আমার শার্ট এর কলার চেপে ধরে বললো –
“তুমি কিচ্ছু বুঝো না নেহাল, কিচ্ছু না। আমার তোমাক্র চাই, শুধু তোমাকে।”
তিয়ার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। কীসব বলছে মেয়েটা! আমি কী ওর নই।
“কী বলছো তিয়া। আমি তো তোমারই আছি।”
“কোথায় আছো? আমাকে দেবার মতো সময় তোমার আছে?”
“বুঝতেই তো পারছো কাজের চাপ থাকে।”
“কাজ ছাড়া কী আর তোমার জীবনে কিছু নেই নেহাল?”
“পাগলামি করো না তিয়া। আবেগকে কন্ট্রোল করতে শিখো।”
“আর কতো কন্ট্রোল করবো?”
“আচ্ছা ছাড় আমায়, লকডাউন শেষ হোক আমি সময় বের করে তোমাদের নিয়ে ঘুরতে যাব।”
“এ কথা ৩ বছর থেকে শুনছি নেহাল।”
“এবার মিস হবে না।”
তিয়া এবার আমার শার্ট ছেড়ে বললো,
“আমার গল্প করার লোকের প্রয়োজন নেই।”
“থাকুক না একজন। ইচ্ছে হলে কথা বলবে নয়তো না। অন্য কাজ থাকলে করিয়ে নিও।”
“আচ্ছা।”
“কাল কিন্তু তুমি নিজে লোক সিলেক্ট করবে।”
“আচ্ছা।”