হৃদয়ের এপিঠ ওপিঠ পর্ব ঃ- ০২

0
825

#হৃদয়ের এপিঠ ওপিঠ
পর্ব ঃ- ০২
~আঁখি দেব তৃপ্তি

ইরা,

ডাল ভাত দিয়ে খেতে বাপ,মেয়ে দুজনেরই কষ্ট হচ্ছে। মেয়েতো খাবার মুখে তুলে দিতে চাইলেই মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। ওর বাবা অবশ্য চুপচাপ নতমস্তকে খেয়েই চলছে কিন্তু ভাল যে লাগছে না তা আমি খুব বুঝতে পারছি। বাসার ছাদের এক কোণায় সবজি লাগিয়েছিলাম, মালিক সেই নিয়ে কতো কথা শুনালো। শেষ পর্যন্ত গাছ তুলে ফেলতে বাধ্য হয়েছি। নিজের বাড়ি বলে যদি সুজয়ের কিছু থাকতো তাহলে সেখানে হয়তো চলে যাওয়া যেত কিন্তু সেটাও নেই। ওর বাবা মা মারা যাওয়ার পর ভিটের জায়গাটা বিক্রি করে দিয়েছে। আজকাল দিনগুলি যেভাবে পার করছি সেটাকে কী বেচে থাঁকা বলে! চাহিদা আমার বরাবরই কম ছিল। কলেজের দিনগুলিতে সুজয় যখন আমাকে সামান্য চকলেট আর ফুল উপহার দিতো আমি যে কতো খুশি হতাম তখন! কখনো দামি গিফট, ভালো রেস্টুরেন্টে খাওয়া এসব কিছুই পাওয়া হয়নি ওর কাছ থেকে। আমি নিজেও চাইনি এসব তবে স্বপ্ন দেখেছি একদিন আমরা দুজনে খুব ভালো থাকবো। সুন্দর সংসার হবে আমাদের। সংসার ঠিকই হয়েছে কিন্তু সুন্দর আর হলো কই? ছাত্রী খারাপ ছিলাম না আমি। প্রেমের চক্করে পড়ে লেখাপড়া ভালোভাবে হয়নি। তাও হয়তো চেষ্টা করলে চাকরি একটা হয়ে যেত কিন্তু বিয়ের পর বছরই ইতু চলে আসে। একা একা সংসার, বাচ্চা সামলে আর পড়াশোনাটা করা হয় নি।

সুজয়,

দিন দিন একই খাবার আর ভালো লাগছে না। জমানো টাকা ভেঙে হলেও কাল মাছ, মাংস আনবো। পরে যা হয় দেখা যাবে, যয়দিন আছে একটু ভালো কিছু খেয়ে বাঁচা ভালো। ইতুর জন্মটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে। ইরা আর পড়াশোনা করতে পারলো না৷ আজ যদি দুজনের চাকরি থাকতো তাহলে হয়তো আরেকটু বেশি টাকা জমানো যেত। প্রথম প্রথমতো ভালোই চলছিল সংসার। ভেবেছিলাম অফিসে প্রমোশন পাব কিন্তু তা আর হলো কই? বসের দূরসম্পর্কের একজন সেই প্রমোশন নিয়ে গেল।

খাবার শেষ করে বিছানায় আসতেই আবার মনটা খারাপ হয়ে গেল। কতোদিন মন ভরে ইরাকে আদর করা হয় না। আমার ইচ্ছে করে প্রায়ই কিন্তু ইরা, ওর এসব যেন এখন অসহ্য লাগে। কেন এমন করে ও! নাকি এখন আর আমায় ভালবাসেনা ও। ভালবাসবেই বা কী করে! তিক্ত অভিজ্ঞতা ছাড়া তো কিছুই আর দিতে পারলাম না।

তিয়া,

বিছানায় এসে শুয়েছি অনেকক্ষণ কিন্তু ঘুম আসছে না। পাশেই ও নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। যেদিন বাসায় থাকে ল্যাপটপ নিয়ে গভীর রাত পযন্ত বসে থাকে আর ক্লান্ত হয়ে ফিরলে সাথেসাথেই ঘুম। আমার কী মন, শরীর বলে কিছু নেই। শারিরীক, মানসিক কোনো চাহিদা নেই! ওর কী ইচ্ছে করে না আমায় আদর করতে? আমার প্রতি যেমন আসক্তিটা দিন দিন কমতে কমতে শূণ্যের কৌটায় এসে দাঁড়িয়েছে। মানসিক নাই থাক, ওর কী শারিরীক চাহিদা নেই! নাকি তা মেটানোর জন্য অন্য কেউ আছে? পুরুষ মানুষের এরকম নারী অনাসক্তির তো মানে হতে পারে না! সন্দেহের বিজ মনে কাটার মতো বিধছে! আমাকে শুধু কাজ কাজ দেখায়, অন্য দিকে হয়তো সবকিছুই ঠিক আছে। আমাকে যে করেই হোক জানতেই হবে ওর অন্য কারো সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক আছে কিনা?

বিছানা ছেড়ে উঠে ওর ল্যাপটপের কাছে গেলাম। ল্যাপটপে পাসওয়ার্ড দেওয়া। টেবিলের উপর মোবাইল ফোনটাও চার্জে দিয়ে রেখেছে। সেটা ওপেন করলাম, এটাতেও পাসওয়ার্ড লাগানো। আমি সচরাচর ওর জিনিসপত্র ঘাটাঘাটি করি না কিন্তু এখন আর ভালো সেজে বসে থাকলে চলবে না। কতো ভালো ছাত্রী ছিলাম আমি। সহজেই যেকোনো ভালো চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা আমি এখনো রাখি। কিন্তু সে আমাকে চাকরি করতে দিবে না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে বাসায় বসে থাকতে থাকতে। যদি কোনোভাবে জানতে পারি ওর অন্য কারো সাথে কোনো সম্পর্ক আছে আমি আর এ বাসায় থাকবো না। ছেলেকে নিয়ে চলে যাব যেদিকে দুচোখ যায়৷ নিজে কিছু একটা করে চালিয়ে নিব সংসার। এতো প্রাচুর্যের প্রয়োজন নেই আমার। খোলা আকাশের নিচে প্রানখুলে নিঃশ্বাস নিতে চাই আমি।

নেহাল,

ললকডাউনেও আমাকে অফিসে আসতে হয়। স্টাফ সবাই আসে না, প্রয়োজন অনুযায়ী কয়েকজন আসে। অফিসে অনেক কাজের চাপ তবুও তিয়ার কথা মনে পড়ছে। সকালে ওর দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিলো যেন কাল রাতে ও ঘুমায় নি। কেন যে পাগলামি করে মেয়েটা। ওকে আমি মাসে এতোটাকা দেই। তা দিয়ে এটা ওটা কিনতে, ঘর সাজাতে, বাগান করতে তো পারে। সময়ও কেটে যাবে এসব করতে করতে কিন্তু না ও কিছুই করবে না। ও চাইছেটা কী, যে আমি সারাক্ষণ ওর পাশে বসে থাকি? সেটা কী সম্ভব! ওর হয়তো একজন সঙ্গীর প্রয়োজন যে ওর সাথে গল্প করবে। আমি কালই ওর জন্য ওর বয়সী একটি মেয়েকে বাসায় রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিব। তাহলে হয়তো ওর আর একা একা লাগবে না। যাক একটা উপায় পাওয়া গেল, এখন এটা কাজ করলেই হয়। ম্যানেজারকে নাহয় দায়িত্বটা দিয়ে দেই। ফোন দিতে ডাকলাম ওকে।

“স্যার আমাকে ডেকেছেন?”- ম্যানাজার সাহেব।

” হুম, আমার একটা মেয়ে চাই।”

“কি স্যার?”

“না মানে, বাসার জন্য। ”

“ও আচ্ছা।”

“কেন আপনি কী ভেবেছিলেন?”

“কিছু না স্যার। কেমন মেয়ে চাই বলুন স্যার।”

” একটি শিক্ষিত মেয়ে, আমার ওয়াইফের বয়সী হলে ভালো হয়। ওর বাসায় একা একা ভালো লাগে না। একজন ভালো সঙ্গী প্রয়োজন। ”

“আচ্ছা স্যার, মেয়ে যোগার হয়ে যাবে। আমি কাগজে একটা বিজ্ঞাপন দিয়ে দিব।”

“এর জন্য কাগজে বিজ্ঞাপনের কী দরকার।”

“অবশ্যই দরকার আছে স্যার, নেহাল চৌধুরীর বাসায় লোক নিয়োগ দেওয়া হবে, ব্যাপারটা বিশাল। লাইন ধরে মেয়েরা দাঁড়াবে, ম্যাডাম একজন একজন করে ইন্টারভিউ নিবেন তারপর যাকে পছন্দ হয় রেখে দিবেন।”

“তোমার জুড়ি নেই ম্যানেজার, খুব একটা খারাপ ভাবোনি। তিয়াই বরং পছন্দ করে রাখুক। আচ্ছা যা যা করা প্রয়োজন তাই করো।”

“বেতন কতো লিখবো স্যার?”

“ওটা আপাতত লিখার প্রয়োজন নেই। পরে দেখা যাবে।”

“আচ্ছা স্যার আসি।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here