হৃদয়হরণী পর্ব ২

0
1121

#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব-২

-পেখম রান্নাঘরে আবিরের জন্য কফি বানাচ্ছে,,,,হঠাৎ পিছন থেকে অদ্বিতীয়া এসে পেখমকে সামনে ফিরিয়ে চোখের জল মুছে দিলো,,

-জানিস তো সোনা দাদাভাই একটু ঐ রকম,, আচ্ছা আমি ওর হয়ে সরি বলছি,,একটু হাস এবার,,

-তুমি সবসময় আবির দার হয়ে কথা বলো বৌমনি।আমার দিকটা তুমি দেখেও না দেখার ভান করো,,,

-কি বললি তুই আর একবার বল ,,,,

-পাখি তোর কফি কতদূর,,, আমি কি বেরিয়ে যাবো??(উপর থেকে চেঁচিয়ে বলে আবির)

-যা তোর ডাক পড়েছে,,,,বলেই অদ্বিতীয়া একটা ট্রেতে মা আর পুলকের জন্য চা নিয়ে গেল,,,আর পেখম ভয়তে ভয়তে কফি নিয়ে উপরে গেল,,,

(কিছুক্ষণ আগের ঘটনা)

-পেখম যখন বুঝতে পারলো সে কারোর বুকে লেপ্টে আছে,, সাথে সাথে মাথা তুলে দেখে সে আর কেউ না স্বয়ং তার আবির দা,,সাথে সাথেই ও দূরে সরে দাঁড়ায়,,, এই অবস্থায় সবাই প্রায় ভয় পেয়ে যায় কারণ আবির এইসব জিনিস পছন্দ করে না,,, সে শান্তি প্রিয় মানুষ,, শান্ত পরিবেশ তার সবথেকে বেশি পছন্দের,,,

-এইসব কি হচ্ছে ড্রয়িংরুমে পাখি??(পেখমকে একমাত্র পাখি বলে আবির ডাকে,,,ছোট্ট পেখমকে যখন সবাই হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসেছিল তখনই আবির ওর নাম দেয় পাখি।)

-আসলে দাদাভাই আমরা একটু,,

-অদ্বিতীয়ার কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়েই আবির বলে ওঠে “তোর নাম কি পাখি ?? তীয়া ভুলে যাসনা আমি প্রশ্নটা কাকে করেছি??

-সরি দাদাভাই,,

-কি হল পাখি উত্তর দাও(পেখমকে তুমি করে তখনই সম্বোধন করে আবির যখন সে খুব রেগে যায় আর যখন তার মুড ভালো থাকে,,,আর বাকি সব সময় তুই করেই বলে,,,কিন্তু এখন আবির কিরকম মুডে আছে ঠিক বুঝতে পারছে না পেখম)

-কি হল কি পাখি কোথায় হারিয়ে গেলে?? পুলক তোর এই বোনটা নামেই শুধু বড়ো হয়েছে,,,ওকে কলেজ থেকে ছাড়িয়ে আবার কে.জি স্কুলে এডমিট করিয়ে দে,,,

-ঠিক বলেছিস তুই,,,তা এ কাজটা না হয় তুই করিস,,,এখন বাদ দে,,,তুই বল তোর খবর কি আর তোর তো আরও কিছু দিন পরে আসার কথা ছিল,,,(পুলক)

-আগে যদি জানতাম উনি এসেছেন তাহলে আমি কখনো এই বাড়িতে আসতাম না(বিড়বিড় করে বলল পেখম)

-আরে বাদ দেবো কেন,,,বড়ো হয়েছে এখনো এই ভাবে দৌড়াদৌড়ি করে বেরাবে নাকি?? শোনো পাখি তোমার শাস্তি হল আমার জন্য এক কাপ ব্লাক কফি করে আনবে ,,,কথাটা বলেই পুলকের সাথে গল্প করতে বসে পড়ে,,কিছুক্ষণ পর তাকিয়ে দেখে পেখম সেই জায়গায় আগের ন‍্যায় দাঁড়িয়ে আছে,,,

-কি হল পাখি এই খানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?? আমি কতক্ষণ অপেক্ষা করবো??(ধমক দিয়ে)

-না না যাচ্ছি আবির দা,,,

-আবিরকে সবাই একটু ভয় করেই চলে,,,বিশেষ করে পেখম,,, ছোটবেলা থেকেই যেন পেখমের প্রতি একটা আলাদা অধিকার বোধ আছে আবিরের, এতে বাড়ির সবাই কিছু মনে করে না,,,
___________________________________________

-কফিটা নিয়ে ভয়তে ভয়তে আবিরের ঘরে নক করলো পেখম,, ওপাস থেকে গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠ ভেসে আসলো কামিং,,,আস্তে করে দরজা খুলে ঘরের ভেতরে সেন্টার টেবিলের উপর রাখে কফিটা,,,

-এই কফি দিয়ে গেলাম। আসছি আমি,,,

-আমি কি তোকে একবারও যেতে বলেছি পাখি?? (ল‍্যাপটপের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলল)

-না আপনি তো কাজ করছেন তাই,,আর তাছাড়া আমার বৌমনির সাথে একটু দরকার আছে,,,

-পেখমের কথায় আবির ল‍্যাপটপ বন্ধ করে বিছানা থেকে নেমে আসে।তারপর কফি মগটা নিয়ে এক চুমুক দেয়,,,তারপর পেখমের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে- “আমি যতবারই তোমাকে কফি করতে বলি সে যতই হোক ব্লাক কফি,তবুও সেটা পান করলে আমি তাতে মিষ্টতার স্বাদ পাই,,এটার কারণ কি তুমি বলতে পারো”?

-আবিরের এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে পেখম শুধু ফ‍্যাল ফ‍্যাল করে তাকিয়ে থাকে,, হঠাৎ ওর মনে হল ভয়তে গলা শুকিয়ে আসছে,,,এক্ষুনি জল খাওয়া দরকার না হলে ও মরেই যাবে,,,

-কি হল উত্তর দাও?

-মা,,মা,,নে,,মানে আবির দা আমি কিন্তু সত্যিই কফিতে চিনি মেশায় নি।

-তুমি সত‍্যিই নির্বোধ পাখি,,,

-আবিরের কথার কোনো মানে খুঁজে পায় না পেখম,, মনে মনে বলেই ওঠে মানুষটাকি কফি খেয়ে পাগল হয়ে গেল না কি??

-এখন তুমি আসতে পারো,,কিন্তু একটা কথা বড়ো হয়েছো,লোকজনের সম্মুখে এই সব দৌড়াদৌড়ি আমার একদম পছন্দ না ,,,কথাটা মাথায় রাখবে,,,বলেই ব‍্যালকনির দিকে চলে যায়,, পেখম কিছুক্ষণ ওইভাবে দাঁড়িয়ে নীচে চলে আসে,,,

-তখন ড্রয়িংরুমে পাখিকে ওইভাবে দৌড়াতে দেখে আবিরের ভীষণ রাগ হচ্ছিল,,, কেননা বাড়ির সব কাজের লোকরা ভিতরে ছিল,,, মেয়েটা শুধু নামেই বড়ো হয়েছে,,,,
____________________________________________

-বৌমনি তাড়াতাড়ি দেখে বলো কোনটা পছন্দ,, আমি সেই অনুযায়ী ব্লাউজের ডিজাইন করতে দেবে,,,হাতে মাত্র আর পনেরো দিন বাকি আছে,,,

-উফফ তুই শান্ত হ,,এই শাড়িটা ভালো লাগছে লাল-নীল কম্বিনেশন আছে,,,, এটাই রিসেপশনে পড়বো,,,তুই কি পড়বি??

-আমি বিয়েতে শাড়ি আর রিসেপশনে ল‍্যাহেঙ্গা পড়বো,,,আর তাই তোমাকে কালকে নিয়ে যাবো দোকানে আমার টা তুমি পছন্দ করে দেবে,,,

-আচ্ছা ঠিক আছে,,,আমারো অনেক জিনিস কিনতে হবে,, ভালো কথা আমার বান্ধবী রা যাবে,,

-ও ভালো কথা মনে পড়েছে প্রিয়া আর রুশাও যাবে বলছিলো আমার সাথে,,,

-ঠিক আছে,,,

-ঠিক আছে তুমি তাহলে ওদেরকে একেবারে ডেকে নিও,,,আচ্ছা আমি তাহলে এখন আসি,,,অনেক রাত হয়ে গেছে,,,

-তীয়া তুইকি রুমে আছিস??

-হ‍্যাঁ দাদাভাই কেন কিছু বলবি??

-না আসলে আমি বেরোচ্ছি তোর কি কিছু লাগবে তাহলে কিনে আনতাম,,

-আপাতত কিছু লাগবে না তুই এক কাজ কর,,পুলক ওর অফিসের ম‍্যানেজার কে কিসব ফাইল দিতে গেছে,,,এদিকে রাত হয়ে গেছে যতই পাশের ফ্ল্যাট হোক আমি পেখমকে একা যেতে দিতে চাইছি না,,,তুইকি একটু এগিয়ে দিতে পারবি,,,

-না না বৌমনি আমি যেতে পারবো,,,আবির দার হয়তো দরকারি কাজ থাকতে পারে ফালতু দেরি হয়ে যাবে,,

-তোকে এত কথা বলতে কে বলেছে পাখি?? আমি কি একবারও বলেছি আমার দরকারি কাজ আছে বাইরে,,,বড্ড বেশি কথা বলিস তুই আজ কাল,,,এখন চল,,,(বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল আবির)

-যা দাদাভাই দাঁড়িয়ে আছে,,, দেরি করে গেলে আবার খাবি ধমক।

-তুমি কেন উনাকে বললে?? এই তোমার জন্য শুধুমাত্র তোমার জন‍্যেই আমি ফেঁসে যায়,,

-হয়েছে অনেক নাটক হয়েছে,,, যা এবার,,,
____________________________________________

-লিফটে উঠে দেখে দুজন অলরেডি আছে,তা দেখে মনে মনে একটু স্বস্তি পাই পেখম,নাহলে এই গম্ভীর মানুষটার সাথে একসাথে যাওয়ার কথা ও ভাবতেই পারে না,,, কিন্তু সেই স্বস্তি আর বেশিক্ষণ থাকলো না, কেননা পরের ফ্লোর আসতেই তারা বেরিয়ে যায়,,,, লিফটের মধ্যে খানিকক্ষণ পিনপতন নিরাবতা চলে,,,সেই নিরাবতা কে উপেক্ষা করে আবির বলে ওঠে” পাখি কলেজে প্রত‍্যেক দিন যাচ্ছিস”?

-হ‍্যাঁ আবির দা,,,আসলে ভূগোলের রোজ দুটো করে ক্লাস থাকছে তাই,,

-আমি কি তোকে আমার কাছে explain করতে বলেছি??

-না এমনি বললাম,,,,আচ্ছা আপনার তো বিয়ের আগের দিন আসার কথা ছিল??

-এখানে অফিসের একটা দরকারে তাড়াতাড়ি আসতে হল,,,by the way আমি তাড়াতাড়ি বাড়ি আসাতে কি তোর কোনো সমস্যা হচ্ছে পাখি??

-আবিরের কথা শুনে পেখম চমকে ওঠে,,, তুতলিয়ে কোনো রকমে বলে ওঠে না না আবির দা আপনি ভুল ভাবছেন,,,

-হয়তো ঠিক ভাবছি,,,(বিড়বিড় করে)

-আবির দা আপনাদের সবার জন্যে জামা-কাপড় কিনতে গিয়েছিলাম,, তো আপনার জন্য একটা ফরমাল কিনেছি, বৌমনির কাছে দিয়ে এসেছি একটু দেখে নেবেন ,যদি পছন্দ না হয় তাহলে বলবেন আমরা কালকে শপিং যাবো,,চেঞ্জ করে নিয়ে আসবো,,,

-দেখার দরকার নেই পাখি ,তুমি যখন কিনেছো অবশ্যই আমার পছন্দ হবে,,,(বলেই পকেট থেকে ফোন বার করে দেখতে লাগলো,, পাখি মাঝে মাঝে বুঝে উঠতে পারে না আবিরকে ,লোকটা এমন কেন,,,এইসময় ভীষণ লজ্জা লাগছে পেখমের,,)

-ফোন দেখতে দেখতে আবির বলে ওঠে কাল কে কে যাচ্ছিস??

-বৌমনি, বৌমনির বান্ধবীরা,আমি আর আমার বন্ধুরা,,

-কে কে??

-বললাম তো,,,

-উফফ ডাফর,,,আমি বলতে চাইছি তোর কোন কোন বন্ধুরা আসছে??

-ওও প্রিয়া, রুশা,, আর মনে হয় অর্নব আর আকাশ আসলেও আসতে পারে,,,

-পেখমের কথা শুনে আবিরের ভ্রূ যুগল আপনাআপনি কুঁচকে গেল,,,ওদের কি খুব প্রয়োজন মলে আসার??

-মানে??(হঠাৎ একটা বিকট শব্দ হয় আর সাথে সাথেই লিফট বন্ধ হয়ে যায়, যার কারণে পেখম ভয় পেয়ে আবিরের হাতটা বেশ শক্ত করেই ধরে ফেলে,,,আচমকা ঘটনাটা ঘটার ফলে আবির অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে,,তারপর ফোনের ফ্লাশ টা অন করে দেখে পেখম ভয়তে ওর হাত শক্ত করে ধরে চোখমুখ খিঁচে আছে,,,ও এক হাত দিয়ে পেখমের মাথাটা বুকে টেনে নেয় আর এক হাত দিয়ে পেখমের মাথায় বোলাতে থাকে,,মেয়েটা বড্ড ভয় পেয়ে আছে,,তার উপরে লিফটা পুরোই অন্ধকার,,ও অতি আদুরে গলায় বলে ওঠে,,)

-পাখি আমি আছি তো,,এই দেখো তাকাও আমার দিকে,,,

-আবিরে এইরকম আদুরে ডাকে পেখম আস্তে করে মাথা তুলে আবিরের দিকে তাকায়,,,

-ভয় নেই পাখি,,যতক্ষণ তুমি আমার কাছে আছো একদম ভয় পাবে না,, মনে রাখবে আমি আছি তোমার পাশে সবসময়,,,

চলবে,,,

(রিচেক করার সময় পাইনি,লাইক ও গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here