হৃদয়হরণী পর্ব ২৭+২৮

0
617

#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- ২৭

– কোনো কিছুই আর ভালো লাগে না পেখমের,, ওর মনে হচ্ছে ও যেন রোবটের মতো হয়ে গেছে,,যার মধ্যে নেই কোনো অনুভূতি,,, হঠাৎ হঠাৎ করে কাঁদতে ইচ্ছা করলে একঘন্টা মতো কেঁদে নেবে,,,তারপর ব‍্যালকনিতে গিয়ে রকিং চেয়ারে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবে,,,,কেন সেই মানুষটি একবারের জন্যেও ওর খোঁজ করছে না,,, ও তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে, সেই দিন ওভাবে বলা উচিত হয় নি ওর কিন্তু ও বা কি করবে,,সহ‍্য করতে পারিনি আর,,,,

-আজ প্রায় তিন-চার মাস হয়ে গেল আবির ওর সাথে কথা বলে না,,এমনকি পেখমের ধরা- ছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়ে ব‍্যাঙ্গালোরে বসে আছে,,,পেখম তো ভেবেছিলো তীয়ার সাদে অন্তত আসবে মানুষটা কিন্তু না আসেনি সে,,,তার বদলে ভিডিও কলে তীয়া আর পুলকের সাথে কথা বলে নিয়েছে,,,এইসব কথা গুলো ভাবতে ভাবতে পেখম অতীতে ডুব দেয়,,,,,

(অতীত)

– তীয়া প্রেগনেন্ট হওয়ার পর থেকে পেখম বেশ খানিকটা সময় ওবাড়িতে থাকতো প্রত‍্যেকটা দিন,, তারপর কোচিং, কলেজ আর আবিরের সাথে ঝগড়া, ভালোবাসা নিয়েই চলে যাচ্ছিল বেশ,,,কিন্তু এরই মাঝে পেখম লক্ষ‍্য করে আবির রাতে প্রায় ফোনে কথা বলে ব‍্যালকনিতে দাঁড়িয়ে,,, সোহিনীর আসা যাওয়াটাও ইদানিং বেশ বেড়েই গিয়েছিল,,,, যা ও চুপচাপ সহ‍্য করত। একদিন রাতে যখন আবির ওয়াশরুমে ছিল ঠিক তখন ওর ফোনে কল আসে,,,পেখম ফোনটা নিয়ে দেখে সোহিনী কল করেছে,,,তারপর কলটা কেটে গেলে ও আবিরের ফোন চেক করে দেখে সোহিনীর নাম্বার থেকে প্রায় কল আসে আর তার কথা বলার সময় প্রায় একঘন্টা কখনো কখনো দেড় ঘন্টা তাও আবার রাতে,,,যেটা দেখে পেখমের খুব কান্না পেল আর তার সাথে রাগও হল,,,ও ফোনটা জায়গা মতো রেখে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ বাদে আবির ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ফোন চেক করে,,, তারপর পেখমের দিকে তাকিয়ে ব‍্যালকনিতে চলে যায়,,,প্রায় একঘন্টা পর রুমে আসে,,তারপর সোফায় শুয়ে পড়ে,,,যদি একবার তখন পেখমের দিকে তাকাতো তাহলে দেখতে পারতো তার প্রিয়তমার অশ্রুসিক্ত মুখটা,,, কারণ পেখম তখনো জেগে ছিল আর কষ্টে কাঁদছিল,,,এই যন্ত্রণা যে কতটা ভয়াবহ তা যার উপর দিয়ে যায় সেই বোঝে,,,,

– এই রকম আরও একদিন পেখমদের কলেজের পর কোচিং থাকায় ওরা ঠিক করে কলেজ থেকে কোনো একটা রেস্টুরেন্টে যাবে,সেখানে গিয়ে খেয়ে তারপর কোচিং সেন্টারে যাবে,,যথারীতি ওরা সবাই আশেপাশের একটা ভালো রেস্টুরেন্টে যায়,,,সবাই যখন খাবার আসার জন্য অপেক্ষা করছিল তখন অর্নব বলে ওঠে,” পেখু আবির দা না ওটা?? ওই যে সামনের টেবিলে বসে আছে,,, সঙ্গে একটা মেয়েও আছে দেখছি”। অর্নবের কথা শুনে সবাই ওদিকে তাকিয়ে দেখে যে হ‍্যাঁ সত‍্যিই ওদের ঠিক একটু আগের টেবিলে বসে আছে আবির,,,পেখমতো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে শুধু সামনের দিকে,,, ও নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছে না যে আবির আর সোহিনী বসে আছে,, ও সবাইকে বলে একটু সাইডে গিয়ে আবিরকে ফোন করে,,,,কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর আবির রিসিভ করে,,

– হ‍্যালো

– হ‍্যাঁ পাখি বলো,,,

– আপনি কোথায় এখন??

– আমি তো মিটিং আছি কেন?? কিছু বলবে??

– না এমনি জিজ্ঞাসা করলাম,,,

– ঠিক আছে আমি একটু ব‍্যস্ত আছি,,, রাখছি( বলেই আবির ফোনটা কেটে দেয়)

– আবিরের সাথে কথা বলে পেখম এসে দেখে আবির হেসে হেসে কথা বলছে সোহিনীর সাথে,,এই তার ব‍্যাস্ততা,পেখমের আর গলা দিয়ে খাবার নামলো না,,,এতবড় একটা মিথ্যে কথা বলতে পারলো,,আজ এই মানুষটাকে পেখমের কাছে বড্ড অচেনা মনে হচ্ছে,,, একটিবারের জন্যে জিজ্ঞাসা অবদি করলো না যে পেখম খেয়েছে কিনা,,,

– কি রে পেখু খা,,,কি ভাবছিস??? আর আবির দার সাথে দেখা করেছিস??( রুশা)

– না রে উনি অফিসের কাজ নিয়ে আলোচনা করছে এখানে তাই আর ডিসটার্ব করলাম না,,, আর শোন আমার না শরীর টা কেমন খারাপ লাগছে,,,আমি বাড়ি যাচ্ছি,,,

– এমা সেকি,,তাহলে চল আমি তোকে দিয়ে আসি,,,( দিপু)

– না না তোরা খা আমি আসছি( বলেই পেখম রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে,,,সারা রাস্তা প্রায় কাঁদতে কাঁদতে আসে)

-সেদিন রাতে আবির বাড়ি ফিরে আসেনি,,, অফিসের কাজ থাকার কারণে সেখানে থেকেই গিয়েছিল,,,আর এইদিকে পেখম কেঁদে কেটে নিজের চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছিল,,,

– আমি তো আপনাকে খুব ভালোবাসি সেটা কি আপনি বোঝেন না?? আপনার এইসব ব‍্যবহারে বা ওই সোহিনী কে আপনার পাশে দেখলে এই বুকের ভিতরে ভীষণ কষ্ট হয় সেটা কি আপনি বোঝেন না?? এইভাবে কষ্ট না দিয়ে আমাকে তো মেরে ফেলতেই পারতেন,,, কেন সেদিন বাঁচিয়েছিলেন???আমি তো ভেবেছিলাম আপনাকে কদিন জ্বালিয়ে তারপর আমি আপনার কাছে ধরা দেব,,,অথচ আপনি আমাকে সেই প্রথম থেকেই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে আসছেন,,,, আমি আর সহ্য করতে পারছি না,,, আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে,,, এই আপনি টাকে আমি চিনি না,,, খুব অচেনা লাগে,,,,আমার সেই আগের আবির দাকে চাই ,,

-সারাদিন রাত কাঁদার ফলে খুব ভোরের দিকেই পেখম ঘুমিয়ে পড়ে,,, ঘুম ভাঙে যখন, তখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা একটা বেজে দশ মিনিট,,, ও তড়িঘড়ি করে উঠে স্নান করে নীচে যায়,,,,

– কি রে তোর শরীর ঠিক আছে তো??

– হ‍্যাঁ মামনি আমার আবার কি হবে??

– না আজ অনেক সময় ধরে ঘুমালি,,আমি তো তোর ঘরে গিয়ে দেখি তোর চোখ মুখ সব ফুলে গেছে,,,শোন তুই আর রাত জেগে পড়বি না,,,এখন খেয়ে নে,,,

– মামনি তোমার ছেলে,,,

– পেখমের কথা শেষ করতে না দিয়ে অনুপমা বলে” ও একেবারে রাতে আসবে,,,ভীষণ চাপ নাকি,,,আমি ফোন করে ছিলাম,,,, কেন তোর সাথে কথা হয়নি??

– না আমি তো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই,,,

– ওওওও
_____________

– রাত প্রায় দশটার দিকে আবির বাড়ি ফেরে,,তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে ডাইনিং টেবিলে যায়,যেখানে অনুপমা, অশোক আর পাখি ওর জন্যে অপেক্ষা করছে,,,

– তা সব কিছু কি রেডি হয়ে গেছে???( অশোক)

– না একটু বাকি আছে,,, রাজিব আর সোহিনী ওরা সামলে নেবে,,আর আমি তো আছি,,

– তা কালকে কখন যাচ্ছো??( অশোক)

– যাচ্ছে মানে?? কোথায় যাচ্ছে ও??(অনুপমা)

– ও মা তোমাকে তো বলা হয়নি,,,আমি আর সোহিনী কালকে ব‍্যাঙ্গালোরে যাচ্ছি,,,ফিরতে হয়তো এক মাস লাগবে,,,কিন্তু সোহিনী,,,,

– এতক্ষন চুপচাপ এদের কথা শুনছিলো পেখম,, কিন্তু আর থাকতে না পেরে আবিরের কথা বলার মাঝেই ও উঠে দাঁড়ায়,,,

– কি হলো উঠলি যে,,,খাবি না আর??( অনুপমা)

– না মামনি,,, আমার আর ভালো লাগছে না খেতে,,,

– কেন মা শরীর ঠিক আছে তো??( অশোক)

– হ‍্যাঁ পাপা ঠিক আছে,,, আর চিন্তা করো না খিদে পেলে ফ্রিজে তো দই আর জুস আছে,,,খেয়ে নেবো,,,আসছি আমি তোমরা কন্টিনিউ করো,,,গুড নাইট,,,( এই বলে পেখম চলে আসে)

– হ‍্যাঁ আবির তুমি কি বলছিলে??( অশোক)

– সোহিনী এক সপ্তাহ পর এখানে চলে আসবে আর তোমার সাথে জয়েন করবে,,,রাজিব আমার সাথে ওখানে থাকবে,,,

-ঠিক আছে,,,
________________
– রাতে আবির মা বাবার সাথে কথা বলে ঘরে যায়,,,ও আজ ভেবেই রেখেছিল যেহেতু অনেক দিন থাকবে না সেহেতু আজ ও ওর প্রিয়তমাকে একটু আদর করবে,,,এই বেহায়া মনটার আজকে তার রাত- প্রেয়সীকে ভালোবাসতে ইচ্ছা করছে,,,আবির ঘরে গিয়ে দেখে পেখম ঘরে নেই,,,ব‍্যালকনির দিকে তাকিয়ে দেখে পেখম ওখানে দাঁড়িয়ে আছে,,,

– আবির পিছন থেকে গিয়ে পেখমের কোমড় জড়িয়ে ধরে পেখমের কাঁধে নিজের থুতনি রাখে,,,কিছুক্ষণ ওভাবে থাকার পর আবির যখন দেখলো তার রাত-প্রেয়সী তাকে বাঁধা দিচ্ছে না তখন সে তার স্পর্শ গভীর থেকে গভীরতর করলো,,,পেখম আজ নিজেও চাই আবিরের কাছে নিজেকে সপে দিতে,তারপর এই মানুষটিকে বোঝাবে মোহ কি জিনিস,,,,কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো সামান্য কিছু প্রমাণ করার জন্য নিজের সম্মান সে নষ্ট করতে পারবে না,,, তাই আবিরে ওই গভীরতর স্পর্শের ঘোর থেকে বেরিয়ে আসতে চাই,,,কিন্তু পারে না,,, আবির তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রাখে,,,পেখম কোনো উপায় না পেয়ে বলে ওঠে,,

– আপনার আর রিকের ছোঁয়ার মাঝে কোনো তফাৎ খুঁজে পাচ্ছি না আমি আজ,,,

– পেখমের এই কথাটা শুনে আবিরের হাতের বাঁধন আলগা হয়ে আসে,,কথাটা বোধগম্য হতেই আবিরের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়,,, হয়ে ওঠে চোখ দুটো রক্তিমময়,,, পেখমকে ছেড়ে দেয় সাথে সাথে ও,,,তারপর বলে,,,” তুমি যেটা বলছো ভেবে বলছো তো???

– একদম ভেবে বলছি,,,(অন‍্যদিকে তাকিয়ে)

– পাখি এসব তুমি কি বলছো?? মাথা ঠান্ডা করে বলো,,রিকের সাথে আমার তুলনা করছো???

– ও সরি আমার ভুল হয়ে গেছে,,, আপনি রিকের থেকেও একটা খারাপ লোক,,, আপনি একজন চরিত্রহীন,,, আপনার ঘরেও একটা লাগে আর বাইরেও একটা লাগে,,,না জানি কোথায় কোথায় কি করে বেরিয়েছেন,,,, আপনি একটা মিথ‍্যেবাদি,,,প্রতারক,,,,আপনি সেদিন কেন বাঁচিয়েছিলেন আমাকে?? মরতে দিতেন তাহলে আমি সত‍্যিই বেঁচে যেতাম,,,,

– পাখিইইইইইইই ( জোড়ে চিৎকার করে)

– একদম চিৎকার করবেন না,,,, আমি জাস্ট আপনাকে সহ‍্য করতে পারছি না,,, এই আমি তো আপনার শুধু মোহ,,,আমার প্রতি আপনার শুধু আকর্ষণ ছিল,, সেইজন্য বারবার আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেন বলুন,,,,কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনার ছোঁয়ায় আমার শরীর ঘিনঘিন করে ওঠে,,,,

– আবির পাখির কথায় এত রেগে যায় যে সেন্টার টেবিলে থাকা ফুলদানি নিয়ে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে,,,তারপর পাখির দুই বাহু শক্ত করে ধরে ওর ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে বলে,,,,, ইনাফ পাখি অনেক বলে ফেলেছো,,,আমি চুপ আছি বলে এই না যে তুমি যা ইচ্ছা তাই আমাকে বলবে,,,ঠিক আছে তুমি চাও না তো আমাকে বেশ,,,তোমার দেওয়া সব অভিযোগ আমি মাথায় পেতে নিলাম,,, আর ওইসব মিথ্যে অভিযোগ গুলোকেই সত‍্যি করে তুলবো আমি,,,,আজকে ভীষণ হার্ট করেছো তুমি আমাকে,,,, আমার স্পর্শ কে তুমি অপমান করেছো,,,,আমার স্পর্শে তোমার শরীর ঘিনঘিন করে তাই তো,,,একদিন আমার এই সামান্য স্পর্শ পাওয়ার জন্য তুমি ব‍্যাকুল হয়ে উঠবে,,,,আমাকে পাওয়ার জন্য কাতরাবে,,,,,( কথা গুলো বলে আবির পেখমের হাত ছেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়,,, আর পেখম ওখানে বসেই কাঁদতে থাকে,,,ও চাইনি বলতে কিন্তু যা হচ্ছে সেসব ওর সহ‍্য হচ্ছিলো না,,পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ও আর আবিরকে দেখতে পাইনি,,, আর সেই থেকে আজ তিন-চার মাস হয়ে গেল না কোনো ম‍্যাসেজের রিপ্লাই করেছে,,,না কোনো খোঁজ নিয়েছে পেখমের,,, পেখম ভাবে হয়তো ওখানে আনন্দেই আছে আবির,,,সোহিনী থাকতে ওর কোনো অসুবিধা হবে না,, হওয়ার কথাও না,,,)
__________________________

(বর্তমান)

– রেখাদির ডাকে পেখমের ভাবনার সুতোয় টান পড়ে,,,অতীত থেকে বেরিয়ে আসে,,,, নিজেকে সামলে নিয়ে বলে” কি হয়েছে রেখা দি???

– মা নিচে তোমাকে ডাকছে বৌমনি,,,,,

– ঠিক আছে তুমি যাও আমি আসছি,,,,কিছুক্ষণ পর পেখম নিচে নেমে দেখে যে ড্রয়িংরুমের সোফায় সোহিনী বসে আছে,,,সোহিনীকে দেখে পেখম ভাবলো যে তাহলে হয়তো আবিরও বাড়িতে এসেছে,,,পেখমকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সোহিনী বলে ওঠে,,

– আরে ম‍্যাম কেমন আছেন?? আপনার সাথে অনেকদিন পর দেখা হচ্ছে,,,

– পেখম আশেপাশে চোখ বুলিয়ে হাসি মুখে বলে আমি ভালোই আছি,,,ইনফ‍্যাক্ট খুবই ভালো আছি মিস সোহিনী,,,তা আপনি এখানে হঠাৎ,,,,

– আরে পেখু ওর তো বিয়ে সামনের সপ্তাহে,,,(অনুপমা)

– বিয়ে??( পেখম অবাক হয়ে বললো)

– হ‍্যাঁ বিয়ে,,,আর জানিস কার সাথে হচ্ছে,,,আবিরের বিসনেস কলেজের বন্ধু রাজিবের সাথে,,,,সোহিনী এই রাজিব তো আমাদের নতুন প্রজেক্টের কাজে আবিরকে সাহায্য করছে বল???

– হ‍্যাঁ আন্টি,,,( লজ্জা পেয়ে)

– সোহিনীর সাথে তো আবির রাজিবের সোর্সেই পরিচিত হয়েছে,,,আচ্ছা তোরা কথা বল আমি রান্নার দিকে গেলাম,,(অনুপমা)

– তবে ম‍্যাম আমি খুবই থ‍্যাঙ্কফুল আবির স‍্যারের কাছে,,,স‍্যার না থাকলে আমার আর রাজিবের বিয়েটা হত না,,,,(সোহিনী)

– এতক্ষণ কথা শুনে পেখম নিজের কৌতূহল দমন করতে না পেরে জিজ্ঞাসা করে কেন??

– আরে রাজিব তো ব্রাহ্মণ,,,, তাই ওর বাবা ব্রাহ্মণ ঘরের মেয়ে ছাড়া ছেলের বিয়ে দেবে না,,,, দীর্ঘ দশ বছরের প্রেম আমাদের,,, কত ঝামেলা পোহাতে হয়েছে এই নিয়ে,,, কিন্তু শেষে স‍্যার সবার সাথে কথা বলে বুঝিয়ে,, সবাই কে রাজি করাই,,,এট লাস্ট আমাদের বিয়েটা হচ্ছে(সোহিনী)

– কিন্তু তুমি আজ এখানে,,, তোমাকে তো ব‍্যাঙ্গালোরে থাকার কথা??( পেখম)

– হ‍্যাঁ ম‍্যাম আমার যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু ওখানে এক সপ্তাহ থেকে আমাকে ব‍্যাক করে বড়ো স‍্যারের সাহায্য করতে বলেছিল স‍্যার,,, কিন্তু,,(সোহিনী)

– কিন্তু কি মিস সোহিনী??( পেখম)

– কিন্তু আমাদের যাওয়ার আগের দিন রাতে স‍্যার হঠাৎ আমাকে ফোন করে বলে যে আমাকে যেতে হবে না,,, আমি যেন এইদিক টা সামলায়,,,ওখানে যা কাজ আছে স‍্যার আর রাজিব মিলে করে নেবে,,,,(সোহিনী)

– আচ্ছা আগের দিন আপনাদের কোনো মিটিং ছিল রেস্টুরেন্টে??(পেখম)

– হ‍্যাঁ ছিল,,, মুম্বাইয়ের দুটো ক্লাইন্টের সাথে,,,কেন ম‍্যাম?? এনিথিং রঙ????( সোহিনী)

– এতক্ষন চুপচাপ সব প্রশ্নের উত্তর গুলো শুনে ঠিক থাকলেও শেষের উত্তর টা শুনে পেখম ঠিক থাকতে পারলো না,,, ও বুঝতে পারলো ওর দ্বারা কি বড়ো ভুল হয়েছে,,, এই ভুলের কি কোনো ক্ষমা হয়?? ও কি আবিরের কাছে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য???

– পেখমকে চুপ থাকতে দেখে সোহিনী জিজ্ঞাসা করে,,,ম‍্যাম কি হয়েছে আপনার???

– মিস সোহিনী ভীষণ বড়ো ভুল করে ফেলেছি আমি,,,কিন্তু আমি আপনাকে সেটা বলতে পারবো না,,, আপনি শুধু এইটুকু বলুন আপনার স‍্যার কি আপনার বিয়েতে আসছেন???

– হ‍্যাঁ উনি তো আসবেন,,,, আপনি কিন্তু অবশ্যই যাবেন ম‍্যাম ,,,

– হ‍্যাঁ আমি নিশ্চয়ই যাবো,,,

– ধন্যবাদ আজ তাহলে উঠি,,,,

– সোহিনী চলে যাওয়ার পর পেখম ওখানেই বসে থাকে,,,আর ভাবতে থাকে সেদিন বিনা দোষে মানুষটাকে সে কি কি বলেছে,,,,আর সব কিছু মনে পড়তেই আবিরের বলা শেষের কথাটা বারবার মনে পড়ে “, একদিন এই স্পর্শের জন্যে তুমি ব‍্যাকুল হয়ে উঠবে,,, আমাকে পাওয়ার জন্য কাতরাবে”
কথা গুলো মনে পড়তেই আঁতকে ওঠে পেখম,,,

চলবে,,,,

#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- ২৮

-পেখু তুই কিছু কি করছিস???

– না মামনি এমনি geography math গুলো দেখছিলাম,,, কেন কিছু বলবে??

– তীয়াকে এই কচুপাতা বাটা টা দিয়ে আসবি তো,,,আগের দিন তোর মা রান্না করেছিলো,,,তোর বৌমনি নাকি আর কিছু খাইনি,,, শুধু ও কচুপাতা বাটা দিয়ে সব ভাত খেয়েছে,,,তাই আজকে আমি রান্না করলাম,,,, মেয়েটা আজকাল কিছু খেতেই পারে না,,,

– ঠিক আছে দিয়ে আসবো,,,স্নান সেরে আমি ওবাড়িতে যাচ্ছি,,,

– ও হ‍্যাঁ আর একটা কথা কচি কলাপাতা রঙের কোনো শাড়ি তোর আলমারিতে আছে কিনা দেখিস তো,,

– কেন মামনি পড়বে তুমি??

– আরে তোর জন্য,,আমার একটা কচি কলাপাতা রঙের শাড়ি আছে,তাই ভাবলাম সোহিনীর বিয়েতে তুই আর আমি এক রঙের শাড়ি আর এক ডিজাইন করা গয়না পড়ে যাবো,,,,সবাই বেশ তাকিয়ে দেখবে শাশুড়ি আর বৌমাকে,,, ব‍্যাপার টা কেমন হবে বলতো,,,আমার তো এখন থেকে ভাবলেই মজা লাগছে,,,

– আর আমার লজ্জা লাগছে,,

– তোর লজ্জা লাগে না আবার কোন জিনিসে তা কে জানে,,,, এখন দেখ আগে শাড়ি আছে কিনা,,, না থাকলে তীয়ার কাছ থেকে নিয়ে আসবি,,,আমি আসছি,,,

– ঠিক আছে,, আমি কিন্তু দুপুরে তাহলে ওবাড়িতে খেয়ে নেবো,,,

– সে কি আর বলতে,,আমি জানি তো মনোরমা তোকে না খাইয়ে পাঠাবে না,,,,( বলতে বলতে চলে গেল)
__________________________________________

– অনুপমা চলে যাওয়ার পর পেখম নিজের আলমারি খুলে শাড়ি খুঁজতে লাগলো,,,বিয়ের পর তীয়া একবার আলমারিটা ভালো করে গুছিয়ে দিয়েছিলো,আর কোথায় কি রেখেছে সব ওকে বলে দিয়েছিলো কিন্তু পেখমের সে সব কিছুই মনে নেই তাই বাধ্য হয়ে এখন সব জায়গায় ওকে দেখতে হচ্ছে,,,

– আলমারির সব জায়গায় খুঁজে অবশেষে উপরের তাকে একটা কচি কলাপাতা রঙের জামদানি শাড়ি পেল ওটা লাফিয়ে পেড়ে নিতেই শাড়ির সাথে একটা কিছু ওর গায়ের উপর পড়লো,,,জিনিস টা শক্ত হওয়ার দরুন পেখম একটু ব‍্যাথা পেল,,,,তারপর জিনিস টা কি ভালো করে দেখার জন্যে ফ্লোর থেকে উঠিয়ে নিয়ে দেখলো যে এটা আবিরের ডাইরি,,,,ডাইরির উপরে স্পষ্ট করে লেখা আছে আবির চৌধুরী,,, Do not touch it

– Do not touch it এই লেখাটা পড়ে পেখমের খুব ইচ্ছা করছে ডাইরির ভিতরে কি লেখা আছে সেটা পড়ার জন্য,,,যদিও সেটা অন‍্যায়,,, বিনা অনুমতিতে কারোর পারসোনাল ডাইরি পড়া কিন্তু পেখমের এই অন‍্যায় কাজটা করতে খুব ইচ্ছা করছে,,,তাই চুপচাপ দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়ল,,, তারপর ডাইরি টা খুলে দেখলো,,,,প্রত‍্যেকটা পাতায় অল্প অল্প করে কিছু না কিছু লেখা,,,,

২৩ সেপ্টেম্বর(২০১২)
– এটা আমার সাথে কি হচ্ছে,,কেন হচ্ছে,,,তবে কি আমি ঐ পিচ্চিটার প্রেমে পড়েছি,,,ও মাই গড,,,একটা পিচ্চি কিভাবে আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে,,,

১০ ফেব্রুয়ারি(২০১৩)
-ওকে আজ বলে এসেছি সে জানো শাড়ি না পড়ে,,,এই পিচ্চিবেলায় অত শাড়ি পড়তে হবে না,,, তখন দেখার মতো মুখ ছিল তার,,,কিন্তু সে কি করে বুঝবে কেন তাকে বারণ করলাম,,,তাকে ওই অবস্থায় দেখে তো আমি আর আমার মধ্যে থাকতে পারছিলাম না, শুধু মনে হচ্ছিলো তার মাথাটা আমার এই বুকে চেপে ধরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি,,তাহলে যদি এই বুকটা শান্ত হয়,,,

২২ জুন(২০১৩)
– আজ তাকে বৃষ্টি বিলাস করতে দেখেছিলাম ছাদে,,,বৃষ্টির ফোঁটা গুলো যখন তার ওই শরীর ছুঁয়ে দিচ্ছিলো তখন খুব হিংসে হচ্ছিলো আমার,,,, কেন ছোঁবে আমার প্রেয়সীর শরীর সে,,,,

– পেখম ডাইরির লেখা গুলো পড়ে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে,,, তারপর কি মনে করে ডাইরিটা এলোমেলো করে পড়তে লাগলো,,,লাস্টের দিকে একটা পেজে পেখমের চোখ আটকে যায়,,,

১০ জানুয়ারি(২০১৯)
– আজ আবার আমার রাত- প্রেয়সীকে দেখার জন্য মনটা কেমন করছিল,,তাই তো রাতের ফ্লাইটে চলে আসলাম কলকাতায়,,, কিন্তু সে দেখো ঘুমাচ্ছে,,, কি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে সে,,,অথচ আমার এই চোখে ঘুমের বদলে রয়েছে শুধু তাকে দেখার তৃষ্ণা,,,,

৬ ডিসেম্বর(২০১৮)
-আজ বাবা আমাকে অফিসের কিছু ফাইল চেক করার জন্য বললো,,,সকাল থেকেই লেগে পড়লাম কাজে,,,অতিরিক্ত কাজের চাপের জন্যে মনটা ভীষণ কফি কফি করছে,,,পাখিকে দেখলাম করিডোর দিয়ে যেতে,,তাই ওকে বললাম এক কাপ ব্ল‍্যাক কফি করে আনতে,,কিন্তু মহারানী বলল সে নাকি কফি করতে পারে না,,, কথাটা শুনে মেজাজ টা অটোমেটিক খারাপ হয়ে গেল,,,,,, কদিন পড়ে যে আমাকে সামলাবে ,,, আর এখন সে বলে কফি করতে পারে না,,,দিলাম এক ধমক,,, বললাম দশ মিনিটের মধ্যে যেন সে আমাকে কফি করে এনে দেয়,,,,,পরে অবশ্য শুনেছিলাম মায়ের কাছে,,, পাখি নাকি তীয়ার কাছে গিয়ে কেঁদে কেটে কফি বানানো শিখে দশ মিনিটের মধ্যেই আমাকে কফি করে এনে দিয়েছিল,,, ভাবলে এখানো হাসি পাই,,,মেয়েটা আমাকে অতিরিক্ত ভয় পায়,,,,

– পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে পাখির চোখ একটা জায়গায় গিয়ে আটকে যায়,,,

১৫ জুন(২০১৭)
– আজ বন্ধুদের জোড়াজুড়িতে বাধ‍্য হয়েই শপিং মলে যেতে হল,,,যখন গেলাম তখন নিজের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনে নিলাম,,, মল থেকে বেরিয়ে আসার আগেই একটা শাড়ির স্টলে চোখ আটকে যায়,,,বন্ধুদের এগিয়ে যেতে বলে আমি চলে আসি সেই স্টলে,, একগুচ্ছ শাড়ির মধ্যে চোখে লাগে একটা হলুদ জামদানি শাড়ি আর ঠিক তার পাশে রয়েছে লাল রঙের কালো পাড়ের জর্জেটের শাড়ি,,আর সাথে সাথেই আমার প্রিয়তমার মুখ টা ভেসে ওঠে,,, শাড়ি দুটোই কিনে নিলাম,, আর তার সাথে ম‍্যাচিং করে দুল,চুড়ি কিনে নিলাম। রাতে পুলকদের বাড়িতে গিয়ে দেখি পাখি ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছে,,,আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়ালো,,, আর বসতে বললো,,আমি পুলকের সাথে কথা বলে বাড়ি আসার আগে পাখির ঘরে নক করতেই ও দরজা খুলে দিয়ে বলল”কিছু বলবেন আবির দা”?আমি ওর প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে শাড়ি আর তার সাথে ম‍্যাচিং করা অর্ণামেন্টস গুলো এগিয়ে দিয়ে বলি এবারের স্বরস্বতী পূজোর সময় যেন সে এটা পড়ে,ও শুধু ফ‍্যাল ফ‍্যাল করে চেয়ে ছিল,, তখন মনে হচ্ছিলো না থাক বলবো না।
আর লাল শাড়িটা আমি আমার আলমারিতে রেখে দিয়েছি,,,কোনো এক বিশেষ দিনে যখন আমি পাখিকে নিজের করে কাছে পাবো তখন এটা পাখিকে পড়তে বলবো, ওটা না হয় সেদিনের জন্যে তোলা থাক,,,

– পেখম তাড়াতাড়ি ডাইরিটা রেখে আলমারিতে শাড়িটা খোঁজে,,,অবশেষে আবিরের আয়রন করা শার্টের ভাঁজের থেকে ও সেই লাল শাড়ি, লাল কালো চুড়ি আর কালোর উপরে গোল্ডেন স্টোনের একজোড়া দুল পাই,,,পাখি সেইগুলো বুকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে,,,,অনেকক্ষণ পর নিজেকে ধাতস্থ করে আবার ডাইরি টা নেয়,,,পাতা উল্টিয়ে দেখে এবার সব উল্টো পাল্টা করে যেখানে সেখানে লেখা কোনো সাল নেই শুধু ডেট আছে,,ও প্রত‍্যেকটা পাতা পড়া শুরু করে,,,,

(৫জুলাই)
-সে কি জানে লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া তার রক্তিম মুখটাই যথেষ্ট আমার হৃদয়ের কম্পন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য??

(১৫ নভেম্বর)
-সে কি জানে তার অগোছালো স্বভাব আমার নিয়ন্ত্রণকে ভেঙেচুরে দেয় প্রতি নিয়ত??তার ওই ঘুমন্ত মায়াবী মুখটা দেখে আমার রাতের ঘুম উড়ে যায়,,,

(১৯ এপ্রিল)
– সে কি জানে তার অবাধ্য চুল গুলোর প্রতি আমার হিংসা হয় প্রতি নিয়ত?? যখন ওই অবাধ্য চুল গুলো তার চোখে মুখে আছড়ে পড়ে আমার খুব ইচ্ছা হয় তার কানের লতিতে চুলগুলোকে বাধ্য করে গুজে দিতে,,,

(২ ফেব্রুয়ারি)
-আজ ভীষণ কষ্ঠ হচ্ছে কি করে থাকবো তাকে না দেখে দু বছর,,,, বিসনেস কলেজে যেতে হচ্ছে আমাকে দু বছরের জন্য,,, এ দু বছরের প্রত‍্যেকটা দিন আমার কাছে বিষাদময় মনে হবে,,,,তাকে না দেখে,,,তার গলার স্বর না শুনে কি করে আমি সেখানে থাকবো,,,

– পেখম ভালো করে পৃষ্ঠা টা দেখলো,,,তাতে কাগজের উপর জল পড়লে যেমন টোপ খাওয়া মতো দাগ হয়,,ঠিক তেমনই দাগ আছে এই পৃষ্ঠাতে,,,ওর আর বুঝতে বাকি নেই যে আবির এইকথা গুলো লেখার সময় কাঁদছিল,,, অজান্তেই ওর চোখ দিয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে ডাইরির সেই পৃষ্ঠার উপড়ে পড়লো,,চোখের জল মুছে আবার পড়া শুরু করলো,,,

(১৮ জুন)
– মহারাণী কাল থেকে কলেজ যাবেন,,,,পিচ্চিটা বড়ো হয়েই গেল ,,,,ব‍্যাঙ্গালোরে আমার আর থাকতে ইচ্ছা করছে না,,, কিন্তু না থেকেও উপায় নেই বাবার বিসনেস তো আমাকেই দেখতে হবে,,,তবে পিচ্চির সব খবরাখবর দেওয়ার জন্য আমার ওখানে লোক রাখা আছে,,,,আজ পর্যন্ত কম ছেলেকে তো আর সাইজ করলাম না,,,,,

(৫ অক্টোবর)
– আজ প্রথম স‍্যালারি দিয়ে তার জন্য একটা কালো শাড়ি কিনেছি,,,এবং বলেছি এটা যেন সে একান্তই আমার সামনে পড়ে,,,,

(২৯ জুলাই)
– তুর্যের কোলে ওঠার সাহস কি করে পাই এই মেয়ে,,,মনে তো হচ্ছে ঠাসিয়ে দুটো চড় মারি,,,,তারপর ওই তুর্যের হাত দুটো ভেঙে দি,,,,ননসেন্স,,,

– উফফফ এই মেয়েটা সত‍্যিই পাগল করে দেবে ,,এইভাবে কেউ বৃষ্টিতে ভেজে,,,একের থেকে পায়ে ব‍্যাথা কিন্তু না উনার বৃষ্টিতে ভিজতে হবে,,,নিজেকে মাতাল মাতাল লাগছে প্রেয়সীর নেশায়,,, আমি তাকে স্পর্শ করতে চেয়েও করিনি কারণ আমি চাই এতে যেন তার সম্মতি থাকে,,,যা হবে আমাদের পবিত্র ও শুদ্ধতম স্পর্শ,,,,,,

(১ জুন)
– ঋষিকে নিয়ে ভাবাচ্ছে ভীষণ এই মনটা ,,,কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে পাখি একমাত্র এই আবির চৌধুরীর হৃদয়ের কাছে ধরা দেবে,,,সেচ্ছায় বন্দি হবে এই আবির চৌধুরীর মনের খাঁচায়,,,

(১১ জুন)
– আজ আমি তার সম্মতি পেয়ে স্পর্শ করেছি তাকে,,,সেই স্পর্শে ছিলো পবিত্রতা,,, একরাশ ভালোবাসা,, ভালোলাগার অনুভূতি,,,, দুজনে মিলে প্রেমের বৃষ্টিতে ভিজেছি,,,অবশেষে ধরা দিয়েছে সে আমার হৃদয়ের খাঁচায়,,,

(১২ জুন)
– আজ আমর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে,,, না আমি কাউকে বলতে পারছি,,,না সইতে পারছি,,,ঋষির সাথে পাখির বিয়ে কি করে ঠিক হয়??? আমি পারবো না চোখের সামনে এসব সহ‍্য করতে,,,,আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে,,, দম বন্ধ হয়ে আসছে,,,, সব কিছু অন্ধকার,,,,

(১৫জুন)
-আজ যাবো আমি কাকুর সাথে কথা বলতে,,

(১৯ জুন)
– পাশাপাশি যখন নিজের বন্ধুর সাথে নিজের প্রেয়সীকে একসাথে রেস্টুরেন্টে দেখে তখন যে কি পরিমাণে কষ্ট হয়েছিল সেটা আমি লিখে বোঝাতে পারবো না,,,,

(২২ জুন)
– যে দিনটার জন্য আমি আজীবন প্রতীক্ষা করবো ভেবেছিলাম,, সেই দিনটা আজ এভাবে আমার কাছে এসে ধরা দেবে আমি বুঝতে পারিনি,,, হ‍্যাঁ সে আমার কাছে এসেছে,,,ভালোবাসে বলেছে,,,কিন্তু আমি তার পরিবর্তে তাকে আঘাত করেছি,,, তার হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করেছি,,, জানিনা কোনো দিন সে আমাকে ক্ষমা করতে পারবে কি না?? কিন্তু আমি নিরুপায়

-(২৯ জুন)
– পুলকটা আমার উপরে অযথা রাগ করেই বেরিয়ে গেল রেস্টুরেন্ট থেকে,,, আমার কথা বুঝলো না,,,,তীয়াকে আমি বুঝিয়ে বলেছি,,,বোনটা আমার জন্য সেদিন খুব কেঁদেছিল,,, ভীষণ ভালো বাসে আমাকে সেইদিন খুব করে উপলব্ধি করে ছিলাম,,, কিন্তু নিজের সুখের জন্য কারোর মৃত্যুর কারণ আমি হতে চাই না,,, হয়তো আমার কপালে পাখি ছিল না,,,

-(৩১ জুন)
– কাল কে তার বিয়ে,,, আমি ঠিক করেছি কাল বিকেলের ফ্লাইটে ব‍্যাঙ্গালোরে চলে যাবো,,,নিজের চোখে তার বিয়ে আমি সহ্য করতে পারবো না,,,, এতটা সাহস আমার নেই,,,, হয়তো এই ডাইরিতে এটাই আমার কলমের লাস্ট লেখা,,,, যেই মানুষটাকে নিয়ে লিখতাম মনের হাজারো অনুভূতি,,, কাল যখন সেই মানুষ টি অন‍্যকারোর হয়ে যাবে,,, তখন আর এই ডাইরি লিখে আমার লাভ নেই,,, হয়তো কোনোদিন খোলাও হবে না এই ডাইরি,,,,সময়ের সাথে ভালোবাসা যেমন হারিয়ে যায় তেমন এই ভালোবাসার অনুভূতি পূর্ণ ডাইরিটাও যেন হারিয়ে যায় কোনো এক নাম না জানা দেশে,,,,,

– পেখম তারপর ডাইরির পেজ গুলো উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখলো,,,না আর কোথাও কিছু লেখা নেই,,,,পরের পেজ গুলো সব সাদা,,,পেখম ডাইরিটা বুকে জড়িয়ে ঢুকরে কেঁদে ফেললো,,,আর বলতে লাগলো,,,,

– মানুষটা আমাকে এত গুলো বছর ধরে এতটা ভালোবেসেছে আর আমি কিনা তাকেই এত অবিশ্বাস করলাম,,, কি করে পারলাম আমি এটা করতে?? সে কি আমাকে ক্ষমা করে দেবে?? আমাকে আবার বুকে টেনে নেবে?? আপনি প্লিজ ফিরে আসুন,,,, আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি,,,, আমাকে ক্ষমা করে দিন সেদিনের জন্যে,,,, কি করে পারলাম আপনার ভালোবাসাকে অপমান করতে?? কি করে পারলাম আপনাকে অপমান করতে?? কেন আমি আপনার মুখে বলা ওই কথা গুলো বিশ্বাস করলাম?? কেন আমি আপনাকে সন্দেহ করলাম??? প্লিজ আপনি ফিরে আসুন,,,,( কথা গুলো বলছে আর কাঁদছে,,,ওর এখন এই মুহূর্তে তীয়ার কাছে যেতে ইচ্ছে করছে,,, সব কথা জানতে ইচ্ছে করছে কি এমন হয়েছিল যার জন্য আবির এই রকম একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে,,, তাড়াতাড়ি করে ডাইরি টা নিজের জায়গা মতো ঠিক করে রেখে স্নান করে ওবাড়িতে ছুটলো যাওয়ার জন্য)
___________________________________________

– হ‍্যাঁ রে আমি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করছি,,,তোকে চিন্তা করতে হবে না,,, তুই শুধু এটা বল যে কবে আসছিস,,,আমার সাদেও তো এলি না দাদাভাই,,,আমি কিন্তু খুব রেগে আছি আর তার সাথে তোর চ‍্যাম্প ও রেগে আছে,,,(তীয়া)

– রাগ করিস না এইদিকে সবকিছু আগে সামলে নি তারপর ঠিক চলে যাবো ওখানে,,(আবির)

– আচ্ছা ঠিক আছে,, তুই ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করছিস তো?? তুই তো আবার তীয়ার কথা বলার মাঝেই ওর ঘরে হুরমুর করে পেখম ঢুকে পড়ে,,, পেখমকে এইভাবে আসতে দেখে তীয়া বলে” কি হয়েছে পেখু?? তুই এইভাবে দৌড়ে কোথা থেকে এলি??

– পেখম তীয়ার ঘরে ঢোকার সময় শেষের কথা গুলো শুনেই বুঝতে পেরেছিলো যে তীয়া আবিরের সাথে কথা বলছিলো,,তাই তো এক্সাইটেড হয়ে এইভাবে এসেছে ,,,কিন্তু এখন তো সেটা বলতে পারবে না তাই কথা ঘুড়িয়ে বলল

– মামনি তোমার জন্য কচুপাতা বাটা পাঠিয়েছে,,,

– ও তাই আচ্ছা দাঁড়া ,,,এই দাদাভাই তুই একটু পেখুর সাথে কথা বল,,,বলেই ফোনটা কান থেকে নামাতে নিলেই আবির বলে ওঠে,,,

-তীয়া আমি এখন একটু ব‍্যস্ত আছি,,পাখির সাথে পরে কথা বলে নেবো,,,বলেই লাইনটা কেটে দেয়,,,

– তীয়া ফোনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পাখির দিকে তাকায়,,, পাখির ছলছল চোখ দেখে ওর আর বুঝতে বাকি নেই যে নিশ্চয়ই এই মেয়ে কিছু করেছে ওর দাদাভাই এর সাথে,,যার কারণে ওর দাদাভাই রেগে আছে,,,,ও পেখুর দিকে তাকিয়ে বলে,,

– পেখু সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো??? তীয়ার বলার সাথে সাথেই পেখম তীয়াকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়,,,পেখমকে এইভাবে কাঁদতে দেখে তীয়া চমকে যায়,,, তখনই ভেবে নেয় যে ব‍্যাপারটা সিরিয়াস,,, ও ধির স্থির ভাবে পেখমকে বলে কি হয়েছে বলার জন্য,,, পেখম কাঁদতে কাঁদতে শুরু থেকে সবটা বলে দেয় তীয়াকে,,, কথাগুলো শুনে তীয়া উত্তেজিত হয়ে পড়ে,,,তারপর বলে ওঠে,,,

– এই মুহূর্তে আমার কি করতে ইচ্ছা করছে জানিস,,,মনে হচ্ছে তোর দুগালে ঠাসিয়ে দুটো চড় মারি,,, তুই কি করে পারলি এটা করতে??? এই আমি তোকে জিজ্ঞাসা করিনি যে পেখু তোদের মধ্যে সব কিছু ঠিক আছে কিনা?? স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক ঠিক আছে কিনা?? কি হল বল জিজ্ঞাসা করিনি??

– করেছো( চোখের জল মুছে) কিন্তু আমি উনার কথা গুলোর জন্য,,,( পেখমকে বলতে না দিয়ে তীয়া বলে,,)

– হ‍্যাঁ ওই মুখের কথা গুলো বিশ্বাস করে আমার দাদাভাই কে কষ্ট দিলি,,,একবারের জন্যও কি তোর এটা মনে হয়নি মানুষটা কত কষ্টের মধ্যে তোকে এইকথা গুলো বলছে?? বা এই মানুষটা এইরকম কথা বলতেই পারে না,,,,

– আমি সত‍্যিটা জানতে চাই বৌমনি প্লিজ বলো আমাকে,,,

– তুই যেটা করেছিস একদম ঠিক করিসনি পেখম,,, শেষ পর্যন্ত সন্দেহ করেছিস,,,জানি না দাদাভাই তোকে ক্ষমা করবে কিনা,,,ঠিক আছে শুনতে চাইছিস যখন শোন,,,তোর আর ঋষির বিয়ে যে দিন ঠিক হয় তারপরের দিনই দাদাভাই বাবাকে নিয়ে তোর বাবার কাছে যায় তোর হাত চাওয়ার জন্যে,,, তোদের সম্পর্কে কারোর কোনো অমত ছিলো না যদি তোরা একটু আগে সবাই কে বলতিস,,

(অতীত)

– কাকু আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আমি পেখমকে সারাজীবন ভালো রাখবো,,,আগলে রাখবো,,,আমি ওকে খুব ভালোবাসি,,, ওকে ছাড়া আমি এক মুহুর্ত ভাবতে পারি না,,,(আবির)

– দেখতেই পারছিস তো ছেলেটার কি অবস্থা,,, আমি বাবা হয়ে কি করে সহ‍্য করবো দেবেন্দ্র তুই বল??( অশোক বাবু)

– কিন্তু আমি যে নিরুপায় আবির,,,বাবার দু দুবার স্টোক হয়েছে,,,একবার হার্ট এ্যাটাক হয়েছে,,,এবার প্রায় মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছে,,,শরীরের কান্ডিশন একদম ভালো না,,আমি যে কিভাবে বাবাকে এখানে এনেছি তা কেবল আমি আর ওই ভগবান জানেন,,,ডাক্তার আসার সময় বারবার করে বলে দিয়েছিলেন যে বাবা যেন বেশি উত্তেজিত হয়ে না পড়ে,,বিশ্বাস কর এই মুহূর্তে পেখমের বিয়ে আমিও দিতে চাইনি কিন্তু ওই যে বাবা তার বন্ধুকে কথা দিয়ে ফেলেছে তাই আর না করতে পারিনি,,, যাতে বাবার শরীর টা আর খারাপ না হয়,,,,এখন যদি আমি ঋষির সাথে পেখমের বিয়ে ভেঙে দিয়ে তোর সাথে ঠিক করি,জানি না বাবা কিভাবে রিয়‍্যাক্ট করবে,,,যদি বাবা উত্তেজিত হয়ে কোনো ক্ষতি হয়ে যায় বা শেষ নিশ্বাস ত‍্যাগ করে তখন সহ‍্য করতে পারবি তো আবির?? পেখমকে বিয়ে করে সুখী হতে পারবি তো?? সারা জীবন মনে হবে না কারোর মৃত্যুর কারণ তুই??? বল কি হল বল??? আমি যদি আগে জানতাম তাহলে কখনোই বাবাকে এগোতে দিতাম না,,,তুই বল অশোক আমি কি করবো??? না পারছি একজন ছেলের কর্তব্য পালন করতে আর না পারছি একজন বাবার কর্তব্য পালন করতে,,(বলেই সোফায় বসে পড়লেন দেবেন্দ্র বাবু)

– না কাকু ,,,আমার ভুল,,, হয়তো পাখি নেই আমার ভাগ্যে,,, আমি এতকিছু জানতাম না,,, জানলে কখনোই এই অন‍্যায় আবদার নিয়ে তোমার কাছে আসতাম না,,,আমি নিজের সুখের জন্য কখনোই কাউকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারি না,,,, কখনো না,,,(আবির)

– আবিরের কথা গুলো শুনে দেবেন্দ্র আবিরকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন যে সত্যি যদি পাখি তোর ভাগ‍্যে থেকে থাকে তো ওর সিঁথি তোর দেওয়া সিঁদুরে রাঙা হবে,,,

চলবে,,,,

(আজকের পর্ব আবিরময় ছিল,,, আজকের পর্ব পড়ে সবাই সবার অনুভূতি কমেন্টে জানাবেন,,আর রিয়‍্যাক্ট করবেন,,, কপি করা নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here