#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব-১
-আর কতক্ষণ বলতো দাভাই এই ভাবে থাকবো,,,মানে বিয়ে করবি তুই আর কষ্ট করব আমি,,,এইগুলো ঠিক বল,,,সেই কোন সকালে ঘুম থেকে উঠে তোর কাজ গুলো করেই যাচ্ছি,,,
-হমমম তার জন্য তো তুই চকোলেট পাবি পেখম,,
-প্লিজ দাভাই এবার আমাকে ছাড় দেখ খুব সুন্দর করে সব গুছিয়ে দিয়েছি,,,
-আমি কি তোকে বলতাম নাকি যে আমার ঘর টা গুছিয়ে দিয়ে যা নেহাত তুই অদ্বিতীয়ার পচ্ছন্দ জানিস তাই ,,,,
-তাই কি হনুমান?? একদম মিথ্যা বলবিনা,,, প্রেম করলে তোমরা দশ দশটা বছর আর পচ্ছন্দ আমি জানবো,,,,চুপ হয়ে যা,,,,
-আচ্ছা সরি এই নে চকোলেট অদ্বিতীয়া পাঠিয়েছে আর এই নে চকোলেটের বক্স আমার তরফ থেকে,,, হয়েছে এবার,,,
-হ্যাঁ খুব হয়েছে(আনন্দের সাথে চকোলেট গুলো নিয়ে)
– বিকেলে তারাতারি রেডি হয়ে থাকবি আমি আবার বেশি দেরি করতে পারবো না,,,,
-কেন?? আবার কোথায় যাবো?? এই শোন তোর বিয়ে বলে কি যা ইচ্ছা তাই করবি আমার সাথে,,,আমাকে দেখে তোর কষ্ট হচ্ছে না?? মা আর তুই আমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে করিয়ে মারলি,,,,উফ আর পারি না,,
-পাগল নাকি তুই,,, বলছি মনটা আজ কাল কোথায় থাকে??আজকে যে শপিং মলে যাওয়ার কথা ছিল তা ভুলে গেছেন?তার পর বিয়ের কার্ড গুলো নিয়ে আসতে হবে,,,
-ও আমি একদম ভুলে গেছি,,,ঠিক আছে তারাতারি রেডি হয়ে নেবো বলেই চলে গেল পেখম,,,
___________________________________________
-এতক্ষণ যারা কথা বলছিল তারা হল দেবেন্দ্র সরকারের ছেলে পুলক ও মেয়ে পেখম,,, পুলক একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি তে কাজ করে,, দেবেন্দ্র সরকার হলেন একজন সরকারি বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক,,এবং স্ত্রী মনোরমা একজন হাউস-ওয়াইফ। পুলকের চেয়ে পেখম একটু বেশি আদরের তাদের কাছে,,,পুলকেরই বিয়ে আর মাত্র পনেরো দিন পর,,, পেখম এবার ভূগোল অর্নাশের সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে,,পুলকের বিয়ে ভালোবাসার হলেও এটা পারিবারিক ভাবেই ঠিক করা হয়েছিল বছর ১৫ আগে থেকে,,, দেবেন্দ্র সরকারের বিশেষ ঘনিষ্ঠ বন্ধু অশোক চৌধুরীর মেয়ে অদ্বিতীয়ার সাথে।
-অশোক চৌধুরী ভীষণ বড়ো একজন ব্যবসাদার,,। তার আন্ডারে বড়ো বড়ো দুটো কোম্পানি আছে একটা কলকাতাতেই আর একটা ব্যাঙ্গালোরে আর সেটা তার ছেলে আবির দেখা শুনো করে মাঝে মধ্যেই,,,বড়ো ছেলে আবির আর মেয়ে অদ্বিতীয়া এবং স্ত্রী অনুপমাকে নিয়ে তাদের সংসার বেশ হাসিখুশির মধ্য দিয়েই চলে যায়,,,,
__________________________________________
-আর সবথেকে বড়ো কথা হল দুই বন্ধুর এই গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্কের জন্য তারা পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থাকে,,,অবশ্য দেবেন্দ্র প্রথমে এখানে ছিলেন না,,, পরে বদলি হয়ে এখানে আসেন আর অশোক ওর কোনো কথা না শুনে এখানেই ফ্ল্যাট কেনার ব্যবস্থা করে দেয় সেখান থেকেই এখানে রয়েছে তারা,,,যেমন তাদের সম্পর্ক ভালো ঠিক তাদের স্ত্রীদের সম্পর্ক মধুর। পুলক ও অদ্বিতীয়ার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর তারা একে অপরকে জানতে বুঝতে কখন যে ভালোবেসে ফেলেছে নিজেরাই জানে না,,, আর রইল বাকি পেখম আর আবিরের কথা সেটা না হয় গল্প পড়তে পড়তে জানবেন
____________________________________________
-অদ্বিতীয়া আজ তো পুলকরা যাবে বিয়ের কার্ড গুলো আনতে,,,তারপর এই বাড়িতে আসবে মনোরমা বললো বেনারসী শাড়ি পাঠাবে কোনটা তোর পচ্ছন্দ হয় সেটাই ওরা নেবে,,,
-ঠিক আছে মা,,এখন চলো পেখম আসছে আজ আমাদের বাড়িতে পুলকের সাথে। ওর জন্য মিষ্টি দই বানায় ,,মেয়েটা এত ভালোবাসে,,,মা দাভাই যে কালকে বাড়ি এল তা আমার সাথে একবার দেখাও করলো না,,,
-দেখা করবে কি ভাবে বল তোর সাথে ?অনেক রাত করে ফিরেছে কাল আবির ফ্লাইট নাকি দু-ঘন্টা লেট ছিল,,,আর সকাল হতেই না হতে অফিসে চলে গেল তখন তুই ঘুমাচ্ছিলিস,,,
-ও ঠিক আছে তাহলে আমি ওর পছন্দের ব্লাক কফি আর স্যালাট বানিয়ে রাখি,,,
___________________________________________
-পেখম দেখ তো এটা অদ্বিতীয়া কে পড়লে কেমন লাগবে??
-উফফ দাভাই এটা না তুই ঐ কমলা রঙের শাড়ি টা দেখ ভালো লাগবে,,
-ঠিক আছে,,, আচ্ছা দুই মা আর বাবার জন্য জামা কাপড় পছন্দ করিস আমি এসে দেখছি,,,
-কেন তুই আবার কোথায় যাবি??
-ঐ তো সামনে ছেলেদের সেকসান আছে সো আবিরের জন্য কিছু কিনে নি,,ও তো আবার ফরমাল পছন্দ করে,,,
-ও একটা কাজ করি সবার টা যখন আমি পছন্দ করছি তাহলে উনার টাও আমি করি ,,
-আচ্ছা ঠিক আছে,,, আগে এই দিকের টা সামলে নে,,
-পেখম সবার জন্য জামা কাপড় কিনে সেই গুলো কাউন্টারে জমা দিয়ে আবিরের জন্য ফরমাল কিনতে গেল,,, প্রত্যেকটি ফরমাল শার্ট দেখেও পছন্দ হল না ,,না পেরে শেষে শপিং মলের স্টাফ দের বললো স্পেশাল কোনো আইটেম আছে কিনা,,, তারপর তারা একসাথে অনেক ফরমাল ড্রেস আছে সেই রুমে নিয়ে গেল,,,,সেখানে গিয়ে পেখম নিজে নিজেই প্রত্যেকটি ড্রেসের সাথে আবিরকে ইমাজিন করে একটি স্কাই ব্লু কালারের ফরমাল নিল,,,
-শপিং শেষ করে ওরা বিয়ের কার্ড নিয়ে অদ্বিতীয়া দের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল,,,
____________________________________________
-অদ্বিতীয়া দেখতো ওরা এল মনে হয়,,,বেল বাজছে কখন থেকে,, শুনতে পারছিস না,,,
-উফফফ মা শুনতে পেয়েছি হাতে ময়দা লেগে ছিল সেটা ধুয়ে তারপর তো যাবো,,,,রেখা দি কোথায় গেল কাজের সময় পাওয়া যায় না এটাকে,,,,(বলেই দরজা খুলে দেখে আবির দাঁড়িয়ে আছে)
-কি রে বুঁচি এত দেরি হয় কেন দরজা খুলতে??
-মা দাভাই দেখো আমাকে আবার বুঁচি বলছে,,,,তোর বৌ বুঁচি হবে দেখিস,,,
-সে দেখা যাবে এখন আমাকে এক গ্লাস জল দে তো??(সোফায় বসে জুতো খুলতে খুলতে বলল)
-আবির তুই জল খেয়ে যা আগে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং চলে আয়,,,
-কেন মা আমি তো এই সময় কফি আমার ঘরেই খায়,,,
-সেটি আজকে হচ্ছে না,, কারণ পুলকরা আসছে,,,বিয়ের কার্ড আর অদ্বিতীয়ার একটা শাড়ি নিয়ে আসছে পেখম কি মাপ নেবে ব্লাউজের ডিজাইন করার জন্য,,,
-ও ঠিক আছে,, ওরা আসলে আমাকে ডেকো,,,আর হ্যাঁ মা কফিটা তাহলে ,,না থাক কিছু না(বলেই উপরে চলে গেল)
-আরে পুরো কথাটা বলে যা আবির,,,এই ছেলের আবার কি হল,,?
-আমি বলছি মা আজকে আমাদের বাড়িতে সন্ধ্যেবেলার কফিটা না হয় পেখম এসে করবে,,,,
-কি যে বলিস তুই? তোর মাথা ঠিক আছে,,, কুটুম মানুষ ওরা,,,
-কিন্তু মা আমি যে দাভাই এর ইচ্ছার কথা টা বললাম(বিড়বিড় করে)
____________________________________________
-কলিং বেলের আওয়াজ কানে আসতেই অদ্বিতীয়া ছুটে যায় দরজা খোলার জন্য,,, দরজার কাছে গিয়ে আবার থেমে যায় ,,হঠাৎ আবিষ্কার করলো ওর কেমন যেন লজ্জা লাগছে পুলকের সামনে যেতে,,গতকালের ফোনালাপের পর থেকে এই লজ্জাটা যেন তার বেশি বেড়ে গেছে,,,অদ্বিতীয়া নিজের মনেই বলতে লাগলো আমি কবে থেকে পেখমের মত হলাম,, ও তো দাদাভাই এর সামনে গেলেই কেমন লজ্জায় লাল নীল হয়ে যায়,,,
-কি রে দরজার সামনে ওই ভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন??ওরা এলো বোধহয় সর দেখি আমি খুলছি,,,তুই যা ওদের জন্য খাবার সার্ভ করতে বল রেখাকে,,,,
-অদ্বিতীয়া চলে যেতেই অনুপমা দরজা খুলে দেয়,,,দরজার দিকে তাকিয়ে সাথে সাথেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে,পুলক আর পেখম কে ড্রয়িংরুমে বসতে বলে,,,
-তোমরা কেমন আছো?
-ভালো কাকিমা তুমি কেমন আছো?? আর বৌমনি কোথায়??
-অদ্বিতীয়া রান্নাঘরে,,,অদি পুলককে একটু ঠান্ডা শরবত দে না,,,,
-না না তার দরকার নেই,,,
-ওতো লজ্জা পেতে নেই শ্বশুরবাড়িতে,,,আমিও তোমার আর এক মা,,,কি আমি ঠিক বলিনি পেখম??
-একদম ঠিক বলেছো,,,তোমরা কথা বলো আমি বৌমনির কাছে যায়,,,
-পেখম রান্নাঘরে গিয়ে দেখে অদ্বিতীয়া রেখা দির সাথে কথা বলছে আর একটা প্লেটে দই সার্ভ করছে,,,ও পিছন থেকে অদ্বিতীয়া কে জড়িয়ে ধরে,,,
-পেখম আমার কিন্তু সুরসুরি লাগছে,,,ছাড় হাত থেকে কিন্তু দই পড়ে যাবে তখন তুই খেতেও পারবি না,,,
-উফফ খুব পারবো খেতে,,,,তুমি নিজে বানিয়েছো তাহলে তো অনেকটাই হবে বৌমনি,,,আর এখন থেকে সুরসুরি গুলো হজম করতে শেখো এরপর যখন আমার দাভাই দেবে তখন কি করবে শুনি???(বিজ্ঞ বিজ্ঞ ভাব নিয়ে)
-এই তবে রে দাঁড়া তোর দেখাচ্ছি মজা,,,বলেই অদ্বিতীয়া পেখমকে ধরতে যায় আর পেখম হাসতে হাসতে বলে তুমি আমাকে ধরতে পারবে না বৌমনি বলেই দৌড় দেয়,,,,ড্রয়িংরুমের সোফার চারপাশে দুজনে ছুটোছুটি করছে আর ওদের দেখে অনুপমা হাসিমুখে বলে ওঠে,,,দেখেছ পুলক এদের দেখে কে বলবে এরা ননদ ভাইবৌ??
-পেখম দাঁড়াতে বলেছি কিন্তু(পুলক বলে ওঠে)
-উফ আপনি চুপ করুন এটা আমাদের ব্যাপার (অদ্বিতীয়া)
-বৌমনি তুমি কোনোদিনই পারবে না আমাকে ধরতে মনে নেই ছোটবেলাতেও পারতে না,,,পেখম কে ধরতে না পারার জন্য অদ্বিতীয়া সোফার কুশন একটা হাতে নিয়ে মারতে যায় আর তা দেখে পেখম পিছন ফিরে দৌড়াতে যাবেই কি তার আগে একটা শক্তপোক্ত বুকে ধাক্কা খাই,,,
চলবে….
( )