#হৃদহরিনী
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ৯
সবাই একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে আর অর্ণ কিনা খাওয়ার জন্য বলছে! অর্ণের আব্বু ওকে বললো, তুই কী কখনও কোনো কিছু সিরিয়াস হবি না?
অর্ণ বললো, আমি তো সিরিয়াস আছি৷ বুৃঝলাম না! কিন্তু তোমরা একটু বেশিই চিন্তা করছো। সবকিছু সহজ ভাবে নিলেই তো হয়। সামান্য একটা মা’রা’মা’রি এটা আবার এমন কি। কাল কলেজে আসবে সবাই তখন ওরা সরি বলবে হৃদিতার কাছে। ব্যাপারটা ওখানেই শেষ।
‘ থা’প্প’ড় মে’রে তোর সব দাঁত ফেলে দিবো৷ সবকিছু নিয়ে ফাইজলামি করতে তোকে নিষেধ করেছি না৷ তুই যেরকম বলছিস এটা সেরকম শেষ হবেনা। যেই ছেলেগুলোকে তুই মে’রেছিস ওর বাবা অনেক ক্ষমতাশালী। আর ওরা সুস্থ হলে তোর উপর আক্রমন করতে পারে। তাই তোর এখানে থাকা ঠিক হবেনা।
হায়াতি বললো, বড় আব্বু ঠিক বলেছে। অর্ণ এখানে থাকলে এটা নিয়ে ঝামেলা আরও বাড়বে। তাই অর্ণকে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিলেই ভালো হবে৷
হায়াতির বা’চ্চা তুই আবার আমার পিছনে পড়েছিস। তুই তো এই সুযোগটাই খুজছিলি। ডা’ইনি একটা। তোকে তো পরে দেখে নিবো৷ আমি বললাম, তোমরা এমন ভাবে বলছো মনে হয় যেনো আমি চলে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। ওটা হৃদিতার কলেজ। ওকে ওখানে পড়তে হবে। আর সবাই এত ভয় পাচ্ছো কেন বুঝিনা৷
নির্ঝর বললো, অর্ণ ভাইয়া ঠিকই বলেছে। ভাইয়া চলে গেলেই সব সমস্যার সমাধান হবেনা৷ তার চেয়ে ভালো দেখি কাল কী হয়। কলেজ কতৃপক্ষও হয়তো চাইবেনা এই ঝামেলা সামনে আগাক। এখন ভাইয়াকে পাঠিয়ে দিলে তখন উল্টো ঝামেলা আরও বাড়বে।
নির্ঝরের কথায় নুশানও শায় দিলো। অর্ণের আব্বু ওকে বললো, আজকের পর তুই একা একা কোথাও যাবিনা৷
অর্ণ বললো, এমনিতেও আমি একা একা কোথাও যাইনা। সবসময় তো ফ্রেন্ডদের সাথেই আড্ডা দেই। তা এখন কি খাওয়ার কথা বলতে পারবো?
অর্ণের আব্বু বললো, ওর সাথে কথা বলাই বেকার। এরপর যদি আর কোনো ঝামেলা করিস তাহলে তোকে দেশেই রাখবো না৷।
*****
বিকালে অর্ণ বাসার বাহিরে বের হতে যাবে তখনই হায়াতি বললো, কোথায় যাস তুই?
‘ ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিবো
‘ আপনার আর আড্ডা দেওয়া হচ্ছেনা মিঃঅর্ণ। বড় আব্বু আপনাকে বাহিরে যেতে নিষেধ করে গেছে। এটার দায়িত্ব আমাকে দিয়ে গেছে
কপাল আমার! এরা আমাকে বাসায় বন্দী করে রাখতে চায়। মনে হয় যেনো আমি কোনো আসামী৷ দায়িত্ব দেওয়ার আর লোক খুজে পায়নি৷ এখন তো সু’নামি হয়ে গেলেও এই ডা’ইনিটা আমাকে বাসার বাহিরে যেতে দিবেনা৷ কেমনডা লাগে! ওই ছেলেগুলোর থেকে আমি বেশি ঝামেলার মথ্যে আছি৷ হায়াতিকে বললাম, আমার এখন বের হতে হবে। কাজ আছে
‘ আবার মা’রা’মা’রি করবি নাকি?
‘ বাবাগো বাবা! এই মেয়ে বলে কী৷ ওই তোর কী আমাকে গু’ন্ডা মনে হয় যে সবসময় এসব নিয়েই থাকবো৷
‘ ভার্সিটিতেও কাজের কথা বলেছিলি। তারপর কী কাজ করেছিস তা তো সবাই দেখেছি। আমি ভেবেছি তোকে বললে ঝামেলা হতে পারে তাই তোকে না বলেই আমরা সবাই গেলাম। আর সেখানে গিয়ে বুঝতে পারি আমরাই পরে এসেছি
‘ তো কি চুপ করে থাকতাম নাকি?
‘ মা’রা’মা’রি সবকিছুর সমাধান না৷ এখন এই ঝামেলা আরও বাড়তে থাকবে৷ এক পর্যায়ে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। এখন তো ওই ছেলেগুলো চুপ করে থাকবে না। এর থেকে ভালো হত যদি এটা আমরা অন্য ভাবে সমাধান করতাম। আমরা পুলিশের কাছে বলতে পারতাম৷ তাহলে আর এত কিছু হত না
‘ আমার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে ডা’ইনিটার।
‘ এটা কেমন কথা অর্ণ! চিন্তা না হওয়ার কি আছে। আমার সাথে এমন কিছু হলে তোর কি চিন্তা হত না? শুধু আমার না পরিারের সবারই তোকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।
‘ আজকে যদি রুহাশা থাকতো তাহলে ওরও হয়তো আমার জন্য চিন্তা হত৷ কিন্তু কপাল আমার! তোর জন্য সব শেষ হয়ে গেলো।
‘ সবসময় শুধু ফাইজলামি। আমরা সবাই কত চিন্তায় আছি। আর তুই হালকা ভাবে নিচ্ছিস।
‘ সবাই তো অযথাই চিন্তা করছে। তবে যাইহোক,আমার এখন বের হতে হবে৷ আমি বাসায় থাকতে পারবোনা। আমি কী মেয়ে মানুষ নাকি যে সারাদিন বাসায় থাকবো
‘ থাকা লাগবে তোর। এখন কোথাও যাওয়া যাবেনা।
‘ আমার কাজ আছে?
‘ কী কাজ শুনি?
‘ আমি ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিবো চা খাবো
‘ আমি চা বানিয়ে দিচ্ছি। আর আড্ডা দেওয়ার জন্য তো আমরা সবাই আছি৷
হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিনা৷ ওদের সাথে নাকি এখন আড্ডা দিবো আমি। এর থেকে তো জে’লে থাকা ভালো। ডা’ইনিটাকে অন্যদিন চায়ের কথা বললে দেয়না আর আজ নিজে থেকে দিতে চাচ্ছে। মানে আমাকে বাসার ভিতর রাখার সব পরিকল্পনা করে রেখেছে৷ এর ভিতরে রাফসান কল দিলো। আমি কথা বলার আগেই হায়াতি আমার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে গেলো৷
রাফসান বললো, কোথায় তুই? তোর জন্য অপেক্ষা করছি
হায়াতি বললো, ওই তোদের কী কোনো চিন্তা নেই। কিছুখন আগে এত বড় একটা ঝামেলা বাঁধিযেছিস এখন আবার ঘুরে বেড়াচ্ছিস৷ যদি ওরা আক্রমন করে তখন কি হবে।
‘ ওরা আমাদের সাথে পারবেনা হায়াতি৷ কী মা’রটাই না মে’রেছি ওদের। ভয়ে আর কখনও আমাদের সামনে পরবেনা।
‘ হ্যা তোমরা তো একেকজন মুভির নায়ক৷ তোমাদের দেখে ভিলেনরা ভয় পাবে৷ এখনই বাসায় যাবি না হয় আমি আন্টিকে কল দিবো৷ আর অর্ণও বাসা থেকে বের হবেনা।
‘ আবার আম্মুকে এর ভিতরে টানিস কেন৷ অর্ণ ঠিকই বলে তুই আসলেই একটা ডা’ইনি
‘ ভার্সিটিতে দেখা হউক তখন দেখিস এই ডা’ইনি কি করতে পারে। এখনই সবাই বাসায় যাবি৷ আয়ান, ইশান ওরা কোথায়?
‘ আছে পাশেই
‘ ওদেরকে দে
হায়াতি আয়ান,ইশানকে বলতে লাগলো, এখনই বাসায় যাবি। যদি একটু দেঁড়ি করিস তাহলে আন্টিকে কল দিয়ে কি বলি দেখবি। তোরা ভালো করেই জানিস আন্টি আমার সব কথা শুনবে।
আয়ান বললো, হায়াতি বোন আমার সেই পিচ্চিকাল থেকে আমাদের সাথে এমন করছিস৷ তোর জন্য কিছু করতে পারিনা। সব সময় শুধু আম্মুকে বলে দেবার ভয় দেখাস।
ইশান বললো, কপাল ভালো! তুই আমাদের ডিপার্টমেন্টের না। তা না হলে আমাদের জীবনটা তেজপাতা হয়ে যেতো।
‘ এখন তাড়াতাড়ি বাসায় যা।
‘ আচ্ছা বইন৷ আপনার কথামতই সব হবে৷
হায়াতি কলটা কেঁটে মোবাইল অর্ণকে দিলো। আর বললো, ওরা সবাই বাসায় যাবে৷ তোর আর আড্ডা দিতে হবেনা৷
” ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কান্না করি৷ হায়াতির বা’চ্চা কামডা করলো কী। এখন কার মন চায় বাসায় থাকতে৷ বাহিরে বের হতে না পারলে তো শান্তি পাবোনা৷ হায়াতিকে বললাম, আমি বাহিরে বের হওয়ার চিন্তা যখন একবার করেছি তখন বের হতে না পারলে মোটেও শান্তি পাবোনা। এটা তো তুই ভালো করেই জানিস৷ আমি এক কাজ করি একটু হাঁটাহাঁটি করে আবার চলে আসবো।
‘ আচ্ছা তাইলে আমিও তোর সাথে যাবো৷ বাসার সামনে হেঁটে আবার বাসায় আসবো
” ওই তুই কী পুলিশ আর আমি আসামি যে এমন করছিস৷
‘ আচ্ছা তাহলে যেতে হবেনা।
‘ না থাক! চল
বাসার সামনে বের হয়ে কফি খাচ্ছি আর দুজনে হাঁটছি৷ হায়াতি আমার হাত ধরে রেখেছে শক্ত করে৷ কেমনডা লাগে। ঠিকভাবে হাঁটবো তারও উপায় নেই৷
চলবে—-