হৃদহরিনী পর্ব ৮

0
330

#হৃদহরিনী
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ৮
হৃদিতা ওর ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো ক্যাম্পাসে তখন কিছু ব’খাটে ছেলে ওকে মিন করে অনেক খা’রাপ খা’রাপ কথা বলছিলো। এক পর্যায়ে হৃদিতা আর চুপ করে থাকতে পারলো না৷ ছেলেগুলোকে কিছু বলতে যাবে তখন হিয়া বললো, ওরা খুবই বা’জে ছেলে। সবসময় নে’শায় মত্ত থাকে৷ এদের কিছু বললে আরও বিপরীত রিয়্যাকশন হবে৷ আমরা গিয়ে স্যারকে বলি চল

‘ ওরা এত বা’জে কথা বললো এসব শুনেও চুপ করে থাকবো? চুপ করে থাকলে এরা আরও হিং’স্র হয়ে পড়বে৷ ওরা ভাববে আমরা যখন কোনো প্রতিবাদ করছিনা তারমানে ওদের কথা আমরা মেনে নিচ্ছি। মানে ওদের এরকম আচরন আমাদের ভালো লাগছে। তখন আরও বা’জে ব্যবহার শুরু করবে এরা।

‘ ওরা অনেক আছে৷ ছেলেরাও ওদের ভয়ে কিছু বলতে পারেনা সেখানে আমরা কজন মেয়ে আর কি বা বলতে পারি৷

‘ মেয়ে হয়েছি তো কি হয়েছে? হাত তো আছে আমাদের। ওদের থা’প্প’ড় দেওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট।

হিয়া আরও কিছু বলতে যাবে তখনই সেই ছেলেগুলো আরও বা’জে কথা বলছিলো। হৃদিতা আবার আর কিছুতেই সহ্য করতে পারছিলো না। ছেলেগুলোর কাছে গিয়ে সাথে সাথেই ওর পায়ের জুতো খুলে জোরে গা’লে মা’রলো হৃদিতা।

হৃদিতা যখন ছেলেগুলোর কাছে গেলো তখনই হিয়া হায়াতিকে কল দিয়ে সবটা বললো। হায়াতি ক্লাসে ছিলো তখন। সাথে সাথে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলো। হিয়াকে বললো, হৃদিতাকে ওখান থেকে নিয়ে আসতে।

হৃদিতা বললো, যদি আবারও এরকম থা’প্প’ড় খেতে ইচ্ছে করে তাহলে আবার আমাদের সাথে বা’জে ব্যবহার করবি৷

হৃদিটা চলে আসতে গেলে ছেলেটা ওর হাত ধরলো। তখন ওরা হৃদিতাকে আরও অনেক কিছু বলতে লাগলো। হৃদিতার ফ্রেন্ডরা সবাই ওর কাছে চলে আসলো৷ তখন ছেলেগুলো ওদের সাথেও অনেক বা’জে ব্যবহার করলো।

সবার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। এরকম বা’জে সিচুয়েশনে এর আগে ওরা কখনও পড়েনি৷ এই প্রথম কোনো ছেলে ওদের সাথে এত খা’রাপ আচরন করে যাচ্ছে। রাগ,জেদের কারনে হৃদিতা আর ওর ফ্রেন্ডদের চোখ লাল হয়ে গেলো। ওদের ইচ্ছে করছে ছেলেগুলোকে মা’রতে। কিন্তু তা তো আর সম্ভব না৷

একটা ছেলে বললো, ভাই ক্যাম্পাসে এরকম করলে সমস্যা হয়ে যেতে পারে৷ কলেজ থেকে বাহির হলে যা করার করা যাবে৷ এখন আশেপাশে সব স্টুডেন্টরা আছে৷ সবাই দেখছে৷

এটা শুনে ছেলেটা হৃদিতার হাত ছেড়ে দিলো৷ হৃদিতা আর ওর ফ্রেন্ডরা ওখান থেকে চলে আসলো। স্যার ওদের থেকে সবটা শুনে বললো, এর বিচার অবশ্যই হবে। আমি কালকে ওই ছেলেগুলোর গার্ডিয়ান কলেজে আসতে বলবো। এখন ক্লাসে যাও তোমরা।

হৃদিতা আর ওর ফ্রেন্ডরা ক্লাসে এসে চুপচাপ বসে আছে। কারও সাথে কথা বলছেনা৷ সবাই ওদেরকে শান্তনা দিচ্ছে।

অন্যদিকে ছেলেগুলো এখনও সেখানেই আছে। এরা হচ্ছে এই এলাকার সবচেয়ে ব’খাটে ছেলে৷ এমন কোনো কাজ নেই যা এরা করেনা। এদের বাবা ক্ষমতাশালী হওয়ার কারনে এরা কোনো কিছুর পরোয়া করেনা। ছেলেগুলো হলো,” রাহুল,নিহান,সাদাত আর এদের ফ্রেন্ড।

” হায়াতি ভাবছে বাসায় এটা বলবে কিনা৷ হিয়া হায়াতিকে কল দিয়ে জানিয়েছে ওরা যে এখন ক্লাসে আছে৷ হায়াতি ভাবছে যদি ছেলেগুলো কলেজের বাহিরে কোনো সমস্যা করে। তারউপর হৃদিতা তো ওই ছেলেগুলোকে থা’প্প’ড় মে’রেছে৷ নিশ্চয়ই ওরা কলেজের বাহিরে কিছু করার প্ল্যান করে রেখেছে। এখন বাসায় কল দিলে তো তারা অনেক চিন্তা করবে৷ আবার যে ঝামেলা হয়েছে তাতে বাসায় কল না দিয়েও উপায় নেই৷ হায়াতি ওর ছোট আব্বুকে কল দিলো৷ তাকে সবকিছু বললো।

তারপর হৃদিতাকে কল দিয়ে বললো, কলেজ ছুটি হলে সব ফ্রেন্ডরা একসাথে বের হতে৷ কলেজের বাহিরে ওরা আছে৷ হায়াতি নুশান আর নির্ঝরকেও কল দিয়ে বললো। ওরা সবাই থাকবে৷ ইচ্ছে করেই অর্ণকে কিছু জানায়নি৷ ওকে বললে ঝামেলা আরও বেড়ে যাবে৷ তাই অর্ণকে না জানানোই ভালো হবে৷ কলেজ ছুটি হতে আর কিছুখন আছে৷ হায়াতি আর বাকি সবাই হৃদিতার কলেজের সামনে আসতে লাগলো৷

******

এদিকে অর্ণ আর ওর ফ্রেন্ডরা দ্রুত গতিতে বাইক চালিয়ে কলেজের ভিতর আসলো। একসাথে এত গুলো বাইক দেখে সবাই অবাক হয়ে গেলো। সবাই বুঝতে পারলো কোন না কোন ঝামেলা হয়েছে। প্রতিটা বাইকে দুজন করে ছেলে। অর্ণ বাইক থামিয়ে হৃদিতার ক্লাসের দিকে যেতে লাগলো। অর্ণকে দেখা মাত্রই হৃদিতা জড়িয়ে ধরে কান্না
করতে লাগলো৷ অর্ণ হায়াতি আর ওর ফ্রেন্ডদের নিয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে আসলো৷ অর্ণ বললো, কোন ছেলেগুলো?

হৃদিতা হাতের ইশারায় ছেলেগুলোকে দেখিয়ে দিলো। অর্ণ এতটাই রেগে ছিলো যে দৌড়ে ছেলেগুলোর কাছে গিয়েই ওদের মা’রতে থাকলো৷ ওরা এরকম অতর্কিত মা’রা’মা’রির জন্য প্রস্তুত ছিলোনা। ছেলেগুলোকে এতই মা’রলো যে ওদের সবারই হাত,মুখ,মা’থা ফেঁ’টে র’ক্ত বের হতে লাগলো। অর্ণ ছেলেগুলোকে বললো, তুই যার সাথে খা’রাপ ব্যবহার করেছিস ও আমার বোন৷ শুধু আমার বোন না বাকি যেই মেয়েদের সাথে খা’রাপ ব্যবহার করেছিস ওরাও আমার বোন৷ আজকের পর ওদের কথা ভুলে যা অন্য কোনো মেয়ের সাথেও যদি খা’রাপ আচরন করিস তাহলে তোর হাত- পা ভে’ঙে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিবো৷

অর্ণ হৃদিতাকে আর ওর ফ্রেন্ডদের নিয়ে কলেজ থেকে বের হয়ে গেলো৷ অর্ণ কলেজ থেকে বের হলো এর ভিতরেই হায়াতি,ছোট আব্বু,নির্ঝর,নুশান চলে আসলো। তারা অর্ণকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে৷ এটা বুঝার আর বাকি নেই যে কি হয়েছে।
অর্ণ হৃদিতার সব ফ্রেন্ডদের বাসায় পৌছে দিয়ে ওর বাসায় গেলো। বাসায় সবাই অর্ণের জন্য অপেক্ষা করতেছিলো এতক্ষন। হায়াতি বুঝতে পারছেনা অর্ণ কিভাবে জানতে পারলো। হৃদিতাও অর্ণকে বলেনি৷ তাহলে অর্ণকে কে বললো? এরকম ঝামেলা হবে ভেবেই হায়াতি অর্ণকে বলতে চায়নি৷ যেটা নিয়ে ভয় পাচ্ছিলো এখন সেটাই হলো। অর্ণ হৃদিতাকে বললো, আর কোনো ভয় নেই। ছেলেগুলো এরপর আর বিরক্ত করবেনা।

অর্ণের আব্বু ওকে বললো, এরকম করাটা কি প্রয়োজন ছিলো? শুধু শুধু মা’রা’মা’রি। এখন যদি এটা নিয়ে আরও সমস্যা হয় তখন কি হবে

‘ যা হওয়ার হবে। সব কিছুর জন্য প্রস্তুত আছি। আমার বোনকে কেও কিছু বলবে আর আমি চুপ করে থাকবো এটা অসম্ভব। ওকে যে আরও মা’রিনি ওর ভাগ্য ভালো।

‘ মা’রলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবেনা। তুই কি ওদের মত গুন্ডা নাকি যে মে’রে সব সমস্যার সমাধান করবি। এর জন্যই হায়াতি তোকে জানায়নি। আমরা কেওই তোকে জানাইনি। তোকে বারবার নিষেধ করেছি আর কখনও এসব ঝামেলায় জড়াবিনা। আজকে আবার তুই সেটা করলি। ওদের আর তোর ভিতর আমি কোনো পার্থক্য দেখিনা৷ এটা এখন এত সহজে শেষ হবেনা।

অর্ণ কিছু বলছেনা৷ চুপ করে সবার কথা শুনে যাচ্ছে। অর্ণ বুঝতে পারছে এখন কথা বললে উল্টো রিয়্যাকশন হবে৷ তাই চুপ করে থাকাই ভালো হবে।

হায়াতির আব্বু বললো, ভাইজান কলেজ থেকে কল দিয়েছে এখন তার কি করবেন৷ অর্ণ যাদের মে’রেছে তার বাবা খুবই ক্ষমতাশালী। অর্ণকে এখান থেকে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দেই। তারপর পরিস্থতি শান্ত হলে তখন না হয় আবার ফিরে আসবে।

অর্ণ বললো, আমি কোথাও যাবোনা। আমি কাউকে ভয় পাইনা৷ ওর বাবা ক্ষমতাশালী হয়েছে তো কি হয়েছে৷ তার ছেলে অন্যায় করেছে তাই মে’রেছি৷ এখন এসব কথা বাদ দাও সবাই। ছোট আম্মু খাবার দাও খুব ক্ষুদা পেয়েছে।

অর্ণের এরকম আচরনে সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here