#হৃদহরিনী
#লেখকঃRab_Al_Islam
#পর্বঃ১৪
হায়াতি কল কেঁটে দেওয়ার সাথে সাথেই অর্ণ বাইক থামালো৷ হায়াতিকে বললো, ডা’ইনি একটা এটা তুই কী করলি?
‘ কী করলাম?
‘ তাসফিয়াকে মিথ্যা বললি কেন?
‘ তোরা না শুধু ফ্রেন্ড তো মিথ্যা বললে সমস্যা কোথায়?
‘ ফ্রেন্ড তো তাই বলে তুই মিথ্যা বলবি।
‘ আসছে ভালোবাসা দেখাতে৷ যতসব ঢং, বাসায় গিয়ে ওরে কল দিতে। তুই এত মেয়ের সাথে ফ্ল্যাট কেন করিস? কখনও ভালো হবিনা।
‘ সবসময় নেগেটিভ ভাবিস কেন? ফ্রেন্ড থাকলেই কি তার সাথে ফ্ল্যাট করা হয় নাকি।
‘ তারমানে অন্য মেয়েদের সাথে ফ্ল্যাট করিস
‘ হায়াতির বা’চ্চা তুই এই মাঝ রাস্তায় বাইক দাঁড় করিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করবি নাকি। বাসায় যাই চল
‘ সত্যি কথা বললে তো ঝগড়াই মনে হবে৷ এখন তো তাড়াতাড়িই বাসায় যেতে হবে। তাসফিয়াকে তো কল দিতে হবে৷ তা না হলে তো রাগ করবে৷
‘ তুই বাইকে ওঠ। সবসময় নেগেটিভ চিন্তা করিস। ক্ষুধা লাগছে বাসায় যাবো।
‘ আচ্ছা রেস্টুরেন্টে চল। অনেকদিন যাওয়া হয়না।
‘ টাকা তুই দিবি। আমার কাছে টাকা নেই
‘ বড় আব্বু তোকে টাকা দিতে বলেছিলো সেই টাকা আছে
‘ আমার টাকা দিয়ে আমাকেই রেস্টুরেন্টে নিবি৷ আমার খাওয়ার দরকার নেই। তুই আমার টাকা দে
‘ টাকা তোরে এমনিতেও দিবোনা। এখন তুই ভেবে দেখ কি করবি। রেস্টুরেন্টে যাবি না বাসায় যাবি।
‘ টাকা যখন দিবিই না তখন রেস্টুরেন্টে যাওয়াই ভালো হবে। খেয়ে তোর টাকা উসুল করতে হবে। এছাড়া আপাতত কোনো উপায় নেই।
অর্ণ হায়াতিকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেলো। যেখানে রুহাশার সাথে এসেছিলো ওইখানেই গেলো। কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যা হয় আর কি। সেখানে রুহাশাও আছে। ওর সাথে একটা ছেলে। রুহাশা হায়াতিকে বললো, আপনাদের ভিতর সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে আপু?
হায়াতি বললো, হ্যা। কি আর করবো এত বছরের ভালোবাসা ছেড়ে তো দিতে পারিনা৷ তাই সবকিছু মানিয়ে নিচ্ছি।
ওদের কথা অর্ণ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে৷ এই হায়াতির বা’চ্চা এসব কি বলছে৷ ওর সাথে আমার কিসের ভালোবাসা কিসব মানিয়ে নেওয়ার কথা বলছে৷ আমি হায়াতিকে বললাম, ওই তোর সাথে আমার কিসের রিলেশন?
হায়াতি বললো, দেখছো এখনও কেমন রেগে আছে৷ তুমি সামনে তাই এমন করছে৷
রুহাশা বললো, থা’প্প’ড় দিবেন আপু মাঝে মধ্যে দেখবেন আর এমন পা’গলামি করবেনা৷ আমার বিএফ এমন হলে আমি উঠতে বসতে থা’প্প’ড় দিতাম
রুহাশার মুখে থা’প্প’ড়ের কথা শুনে অর্ণ দু’গালে হাত দিয়ে আছে৷ হায়াতিকে বিশ্বাস নেই। অভিনয় চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে থা’প্পড়ও দিতে পারে। আমি বললাম, কোনো কিছু না জেনে মানুষের নামে মন্তব্য করা ঠিক না। হায়াতি আমার কাজিন৷ ওর সাথে আমার কোনো রিলেশন নাই৷ ও তোমাকে মিথ্যা বলছে।
হায়াতি কিছুটা কান্নার অভিনয় করে বললো, দেখলেন আপু ও কেমন করে বললো। যখন রেগে থাকে তখনই এমন করে। ওকে জোর করে রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছি। তাই এসব বলছে৷
রুহাশা বললো, তোমরা ছেলেরা এমনই। এক নারীতে আসক্ত হতে পারোনা। টাইমপাস শেষ হলে তাকে ছেড়ে যেতে চাও। আপু যা করছে একদম ঠিক করছে৷ দরকার হলে তোমার হাত-পা বেঁ’ধে রাখবে তারপরও তোমাকে যেতে দিবেনা।
” এরা দুজন আমাকে পা’গল বানিয়ে ছাড়বে৷ একদিকে হায়াতি কি অসাধারণ অভিনয় করে যাচ্ছে আর অন্যদিকে এই রুহাশা কিছুতেই আমার কথা বিশ্বাস করছেনা৷ আমার প্রচন্ড রাগ হলো৷ কিছুটা জোরেই বললাম, আমাকে কি তোমাদের পা’গল মনে হয়। বললাম না ও আমার কাজিন
আশেপাশের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এখন সত্যি সত্যি নিজেরে পা’গল মনে হচ্ছে। খেয়ালই ছিলোনা আমি যে রেস্টুরেন্টে ছিলাম। সবাই কি ভাববে এখন। এরা দুজনে আমাকে সত্যিই পা”গল বানিয়ে ছাড়বে।
হায়াতি বললো, কেও কিছু মনে করবেন না৷ ও কিছুটা সা’ইকো টাইপ। রেগে থাকলে মাঝে মধ্যেই এমন করে।
রুহাশা বললো, আচ্ছা আপু থাকেন আপনারা। আগে অর্ণকে শান্ত করেন৷
” আমি চুপ করে বসে আছি৷ হায়াতি খাবার খেতে লাগলো। যা রাগ হচ্ছে ওই রুহাশার উপর৷ বো’কা মেয়ে হায়াতি যা বলে তাই বিশ্বাস করে৷
হায়াতি বললো, কিরে খাচ্ছিস না কেন? না খেলে তোরটা পার্সেল নেই
‘ তারপর বাসায় গিয়ে সবাইকে বলবি তুই ট্রিট দিচ্ছিস। আমার টাকা দিয়ে আমাকেই ট্রিট দিচ্ছিস৷ আমি তো এর শোধ তুলবো। ওইদিন তোর উপর মায়া করে বেশি কিছু বলিনি। যদি বলতাম দোকানী রাজি হয় নাই তখনই ভালো হত। আর একটু হলেই কান্না করে দিতি তাই আর কিছু বলিনি।
‘ হাহা, আমি তো জানি পাবলিক প্লেসে তুই আমার সাথে ওরকম করবিনা৷
‘ সুযোগ একবার পাই তখন দেখিস
‘ সেই সুযোগ কখনও পাবিনা অর্ণ৷
****
” বাসায় আসলাম আর তখনই তাসফিয়া কল দিলো। আর সময় পায়নি কল দেওয়ার৷ এখন রিসিভ করলেও ঝামেলা আর না করলে আরও বড় ঝামেলা৷ হায়াতি আমার দিকে তাকিয়ে ওর ডা’ইনি হাসি দিলো৷ আমি কলটা রিসিভ করার সাথে সাথেই বললাম, আরে ভাই এতবার কল দেওয়া লাগে। আমি মাত্র বাসায় আসছি। বললাম তো তোরে টাকা দিবো আমি৷ তোর জরুরি লাগবে তাও বুঝছি৷ আমার কাছে যা টাকা আছে সব দিবো৷ তোর সমস্যা মিটুক তারপর যখন পারবি তখন আমার টাকা দিস। এখন বাসায় আসছি ফ্রেশ হব খাবো। বাহিরে বের হয়ে তোরে কল দিবো।
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে কলটা কাঁটলাম। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। হায়াতি ভূ’ত দেখার মত করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে৷ আব্বু জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে?
এটাই তো চেয়েছিলাম। এখন আব্বুকে কিছু একটা বলে টাকা নিতে হবে৷ আব্বুকে বললাম, এক ফ্রেন্ডের টাকার দরকার৷ ওকে দিবো বলেছি তারপরও বারবার কল দিচ্ছে। ও ভাবছে আমি ওকে দিবোনা৷
আব্বু বললো, খুব ভালো কাজ করেছো। টাকা আমার কাছ থেকে নিয়ে নিও
‘ আমার কাছে যা আছে তা দিয়ে দিবো। লাগবেনা আর
‘ আমি বলেছি আমার কাছ থেকে নিতে
‘ আচ্ছা ঠিক আছে৷
মনে মনে যে কতটা খুশি তা বলে বুঝাতে পারবোনা। সবার সামনে রিয়্যাকশন দেখাতে পারছিনা৷ হায়াতি মনে হচ্ছে ঘো’রের মধ্যে আছে৷ বুঝার চেষ্টা করছে কি থেকে কি হয়ে গেলো।
****
বিকালে আব্বুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে যখনই বাসা থেকে বের হব তখন হায়াতি বললো, কী অসাধারণ অভিনয় করে টাকা নিলি। এরকমটা তো আমি কখনও ভাবতেও পারতাম না।
আমি সিরিয়াস ভাব নিয়ে বললাম, আমাকে কী তোর মত মনে হয় নাকি যে অভিনয় করবো। যেটা সত্যি সেটাই বললাম।
‘ কি যে সত্যি বলেছিস তা আমার জানা আছে। তাসফিয়াকে নিয়ে ঘুরতে যাবি আমি নিশ্চিত।
‘ তাসফিয়া কে? আমি কোনো তাসফিয়াকে চিনিনা।
চলবে—