হৃদহরিনী পর্ব ১৩

0
243

#হৃদহরিনী
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ১৩
হায়াতি অর্ণকে বললো, তা হঠাৎ করে আমার প্রতি এত ভালোবাসা কোথা থেকে আসলো? খুব কেয়ার করছিস আমার৷ মতলবটা কী শুনি?

‘ তুই যেমন একটা ডা’ইনি তাই সবসময় ডা’ইনিদের মতই চিন্তা করিস। তুই যে গতকাল আমাকে বাসার বাহিরে যেতে দিস নাই তখন কী আমি এমনটা বলছি। আর আমরা কী একে অপরের শত্রু নাকি যে একজনের ভালো আর একজন দেখতে পারবোনা৷ তুই সবসময় আমাকে নেগেটিভ ভাবে নিস। যদি একটু মন দিয়ে চিন্তা করতি তাহলে বুঝতে পারতি আমি কতটা ভালো মনের মানুষ

‘ তোর কথা শুনে হাসি পাচ্ছে আমার। কত সুন্দর ডায়লগ দিচ্ছিস৷ অসাধারন অভিনয় হচ্ছে। এরকম করতে থাকলে একদিন অবশ্যই তুই অস্কার পাবি তা আমি লিখে দিতে পারি৷ তুই মানুষটাই নেগেটিভ তাই আমিও তোকে সেরকমই ভাবি৷ ওইদিন তুই টাকার জন্য আমার স্কুটির তার কেঁ’টে তোর সাথে নিয়ে আসছিস তার জন্য বড় আব্বুর কাছ থেকে টাকা নিয়েছিস৷ তারপর আমাকে বো’কা বানিয়ে টাকা নিয়েছিস। এখন নিজে থেকে বলছিস তোর বাইকে উঠতে। আমি নিশ্টিত এর পিছনে তোর কোনো মতলব আছে। প্ল্যানটা কী বলে ফেল তারপর আমি বাইকে উঠবো।

‘ তুই কী বো’কা নাকি যে তোকে বো’কা বানিয়ে টাকা নিবো। আর ওইদিন তো বাইকে তেল ভড়ার জন্য টাকা নিয়েছিলাম। তোর স্কুটির তার কে না কে কেঁ’টেছে তার জন্য তুই আমাকে দোষ দিতে পারিস না৷ এখন এর জন্য যদি তোর মনে হয় আমি কোনো প্ল্যান করছি তাহলে আমি একাই যাচ্ছি তুই রিকশায় চলে আসিস। তারপর আব্বু যখন জিজ্ঞেস করবে তখন শুধু সত্যিটা বলবি। কিন্তু তোকে তো আমার বিশ্বাস নেই। তুই আমার বাইকে যাবিনা এটা নিজ মুখে বলবি তখন আমি ভিডিও করবো। তারপর তুই তোর মত আসবি আমি আমার মত

‘ বলবো না৷

‘ এইতো তোর মনের ভিতরেই নেগেটিভ চিন্তাভাবনা। এখন বলবিনা আব্বুর সামনে তো ঠিকই বলবি আমি তোকে নিয়ে আসিনি

‘ আমি তোর মত মিথ্যা বলিনা৷

‘ আচ্ছা তোর বাইকে উঠতে হবেনা। তাসফিয়া আসতেছে ও যাবে আমার সাথে

‘ তাসফিয়াটা আবার কে?

‘ ক্লাস ফ্রেন্ড ওর বাসা আমাদের বাসার দিকেই৷ ওকে ওর বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমি আমার বাসায় যাবো। এতে পরিচয় আরও গভীর হবে

‘ তুই আসলেই একটা ফা’জিল ছেলে। এতদিন রুহাসার পিছনে ঘুরে এখন আবার তাসফিয়া। তুই কী কখনও ভালো হবিনা

‘ আমি ভালোই আছি। যে যেরকম তার কাছে আমাকে সেরকম মনে হবে৷ রুহাসা তোর জন্য আমাকে ভুল বুঝেছে। কত পরিশ্রম করেছিলাম ওর সাথে পরিচিত হতে৷ সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিলো তখনই তুই সি’ডরের মত চলে আসলি। তারপর সব শেষ। ওইদিন আবার কী উল্টা-পাল্টা বলেছিস কে জানে৷ তাই তাসফিয়াকে আগে থেকেই বলে দিয়েছি তুই আমার কাজিন৷

তাসফিয়া এসে অর্ণকে বললো, কী হলো বাইকের উপর শুধু শুধু বসে আছো। কোথাও যাবে নাকি?

‘ না, কোথাও যাবোনা৷ ভাবলাম ঘুরতে যাই কিন্তু একা একা ভালো লাগছেনা। এখন ভাবছি বাসায় চলে যাবো৷ তা তুমি কোথায় যাচ্ছো?

‘ আমিও বাসায় যাবো

হায়াতি মনে মনে বলছে, ফা’জিল ছেলে একটা৷ মেয়েটার সাথে কী ভাবটাই না নিচ্ছে। একবার সুযোগ পাই তখন বুঝবি।

অর্ণ বললো, আচ্ছা আমি তোমাকে নামিয়ে দিচ্ছি

তাসফিয়া বললো, না থাক৷ তোমার সাথে আবার তোমার কাজিন আছে৷ আমি রিকশা করে যেতে পারবো৷

‘ রিকশা করে যেতে হবেনা৷ হায়াতি এখন বাসায় যাবেনা৷ তুমি উঠো আমি নামিয়ে দিচ্ছি।

তাসফিয়া বাইকে উঠতে যাবে তার আগেই হায়াতি বাইকে উঠে পরলো৷ অর্ণর পিঠে হাত রেখে বললো, তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে৷ আজকে ঝামেলা গেলো বড় আব্বু কিন্তু রাগ করবে এতখন বাহিরে থাকলে৷

” কপাল আমার! হায়াতির বা’চ্চা তুই আবার কী বাঁ’শটাই না দিলি৷ এখন তাসফিয়া কী ভাববে৷ আবার ঝামেলার কথাও বলে দিয়েছিস। তুই ইচ্ছে করেই এমন করেছিস হায়াতির বাচ্চা। এখন যদি তাসফিয়া জিজ্ঞেস করে ঝামেলার কথা তখন আমি কী বলবো

তাসফিয়া বললো, কীসের ঝামেলার কথা বলছে? কী হয়েছে অর্ণ?

” বলতে না বলতেই তাসফিয়া জিজ্ঞেস করলো৷ হায়াতির বা’চ্চা এখন আমি কী উত্তর দিবো৷ যেই ভয়টা পাচ্ছিলাম সেটাই হলো৷ তাসফিয়াকে বললাম, না মানে ঝামেলা আবার কোথা থেকে আসবে। কিছু হয় নায়

‘ তাহলে সে যে বললো

‘ আরে ফান করছে। এটাও বুঝো না।

‘ আচ্ছা ঠিক আছে৷ তোমরা যাও আমি রিকশা করে চলে যাবো।

একটু দূরে আসতেই হায়াতিকে বললাম, তুই সবসময় আমার পিছু পরে থাকিস কেন বলতো। তোর জন্য রুহাশা গেলো। এখন তাসফিয়ার সাথে ফ্রেন্ডশিপও নষ্ট হবে৷

‘ আমি শুধু তোর কাছ থেকে মেয়েগুলোকে রক্ষা করছি৷ একটা মানুষের এত এত ফ্রেন্ড লাগে নাকি? তুই তো সবসময় মেয়েদের সাথে ফ্ল্যাট করে বেড়াস।

‘ তারপরও তো আজপর্যন্ত একটা মেয়ের সাথে রিলেশন করতে পারলাম না। এসব হয়েছে তোর জন্য।

‘ আমার কী দোষ। মেয়েরা তোকে পছন্দ করেনা এখানে আমি কী করতে পারি!

‘ হায়াতির বা’চ্চা তুই কী মিথ্যা বলতে পারিস। তুই সবার কাছে উল্টা- পাল্টা বলিস

‘ তুই যে সবসময় আমার সাথে যেরকম করিস তার ফিডব্যাক পাচ্ছিস। তোর জন্য আমি ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে যেতে পারি নাই!

‘ সেটা তো কত আগে। তুই তখন আমাকে টাকা দিয়ে দিলে তো যেতে পারতি। আব্বুর কাছে উল্টা- পাল্টা বলে আমাকে বাঁ’শ দিয়েছিস তাই আমিও রিভেঞ্জ নিলাম।

‘ তুই আগে এসব শুরু করেছিস

‘ তুই

‘ তুই

হঠাৎ সামনে একটা কুকুর পরলো আর অর্ণ বাইক ব্রেক করলো। হায়াতি কন্ট্রোল করতে না পেরে অর্ণকে জড়িয়ে ধরলো। অনেক বড় একটা বিপদ থেকে বেঁ’চে গেলো দুজনে। হায়াতি বললো, ঠিকঠাক বাইকটাও চালাতে পারিস না। আর একটু হলেই তো দূর্ঘটনা ঘটতো।

‘ তোর দোষ সব৷ তৃই আমার সাথে বাইকে বসে ঝগড়া শুরু করেছিস। আর সামনে কুকুর পরলে আমি কী করবো

‘ তুই আগে থেকে খেয়াল করিসনি কেন?

‘ তুই এত কথা বললি তাই তো মনযোগ চলে গেলো৷

‘ বাসায় যাই আগে৷ তারপর সবাইকে বলতে হবে।

এই রে! বাসায় সবাই শুনলে তো আমার বাইকই বা’জেয়াপ্ত হয়ে যাবে৷ হায়াতির বা’চ্চা তোর জন্য সবসময় আমাকে সমস্যায় পরতে হয়। হায়াতিকে নরম কন্ঠে বললাম, প্লিজ বাসায় বলিস না

হায়াতি বললো, তুই না গি’র’গি’টির মত রং বদলাস। একটু আগে আমার সাথে ঝগড়া করতেছিলি এখন ঠিকই আবার অনুরোধ করছিস।

‘ বাসায় বলিস না। তাইলে আব্বু আমাকে বাইক চালাতে দিবেনা।

‘ না বলে আমার লাভ কী?

কপাল আমার! এখনই তো হায়াতির বা’চ্চা ওর দেওয়া টাকা ফেরত চাইবে৷ হায়াতিকে বললাম, তোকে ট্রিট দিবো

হায়াতি বললো, আমাকে কী তোর বো’কা মনে হয়?

‘ হ্যা

‘ মানে?

‘ না না! তুই বো’কা হবি কেন? বো’কা তো আমি৷ তোকে সাথে করে নিয়ে এসে বড় বো’কার কাজ করেছি৷

‘ আমার ট্রিট চাইনা৷ আমার থেকে যে টাকা নিয়েছিস তা ফেরত দিবি

‘ এই টাকা তো আমার কাছে নাই

‘ নাই মানে? কী করেছিস?

‘ রাফসান ধার নিয়েছে৷ জরুরি লাগতো ওর। তাই সব টাকা ওকে দিয়েছি

‘ সত্যি বলছিস তো!

‘ ফ্রেন্ডদের নিয়ে আমি মিথ্যা বলিনা

হঠাৎ অর্ণর ফোনে কল আসলো৷ বাইকে থাকবে তাই আগেই ফোনটা হায়াতির কাছে দিয়েছিলো৷ কলটা তাসফিয়া দিয়েছে৷ হায়াতি রিসিভ করলো৷ তাসফিয়া বললো, বাসায় গেছো?

‘ আমি হায়াতি বলছিলাম৷ আমরা এখনও বাসায় যাইনি। রেস্টুরেন্টে খাওয়ার জন্য এসেছি তারপর বাসায় যাবো৷ অর্ণ বাসায় গিয়ে কল দিবে তোমায়

চলবে—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here