হৃদহরিনী পর্ব ১২

0
289

#হৃদহরিনী
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ১২
অর্ণ আর ওর বন্ধুরা কলেজ ক্যাম্পাসে আসার সাথে সাথেই হায়াতি এসে বললো, তোদের এখানে কে আসতে বললো? সবাই চাচ্ছে এই ঝামেলার সমাধান করতে আর তোরা এসে ঝামেলা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিস। তোদেরকে দেখে ওই ছেলেগুলো তো চুপ থাকবেনা। কেন আসলি এখানে? এখনই তোরা চলে যাবি এখান থেকে৷

হায়াতির কথা শুনে অর্ণ বললো, ক্যাম্পাসে এত এত পুলিশ থাকতে ঝামেলা করবে কে? কারও শখ জাগেনি পুলিশের হাতে মা’রা খাওয়ার। আমরা এখানে ইচ্ছে করে আসিনি। আমাদের আসতে বলেছে বিধায় এসেছি৷ এখন চলে গেলে আরও এটার সমাধান হবেনা।

‘ তাহলে এখান থেকে অন্য কোথাও চল। ওই ছেলেগুলোও ওখানে দাঁড়িয়ে আছে৷ ওদের দেখে খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না৷ যতই পুলিশ থাকুক ওরা কোনো না কোনো ঝামেলা অবশ্যই করবে৷

‘ তো কি এখন ওদের ভয়ে অন্য কোথাও যেতে হবে। আমার এমনও খারাপ দিন আসেনি যে কারও ভয়ে আমাকে অন্য কোথাও যেতে হবে৷ যদি ঝামেলা করে তখন দেখা যাবে।

‘ ওরা না মা’রলেও তোরে এখন আমি মা’রবো৷ ওরা কতজন দেখেছিস। তোরা মাত্র ৪ জন।

‘ আমরা ৪ জনই ওদের জন্য যথেষ্ট। এখন যদি চলে যাই তাহলে ওরা ভাববে ওদের ভয়ে চলে গেছি৷ আমি যেতে পারবোনা। কোনো ঝামেলা হবেনা৷ তুই যা এখান থেকে

‘ আচ্ছা আমি গিয়ে বড় আব্বুকে বলছি।

‘ আবার আব্বুরে এর ভিতরে টানিস কেন। তুই যা বলবি তাই হবে৷

অর্ণ আর ওর ফ্রেন্ডরা হায়াতির সাথে যেতে লাগলো। ওদের যেতে দেখে ছেলেগুলো অনেক কিছু বলতে লাগলো। হায়াতি জোর করে অর্ণকে নিয়ে গেলো। ছেলেগুলো ইচ্ছে করেই এমন ঝামেলা বাঁধাতে চাচ্ছে৷

কলেজের টিচাররা,সবার সাথে আলোচনা করতে লাগলেন ছেলেগুলো হৃদিতা আর ওর ফ্রেন্ডদের সাথে যে খা’রাপ ব্যবহার করেছে হৃদিতা তা বললো সবাইকে৷ ছেলেটার বাবা বললো, আমার ছেলে যা করেছে তার জন্য আমি লজ্জিত। আর কখনও এমন হবেনা।

অর্ণ আর ওই ছেলেটাকে ডাকা হলো৷ ওদেরকে বলা হলো, আর যাতে এরকমটা না হয়৷ দুজনেই সম্মতি জানালো। অর্ণ আর ওর ফ্রেন্ডরা কলেজ থেকে বের হবে তখন ওই ছেলেগুলো ওদের কিছু বলতে লাগলো। ওদের সাথে হায়াতিও ছিলো তাই ছেলেগুলো হায়াতিকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে লাগলো। এটা শুনে অর্ণ আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। ছেলেগুলোকে কিছু বলতে যাবে তখনই হায়াতি অর্ণর হাত ধরলো।

হায়াতি বললো,আমাদের কলেজে চল। একটু আগে কী বললো শুনিসনি। আর যাতে কখনও ঝামেলা না হয়। ছেলেগুলো কোনো একটা ঝামেলার জন্যই এসব বলছে।

‘ যার জন্যই বলুক বলছে তো। এখন চুপ করে থাকবো এরকমটা শুনে?

‘ হ্যা থাকবি! আর কোনো কথা না বলে এখান থেকে যাবি এখন।

হায়াতি অর্ণকে জোর করেই সেখান থেকে নিয়ে আসলো। অর্ণ হায়াতির উপর অনেক রেগে আছে৷ ওদের ভার্সিটিতে এসে অর্ণ হায়াতিকে বলতে লাগলো, তুই কী আমার সিনিয়র নাকি? ওই ছেলেগুলো কীসব বললো শুনলি না। তারপরও চুপ করতে বললি কেন? অন্য সময় কোনো ছেলে কিছু বললে তো চুপ করে থাকতি না।

‘ ছেলেগুলো যা বলার আমাকে বলেছে আর আমি এটা সহ্য করে নিয়েছি। ওরা চাচ্ছিলো কোনো ঝামেলা হউক৷ ভালো করেই জানতো আমাকে কিছু বললে তুই ওদের সাথে ঝামেলা বাঁধাবি। ওরা সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চাচ্ছিলো৷ অন্য সময় কোনো ছেলের কিছু বলা আর এখনকার ঘটনা দুটো আলাদা।

‘ তুই সব কিছু সহ্য করে নিলেও আমি পারবোনা৷ ছেলেগুলো যদি আবার কখনও আমার সামনে পড়ে আর তখন যদি ওরা কিছু বলে তাহলে আর চুপ করে থাকবো না

‘ তাইলে বড় আব্বুকে রুহাশার কথাও বলে দিবো৷ আর কখনও যদি ঝামেলা করিস তাহলে বড় আব্বু তোকে এই শহরে রাখবেনা৷ তখন আমিও বলবো তোকে অন্য শহরে পাঠিয়ে দিতে।

‘ তুই আসলেই একটা ডা’ইনি৷ সবকিছুতে প্যাড়া দিস৷

‘ ডা’ইনি তো তাই

****

হৃদিতা ওর ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো। হৃদিতা ওর ফ্রেন্ডদের বললো, কলেজের ছেলেগুলো আমাকে বিরক্ত করে এটা অর্ণ ভাইয়াকে কে বলেছিলো? হিয়া তুই বলেছিস?

‘ ওইদিন রেস্টুরেন্ট ছাড়া তো ভাইয়ার সাথে আমার কথাই হয়নি। আমি তো ওইদিন হায়াতি আপুকে কল দিয়ে বলেছিলাম।

‘ ছেলেগুলো যে আমাদের বিরক্ত করতো এটা ভাইয়া জানতো। তারপর ওইদিন যা হয়েছিলো তাও জানতো৷ কিন্তু আমি ভেবে পাচ্ছিনা অর্ণ ভাইয়া এসব কীভাবে জানতে পারলো। এরকম ঝামেলা হবে তাই অর্ণ ভাইয়াকে কিছু বলিনি। যে ভয়টা পাচ্ছিলাম সেটাই হয়ে গেলো। আমার মনে হয় এমন কেও আছে যে ভাইয়াকে সবকিছু বলে দেয়

‘ কে হতে পারে? অর্ণ ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করিসনি?

‘ করেছি! কিন্তু ভাইয়া তো তা বলবেনা৷

‘ ভালোই হয়েছে। ছেলেগুলোর উচিত শিক্ষা হয়েছে।

‘ পরবর্তীতে আর কোনো ঝামেলা না হলেই হয়।

*****

রাহুল, নিহান,সাদাত আজকের ঘটনা নিয়ে কথা বলছিলো। রাহুল সাদাতকে বললো, ওরা আমাদের কলেজে আসলো আর আমরা ওদের কিছুই বললাম না৷ এই সুযোগ কেন হাতছাড়া করলাম৷

সাদাত বললো, বাবা আগেই বলেছে কলেজে যাতে কোনো ঝামেলা না হয়৷ আমাদের মে’রে যে ও কতটা ভুল করেছে এটা বুঝতে পারবে।

নিহান বললো, ওই মেয়েটার জন্য মা’র খেলাম। তবে ওই ছেলেটাকে হালকাভাবে নেওয়া ঠিক হবেনা৷ আমাদের সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হবে৷ আপাতত ভালো হয়ে থাকতে হবে। এখন কোনো ঝামেলা করলে পুলিশ আমাদেরই ধরে নিয়ে যাবে৷

******

হায়াতি ক্লাস থেকে বের হয়ে অর্ণকে খুজে যাচ্ছে। অর্ণকে না পেয়ে হায়াতি চিন্তিত হয়ে পড়লো৷ হায়াতি ভয় পাচ্ছিলো অর্ণ ওই ছেলেগুলোর কাছে গেলো না তো৷ কিছুখন পর অর্ণর দেখা পেলো৷ হায়াতি বললো, কোথায় ছিলি?

‘ ক্লাস করছিলাম৷

হায়াতি অবাক হয়ে অর্ণর দিকে তাকিয়ে আছে৷ যেই অর্ণকে জোর করেও ক্লাসে পাঠানো যায়না সে আজকে নিজে থেকে ক্লাস করতে গেলো। হায়াতি বললো, তুই ক্লাস করতেছিলি এটা তো অবিশ্বাস্য ঘটনা। সত্যি করে বল কোথায় ছিলি?

‘ ক্লাসেই ছিলাম৷ সামনেই তো এক্সাম৷ এবার যদি এক্সামে খা’রাপ করি তাইলে আমার কপালে দুঃখ আছে৷ এমনিতেই ঝামেলা একটা হয়েছে এর জন্য বাবা আমার উপর রেগে আছে৷ রেজাল্ট খা’রাপ হলে আমাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিবো।

‘ কী বুদ্ধি রে তোর৷ তোকে তো নোবেল দেওয়া উচিত।

‘ সবই তোর কাছ থেকে শেখা৷ এখন বাসায় যাবি না? তুই তো আজকে স্কুটিও নিয়ে আসিসনি

‘ তোর মতলবটা কী শুনি? আমার সাথে এত ভালো ব্যবহার করার কারন?

‘ তুই যেরকম সবকিছুতে প্ল্যান করিস তাই অন্য সবাইকেও তোর মত মনে করিস। এখন কী তুই বাসায় রিকশা করে যাবি নাকি আমার বাইক থাকতে৷

‘ রিকশায় যাবো

কপাল আমার! এখন যদি ডা’ইনিটা রিকশায় যায় তাইলে তো টাকা নিতে পারবোনা৷ ডা’ইনিটা আমার সব প্ল্যান আগে থেকে বুঝে ফেলে। হায়াতিকে বললাম, রিকশায় গেলে বিপদ হতে পারে৷ রাস্তায় যদি ওই ছেলেগুলো থাকে তখন কী হবে

‘ তুই সাথে থাকলে আরও বেশি বিপদ হবে

‘ আমি থাকতে তুই বাসায় রিকশায় যাবি তাইলে আব্বু আমাকে কী বলবে। তোর জন্য আমি শুধু শুধু আব্বুর বকা শুনতে পারবোনা

‘ আমার প্রতি এত ভালোবাসা তো কখনও দেখাসনি৷ নিশ্চয়ই কোনো প্ল্যান করেছিস

চলবে—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here