#হৃদয়ে_মেঘগলি
|০৯|
লাবিবা ওয়াহিদ
তীব্র বৃষ্টিতে শহর নিমজ্জিত। শেহরিম বাইকটা কোনোরকমে পার্ক করে একটি মার্কেটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ছাতা আনেনি। আকাশের অবস্থা দেখে ভেবেছিলো রেইনকোর্ট আছে সিটের নিচে। পরে দেখা গেলো সেটাও আনতে পারেনি সে।
এখন এই বৃষ্টিতে বাইক চালানোটাও বিপদজনক। এজন্যে এখানে দাঁড়ানোটাই শ্রেয় মনে করলো। প্রবল বেগে বৃষ্টি হচ্ছে। খানিক পরপর বজ্রপাতের শব্দ হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলে নতুন ঘূর্ণিঝড়ের দেখা মিলেছে। যার কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হচ্ছে। শেহরিম তার রুমাল দিয়ে হাত মুছতে ব্যস্ত।
মাথায় হেলমেট থাকায় বৃষ্টির পানি মাথায় পরেনি। বৃষ্টি থামার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো শেহরিম। মিনিট পাঁচেক পর অবশ্য বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমে এসেছে। আগের মতো তীব্রতা নেই। শেহরিম যখন ভাবলো এই বৃষ্টিতে বাইক চালানো সম্ভব তখনই আনোশী তার হাতের ছাতাটি শেহরিমের পায়ের কাছে রেখে ভেতরে চলে গেলো।
হঠাৎ সব ঘটার কারণে শেহরিম কিছুটা অপ্রস্তুত হয়। ছাতাটি হাতে নিয়ে পিছে ফিরে তাকায়। সবকিছু মস্তিষ্ক বুঝে নিতেই উঁচু স্বরে ডাকলো আনোশীকে। কিন্তু আনোশী তার ডাক কানে না নিয়ে লিফটে উঠে যায়। শেহরিম ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে মিনমিন করে বললো,
–“ধরা যেহেতু দিবে না সেহেতু এত কেন দুর্বল করো তুমি আমায় আনোশী?”
আনোশী উপরে আসতেই দেখতে পেলো নীল এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে আনোশী মুচকি হাসলো। আনোশীকে চোখে পরতেই নীল সোজা হয়ে দাঁড়ালো। আগের পেজ হ্যাক। এখনকার নতুন পেজ “লাবিবা ওয়াহিদ – labiba wahid” বরাবরের মতোই তার অধরে হাসি লেপ্টে আছে। আনোশী এগিয়ে গেলো নীলের দিকে। আনোশী নীলের সম্মুখে আসতেই সে মুচকি হেসে বললো,
–“অবশেষে এসেছো। দুঃখিত ছুটির দিনে এভাবে বিরক্ত করার জন্যে। আসলে আমার বোনকে একটি শাড়ি উপহার দিবো। কিন্তু আমার ফ্যাশন সেন্স শূণ্যের কোঠায়। এজন্যে ভাবলাম তোমাকে ডেকে নিই।”
আনোশী হাসলো। বললো,
–“ডেকে এনে এখন দুঃখিত বলে ভালো সাজার প্রয়োজন নেই। কোথা থেকে কিনবেন সেটা বলুন।”
নীল হাসলো। মাথা চুলকে বললো,
–“তোমার সাথে পারা যায় না।”
——————-
আনোশী মোবাইল দেখতে দেখতে সিঁড়ির দিকে যাচ্ছিলো ওমন সময় দেখতে পেলো একটি বাচ্চা ছেলে তার সামনেই পরে গেছে। পরে যাওয়ার ফলে বাচ্চাটি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছে। বাচ্চা ছেলেটাকে লক্ষ্য করতেই জলদি মোবাইল ব্যাগে পুরে বাচ্চাটির কাছে ছুটে আসলো। বাচ্চাটিকে খুব সাবধানে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করলো। অতঃপর নিজের হাতে ছেলেটির পা ঝেড়ে দিয়ে বলে,
–“কীভাবে পরে গেছো তুমি? পরে গেলে এভাবে কেউ কাঁদে? তোমাকে কাঁদলে পচা দেখায় বাবা।”
বলেই আনোশী অপর হাতে ছেলেটির চোখ মুছে দিলো। ছেলেটি আনোশীর দিকে তাকিয়ে নাক টেনে টেনে বললো,
–“দৌড়াতে গিয়ে পরে গেছি।”
–“এভাবে দৌড় দিবে না। বুঝেছো? দেখেছো হাঁটু কীরকম ছিলে গেছে? কোন ক্লাসে পড়ো তুমি বাবা?”
ছেলেটি নাক টেনে বললো,
–“নার্সারিতে।”
–“মাহ-শা-আল্লাহ্। গুড। এখন ক্লাস করবে নাকি বাড়ি যাবে?”
ছেলেটি কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,
–“বাড়ি যাবো। হাঁটু খুব জ্বলছে।”
–“আচ্ছা। অপেক্ষা করো, আমি ক্লাসরুম থেকে তোমার ব্যাগ নিয়ে আসছি।”
বলেই আনোশী ছেলেটিকে দাঁড় করিয়ে তার ক্লাসরুমে চলে গেলো। ক্লাস নেওয়া ম্যামের থেকে ছুটি নিয়ে একবারে ফিরে আসলো। আনোশী ছেলেটির এক হাত ধরে ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নামাতে লাগলো। ছেলেটিকে স্বস্তি অনুভব করাতে আনোশী জিজ্ঞেস করলো,
–“তোমার নাম কী বাবা?”
–“তাহান।”
–“বাহ্। খুব সুন্দর নাম তো!”
ছেলেটির মুখে অমায়িক হাসি ফুটে ওঠে। সিঁড়ি দিয়ে নামতেই তাহান হেসে বলে ওঠে,
–“তুমি খুব ভালো মিস!”
–“তাই? তুমিও খুব লক্ষী ছেলে তাহান।”
তাহানকে আনোশী অফিস রুমে এক টিচারের দায়িত্বে দিয়ে আসলো। সেই টিচার তাহানের মাকে কল দিতে ব্যস্ত। আনোশীর ক্লাস থাকায় তাহানকে বিদায় দিয়ে অফিস রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।
আনোশী ক্লাস শেষ করে অফিস রুমে আসতেই দেখতে পেলো নীল বসে আছে। আনোশী চুপচাপ তার সিটে গিয়ে বসলো। আজ নীল উঠে আসলো না। ওরা দুজন সহ সকলেই নিজেদের আসনে বসে আছে। জরুরি মিটিং হবে এখন। খুব সম্ভবত ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে।
——————
শেহরিমের বাবা-মা উভয়েই পাত্রী দেখে বাড়ী ফিরেছে। এই পাত্রী সম্পর্কে শেহরিমের বাবার বন্ধু। তার মুখে হাসি লেপ্টে আছে। যেন এই বিয়ে ঠিক করতে পেরে তিনি দারুণ খুশি। শেহরিমের মা খুশি হতে পারছে না। কেন যেন সুন্দরী মেয়ে দেখলেই তার অতীতের কথা মনে পরে যায়। যা তাকে ভীষণ পীড়া দেয়।
শেহরিমের বাবা আয়েশ করে সোফায় বসতে বসতে স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললো,
–“অবশেষে একজন দক্ষ, ভালো মেয়ে পেয়েছি আমাদের ছোট ছেলের জন্য।”
শেহরিমের মা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
–“তোমার কী মনে হয় আমাদের ছেলের আগে বিয়ে হয়েছে জানলে তোমার বন্ধু তাদের মেয়ে দিবে?”
শেহরিমের মায়ের কথা শুনে বাবার মধ্যে সেরকম কোনো অস্থিরতা দেখা গেলো না। তিনি সরল গলায় বললেন,
–“তোমার কী মনে হয় আমি তাদের ধোকা দিবো? আমি আগেই তাদের সব খুলে বলেছি। তারা সব জেনে-বুঝেই রাজি হয়েছে বুঝেছো?”
এমন সময় কোথা থেকে তাহান এসে কাঁদো কাঁদো স্বরে দাদুর উদ্দেশ্যে বললো,
–“দাদু, মাকে বলো না আমি ওই মিসের কাছেই পড়ব।”
তাহানের কথা শুনে শেহরিমের বাবা তাকে কোলে উঠিয়ে বসালো। অতঃপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলো,
–“কী বোঝাবো দাদুভাই? কার কাছে পড়তে চাও?”
রাইমা তখন চলে আসলো। অতঃপর শ্বশুরের উদ্দেশ্যে বললো,
–“স্কুলে আজ পরে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে। এখন তার কোন মিসকে পছন্দ হয়েছে, তার কাছে বাসায় পড়ার জেদ ধরেছে। তাহান নার্সারিতে পড়ছে, তার আলাদা করে মিসের কী দরকার বলুন তো বাবা!”
এ প্রসঙ্গে শেহরিমের বাবা তার নাতীর সঙ্গ দিলেন। বললেন,
–“এতে এত হাইপার হওয়ার কী আছে বউ মা? আমাদের তাহান ভাই যা চেয়েছে তাই করুক। এতে ওরও তো ভালো লাগবে তাই না?”
শ্বশুরের মুখের ওপর কোনো কথা বলার সাহস পেলো না রাইমা। ছেলের দিকে কিছুক্ষণ চুপ করে চেয়ে বললো,
–“ঠিকাছে বাবা।”
রাইমার সম্মতি শুনে তাহান খুশিতে আর্তনাদ করে উঠলো। শেহরিমের বাবা-মা উভয়েই তাহানের হাসি মুখটার দিকে চেয়ে মুচকি হাসি দিলো। এই দৃশ্যটি তাদের প্রাণ জুড়িয়ে দিচ্ছে যেন।
———————
আজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আনোশী প্রথমবারের মতো শাড়ি পরে এসেছে। তার গায়ের শাড়ীটা নীল তাকে উপহার দিয়েছে। এজন্যে আজকের দিনটা একটু বিশেষ লাগছে আনোশীর। শাড়িটা আনোশী নিতে চায়নি। কারণ শাড়িতে তার ভীষণ অনীহা। আগের পেজ হ্যাক। এখনকার নতুন পেজের নাম “লাবিবা ওয়াহিদ – labiba wahid. কিন্তু নীলও খুব জেদী। তার জেদের কাছে হার মেনে শেষমেষ রাজি হলো সে। আনোশী মঞ্চের কাছাকাছি গেলো। বাচ্চারা নিজেদের মতো আনন্দ-উল্লাস করতে ব্যস্ত।
আনোশী মঞ্চের কাছে এসে নীলকে খুঁজতে শুরু করলো। কিন্তু নীলকে খুঁজেই পাচ্ছে না। কোথায় নীল? এখনো আসেনি? আনোশী আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে সামনে চাইলো। সামনে তাকাতেই নীলকে দেখতে পেলো। হাসতে হাসতে এদিকেই আসছে। তার পাশে থাকা মেয়েটিকে দেখে আনোশী কিছুটা থমকালো। নীলের সাথে দুজন মেয়ে। একজন চেনা মুখ আরেকজন অচেনা মুখ। চেনা মুখটি আনোশীকে দেখতে পেতেই মুচকি হেসে এগিয়ে এলো। আনোশী থমকালেও নিজেকে ধাতস্থ করার আপ্রাণ চেষ্টা করলো। নীলের বোন আনোশীকে সর্বপ্রথম জড়িয়ে ধরে বললো,
–“কেমন আছো আপু? দেখা হয়ে ভালো লাগলো।”
আনোশী হালকা হাসলো। বেশ স্বাভাবিক গলায় বললো,
–“ভালো। তুমি কেমন আছো?”
–“আমিও ভালো। আজ তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছি।”
ততক্ষণে নীল এবং নীলের সাথের মেয়েটাও তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। মেয়েটি উৎসুক নজরে আনোশীর দিকে চেয়ে আছে। আনোশীও হাসিমুখেই মেয়েটির দিকে চেয়ে আছে। মেয়েটির গায়ের শাড়িটা আনোশীর পরিচিত। সেদিন নীলকে এই শাড়িটাই পছন্দ করব দিয়েছিলো সে। আনোশী তার অংকের শেষ হিসাবটা মিলাতে ব্যর্থ। তাও আপনমনে বারংবার এই অংকটা কষছে। হিসাব করছে। নীল অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ আনোশী একবারও নীলের দিকে তাকায়নি।
নীলের বোন হেসে বললো,
–“এইযে, ভাইয়ার পাশেরজন হচ্ছে সারপ্রাইজ। উনি আমার হবু ভাবী। শীঘ্রই দুজনের বিয়ে হতে যাচ্ছে। যদিও ভাবী আমার থেকে বয়সে একটু ছোটো। তাও বড়ো ভাইয়ার বউ বলে কথা।”
আনোশী মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হাসলো। নীলের বোন থেমে আবার মেয়েটির উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,
–“ভাবী, উনি হচ্ছে নীল ভাইয়ার কলিগ। খুব ভালো বন্ধুও বলতে পারো।”
নীলের বোনের কথা শুনে আনোশী আবার হাসলো তাচ্ছিল্যের হাসি। আনোশী হেসে বললো,
–“পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো। তা নীল সাহেব, বিয়ে করছেন জানালেন না? সারপ্রাইজ তো খুব টানটান ছিলো!”
নীল মাথা তুলে চাইলো আনোশীর দিকে। আনোশীর হাসি-মুখ দেখে নীল ভারি অবাক হলো। পরমুহূর্তে হাসার চেষ্টা করে বললো,
–“সব এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো।”
মেয়েটি লাজুক হেসে আনোশীর পাশে দাঁড়ালো। নীল কাজের ব্যস্ততা দেখিয়ে দ্রুত সরে পরলো। অতঃপর তিন জন একসাথে দাঁড়ালো। নীলের বোন নীল আর তার হবু ভাবীকে নিয়ে নানান কথা বলতে ব্যস্ত। নীলের হবু বউ নাকি তাদের এলাকার। নীল তাকে আগে থেকেই পছন্দ করতো। একসময় মেয়েটিকে প্রপোজ করে বসে। প্রপোজ করার পরপর বাড়িতে প্রস্তাব পাঠায়। এরপর-ই বিয়ের এত তোড়জোড়।
সব শুনে আনোশীর খুব খুব হাসতে ইচ্ছে করলো। এবং হাসলোও সে। অল্প হাসি। হাসিতে মিশে ছিলো মিশ্র বেদনা। তাও আনোশী নীলের বোনকে জিজ্ঞেস করলো,
–“তোমার নীল ভাইয়া আর কাউকে পছন্দ ছিলো?”
–“আরে না। তবে আমি ভেবেছিলাম ভাইয়া তোমাকে পছন্দ করে। কিন্তু আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম ভাইয়া কম বয়সী…”
নীলের বোন পুরো কথা শেষ না করে হঠাৎ-ই থেমে গেলো। পাশে তাকালো মেয়েটির দিকে। সে একমনে অনুষ্ঠান দেখতে ব্যস্ত। গান বাজনার শব্দও খুব তীব্র। তাই মনে হয় না তার কথাগুলো মেয়েটির কান অবধি পৌঁছিয়েছে? তবে ওই মেয়েটির কানে কথাগুলো না পৌঁছালেও আনোশীর কানে বজ্রের মতো প্রবেশ করলো কথাগুলো। নীলের বোনের পরবর্তী কথাগুলোও কী হতো সেটাও সে নিজ দায়িত্বে বুঝে নিয়েছে। মাথা কেমন ভনভন করছে তার। অথচ উপর দিয়ে আনোশী পুরোপুরি স্বাভাবিক। হাসছে, কথা বলছে, আবার অনুষ্ঠান দারুণ অনুভবও করছে।
অডিটোরিয়াম থেকে বেরিয়ে ভীড় ছাড়া বারান্দার এক কোণায় নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আনোশী। প্রগাঢ় নীরবতা পালন করছে সে। গালে বিন্দু অশ্রুর অস্তিত্ব অনুভব হচ্ছে তার। তাও ক্ষণিক পরপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভেতরের পাথরগুলো আটকে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আগের লাবিবা ওয়াহিদ পেজ হ্যাক। নতুন পেজে লাবিবা ওয়াহিদ – labiba wahid. কিন্তু কতক্ষণ আটকে রাখা যায়? সে মেয়ে মানুষ। শত কঠিন হলেও চোখ উপচে অশ্রু বেরিয়ে আসে। বড্ড অবুঝ এই অশ্রু। সময়, পরিবেশ, পরিস্থিতি কিছুই বুঝতে চায় না সে। মেয়েদের ক্ষেত্রে তো একদমই নয়।
হঠাৎ ক্যামেরার ফটোক্লিক শব্দ শুনে আনোশী ঘাড় বাঁকিয়ে চাইলো। তার ছবি কেউ তুলছে দেখতে পেতেই আনোশীর ভ্রু কুচকে গেলো। ছেলেটাকে তার বয়সী-ই মনে হলো। আনোশী সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ক্যামেরার মালিক ক্যামেরা নামিয়ে বোকা হেসে বললো,
–“স্যরি অনুমতি ছাড়া ছবি তোলার জন্য। আসলে আপনার পোজটা আর চোখ দিয়ে পানি পরার দৃশ্যটা অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো। এজন্যে ছবি না তুলে থাকতে পারিনি। আচ্ছা, আপনি কী রাগ করেছেন?”
আনোশী চট করে চোখ এবং গাল মুছে নিলো। অতঃপর কাঠ কাঠ গলায় বললো,
–“রাগ করার কাজ করলে রাগ করবো না? আশ্চর্য! কারো দুর্বলতার ছবি তোলা পাপ!”
যুবকটি আলতো হেসে বললো,
–“ওহ। জানতাম না। তবে দেখুন ছবিটা, সত্যি-ই সুন্দর লাগছে।”
বলেই হাতের ডিএসএলআর ক্যামেরা নিয়ে এগিয়ে এলো যুবকটি। আনোশী আবারও কঠিন গলায় বললো,
–“আপনার ছবি কে দেখতে চেয়েছে? ডিলিট করুন ছবিটা। ডিলিট করুন!”
আনোশীর কথার তোয়াক্কা না করে যুবকটি জোর পূর্বক ছবিটি দেখালো। ছবিটি সুন্দর হলেও আনোশীর কাছে এই মুহূর্তে ভীষণ কুৎসিত লাগছে। নিজের দুর্বলতা আনোশী কাউকে দেখাতে চায় না। যুবকটির উদ্দেশ্যে ধমক দিয়ে বললো,
–“কথা কানে যাচ্ছে না? ডিলিট করতে বলেছি। নয়তো আপনার এই অপরাধের জন্য আপনার ক্যামেরা আমি ভেঙে ফেলতে বাধ্য হবো!”
যুবকটি সরু চোখে চাইলো আনোশীর দিকে। আনোশীর খিটখিটে মেজাজ কেমন হজম হচ্ছে না। তাও মুখ গোমড়া করে বলতে লাগলো,
–“ঠিকাছে, করছি ডিলিট। আজকাল ভালো কথার দাম নেই। ফ্রীতে এত সুন্দর ছবি তুলে দিলাম আর উনি রাগ ঝাড়ছে।”
–“ফ্রীর জিনিস সবার উপর প্রয়োগ করতে নেই। ফ্রীতে তুলতে ইচ্ছে করলে আগে অনুমতি চেয়ে তারপর ছবি তুলবেন।”
বলেই আনোশী সরে এলো যুবকটির থেকে। যুবকটি ছবিটি ডিলিট করে বললো,
–“সুন্দর ছবির জন্যে অনুমতি চাইতে নেই। চোখে যখন সুন্দর বিষয়টি পরবে তখনই ক্লিক করতে হয়। তবে সত্যি বলতে আপনার কান্না সুন্দর, নীরব কান্না। ক্যাপশনটা সুন্দর হতো!”
যুবকের কথায় আনোশী চোখ রাঙিয়ে চাইলো। যুবকটি হেসে বলে,
–“আপনার চোখে আগুন ঝড়লেও আমার হাসিতে শিশির ঝড়ে। কারণ, আমার নাম শিশির। আপনার?”
~[ক্রমশ]