হৃদয়জুড়ে প্রেয়সীর আভাস ২ ( পর্ব ৫ )

0
1848

#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস (২)
#পর্ব_০৫
#মোহনা_হক

-‘রুয়াত জানিস আয়াজ ভাইয়া কে যতবার তার বিয়ে নিয়ে কথা বলা হয়েছিলো ততবার ভাইয়া তোর দিকে তাকিয়েছে। এমন কি তার শেষের কথার সময় ও সে তোর দিকে তাকিয়েছে। আচ্ছা কেনো বারবার তোর দিকে তাকালো বল তো?’

পাশ ফিরে রুয়াত নিমির দিকে তাকায়। কথাটি শুনে রুয়াতের বিরক্ত লাগে। তাকিয়েছে তো কি হয়েছে? তাকিয়েছে বলে কি না কি ভেবে নিয়েছে নিমি। রুয়াত নিমির থেকে কাঁথা টেনে নিলো। বেশ বিরক্ত নিয়ে বলে-

-‘তোর এসব কথা বাদ দে। তাকিয়েছে তো এখন কি হয়েছে? তাকাতেই পারে। কেনো ভাইয়া তোর দিকে তাকায়নি একবারও? ওনি তো সবার দিকেই তাকায়। এ নিয়ে তুই এমন করছিস কেনো?’

নিমি বেশ আগ্রহ নিয়ে বলে-
-‘আরে না। বিষয়টা মোটেও সেরকম নয়। আমি ভালো করে খেয়াল করেছি ভাইয়া বারবার তোর দিকে তাকাচ্ছিলো। তার মানে কি বোঝায় বল তো?’

-‘কি?’

-‘ভাইয়া মনেহয় তোর সাথে তার বিয়ের কথা বলেছে। এজন্য তোর দিকে তাকিয়েছিলো।’

রুয়াত চোখ বড় বড় করে নিমির দিকে তাকায়। সে যেনো কথাটি শোনামাত্র আকাশ থেকে টুপ করে পড়েছে। নিমি বোধহয় পাগল হয়ে গিয়েছে। সিরিয়াসলি এমন কথা মানা যায় না! কোথায় আয়াজ আর কোথায় রুয়াত। এর মাঝমাঝি তে পার্থক্য অনেক বেশি।

-‘নিমি বোন তুই প্লিজ উঠে পানি খা। মাথা ঠিক কর। আমার মনেহচ্ছে তুই পুরো দমে পাগল হয়ে গিয়েছিস। এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। আর তোর কিভাবে মনেহলো এটা? একবার চিন্তা করে দেখ দাদু যখন বলে বিয়ের কথা ওনি তখন বলেছিলেন আরো কয়েক বছর বিয়ে করবে। আবার বলেছে তার ম্যাডাম ও নাকি ছোট। বিষয়টা গভীর ভাবে ভেবে দেখ। তাও দয়া করে এসব বলে মাথা বিগড়ে দিস না।’

নিমি অন্যমনষ্ক হয়ে কিছু ভাবে। পরক্ষণেই বলে-
-‘তাহলে ভাইয়া কেনো তোর দিকেই তাকাবে বারবার? এ জিনিসটা একটু আমার বুঝিয়ে বল।’

বড়সড় নিঃশ্বাস টানে রুয়াত। নিমির মতো পাগল কে কে বোঝাবে? কিছু না বুঝেই চি’ল্লা’নোর অভ্যাস। শোয়া থেকে উঠে বসে রুয়াত।

-‘তাকালেই কি সেরকমটা হয়ে যাবে নাকি? তুই স্বাভাবিক ভাবে নে। আমিও ঠিক সেভাবেই নিয়েছি।’

-‘আচ্ছা এসব বাদ দে। কিন্তু আমার মনেহয় ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। আমারাই বোধহয় জানি না। আজকের দাদাভাই, দাদু আর আয়াজ ভাইয়ার কথা শুনে বুঝলি না কিছু?’

ভাবলেশহীন রুয়াত। চোখ বন্ধ করে আবার খোলে। আয়াজের ব্যাপারে সম্পুর্ণ কাঁচা। কোনো কিছু জানেও না। আর আয়াজ ও কিছু প্রকাশ করতে চায় না।

-‘হয়তো বা ঠিক হয়েও আছে।’

-‘ইশশ সে মেয়েটা খুব লাকি তাইনা! না মানে দেখিস নি যে ভাইয়া কিভাবে ম্যাডাম বললো।’

-‘সেটাই তো দেখলাম। আমরা যদি একটু দেখতে পারতাম। আয়াজ ভাইয়ার জায়গায় যদি আরহাম ভাইয়া হতো তাহলে দেখা যেতো। কিন্তু আয়াজ ভাইয়ের সামনে গেলেই তো আমার আর তোর হাটু কাঁপে। আর এসব জিগ্যেস করার মতোও সাহস নেই আমাদের।’

নিমিও রুয়াতের কথায় তাল মেলালো। কে সেই নারী? তাকে একটু চোখের দেখা দেখতে চায় তারা। ভীষণ শখ দেখার। মেয়েটা আসলে কেমন?

-‘ঠিক বলেছিস। ভাইয়া যে পরিমাণে আমাদের বকে এ কথা শোনার পর তো বাড়ি থেকে বের করে দিবে আমাদের। থাক একবারে নাহয় বিয়ের সময়ই দেখবো। আচ্ছা একটা কাজ করি? বড় মা কে জিগ্যেস করা যায়। বড় মা বলবে আমাদের।’

রুয়াত আবার শুয়ে পড়ে। নিমির উদ্দেশ্যে বলে-
-‘কাল সকালে জিগ্যেস করবো। এখন ঘুমাতে হবে। শুয়ে পড়।’

নিমিও চুপচাপ শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুম চলে আসে নিমির। কিন্তু রুয়াত ঘুমাতেই পারছে না। মুলত ঘুম আসছে না। নিমির সেই কথাটি ভাবছে। তখন তো ঠিকই নিমিকে কিছু না কিছু বলে বুঝ দিয়েছিলো এখন তো আর নিজের মন কে এসব বলে বুঝ দিতে পারছে না। এসব ভাবতে ভাবতে রুয়াতের মনে পড়ে আয়াজের জায়গাটা কোঁথায় আর রুয়াতের জায়গা কোঁথায়। তার সাথে রুয়াত কে মানায় না যেমন সত্য তেমনই এটাও সত্য যে স্বভাব, চরিত্র, পারিপার্শ্বিক অবস্থা দিক থেকেও রুয়াত কে আয়াজের পাশে মানায় না। আয়াজের একান্তই একটা নিজস্ব পছন্দ আছে। সেটা আজ কথার মাঝেই বোঝা গিয়েছে। রুয়াত তার ভাবা বন্ধ করে দেয়৷ এসব অযুক্তিক কথা না ভেবে ঘুমিয়ে পড়াই ভালো। সে কাজে অগ্রসর হয়।

(*)

রুয়াত সকালে অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠে আজ। ঘুম থেকে উঠেই মন খারাপ তার। পরশুদিন তার বাবার মৃত্যুবার্ষিকী। বাবার স্মৃতি জড়িয়ে এই চারটে বছর যে কিভাবে পার করেছে সে নিজেই একমাত্র জানে। হয়তো তার মায়ের আরও খারাপ লাগছে। নিমি পুরো রুম জুড়ে পায়চারী করছে। এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলো রুয়াতের ঘুম থেকে উঠার জন্য। কতক্ষণ গিয়ে মায়া চৌধুরীর কাছে বলবে কথাটা সেটা নিয়েই বেশ তাড়াহুড়ো। রুয়াত কে ঘুম থেকে উঠতে দেখে তাড়াতাড়ি করে তার কাছে আসে।

-‘উঠেছিস? যাবি না বড় মায়ের কাছে?’

-‘মাত্র ঘুম থেকে উঠেছি। আর তুই কালকের রাতের কথা এখনো ভুলিসনি?’

নিমি গর্ববোধ করে বলে-
-‘যেটা একবার মনে রাখি সেটা কখনো ভুলি না। আর এই গুরুত্বপূর্ণ কথা তো মোটেও ভুলবো না। যা না ফ্রেশ হতে। তারপর আমরা বড় মায়ের কাছে যাবো।’

রুয়াত কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে যায়। নিমির মতো পাগলের সাথে এসবে পেরে উঠবে না। যদিও তার জানার খুব ইচ্ছে সে মেয়েটির ব্যাপারে। রুয়াত ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে নিমি বিছানা গুছিয়ে রাখছে৷ আর সময় হলে রুয়াত কে ছাড়া কখনো বিছানা গোছায়নি। আজ তার কথা শোনার এতো আগ্রহ আর তাড়া যে বিছানা ও গুছিয়ে ফেললো। রুয়াত মুচকি হাসে নিমির কর্মকান্ডে। অতঃপর এক সাথে নিচে নামে। মায়া চৌধুরী রান্নাঘরে থাকায় রুয়াত আর নিমি যেতে পারেনি সেখানে। কারণ নিমি যাবে না জেবার ভয়ে আর রুয়াত যাবে না মেহরুবার ভয়ে। মেহরুবা এসব জানলে নিশ্চিত বকা দিবে তাকে। সে ভেবেই তারা দু’জন ঠিক করে যখন মায়া চৌধুরী তার রুমে যাবে তখনই তারা সেখানে গিয়ে কথাগুলো জিগ্যেস করবে।

রাহীম চৌধুরীর সাথে বসে বসে নিমি কথা বলছে। আর রুয়াত মোবাইলে মুখ গুঁজে বসে আছে। সকাল দশটার আগেই আয়াজ চলে যায় তার কাজে। রাহীম চৌধুরী আর আয়েশা চৌধুরী থাকার কারণে বাড়িতে অন্য রকম ভালো লাগছে। অবশ্য আয়েশা চৌধুরী এখানটায় নেই। তিনি ঘুমাচ্ছেন। নিমির নজর যায় মায়া চৌধুরীর উপর। রান্নাবান্না শেষ করে রুমে যাচ্ছেন তিনি। নিমি রুয়াত কে চিমটি কেঁটে বলে-

-‘এই রুয়াত বড় মা রুমে গিয়েছে। চল এখনি যাবো।’

রাহীম চৌধুরী নিমির দিকে একবার রুয়াতের দিকে একবার তাকাচ্ছেন। বুঝছেন না এ দু’জনের কাহিনী। নিমি তার দাদাভাইয়ের থেকে বলে রুয়াত কে নিয়ে চলে মায়া চৌধুরীর রুমে। মায়া এখন শাওয়ার নিতে যাবেন। জামা কাপড় এনে রেখেছেন বেডের উপর। নিমি রুয়াতের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে-

-‘বড় মা কি করছো?’

মায়া চৌধুরী অবাক হয়ে তাকায় রুয়াত আর নিমির দিকে। অবাক হওয়ার কারণ এ সময়ে তারা কখনো তার রুমে আসেনি।

-‘ওহ্ তোরা এসেছিস? এইতো কিছু করছি না। আয় ভিতরে।’

-‘বড় মা একটা কথা জিগ্যেস করবো। তুমি কিন্তু সত্যি বলবে নাহয় ভিতরে আসবো না।’

নিমির কথায় মায়া চৌধুরী হেসে দেয়। আর রুয়াত কিছু না বলেই নিমির জন্য অপেক্ষা না করে রুমে ঢুকে পড়ে। মায়া চৌধুরীর পাশাপাশি এসে দাঁড়ায়।

-‘আচ্ছা আগে আয় তো।’

ভিতরে আসে নিমি। একবার রুয়াতের মুখের দিকে মায়া চৌধুরী কে জিগ্যেস করলো
-‘তোমরা আয়াজ ভাইয়ের জন্য মেয়ে ঠিক করে রেখেছো তাইনা!’

মায়া চৌধুরী ভ্রু কুচকায়। হঠাৎ এসব শুনে একটু অবাক হয়।
-‘কিসব বলছিস? আর কেনোই বা মেয়ে ঠিক করবো? কিসের জন্য?’

-‘ভাইয়ার বিয়ের জন্য মেয়ে ঠিক করেছো না? আমাদের একটু বলো না মেয়ের বাড়ি কোঁথায়? আর ওনার নাম কি। ওনি কোঁথায় থাকেন। বলো না বড় মা।’

রুয়াতের এতো আগ্রহ নিয়ে কথাটা শুনে না হেসে পারলেন না। নিমি নখ কামড়াচ্ছে। স্বাভাবিক স্বরে মায়া চৌধুরী বলে-

-‘এতো প্রশ্ন একসাথে করেছিস কোনটা ছেড়ে কোনটার উত্তর দিবো ভেবে পাচ্ছি না তো আমি।’

-‘একটা একটা করে দাও বড় মা।’

-‘আচ্ছা তাহলে বলছি মেয়ের বাড়ি পাশেই। নাম বলা যাবে না এটা মানা আছে। সবচেয়ে বড় কথা আয়াজ নিজে তাকে পছন্দ করেছে।’

রুয়াত ঢোক গিলে কথা শুনে। নিমির মুখ থেকে হাত সরিয়ে দেয়।
-‘আমাদের কেনো জানালে না বড় মা?’

-‘কেউই জানে না তোদের কি জানাবো বল তো? এসব কি বুঝিস তোরা? ইনিমা ও তো জানে না। শুন আমি গোসল করতে যাবো এখন।’

নিমি মাথা নাড়ায়। বের হয়ে আসে রুম থেকে। রুয়াত আর নিমি বের হয়ে আসার পর উচ্চস্বরে হেসে উঠে মায়া চৌধুরী। কিভাবে কথা শোনার জন্য এসেছিলো রুমে। বিশেষ করে রুয়াতের কথাগুলো মনে করে বেশি হেসেছে।
.
-‘দেখেছিস রুয়াত এই আয়াজ ভাইয়া আমার আর শাফীর ভালোবাসা মেনে নেয়নি। আর নিজে ঠিকই তার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে।’

রুয়াত ভ্রু কুচকে তাকায় নিমির দিকে।
-‘কয়টা বাজে দেখ তো?’

মোবাইলে সময় দেখে নিমি বলে-
-‘সন্ধ্যা সাতটা বাজে।’

-‘চল নিচে যাবো। ভালো লাগছে না এভাবে বসে থাকতে।’

রুয়াত আর নিমি নিচে এসে দেখে আয়াজ ফজলুল চৌধুরী কথা বলছেন। নিমি যেতে চাচ্ছিলো না রুয়াত টেনে নিয়ে এসেছে। মাহের চৌধুরী এখনো আসেননি কারখানা থেকে। মেহরুবা ডেকে নিয়ে যায় রুয়াত কে। তার হাতে চা পাঠায় আয়াজ আর ফজলুল চৌধুরীর জন্য। রুয়াত চা নিয়ে আসে। সামনে রাখতেই আয়াজ একবার রুয়াতের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। এই মেয়ের দিকে বেশিক্ষণ তাকানো যায় না। আর তার বাবার সামনে তো মোটেও তাকানো যাবে না। রুয়াত চা দিয়ে এসে অন্য সোফায় বসে পড়ে। পাশেই রূহান টিভি দেখছে। সন্ধ্যায় রূহানের টিভি না দেখলে রাতের খাবার হজম হয় না। এমন অভ্যাস হয়েছে এখন।

ল্যাপটপে কাজ করছে আয়াজ। তার পাশেই কিছু কাগজপত্র। কি যেনো খাতায় লিখছে। মায়া চৌধুরী আয়াজের রুমে আসে। ছেলের পাশে এসে দাঁড়ায়। কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে আয়াজ মাথা তুলে তাকায় তার মায়ের দিকে। মায়া চৌধুরী ছেলের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। আয়াজ কিছু না বলে আবার কাজে মনোযোগ দেয়।

শান্তস্বরে মায়া চৌধুরী বলে-
-‘কিসের কাজ করছিস বাবা? ঘুমাবি না রাত তো প্রায় অনেক হলো।’

আয়াজের দৃষ্টি ল্যাপটপের দিকে। টাইপিং করে যাচ্ছে আর তার মায়ের কথার উত্তর দিচ্ছে।
-‘তুমি ঘুমাও গিয়ে। আমার কাজ আছে। দেরি হবে।’

-‘একটা কথা বলতে এসেছি।’

-‘বলো।’

মায়া চৌধুরী মুখ চেপে হেসে বলে-
-‘আজ রুয়াত আর নিমি এসেছে আমার কাছে তোর সাথে কোন মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে সেটা জানতে। আর রুয়াত তো কিসব প্রশ্ন শুরু করলো। মেয়ের বাড়ি কোঁথায়। নাম কি এসব।’

আয়াজ হঠাৎ করে হেসে দেয়। তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে-
-‘তুমি কি বললে?’

-‘আমি বলেছি নাম বলা যাবে না। নিষেধ আছে। আর বাড়িরটা বলেছি পাশেই।’

হাসতে হাসতে আয়াজ বলে-
-‘তুমি ঘুমাও যাও। সময় হলে নাম জানানো হবে তাকে।’

মায়া চৌধুরী চলে যান। আয়াজ তার গালে হাত রেখে মনে মনে বললো-

-‘বড্ড তাড়া তোমার প্রেয়সী। কিন্তু আয়াজ এতো সহজে ধরা দিবে না তোমার কাছে।’

#চলবে….

[আসসালামু আলাইকুম। সময় স্বল্পতার কারণে গল্প লিখতে কষ্ট হয়ে যায়। যার জন্য এমন অগোছালো হয়ে যাচ্ছে। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here