হৃদপূর্ণিমা পর্ব-১১•১২

0
509

#হৃদপূর্ণিমা
লাবিবা_ওয়াহিদ
| পর্ব ১১+১২ |

জনমানবপূর্ণ স্টেশন। প্রতিদিনের চেয়ে আজ যেন বেশি মানুষ মৌমাছির ন্যায় গিজগিজ করছে। মাছের বাজারের চেয়েও ভয়ংকর পরিস্থিতি। আগামীকাল ছুটির দিন বিধায় মানুষরা হয়তো তাদের সেই পরিচিত মাতৃ-কোলে নয়তো-বা এদিক সেদিক ঘুরতে যাচ্ছে। এতো এতো ভীড়ে আমি নির্ধারিত প্ল্যাটফর্মের একটি বেঞ্চে বসে সঠিক ট্রেন আসার অপেক্ষা করছি। গরমে আমার সব গুলিয়ে আসছে। কিছুক্ষণ পরপরই ওড়না দিয়ে ঘাম মুছছি। ভেবেছি দেরী করে পৌঁছাবো কিন্তু এখানে এসে শুনি ট্রেন আসতে ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগে৷ এসব ভালো লাগে? বারংবার হাতঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি এবং বোতল হতে দুই এক ঢোক পানি খাচ্ছি। গরমের সময় আমার পিপাসা বেশি পায় তাই ব্যাগে হাফ লিটারের একটা বোতল থাকবেই। এসব কথা চিন্তা করতে করতে আমার অপেক্ষার অবসান হলো। ট্রেন তার দ্রুতগামী বেগ কমিয়ে ধীরে ধীরে এসে স্টেশনে থামলো।
ট্রেন থামতেই আস্তে আস্তে যাত্রীরা নামতে লাগলো। লালমনিরহাটের থেকে ট্রেনটি এসেছে। খুব বেশি ভীড় নেই। আমি আবিরকে কল করলাম আমার সঠিক অবস্থান জানানোর জন্য। আসার পূর্বে ভাবীর থেকে আবিরের নাম্বারটা নিয়ে এসেছি এবং ওর সাথে অল্প খানিক কথা বলেও জানিয়েছি আমি ওদের রিসিভ করবো। তাই আবির জানে আমি এসেছি। কয়েকবার রিং হতেই আবির রিসিভ করলো। আমি ওকে আমার অবস্থান জানিয়ে সেই বেঞ্চিতে বসেই ওদের অপেক্ষা করতে লাগলাম। ১০ মিনিট বাদেই আবির চাচীকে নিয়ে চলে আসে৷ চাচীকে দেখে আমি তাকে সালাম দিলাম। উনি মুচকি হেসে সালামের উত্তর নিয়ে বলে,

-‘কেমন আছো রথি? কতো বড় হয়ে গেছো মাহশাল্লাহ!’

আমি প্রতিত্তরে মুচকি হাসলাম। অতঃপর বললাম,

-‘জ্বী চাচী আলহামদুলিল্লাহ আপনি?’

-‘আমিও ভালো। এখন জলদি বাসায় চলো তো আমার তো এই ভীড়ে বমি বমি পাচ্ছে।’

-‘হ্যাঁ। আবির ওনাকে আমি ধরছি আপনি লাগেজ গুলো ধরুন!’

আবির মাথা নাড়ায়। অতঃপর তিনজন কথা বলতে বলতেই স্টেশনের বাইরে যাচ্ছিলো। তৎক্ষনাৎ নাশিদ ওদের দেখতে পায়। কিন্তু সে রথির পাশে থাকা মহিলাকে খেয়াল করেনি।
আমরা একটি সিএনজি করে ডিরেক্ট বাসায় চলে আসলাম। আসার আগে একটা মিষ্টির দোকান থেকে আবির দই, মিষ্টি, রসমালাই ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়েছে। আমি কিছু বলিনি কারণ ওরা আমার নয় ভাবীর মেহমান। বাসায় গিয়ে আমি কলিংবেল চাপতেই বেশ কিছুক্ষণ বাদে মা এসে দরজা খুলে দেয়। মাকে দেখে আমি খানিক চমকে গেলাম। মা এই বাড়িতে কেন? মা আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে আমার পাশে থাকা চাচীকে সালাম করে আলতো কোলাকুলি করলেন। চাচী সালামের উত্তর নিয়ে ভেতরে চলে গেলেন আর পেছন থেকে আবির সব ব্যাগ একসঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। আবিরকে এতো ব্যাগ আলগাতে দেখে আমি বললাম,

-‘চাচীর ব্যাগটি আমায় দিন। এতো ব্যাগ বহন করা তো সহজ নয়!’

আবির দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে একটি ব্যাগ দিলেন। অতঃপর বললেন,

-‘যাক, এতক্ষণে এই অধমের উপর মায়া হলো!’

আমি হালকা হাসলাম আবিরের বলা কথায়। অতঃপর ব্যাগ নিয়ে ওনার পিছে পিছেই চলে গেলাম। ব্যাগ রেখে আমি কৌশলে রান্নাঘরে চলে গেলাম। সেখানে ভাবী আর আমেনা ছিলো। আমি আমেনা বানুকে চোখের ইশারায় চলে যেতে বললে সে নিঃশব্দে চলে গেলো। ভাবী তার রান্নার দিকে মনোযোগ দিয়েই বলে উঠলো,

-‘কী বলতে এসেছিস?’

-‘মা এখানে কেন? আবার কোন নাটক শুরু করলে?’

ভাবী শব্দ করে খুন্তিটা ছেড়ে দিলো রান্নার পাতিলে। অতঃপর আমার পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করে বললেন,

-‘ওরা আমার আত্নীয়। আমি চাই না আমার সমস্যা বাইরের মানুষ জানুক। বাহিরের সবার কাছে আমরা সুখী পরিবার। ইভেন এখনো আমরা সুখী! আর কোনো প্রশ্ন? না থাকলে নিজের ঘরটাকে গুছিয়ে নাও, এখন থেকে কিছুদিন আমাদের সঙ্গেই থাকবে!’

আমি তার দিকে ঘৃণিত দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে রইলাম। একটা মানুষ যে স্বার্থের জন্য আর কী কী করবে আল্লাহ ভালো জানে! আমি কিছু না বলেই রান্নাঘর ত্যাগ করলাম। এই মানুষটার সঙ্গে কথা বলতে গেলেও আমার গা গুলিয়ে আসে। নিজের আগের রুমের দিকে যাওয়ার আগেই তাতানের সঙ্গে দেখা। আমি হাঁটু গেড়ে বসে তাতানকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে রাখলাম। চোখের কোণ আবারও ভিঁজে যায়। তাতান ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললো,

-‘তোমায় অনেক মিস করেছি ফুপ্পি। কিন্তু আম্মু আমায় তোমার কাছে যেতে দেয় না। আম্মু পঁচা!’

আমি চোখ বুজে চোখের জল ফেলে হালকা হেসে বলে,

-‘এভাবে বলতে নেই সোনা। তোমার মা ভালো। মায়েরা সবসময় ভালো হয়। যাইহোক বাদ দেও, এখন যে ক’টাদিন আমি আমার তাতান বাবার সঙ্গে আছি তা আমার তাতান বাবা জানে?’

তাতানকে নিজের থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে শেষোক্ত কথাটি বললাম। তাতান এতে অনেকটা খুশি হলো! সে আবারও আমায় ঝাপটে ধরলো! ওকে নিয়ে আমার রুমটাতে চলে আসলাম। এতদিন পর নিজস্ব রুমের ঘ্রাণ নিতে পেরে কেমন অসাধারণ ভালো লাগা কাজ করছে। আমি আর তাতান মিলে ধুলো-বালি পরিষ্কার করলাম, নতুন চাদর বিছালাম। আলমারির পাশেই দেখলাম একটি ব্যাগ। বুঝতে বাকি রইলো না, মা তৈরি হয়েই এসেছে। এখন মা চাচীর সাথে কথা বলছে। ভাবী হয়তো এখন এমন ভাব দেখাবে সে অনেক সাংসারিক। শ্বাশুড়ি, সংসার ছাড়া যেন সে কিছুই বুঝে না। আমি এসবে পাত্তা না দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হতে হতেই মাগরিবের আযান দিয়ে দিলো। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ভাবী আমায় ডেকে পাঠালো। আমি ওড়না জড়িয়ে চলে গেলাম। মা আমার উদ্দেশ্যে বললেন,

-‘আবিরকে তাতানের ঘরে নিয়ে যা রথি। যাও বাবা ওর সাথে যাও! ফ্রেশ হয়ে একটু বিশ্রাম করিও!’

আমি মাথা নাড়িয়ে আবিরকে তাতানের ঘরে নিয়ে গেলাম। এমন তো না আবির এই প্রথম এসেছে বাড়িতে। তাহলে মা এমন করে বললো কেন? ভালো লাগছে না কিছু! ধুর।

-‘আপনি কী কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত?’

আমি থতমত খেয়ে আবিরের দিকে তাকালাম। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিপাত আমার দিকেই নিক্ষেপ করে আছেন। আমি কিছুটা বিব্রত হয়ে বললাম,

-‘না তেমন কিছু না আপনি ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম করুন!’

বলেই চলে আসতে নিবো তখনই আবির পিছু ডাকলো।

-‘এড়িয়ে চলছেন?’

আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। কিন্তু ওনার দিকে ফিরলাম না। মৃদু সুরে বললাম,

-‘তেমন কিছু না। আপনি জার্নি করে এসেছেন, রেস্ট করুন এখন। আমি আপাতত যাই, পরে নাহয় কথা হবে!’

আমার কথায় আবির যেন সন্তুষ্ট হলো। সে হেসে বললো,”ঠিক আছে!”

-‘আচ্ছা নাফিসা, রথির কী রিলেশন আছে?’

নাফিসা চোখ বড়ো বড়ো করে তার ভাইয়ের দিকে তাকালো। নাশিদের দৃষ্টি দূর আকাশের দিকেই সীমাবদ্ধ। নাফিসা বুঝলো না হঠাৎ এমন প্রসঙ্গের কারণ কী? নাফিসা থতমত খেয়ে কিছুটা অস্ফুট স্বরেই বললো, ‘না ভাই!’

নাফিসার এই একটি বাক্যে নাশিদ কোথায় যেন কিছুটা স্বস্তি অনুভব করলো। সে আগের ন্যায় আকাশের দিকেই তাকিয়ে রয়। নাফিসা বললো,

-‘হঠাৎ এ প্রসঙ্গ কেন?’

-‘না, তেমন কিছু না। গতকাল স্টেশনে দেখলাম একটা ছেলের সঙ্গে কোথাও যাচ্ছে!’

নাফিসা নিজেও কিছুটা ভাবনায় পরে গেলো। পরমুহূর্তে নাফিসা হাসার চেষ্টা করে বললো,

-‘হয়তো ওর ভাবীর কোনো আত্নীয়। ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তো ওর আত্নীয়রা প্রায় বিচ্ছিন্ন।’

নাশিদ চুপচাপ-ই দাঁড়িয়ে রইলো। এখন যেন সে হুটহাট ভাবনায় হারিয়ে যায়। নাফিসাও একইভাবে দাঁড়িয়ে আকাশের পানে চোখ দিলো। কিছুক্ষণ অতিবাহিত হতেই হুট করে নাফিসা প্রশ্ন করলো,

-‘ভালোবাসিস, রথিকে?’

নাশিদ বিস্মিত দৃষ্টিপাত নাফিসার দিকে নিক্ষেপ করলো। নাফিসা তখনো আশা নিয়ে নাশিদের পানে তাকিয়ে রয়। কিন্তু নাশিদ কোনপ্রকার উত্তর দিতে পারে না। এই ‘ভালোবাসা’ শব্দটি তাকে কঠোরভাবে নাড়িয়ে তুলেছে। “ভালোবাসি না!” এইটুকু যেন তার গলা দিয়ে বের হচ্ছে না। এমন কেন হচ্ছে? নিজের সঙ্গে কিছুক্ষণ লড়াই করে শেষ অবধি বলেই ফেললো,

-‘নাহ!’

নাফিসা তপ্তশ্বাস ফেলে আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে রয় কিন্তু নাশিদ দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। সে ধপাধপ পা ফেলে নিচে চলে গেলো। কেন যেন রথির চেহারাটা তার মাথায় গোল গোল করে ঘুরছে যা নাশিদকে বিরক্ত করে তুলছে। সে না পেরে ইউনিফর্ম করে বাড়ি থেকেই বেরিয়ে গেলো। নাফিসা ছাদ থেকে নাশিদকে দেখলো সে গাড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছে। নাফিসা এবার ফোন বের করে নাশিদের ওই অবস্থার একটা ছবি তুলে নেয়। মাথায় তার দুষ্টু বুদ্ধি চেপেছে।

-‘ফুপ্পি, মামা চলো না ফুচকা খেতে যাই। কতদিন হলো খাই না!’

আমি কোণা চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে ফের তাতানের দিকে তাকালাম৷ আমি কিছু বলার আগেই আবির বলে উঠে,

-‘তো চলো যাই। এই একদিন বাসায় বসে থেকে থেকে আমি ক্লান্ত।’

ভাবী আড়চোখে একবার আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

-‘তো বেশ! তাতান তোমার মামার সাথে যাও!’

তখনই চাচী ভাবীর উদ্দেশ্যে বলে,

-‘রথি কী তাহলে বাসায় বসে থাকবে নাকি? আবির, রথিকেও সাথে করে নিয়ে যা। তিনজন একসাথে থাকলে ভালো লাগবে!’

আমি বিস্মিত হয়ে আবিরের দিকে তাকালাম। আবিরের ঠোঁটে হাসি। এই হাসিটা আমার ভালো লাগলো না। তাও চাচীর মুখের উপর কিছু বলতে পারলাম না। মা আমায় সাবধান করেছে যেন ওনার মুখে মুখে তর্ক না করি। এই মানুষটা এই ভালো আবার দারুণ রাগী! ওনার সাথে অনেকটাই ব্যবহার মেইনটেইন করে চলতে হয়। আমি মাথা নাড়িয়ে নিজের ঘরে চলে গেলাম রেডি হতে। আর আবির তাতানকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো। ওরা চলে যেতেই চাচী মুচকি হেসে রথির মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,

-‘আপনার মেয়ে বেশ শান্ত-শিষ্ট, ঠিক আগের মতোই। এমন লক্ষী মেয়ের যেন কারো নজর না লাগে!’

মার্জান তার চাচীর প্রসংশা চুপচাপ শুনলো তবে মুখে কিছু বললো না। তার ভেতরে কখন কী চলে কেউ-ই বলতে পারে না। তাই আপাতত মার্জান তার চাচীকে ঘাটতে চাইলো না।

নাশিদ গাড়ির স্টেয়ারিং এ আঙুল চালাতে চালাতে জ্যাম ছাড়ার অপেক্ষা করছে। তার ভেতরে এখনো নাফিসার বলা কথাগুলো অনবরত ঘুরঘুর করছে। কিছুতেই সে এই চঞ্চল চিন্তামহলকে নিজের থেকে দূরে রাখতে পারছে না। একটার পর একটা চিন্তা যেন তার মাথায় ছিদ্র করে করে ঢুকছে।

চিন্তাগুলো ঝেড়ে ফেলার জন্য আশেপাশে তাকাতেই সে আবারও রথিকে এবং আবিরকে একসাথে দেখে ফেললো যা দেখে নাশিদ কিছুটা রেগে গেলো তবে সে নিশ্চুপ! আহ কী সুন্দর কথা বলছে আর ফুচকা মুখে পুরছে। দৃশ্যটা নাশিদের একদমই ভালো লাগছে না। তাই সে চোখ সরিয়ে নেয়। দুইদিনে এই ছেলেটা কোন আহামরি হয়ে গেলো সেটাই নাশিদের মগজে ঢুকছে না! জ্যাম ছাড়তেই সে আরেক পলক ওদের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো। অসহ্য লাগছে তার সবকিছু।

.

-‘স্যার আপনাকে কিছুদিন ধরে অন্যমনস্ক লাগছে যে?’

-‘কিছু না নয়ন! এমনি!’

-‘আপনি কী ওই মেয়েটিকে নিয়ে চিন্তিত?’

নাশিদ কলম ঘুরানো বন্ধ করে ঘাড় উঁচু করে নয়নের দিকে তাকালো। নয়নের দৃষ্টিতে কৌতুহল স্পষ্ট! নাশিদ মৃদু স্বরে বলে,

-‘নিজের কাজে যাও। কাজ না থাকলে বাড়ি যাও, এসব মেয়ে-টেয়ের কথা থানায় তুলবে না!’

নয়নের দাঁত কেলানো ফুঁস। সে ঘাড় কাত করে চলে গেলো। নাশিদ এবার চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বুজে রইলো। সেই দৃশ্যটা এখনো তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। একটু প্রশান্তি চাচ্ছে নাশিদ। নয়তো তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসবে।

.

এভাবেই কিছুদিন অতিবাহিত হয়। আমি সবে কোচিং থেকে বেরিয়ে রিকশার জন্য দাঁড়ালাম। এখন বাসায় তাড়াতাড়ি যেতে হয় তাই হেঁটে যাওয়া সম্ভব না। আবার রিক্সায় চড়লে রিক্সাওয়ালা অন্য রাস্তা দিয়ে যায় বলে সে আর নাশিদকে দেখতে পায় না। কারণ রাস্তাটি থানার উল্টোপথে। আমি আনমনে এসবই ভাবছিলাম তৎক্ষণাৎ রাস্তার অপরপাশে পুলিশম্যানকে দেখে আমি খানিক চমকে উঠলাম। একি উনি তো রাস্তা পার হয়ে আমার দিকেই আসছে। কিন্তু ওনার মুখ এমন লাল হয়ে আছে কেন? শুকনো ঢোক গিললাম, এখন নাশিদ কী আমার হাতে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে যাবে? কিন্তু আমি তো অপরাধী নই।
উনি ঠিক আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করে আমার দিকে ঝুঁকে গেলো আর আমি সঙ্গে সঙ্গে সরে গেলাম।

~চলবে।

হৃদপূর্ণিমা
লাবিবা_ওয়াহিদ
| পর্ব ১২ |

রথি দ্রুত সরে গেলেও তার বুকের ভেতরের ধড়ফড়ানি কিছুতেই কমছে না। এরকম ভয় রথি তার এ জন্মেও পায়নি। সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে এই পুলিশম্যানের ভাব-ভঙ্গি! নাশিদ আঁখিপল্লবে রক্তিম ভাব এনে বলে,

-‘এতো ছেলেদের সঙ্গে কী তোমার? ওরা তোমায় দুই পয়সাও আয় করে দেয় না যার জন্য এর ওর সাথে পথেঘাটে ঘুরাঘুরি করবা। সময় থাকতে শুধরে যাও। নিজের হোল লাইফে ফোকাস করো!’

বলেই আবারও উলটোপথে হেঁটে চলে গেলো। রথি তখনো বেক্কলের মতো হা করে দাঁড়িয়ে আছে। নাশিদের বলা কথাগুলো তার মাথার উপর দিয়ে গেলো। এগুলো কী বলে গেলেন উনি? সে কখন কোন ছেলের সঙ্গে ঘুরাঘুরি করলো? সে তো জাস্ট আবির… এক সেকেন্ড! উনি কী আবিরকে উদ্দেশ্য করেই বললো? কিন্তু নাশিদ ওদের কোথায় দেখলো আর এরকম বিহেভ করার মানেই বা কী? কিছুই রথির এই ছোট মাথায় ঢুকছে না।
রথির ভাবনাতে ছেদ ঘটালো ফাহাদ।

-‘কী ব্যাপার রথি এভাবে দাঁড়িয়ে আছো যে?’

রথি থতমত খেয়ে পাশ ফিরে তাকালো। ফাহাদ আবারও প্রশ্ন করলো,

-‘ঠিক আছো?’

রথি কিছু ভেবে মাথা নাড়িয়ে হাসার চেষ্টা করলো। ফাহাদ ভ্রু কুচকে আবারও বললো,

-‘লোকটা কে ছিলো রথি?’

-‘কো..নটা?’

-‘এইযে সবে যার সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলে। দূর থেকে তো তাই দেখলাম!’

রথি আবারও চুপ মেরে গেলো। কিছুক্ষণ নিজের মধ্যে তুফান সৃষ্টি করে বললো,

-‘কেউ না!’
বলেই রথি হাঁটা ধরলো। ফাহাদ তখনো সেখানে দু’পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। রথিকে তার আজীবনই রহস্যময়ী নারী মনে হয়। এই মেয়েটা তার
নিজের সম্পর্কে কখনো কিছু বলেনি৷ আজও তাকে এড়িয়ে গেলো।

মার্জান রান্না করছিলো তখনই রথি মার্জানের সামনে একটি বাজারের ব্যাগ এনে রাখলো। মার্জান রান্না ছেড়ে চোখ বড়ো বড়ো করে বাজারের ব্যাগটির দিকে তাকালো। রথি হাত ঝেড়ে বললো,

-‘তোমার দয়ায় চলার মতো মেয়ে আমি নই আর আমার মাকেও তোমার দয়ায় চলতে দিবো না। বাজারটা এতদিনে আনিনি কারণ আমাদের ওই বাসায় বেশ তরকারি আর মাংস ছিলো। সেগুলো তোমার অগোচরে এনে আমি নিজেই রেঁধে মা সহ খেয়েছি। এখন এগুলো আনলাম। তোমার রান্না শেষ হলে আমায় বলিও!’

বলেই রথি আসতে নিলো ভাবী আমায় বাজখাঁই গলায় প্রশ্ন করলো,

-‘টাকার গরম দেখাস আমাকে? নিজেকে নিয়ে এতো অহংকার তোর? ভুলে যাচ্ছিস আমি তোদের আমার বাসায় থাকতে দিচ্ছি?’

রথি সাময়িক হাসি দিয়ে বললো,

-‘ওই কাগজ দিয়ে আমার মাকে বোকা বানাতে পারো তবে আমাকে নয়। আমি কিন্তু পড়ালেখা জানি ভাবী, ক্ষেত থেকে উঠে আসিনি। তাই আমার বাবার বাড়িতে আমার এবং মায়ের তোমার চেয়ে বেশি অধিকার আছে। একবার যেহেতু এই বাড়িতে ঢুকিয়েছো আমার আর কী করার? এখন দেখো তোমায় কীভাবে নক্তের ন্যায় পুড়িয়ে যাই। আমি মায়ের মতো এতো সাদা-সিধে নই যে তোমার দুই একটা নরম বুলিতে পুরানো কথা ভুলে যাবো।’

বলেই হনহন করে নিজের ঘরে চলে যায় রথি। মার্জান বুঝতে পারে সে কতো বড় ভুল করেছে। এই মেয়ে এখন অনেক চালাক হয়ে গেছে। এখন কী হবে? ওদের সঙ্গে থাকা যে মার্জানের পক্ষে অসম্ভব! ভাবতেই একটা শুকনো ঢোক গিললো সে।
সেদিন বিকালে রথি এবং আবির আবারও এক সঙ্গে বের হলো। রথির বের হওয়ার একদম ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু ওই চাচীর জ্বালায় বের হতে বাধ্য হয়। সে বুঝে না বারংবার আবিরের গলায় রথিকে ঝুলানোর মানে কী? আবির কী তার আপন কেউ? আর আবিরটাই বা কেমন বলদ যে কিনা মায়ের এসব কাজ নিরবে সহ্য করছে। এই মা-ছেলের ভাব-গতিক কিছুই সন্তুষ্ট করছে না রথিকে।

————————

-‘চাচী আপনি যেটা চাইছেন সেটা কিন্তু ঠিক না!’

-‘অবশ্যই ঠিক। তুমি মানো আর না মানো, আবিরের জন্য রথিকে আমার ভিষণ পছন্দ হয়েছে। কিন্তু তোমার জন্যই বেয়াইয়ের কাছে আবদারটা করতে পারছি না!’

-‘কিন্তু চাচী…!’

চাচী চোখ গরম করে তাকালো, মার্জানের দিকে। মার্জান কিছু বলার সাহস পেলো না। নিজের অজান্তেই চুপ করে রইলো।


আবির রথিকে নিয়ে একটা ব্রিজের উপর দিয়ে হাঁটছে। আর রথি তিক্ততায় ভ্রু খানিকটা কুচকে রেখেছে। আবির নিরবতা ভেঙ্গে রথির উদ্দেশ্যে বলে,

-‘আপনাকে কিছু কথা বলার ছিলো!’

রথি থেমে যায়। বিরক্তিটা ভেতরে চেপে রেখেই বললো,

-‘বলুন!’

আবির যখনই কিছু বলতে নিবে ওমনি রথির পেছন থেকে কেউ ওকে টেনে নিলো। রথি পিছে তাকিয়ে দেখে নাফিসা মুচকি হেসে রথির পানেই তাকিয়ে। রথি তো নাফিসাকে দেখে বেশ খুশি হয়ে যায়!

-‘তুই এখানে? হঠাৎ?’

-‘এইতো শপিং এ যাচ্ছি। তোকে এখানে দেখে গাড়ি থেকে নেমে আসলাম। তা উনি কে?’ আবিরকে উদ্দেশ্য করে বললো নাফিসা।
আবিরের মাথা তো ততক্ষণে হ্যাং আউট হয়ে গেছে। সে নিষ্পলক দৃষ্টিতে নাফিসার দিকে তাকিয়ে রয়। নাফিসার সাথে ওর চোখাচোখি হতেই আবিরের ধ্যান ভাঙলো। রথি হেসে বলে, ‘ও আবির!’

আবির রথির কথা কানে না নিয়ে নিজেই নিজের ইন্ট্রোডাকশন দেয় নাফিসার দিকে হাত বাড়িয়ে।

-‘হাই, আমি আবির মাহমুদ! ঢাকাতেই একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত। আপনার নাম?’

আবিরের হুট করে বলা কথাগুলো নাফিসার মাথার উপর দিয়ে গেলো। আর রথি, সে তো হা করে আবিরকে দেখছে। আবিরের হুট করে গিরগিটির ন্যায় রূপ বদলানোটা রথি কেন যেন হজম করতে পারছে না। নাফিসা নিজেকে সামলে আবিরের সাথে হাত মিলিয়ে বলে,

-‘আমি নাফিসা। এবার অনার্স লাস্ট ইয়ারে আছি। আপনার সঙ্গে পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো।’ মুচকি হেসে বলে নাফিসা। নাফিসার এই হাসিটা আবিরের বুকে সুঁইয়ের ন্যায় বিঁধে গেলো। নাফিসা হাত ছাড়িয়ে রথিকে তাড়া দিয়ে বলে,

-‘ভালো কথা। আমি তোকে আমার সঙ্গে নিতে এসেছি। তোর চয়েজ ভালো, শপিংয়ের ক্ষেত্রে। তাই তুই আমার সাথে যাবি। আর মিঃ আবির, ভালো থাকবেন, আপনার বোনকে নিয়ে যাচ্ছি!’

শেষোক্ত কথাটি নাফিসা ইচ্ছে করেই বললো। কিন্তু আবিরের এতে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখায় নাফিসা কিছুটা অবাক হলো। আবির যেভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে যেন ওই দৃষ্টি দিয়ে নাফিসাকে আস্ত গিলে ফেলবে। নাফিসা বিষম খেলো। অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে আবিরকে বিদায় দিয়ে রথিকে নিয়ে চলে গেলো। আর আবির? সে এখনো নাফিসার পথে তাকিয়ে আছে। আবির আনমনে বলে উঠলো,

-‘এটাই কী তবে, লাভ এট ফাস্ট সাইট?’

———————

-‘এটা কে রে ভাই, যেভাবে তাকিয়েছিলো যেন আমায় আস্ত গিলে ফেলবে?’

-‘ভাবীর কাজিন। সেটা বাদ দে, তুই আমায় এভাবে মাঝরাস্তা থেকে টেনে আনলি কেন?’

নাফিসা মুখে কিছু বললো না, ইশারায় সামনে তাকাতে বললো। রথি সামনে তাকিয়ে আরেকদফা বিষম খেলো। পুলিশম্যান! গাড়ির সঙ্গে হেলান দিয়ে একদম ফিল্মি হিরোর মতো দাঁড়িয়ে আছে। তবে আজ তার লুকটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ব্ল্যাক শার্ট যার হাতা কনুই অবধি ফোল্ড করা, ব্ল্যাক জিন্স আর ব্ল্যাক শু, হালকা বাতাসে অবাধ্য কয়েকগাছা চুল অসমান্তরাল ভাবে উড়ছে। আপাদমস্তক মানুষটাকে দেখে রথির জ্ঞান হারানোর উপক্রম। হা করে সে তাকিয়ে আছে নাশিদের পানে। নাশিদ তখনো রথির দৃষ্টি খেয়াল করেনি। নাফিসা পাশ থেকে রথিকে আলতোভাবে ধাক্কা দিয়ে বলে,

-‘মুখ বন্ধ করে ভাইকে দেখ, মশা ঢুকে যাবে তো!’

নাফিসার এরূপ কথায় রথি লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেললো। নাফিসা মুচকি হেসে বললো,

-‘খুব তো বলতি আমার ভাই গম্ভীর টাইপ পুলিশ, তার প্রেমে পরলে গর্তে পরবি টাইপ কথাও বলেছিস। এখন তলে তলে এসব করে বেড়াচ্ছিস?’

রথি নাফিসার কাঁধে এক চড় মেরে বললো,
-‘মুখে লাগাম দিয়ে কথা বল!’

-‘সত্য বললেই এই বান্দা দোষী? বাহ!’

এসব বলতে বলতেই ওরা নাশিদের গাড়ির সামনে আসলো। নাশিদ রথিকে দেখেও না দেখার ভান করলো। রথির প্রতি নাশিদের এই ইগনোরেন্সটা তার মনে বেশ আঘাত করলো তবে রথি মুখ ফুঁটে কিছু বলেনি। রথি পেছন সিটের দরজা খুলতেই নাশিদ বাজখাঁই গলায় বলে উঠলো,

-‘নাফিসা! ওকে বলে দে আমি কারো পার্সোনাল ড্রাইভার না!’

রথি চোখ গরম করে নাশিদের দিকে তাকালো। কিন্তু নাশিদ রথির দিকে না তাকিয়েই গাড়িতে উঠে বসলো। এই প্রথম নাশিদের প্রতি রথির চরম রাগ লাগলো। নাফিসা মুখ টিপে হেসে বললো,

-‘যা গিয়ে সামনের সিটে বস!’

রথিও কম নয়। সেও বলে উঠলো,

-‘আমি কেন বসতে যাবো? তোর ভাই তুই তার পাশে গিয়ে বস। আমি খামোখা বসে কী করবো? আর এইযে পুলিশ এসব ভাব আপনি আপনার পকেটেই রাখুন। নাফিসা আমি গেলাম, তোর এই হিটলার ভাইয়ের সঙ্গে কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে আমার নেই!’

বলেই সামনে এগোতে নিলো তখনই নাশিদ দরজা খুলে রথির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নাশিদও চোখে ক্রোধ এনে বললো,

-‘আমি হিটলার? আমি হিটলার হলে এতদিনে তোমায় হিটারের মাঝে পোড়াতাম! তা না করে তোমায় হেল্প করেছি। সামান্য সম্মানবোধ তোমার মধ্যে নেই নাকি?’

-‘না নেই। যে আমার সঙ্গে যেরূপ ব্যবহার করবে আমি ঠিক সেরূপ ব্যবহারই উপহার দিবো।’

-‘রথি, মাথা গরম করিও না। গাড়িতে ওঠো!’ চিবিয়ে চিবিয়ে বললো নাশিদ।

রথি এবার পুরোপুরিভাবে নাশিদের দিকে তাকাতেই রথি আঁতকে উঠলো। চরম রেগে আছে সে, যা দেখে রথি তার হুঁশে ফেরে। আয়হায়! কী বলতে কী বলে ফেলেছে সে? নাশিদের সঙ্গে তো সে কখনোই এমন ব্যবহার করেনি, তাহলে আজ কোন ভূত তার মস্তিষ্কে ভর করলো? রথি কিছুটা বিব্রতবোধ নিয়ে দৃষ্টিনত করে ফেললো এবং চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো সিটে গিয়ে বসলো। নাফিসা এবং নাশিদ দুজনেই চমকে গেলো রথির হঠাৎ চুপ হওয়া দেখে। তবে যাই হোক, নাফিসা নিরব দর্শকের মতো ওদের ঝগড়াটা বেশ উপভোগ করেছে। কে জানতো, কোনো এক সময় ওদের ঝগড়াও সে নিজ চোখে দেখতে পারবে?
নাশিদ এবার নাফিসার উদ্দেশ্যে বললো,

-‘এখন তোর কান ধরে গাড়িতে উঠাতে হবে?’

ভাইয়ের মেজাজ দেখে নাফিসাও বাধ্য মেয়ের মতো গাড়িতে উঠে বসলো। ও উঠতেই নাশিদও উঠে বসলো। নাশিদ এবং নাফিসা ঘুরতে বেরিয়েছিলো কিন্তু ব্রিজে ওদের একসঙ্গে দেখে নাশিদই নাফিসাকে বলে রথিকে আনিয়েছে। নাফিসা ভাইয়ের ভাব-গতিক বুঝলেও মুখে কিছু বলে না। থাকুক না আড়ালে নাশিদের এই স্বচ্ছ অনুভূতিগুলো!!

গাড়িতে উঠতেই যখন গাড়ি স্টার্ট দিবে তখনই আবারও নাশিদ ঠ্যাস মেরে রথিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-‘তোর বান্ধুবিকে বল যেন সিটবেল্টটা বেঁধে নেয়। নয়তো কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আমাকে দিয়েই উপরমহল ওনার পোস্টমর্টেম করাবে!’

রথি এবার তীর্যক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো নাশিদের দিকে। কিন্তু আফসোস রথির দৃষ্টি দেখলো না নাশিদ। পেছন থেকে নাফিসার হাসির শব্দ কানে ভেসে আসছে। রথি চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,

-‘আমার সিটবেল্ট বাঁধলে দম আটকে আসে। তাই আমি সিটবেল্ট বাঁধবো না। আর দুর্ঘটনা ঘটলে তো আপনারই লাভ! আপনার ওই আগুনে গোলার ন্যায় রাগটা আমায় পোস্টমর্টেম করে কমাবেন!’

রথির কথাগুলোতে নাশিদের ভেতরটা ধক করে উঠলো। তীব্র একটি যন্ত্রণা অনুভব করছে সে। নিজেকে খানিক সামলে সে গাড়ি স্টার্ট দেয়। রথি আর কিছু বলে না। জানালার বাইরে তাকিয়ে আজ সারাদিনে নাশিদের করা ব্যবহারগুলো এক এক করে মনে করতে লাগলো। নাশিদের ব্যবহার হঠাৎ পাল্টে যাওয়া, বিষয়টি তাকে ভীষণরকম ভাবাচ্ছে।

নাশিদ ইয়া বড় শপিংমলের সামনে গাড়ি দাঁড় করালো। এতক্ষণে মাগরিবের আযান দিয়েছে। রথি তড়িঘড়ি করে মাথায় ওড়না দেয় যেটা নাশিদের চোখ এড়াইনি। এই দৃশ্যটি সে তার নজর বন্দি করে রাখলো। নাশিদ ওদের সঙ্গে শপিংমলে ঢুকলো না। নাফিসা রথিকে নিয়ে নিজের মনমতো শপিং করে তবেই ফিরলো। পরশু প্রোগ্রাম, সেই নিয়েই শপিং।

নাফিসা অবশ্য রথিকে একজোড়া ঝুমকা আর নীল চুড়ি উপহার দিয়েছে। রথি কোনক্রমেই নিতেই চায়নি কিন্তু নাফিসার জেদের কাছে হার মেনে নিতে বাধ্য হয়। তবে রথিও নাফিসাকে এক জোড়া দুল উপহার দিয়েছে। নাফিসা এবং রথি আসলে নাশিদ গাড়ি স্টার্ট দেয় এবং রথিকে তার বাসায় ড্রপ করে দিয়ে চলে যায়। রথি ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

কোনো ছেলের গাড়ি থেকে রথিকে নামতে দেখে ফেলে শামুন। সে হাত দুটি মুঠ করে রাগে সাপের ন্যায় ফোঁসফোঁস কররে লাগে।

~চলবে।

বিঃদ্রঃ আগামীকাল ইনশাল্লাহ, প্রোগ্রাম স্পেশাল পর্ব আসবে৷ গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম। আর দয়া করে কেউ ছোট পর্ব বলবেন না। যথেষ্ট বড়ো করেই দেই আমি!?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here