#হৃদপিন্ড_২
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পার্ট_১২
.
সময় খুব দ্রুতই চলে গেলো। চলে এলো বিয়ের দিন। বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধবে ভরপুর। ভোর রাতেই গরু জবাই করা হয়৷ মাংস কাটতে গিয়ে বা হাতের আঙুলে আঘাত লাগে ইমনের৷ মুরাদ তাঁকে রুমে নিয়ে এসে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে চলে যায়। ইমন কিছুক্ষণ রেষ্ট নিবে তাই রিমির বড় বোন রুমাকে বলে এক কাপ কফি দিতে। সকলেই কাজে ব্যাস্ত রুমা কফি বানিয়ে মুসকানকে দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। মুসকান কফি নিয়ে রুমে যেতেই দেখে ইমন চোখ বুজে একহাত কপালে ঠেকিয়ে চিত হয়ে শুয়ে আছে। হাতের ব্যান্ডেজ দেখে কান্না পেলো তাঁর। মুখটা কাঁদো কাঁদো করেই কাছে গিয়ে পাশে বসলো৷ ধীর আওয়াজে বললো,
—- তোমার কফি।
ইমন চোখ মেলে তাকালো। এই মিষ্টি কন্ঠস্বর,এই মিষ্টি মুখটারই অপেক্ষা করছিলো সে। মুচকি হেসে ওঠে বসলো। পলকহীন ভাবে চেয়ে জিগ্যেস করলো,
—- তুই বানিয়েছিস?
মুসকান মাথা বামে-ডানে ঘুরিয়ে না করলো। ইমন তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে কফির মগ নিয়ে বললো,
—- চা,কফিটা অন্তত শিখতে পারিস? আর কিছু না হলেও এই দুটো তো আমি তোর হাতেই খাবো।
মুসকান মাথা নিচু করে বললো,
—- আচ্ছা।
—- কি আচ্ছা শিখবি নাকি?
—- হুম।
—- একদম না। এই বয়সে এটা না শিখলেও দোষের কিছু নেই৷ আরো দু,এক বছর পর এসব শিখে নিবি। এখন শিখতে গেলে হাত,পা পুড়াবি আর দোষ হবে আমার৷
মুসকান গোমড়ামুখে বললো,
—- এখনিতো বললে শিখতে আবার এ কথা বলছো কেনো?
ইমন কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বললো,
—- কই এটা বলেছি নাকি? না তুই ভুল শুনেছিস। আমি বলেছি দু এক বছর পর শিখতে পারিস।
মুসকান বোকা চোখে চেয়ে রইলো। ইমন মিটিমিটি হাসছে আর কফি খাচ্ছে। কফি শেষ করতেই মুসকান চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ইমন বললো,
—- তুই কি আমার আঘাতের স্থান টা দেখিসনি মুসু?
মুসকান টলমল চোখে তাকালো বললো,
—- দেখেছি৷ কিন্তু সময় নিয়ে তাকাইনি আমার ভয় লাগে।
—- তাহলে আমার আঘাতে তোর খারাপ লাগেনি তাইতো?
মুসকান চুপ হয়ে চেয়েই রইলো। ইমন হাত এগিয়ে দিয়ে বললো,
—- একটা চুমুতো খেতেই পারিস। প্রেমিকার চুম্বনে প্রেমিকের মরণ ব্যাধিও সেড়ে যায় তা কি তুই জানিস না?
হাত থেকে কফির মগ টা ফস করে পড়ে গেলো। যার ফলে আরো বেশীই কাঁপছে মুসকান। ইমন তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে ধমকে বললো,
—- চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যা বেয়াদব মেয়ে কোথাকার। যা বলছি এখনি যা। এতো ছোট আত্মার মানুষ যেনো আমার সামনে আর এক সেকেন্ডও না থাকে৷
মুসকান হতভম্ব হয়ে পিছন ঘুরতেই ইমন আবারো ধমকে ওঠলো,
—- ঐ এটা কে নেবে? তোর কলিজা এতো ছোট জানলে তোর চুমু চাওয়া তো দূরের কথা নিজেও চুমু খেতাম না।
মুসকান নিচু হয়ে মগটা কুড়িয়ে নিয়ে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে ছুঁড়ে ফেললো মগটা। রাগে গটগট করতে করতে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। সামনে রাগ খাটাতে পারেনি বলে রাগটা ইমনের আড়ালেই খাটালো৷ একেতো তাঁকে লজ্জা দিয়েছে তারওপর ধমক দিয়ে অপমান করে রুম থেকে বের করে দিয়েছে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তাঁর। রান্নাঘরে মরিয়ম আক্তার মেয়েকে বকা দিচ্ছেন। সারাদিনে একটা কাজও করেনা মেহমানকে কফি দিতে বলেছে বলে এতো রাগ দেখানোর কি আছে বুঝলেন না তিনি৷ তাই কয়েকটা বকা দিয়ে নিজের কাজে মন দিলেন ৷
.
দুপুর গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা। মুসকান, মুসকানের বান্ধবী আর মামাতো, খালাতো ভাই বোনরা মিলে বাসর সাজাচ্ছে। বিয়ে পড়ানো হয়েছে আধাঘন্টা আগেই। মুরাদের বন্ধু,বান্ধব রা মিলে বসার রুমে আড্ডা দিচ্ছে। রিমিও তাঁদের সাথেই রয়েছে। ইমন অনেক সময় ধরে মুসকানকে দেখেনি। তাই সবার থেকে সরে গিয়ে যে ঘরে বাসর সাজানো হচ্ছে সে ঘরে গেলো। গিয়ে দেখলো সবাই মিলে খুব হৈচৈ করছে। মুসকানও প্রচুর মজায় আছে ওদের সাথে। কি সুন্দর, মিষ্টি হাসি মেয়েটার, কি সুন্দর করে সবার সাথে কথা বলছে অথচ তাঁর সামনে এলেই চুপসে যায় কেমন। মাথা চুলকে মিটিমিটি হাসতে লাগলো দরজার পাশে দাঁড়িয়ে। মুসকান কথার ফাঁকে দরজায় তাকাতেই ইমনকে দেখতে পায়। ইমন ইশারা করে বাইরে আসতে। মুসকান এক ঢোক গিলে ধীরস্থিরভাবে বিছানা থেকে নেমে বাইরে যেতেই ইমন মুসকানের হাতটা চেপে ধরে ছাদে নিয়ে যায়।
.
মুসকান যখন রুম থেকে বের হয় পিছন পিছন তাঁর খালাতো ভাই শাওনও বের হয়। শাওন এবার অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ছে। মুরাদ সহ মুরাদের সকল ভাই, বোনরাই প্রচন্ড রাগি সেই সাথে কাজিনদের ব্যাপারেও ব্যাপক সিরিয়াস। ইমনের সাথে ওভাবে মুসকানকে দেখে অবাক হয় সে। সেই সাথে সন্দেহও হয়। কারন তাঁর নানি মারা যাওয়ার পরেরদিনই মারুফের বন্ধুর সাথে মারিয়ার সম্পর্কের কথা ফাঁস হয়েছে। অনেক ঝামেলাও হয়েছে এ নিয়ে। একি কাহিনী কি মুরাদ ভাইয়ের বন্ধুও করছে? আর মুসকান? ও তো অনেকটাই ছোট মারিয়ার থেকেও ছোট ও ওর সাথে ইমন ভাইয়ের মতো একজন মানুষ সম্পর্কে জরাবে? নিজের সন্দেহ সঠিক না ভুল? তা বুঝার জন্যই সে চুপিচুপি চলে যায় ছাদে।
ছাদের দরজার পাশেই দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুসকান৷ ইমন তাঁকে ওটা সেটা প্রশ্ন করছে সে শুধু হুম,না করে উত্তর দিচ্ছে। ইমন এক ধ্যানে চেয়ে আছে মুসকানের লজ্জামিশ্রিত মুখটার দিকে। বুড়ো আঙুল দিয়ে মুসকানের ঠোঁটের কোনার তিলটায় হাত বুলাচ্ছে আলতো ভাবে। দরজার চিপা দিয়ে শাওন দেখার চেষ্টা করছে ঘটনাটা আসলে কি? ইমনের কন্ঠস্বর কানে এলেও স্পষ্ট বুঝতে পারছেনা। রাতের বেলা ছাদে লাইট অন থাকে বলে এটুকু দেখতে পাচ্ছে যে ওরা কি করে? যতোটা বুঝার বুঝে গেছে সে। তারপরও শেষটা দেখার অপেক্ষায় তারপর এদের শায়েস্তা করবে। ভালো মানুষীর আড়ালে আসল ইমনটাকে টেনো হিঁচড়ে বের করবে আজ শাওন।
মুসকানের চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে কপালে আলতো স্পর্শ করলো ইমন। তারপর পকেট থেকে দুটো গোলাপ বের করে একটা মুসকানের হাতে দিলো। আরেকটা মুসকানের বেনুনীর ভিতর গুঁজে দিলো। মুসকান গুটিশুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছে সে৷ ইচ্ছে করছে ছুটে পালাতে। কিন্তু সামনের মানুষ টার অবাধ্য হয়ে এক পা নড়ার শক্তিও তাঁর নেই।
ইমন কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
—- সেদিনেরটা রিটার্ন হয়ে যাক? কাঁদবি না প্লিজ।
মুসকানের বুকটা ধক করে ওঠলো। পুরো শরীর তাঁর মৃদু কেঁপে ওঠলো। চোখ বন্ধ করে ঘনঘন শ্বাস নিতে থাকলো সে। ইমন তাঁর দুগালে, কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। মুসকানের হাত আপনাআপনিই চলে গেলো ইমনের বুকে, পিঠে। মৃদু হাসলো ইমন। ইচ্ছে করছিলো আরো কাছে নিতে ভেসে যেতে অন্য এক দুনিয়ায় কিন্তু সে আর এগোলো না। দুহাতে শক্ত করে বুকে জরিয়ে নিয়ে বললো,
—- এতো নরম কেনো তুই? প্লিজ শান্ত হো কিছু করবোনা এমনি বলেছি। সেদিনতো ভুল করে হয়ে গেছে বার বার কি আমি ভুল করবো নাকি? এই শুধু জরিয়ে ধরবো একটু বলেই বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে চুলে নাক ঘষতে লাগলো।
দুজনই যখন একে অপরের সাথে মিশে রয়েছে। দুজনেরই যখন শ্বাস-প্রশ্বাস মিলে, মিশে একাকার ঠিক সে সময়ই মুরাদ ইমনের শার্টে চেপে ধরে একটানে সড়িয়ে বিশ্রি একটা গালি দিলো। আচমকাই এমন কিছু হওয়াতে ইমন কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কিন্তু মুরাদ যখন মুসকানের গায়ে হাত তুললো মাথায় রক্ত চড়ে গেলো তাঁর। ইমন মুরাদের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে অগ্নি চক্ষুতে চেয়ে রাগান্বিত গলায় বললো,
—- তোর সাহস কি করে হয় ওর গায়ে হাত তোলার?
—- তোর সাহস কি করে হয় আমার বোনকে নোংরা ভাবে স্পর্শ করার?
—- মুখ সামলে কথা বল মুরাদ। তুই না জেনে না বুঝে রিয়্যাক্ট করতে পারিস না।
—- কি বুঝাবি তুই কি বুঝাবি? বেঈমান, বিশ্বাসঘাতক।
দু বন্ধুর মধ্যে মারামারি লেগে গেলো। একজন অপরজনকে সমান তালে ঘুষি দিয়েই যাচ্ছে। মুসকান ভয়ে গুটিশুটি হয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। শাওন ওদের ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ওদের দুজনের শক্তির কাছে সে যেনো সামান্য পিঁপড়া মাএ।
একপর্যায়ে ইমনকে নিচে ফেলে মুরাদ তাঁর উপরে ওঠে কলার চেপে ধরে বললো,
—- তুই আমার কলিজার গায়ে হাত দেওয়ার সাহস কোথায় পেলি?
ইমনও তাঁর সর্বশক্তি দিয়ে মুরাদকে নিচে ফেলে কলার চেপে ধরে বললো,
—- তুই আমাকে কোন প্রশ্ন করতে পারবিনা। না জেনে, না বুঝে তুই আমার হৃদপিন্ডে আঘাত করেছিস।
একিভাবে মুরাদ আবার ইমনকে নিচে ফেলে চিৎকার করে বললো,
—- আমার কলিজার দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস কে দিলো তোকে?
—- ইমন চৌধুরীকে সাহস দিতে হয়না।
—- মুসু আমার কলিজা। কি করে পারলি তুই?
—-মুসু আমার হৃদপিন্ড। একিভাবে মুরাদকে নিচে ফেলে চিৎকার করে কথাটা বললো ইমন।
—- খুন করে ফেলবো আমার বোনের দিকে হাত বাড়ালে।
—- তোর বোনকে আমি ভালোবাসি বিয়ে করতে চাই।
—– মরে গেলেও ওকে পাবিনা তুই। বললো মুরাদ৷
সাথে সাথে ইমন একের পর এক ঘুষি দিতে লাগলো। মুসকান কাঁদতে কাঁদতে হেচকি তুলে বললো,
—- আমার দাদাভাইকে মেরোনা। বলেই নিচে বসে পড়লো।
ইমন ছেড়ে দিলো মুরাদকে মুরাদ সাথে সাথে ওঠে গিয়ে মুসকান কে কোলে তুলে নিলো। ঘাড় বাঁকিয়ে ইমনের দিকে চেয়ে হিংস্র গলায় বললো,
—- তোকে আমি ছাড়বোনা।
ইমন শার্টের কলার ঠিক করতে করতে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
—- আর আমি তোর বোনকে।
_________________________
পুরো বাড়িতে থমথমে পরিবেশ। গতকাল রাতেই মুরাদের বাড়ি থেকে শুরু করে চৌধুরী বাড়িতেও খবর পৌঁছে গেছে। ইমন মুরাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সকলের সামনে জোর গলায় বলে এসেছে মুসকান যদি তাঁকে চায় তাহলে পৃথিবীর কারো সাধ্য নেই ইমন চৌধুরী কে আটকানোর।
সকাল থেকে মুসকান কিছু মুখে দেয়নি। মুরাদ বাদে সকলেই এসেছে তাঁর কাছে। কেউ তাঁকে খাওয়াতে পারেনি৷ সব রাগ, অভিমান দূরে ঠেলে অবশেষে মুরাদই আসে খাবার নিয়ে। ভাত মেখে মুখের সামনে খাবার দিতেই মুসকান ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। মুরাদের চোখও ঝাপসা হয়ে আসে। বোনের দুগালে দশআঙুলের ছাপ দেখে তাঁর বুকটা হুহু করে ওঠে। একদিকে প্রিয় বন্ধুর করা বিশ্বাসঘাতকতা, বন্ধুত্বের বিচ্ছেদ অন্যদিকে বোনকে করা আঘাত কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাঁকে। অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে পরম স্নেহে বোনকে খাওয়িয়ে দিলো সে। তারপর অনেকটা সময় মাথায় হাত বুলিয়ে বোঝালো যাতে এসবে মনোযোগ না দেয়। ঠিকভাবে পড়াশোনা করতে বলে এও বললো, রাজপুত্রের মতো ছেলের সাথে তোর বিয়ে দেব। ইমনের থেকেও হাজারগুন ভালো হবে সেই ছেলে৷ ইমন তো কদিন পর বুড়ো হয়ে যাবে। আমার বোনের বুড়ো বর কেনো হবে?
মুরাদ যতোই তাঁকে ভুলানোর চেষ্টা করছে মুসকান ততোই কান্নায় ভেঙে পড়ছে। একসময় ব্যার্থ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় মুরাদ। মরিয়ম আক্তার মুরাদকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে বলে,
—- দেখ মুরাদ তুই বাড়াবাড়ি করছিস। কাল ছেলে টাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলি। ওরা যদি একজন আরেকজনকে পছন্দ করেই থাকে এতে দোষের কি আছে? হ্যাঁ ইমনের বয়সটা মুসুর থেকে বেশী তাই বলে এতোটাও না যে এদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে তোলা যাবে না। ভুলে যাসনা তোর বাবা যখন আমাকে বিয়ে করে আনে তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়তাম আর তোর বাবা স্কুল মাস্টার ছিলো। একটা ছেলের নিজের পায়ে দাঁড়াতেই পঁচিশ, ছাব্বিশ বছর লেগে যায়। উচ্চশিক্ষিত হয়ে উচ্চপদে চাকুরি নিতে গেলেও আটাশ,ঊনএিশ বছর বয়স হয়ে যায়। প্রত্যেক মেয়ের বাবা-মাই চায় উচ্চশিক্ষিত কর্মঠ ছেলেকে মেয়ের জামাই করতে। সেভাবে বিবেচনা করে দেখলে আমি কোন সমস্যা দেখছিনা। তাছাড়া এরকম অহরহ আছে যারা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে স্কুল পড়ুয়া মেয়ে বিয়ে করে। তাঁরা কিন্তু অনার্স,মাস্টার্স পাশ করা মেয়ে বিয়ে করেনা। কিন্তু তাঁদের এটাই করা উচিত অথচ তাঁরা কমবয়সীদের দিকে নজর দেয়। বিয়ে করে তাঁরাও সংসার করে।
সেখানে ইমন, মুসু যদি দুজন দুজনকে চায়। আমরা কেনো চাপ প্রয়োগ করবো?
মুরাদ রেগে চলে যেতে নিতেই মরিয়ম আক্তার হাত টেনে ধরে কঠিন গলায় বলে,
—- ইমন যথেষ্ট ভালো একটা ছেলে। উচ্চশিক্ষিত, উচ্চপদে চাকরি করে। চারিএিক দিক দিয়েও কোন সমস্যা নেই। ওর পরিবারে,ওর কাছে আমার মেয়ে সুখীই হবে। আমাদের তো ভাগ্য ভালো এমন একটা ছেলে আমাদের মেয়েকে পছন্দ করে। তাছাড়া এখনি তো বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে না। ওরা যদি একে অপরের পছন্দ করেই থাকে করুক না সমস্যা কোথায় । তুই কেনো বন্ধুত্ব নষ্ট করবি? কেনোই বা বোনের মন থেকে ইমনকে সড়ানোর চেষ্টা করবি? আর সত্যি বলতে ইমনের থেকে মুসুই হয়তো বেশী চায়। আমিতো মা ছোট থেকেই মেয়েটা ওর জন্য পাগল। দেখিস নাই কোন মেয়ে ইমনের ধারে,কাছে আসতে দেখলেই কেমন ক্ষেপে যেতো। তুই বিষয়টা কঠিন না করে সহজ ভাবে মেনে নে বাবা। আর যাই হোক বন্ধুত্ব নষ্ট করিস না।
.
মরিয়ম আক্তারের বোঝানোতে লাভ হয়নি। মুরাদ সেই এক কথায় রয়েছে ইমন তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আর যাইহোক কোন বিশ্বাসঘাতকের কাছে সে বোন দেবেনা। মুসকানকে পুরো ঘর বন্দী করে রেখেছে মুরাদ। না স্কুলে, না প্রাইভেটে কোথাও যেতে দিচ্ছে না। এর মধ্যে একদিন রিমির ফোন দিয়ে ইমনের সাথে কথা বলতে শুনেছিলো মুসকানকে। ফলশ্রুতিতে রিমির ফোন ইউজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। মায়ের ফোনের সিম খুলে নিয়েছে। মোট কথা ইমন, মুসকানের যোগাযোগের সব রাস্তা বন্ধ।
চলবে…
ভুলত্রুটি ক্ষমা করে ভুলগুলো ধরিয়ে দেবেন।