গল্প – হারিয়ে খুঁজবে আমায়
পর্ব – ১৪
লেখিকা – সানজিদা ইসলাম
স্পিকারে চমৎকার সুরেলা কন্ঠে বেল্ট বাধার নির্দেশনা দিচ্ছে। এতক্ষণ কালকে কথাগুলো মনে করছিলো অনু। পাশের সিটে বসে আছে সাদাত ভাই। সে অনুকে বেল্ট বাঁধতে সাহায্য করলেন। সাদাত ভাই একা এসেছেন সাদকে অনুর মায়ের কাছে রেখে এসেছেন। সাদও বেশ খুশি সে দাদা-দাদীর কাছে থাকবে। বাবার বকুনির শুনতে হবে না স্কুলে যেতে হবে না। দাদার সাথে খেলতে পারবে আর কি চাই তার।
অনুর খুব ক্লান্ত লাগছে রাত দুরাত ঘুমাতে পারিনি সে সাদাত ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অনুকে ঘুমিয়ে থাকতে বলল। এখনো ভোর কিছুক্ষণের মধ্যেই প্লেন ছেড়ে দেবে। অনু তার মাতৃভূমি কে পাশাপাশি তার অতীতকে ছেড়ে যাবে ছিল চিরদিনের জন্য।
চোখ বন্ধ করে ঘুমের অতল গহ্বরে তলিয়ে গেলো অনু। মাঝ খানে সাদাত ভাই কয়েক বার ডেকেছিলো খাওয়ার জন্য। কিন্তু সাড়া দেয় নি। খুব গভীর ঘুম পেয়েছে তার ঘুমানোর প্রয়োজন। বেশ কয়েক ঘন্টা পর হালকা একটা ঝাকুনিতে অনুর ঘুম ভেঙে গেল। মনে হচ্ছে বেশিক্ষণ হয় নি ঘুমিয়েছে। তাই আবারো চেষ্টা করল ঘুমানোর জন্য। কিন্তু পারলো না সাদাত ভাইয়ের জন্য উনি জোর করে খাওয়ালো অনুকে। সকালে শুধু এক গ্লাস জুস আর একটা পাউরুটি খেয়ে এসেছে।
স্পীকারে আবারো সেই সুরেলা কন্ঠ ভেসে এলো। তারা দুবাই পৌছে গেছে। এরপর এখান থেকে সোজা কানাডা। আরো বেশ কিছু সময়। অনু পাশের সিটে তাকিয়ে দেখল সাদাত ভাই ঘুমাচ্ছে মুখ হা করে এটা তার অভ্যাস অনুর খুব হাসি পেল। সাদাত ভাই সজাগ থাকলে গল্প করতো কিন্তু তার ঘুম নষ্ট করতে ইচ্ছে করছে না।হঠাৎ তার মনে পড়ল আসার সময় সে ব্যাগে করে কিছু বই নিয়ে এসেছে তারপর এক এয়ার হোস্টেসের সাহায্যে ব্যাগটা নামিয়ে সেখান থেকে বই বের করে আবার ব্যাগটা রেখে দিল তারপর বই পড়ায় মনোযোগ দিল। বেশ কিছুক্ষণ পরে সাদাত ভাইয়ের ঘুম ভেঙে যায়।সে নাস্তা করে অনুর সাথে টুকটাক কথা বলে তারপর অনু আবারো বইয়ের দিকে মনোযোগ।
.
একটা ঝাঁকুনি দিয়ে প্লেন টা মাটি স্পর্শ করলো। লম্বা একটা জার্নি ছিল। সবাই ধীরে ধীরে বেড়িয়ে যাচ্ছে। তাই সাদাত ভাই আড়মোড় ভেঙে আমার ব্যাগ টা নিয়ে ধীরে ধীরে বেড়িয়ে এল। বিমান থেকে পা টা কানাডার মাটিতে রাখতেই শরীরে কেমন যেন একটা শিহরন বয়ে গেল। হালকা বিশুদ্ধ বাতাসে অনুর ভিতর টাকে ছেদ করে ছুয়ে গেল। অনু বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নিলো। আর মনে মনে বলল
“আমি এসে গেছি আমার যোগ্যতা অর্জন করতে নতুন করে নিজেকে গড়ে তুলতে শাফিনকে তার অপমানের জবাব দিতে”
তারা যে এয়ার পোর্টে এসে দাড়িয়েছে সেটা স্বর্নের তৈরি কোনো বিশাল ম্যানশনের মত মনে হচ্ছে। যেন উজ্জল কোন সোনালি আভা ছড়াচ্ছে। নাম Winnipeg James Armstrong Richardson International Airport.
তারপর তারা একটা ক্যাব ভাড়া করে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে গেল। সাদাতের কথামতো তার চাচা চাচি সত্যিই খুব অমায়িক খুব ভালো ভাবে সমাদর করলো তাদের।আর সাদাতের কাজিন নেহা প্রায় অনুর সাথে লেগেই থাকল মেয়েটা প্রচুর চঞ্চল তা তার কথাতেই বোঝা যাচ্ছে। নেহা অনুর থেকে 5 থেকে 6 বছরের ছোট হবে। আসতে না আসতেই অনুকে সবাই আপন হয়ে নিল।তারপর কিছুক্ষণ কথা বলে বিশ্রামের জন্য পাঠিয়ে দিলো এমনিতেই অনেক জার্নি করে এসেছে তারা বেশিক্ষণ থাকলে শরীর খারাপ করবে।
রাতে অনু আর ডিনার করল না প্রচন্ড ক্লান্ত থাকায় আর ঘর থেকে বের হল না আর সাদাতো তার চাচা চাচীকে সবকিছু খুলে বলল তারা অনুর সাথে ঘটে যাওয়া সব কিছু নিয়ে খুব দুঃখ প্রকাশ করল। পরের দিন সাদাত ইউনিভার্সিটি গিয়ে অনুর এডমিশন যাবতীয় কাজ কমপ্লিট করে এলো সামনের সপ্তাহ থেকে ক্লাস শুরু হবে অনুকে তার ডিপার্টমেন্ট দেখিয়ে দিল লাইব্রেরী দেখিয়ে দিল তারপর বাড়িতে চলে এল।
ঘুরাঘুরি আর আড্ডায় মাধ্যমেই সত দিন চলে গেল। সাদাত যাওয়ার সময় অভ্যাসবশত একগাদা উপদেশ দিয়ে গেল আর অনুকে তা চাচা-চাচীর কাছে রেখে এলো।
প্রথম দিন একটু নার্ভাস ছিল অনু।কিন্তু তা কিছুক্ষণের মধ্যেই কেটে গেল সে দুজন বাঙালি ফ্রেন্ড পেল ও একজন ইন্ডিয়ান। এছাড়াও কয়েকজন ব্রিটিশ আর লোকাল ছেলে মেয়েদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেল। তারা সারা দিন গল্প আড্ডায় মেতে থাকতো। অনু আস্তে আস্তে তাদের সাথে ফ্রি হয়ে গেল। তাছাড়া বাড়তি কোন সমস্যাই ছিল না কোনরকম প্রয়োজন হলে তার লোকাল ফ্রেন্ডরা থাকে হেল্প করত।অনুর চঞ্চলতায় মুগ্ধ হয়ে অনেকেই অনুকে প্রপোজ করে কিন্তু অনু এসব বিষয় খুব সুন্দর ভাবে হ্যান্ডেল করত। সে সম্পর্কে ভয় পায় আর কারো সাথে জড়াতে চায় না সে।
দিন এভাবে যেতে লাগলো ভার্সিটি ফ্রেন্ড নেহার সাথে আড্ডা পড়ালেখা মা-বাবার সাথে কথা বলা আর সাদাত ভাইয়ের উপদেশ সবকিছু মিলেই অনুর দিন বেশ ভালই কাটতেলাগলো শুধু মাঝে মাঝে শাফিনের কথা মনে পড়লেই বুকে চিনচিন ব্যথা হতো।
দেখতে দেখতে অনুর ডেলিভারি টাইম হয়ে গেল অনুর মা অনু ডেলিভারি 1 মাস আগে কানাডা আসলো সে অনুকে নিয়ে অন্য কোথাও থাকার জন্য জোর করলেও সাদাতের চাচি দিল না অনুকে তারা নিজের মেয়ের মতোই ভাবে।
অনুর প্রেগনেন্সিতে কিছু সমস্যা থাকার কারণে তার সিজার করতে হলো অপারেশন রুমে যাওয়ার আগে একবার হলেও শাহিনের মুখ দেখতে খুব ইচ্ছা করেছিল যদি আর দেখা না হয় আর বেঁচে না ফিরে।
অনুর একটা ফুটফুটে মেয়ে হল।এই সময় শাফিন থাকলে হয়তো খুব খুশি হতো। সে সব সময় একটা মেয়ে চাইতো। তারপরে সেদিনের কথাই ভেবে অনুর চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল কারণ শাফিন নিজেই তার সন্তানকে অস্বীকার করেছে। অনু তার মেয়ের নাম রাখল অনন্য।অনন্য অনুর জীবনে এসেছিল অন্যরকম হয়ে তাই এই নাম রাখা। কয়েক মাস পরেই তার পরীক্ষা তাই মেয়ে আর পড়ালেখা নিয়ে তার দিন কাটছিল।
পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলো এবং সেখানে একটা ভালো চাকরির অফার পেল এবং তার বাবাকেও একবারের জন্য এখানে নিয়ে আসলো তারা আলাদা বাসায় উঠল। অনুর ছোট সংসার গরে উঠলো। বাবা মা আর মেয়েই তার দুনিয়া। যেখানে শাফিনের কোন অস্তিত্বই নেই।
সবারই অতীত থাকে,সেই অতীতে হাজারো কষ্ট লুকিয়ে থাকে,তীব্র যন্ত্রণা থাকে।কিন্তু ধীরে ধীরে মানুষ শোক ভুলে যায়,সেই শোক শক্তিতে পরিণত হয়,জীবনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে ।আল্লাহ এভাবেই মানুষকে তৈরি করেছেন।তানাহলে কষ্টে মানুষের জীবন থেমে যেত,পৃথিবী তার নিজস্ব গতি হারাত।
চার বছর পর,
অনু তার জীবনে এগিয়ে গেলেও শাফিন এগোতে পারেনি। সময় বহমান তার সাথে মানুষ মানুষের জীবনও। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সে আবার অনুর কাছে গিয়েছিল তার কাছে ক্ষমা চাইতে কিন্তু তাকে বাড়ির সামনে থেকে তাকে বিদায় করে দিয়েছিল অনুর বাবা।
অনুকে এক পলক দেখার আশায় রোজ রাতে অনুর বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকতো কিন্তু অনুর দেখা মিলত না। সে চাকরি ছেড়ে দেয় দিনরাত ওদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।অনুর বাবা মায়ের কাছে অনুর কথা জানতে চায় কিন্তু তারা বলতে নারাজ। তারপর তার মায়ের কাছ থেকে জানতে পারল অনু লেখাপড়ার জন্য অনু বিদেশ গিয়েছে। তারপর থেকেই সে কয়েক মাস নিজেকে গৃহবন্দী করে ফেলল। দিনরাত অনুর কাপড়-চোপড় আর ছবি নিয়ে পড়ে থাকত ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতো না।কিন্তু আস্তে আস্তে সে স্বাভাবিক হয়ে গেল আবার অফিস জয়েন করলো কিন্তু রাত হলেই অনুর স্মৃতি নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতো
সে দিনরাত অনু কথা ভাবে তার বাচ্চার কথা ভাবে। নিশ্চয়ই তার সন্তান পৃথিবীতে এসেছে সেকি ছেলে নাকি মেয়ে সে কি আর অনুকে আর তার সন্তানকে চোখে দেখতে পারবে না।
ছেলের বিষণ্নতা ও মন খারাপ দেখে শাফিনের মা প্রায়ই তাকে বিয়ের কথা বলে মেয়েদের ছবি দেখায় কিন্তু সে বিয়ে করতে নারাজ সে অনুকে ভালোবাসে। অনু ছাড়া তার মনে অন্য কারো জায়গা হবে না। অন্য কাউকে বিয়ে করলে অবশ্যই তাকে ভালবাসতে হবে নয়তো তাকে ঠকানো হবে কিন্তু শাফিন আর কাউকে ঠকাতে চায় না। একবার ঠকানোর ফল সে হারে হারে পাচ্ছে। নিজের সন্তান থাকতেও আজ চার বছরে সে তার মুখ দেখতে পারেনি বাবা ডাক শুনতে পারেনি তার থেকে বড় হতভাগা আর কে আছে।
আর সবই তার কর্মের ফল। সে নিজে এসবের জন্য দায়ী। হয়তো অনু ঠিকই করেছে সে অনুকে ডিজার্ভ করে না। অনু যে কতটা পবিত্র তা শাফিনের থেকে ভালো হয়তো কেউই জানেনা তারপরেও সে সেদিন অনুর চরিত্র নিয়ে কথা বলেছেন। তার কোন অধিকারই নেই অনুর সাথে থাকার।
সেদিন পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল।মাথা ঠান্ডা হওয়ার পর সে বুঝতে পারে সে অনুকে কি বলে ফেলেছে অনুর চরিত্রে দাগ দিয়েছে। তারপর সে পুলিশকে অনেকবার ছাড়ার জন্য অনুরোধ করেছে তার বাবা-মাকে খবর দেওয়া হয়েছিল তারাও চেষ্টা করেছে শাফিনকে ছাড়ানোর শেষ পর্যন্ত না উপায় না পেয়ে টাকা অফার করেছে কিন্তু দুই দিনের আগে পুলিশ তাকে ছাড়েনি। আর যখন ছাড়া পেল তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে অনু তার থেকে দূরে চলে গেছে।
অনু যাওয়ার একবছর পর শাফিন তখন স্বাভাবিক ছিল। হঠাৎই অফিসে যাওয়ার সময় ইরার সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিল ।মেয়েটা আর আগের মত নেই অত মেকআপ নেই মুখে সাধারন একটা সালোয়ার কামিজ পড়েছে চোখের নিচে কালো চেহারা আর আগের মত লাবণ্য নেই কেমন যেন মিলিয়ে গেছে। ইরাকে দেখে শাফিন সৌজন্যতার খাতিরে ডাক দিল প্রথমে ইরা তাকে দেখে না দেখার ভান করল কিন্তু শাফিন সামনে যাওয়ার পর তাকে উপেক্ষা করতে না পেরে সৌজন্যতার খাতিরে মুচকি হাসি দিলো, শাফিনই প্রথমে জিজ্ঞেস করল,
শাফিন: কেমন আছো?
ইরা: দেখতেই তো পাচ্ছো কেমন আছি। পাপের ফল ভোগ করছি। পারলে আমাকে মাফ করে দিও তোমাকে ঠকানোর জন্য আমি চাইনি তোমাকে ঠকাতে কিন্তু কিভাবে জানো সবকিছু চেঞ্জ হয়ে গেল।
শাফিন:সে কবেই তোমাকে মাফ করে দিয়েছি তুমি ধোকা না দিলে তো বুঝতেই পারতাম না আমি কত বড় ভুল করেছি। ছাড়ো এসব কথা এখানে কেন আর এই অবস্থায়
ইরা: তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর আমি আয়াজকে বিয়ে করি সবকিছু ভালই চলছিলো।কয়েক মাস পর তাদের বাবা-মা নাতি নাতনির মুখ দেখতে চাইছিল আমরাও কোন সমস্যা ছিল না।তাছাড়া চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম সংসারের সব কাজ আমাকে করতে হতো কিন্তু কয়েক মাস চেষ্টা করার পরেও যখন বাচ্চা হল না তখন ডাক্তার দেখালাম সেখান থেকে জানতে পারলাম আমি কোনদিন মা হতে পারব না কারণ এর আগে আমি দুইবার এবরশন করিয়েছি ভুল অপারেশনের কারণে দ্বিতীয় বার আমার জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে। এরপর থেকেই সবকিছু আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে লাগলো আয়াজ আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো গায়ে হাত তুলতে আমাকে সহ্য করতে পারত না এমনকি তার বাবা-মাও না।
তারপর একদিন আমাকে ডিভোর্স লেটার দেয় কিন্তু আমি ওকে সত্যিই ভালোবাসি তাই ডিভোর্স দিতে অস্বীকার করি সেদিন আমাকে প্রচুর মারে তারপরেও কিছু বলিনি।তারপরের দিনই আয়াজ একটা মেয়েকে বিয়ে করে আনে এখন সতীনের সংসার করি।
একবার মা-বাবার কাছে চলে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তারা আমাকে তাদের কাছে রাখেনি। তাই আবার চলে এসেছি ভালোবাসার মানুষটাকে চোখের সামনে দেখাটাই কম কি। থাক না সে অন্য কাউকে নিয়ে ভালো। আসি ভালো থেকো পারলে মাফ করে দিও আর অনুকেও বলো মাফ করে দিতে।
সেদিন শাফিন শুধু দাঁড়িয়ে ইরার কথাগুলো শুনছিল। আর শেষ কথাটা তার মাথায় বারবার আসছিল ইরাতো তবুও তার ভালোবাসাকে চোখের সামনে দেখতে পায় আর শাফিন তো তাও পারে না। কিন্তু সেই অপেক্ষায় আছে অনুর অপেক্ষায় ফিরে না আসুক অন্তত মাফ করবেন সে যে অন্যায় করেছে তার মাফ হয় না। অনুকে হারিয়ে খুঁজছে শাফিন। খুব করে দেখতে চাচ্ছে তাকে।
………….
……………….
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে…….]
#হারিয়ে_খুঁজবে_আমায় #সানজিদা_ইসলাম #গল্পের_ডায়েরি #Sanjida_Islam #GolperDiaryOfficial