#হারানো_সুর-৭ম পর্ব (১৮+ আছে সামান্য তবে অশ্লীলতা মুক্ত)
©শাহরিয়ার
— ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই পেছন থেকে এসে হাত ধরে টান দিলো হৃদয়। প্রেমা ঘুরে হৃদয়ের দিকে তাকালো।
হৃদয়:- হাত ছেড়ে দিয়ে যে বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসে সে বৃষ্টিকে স্পর্শ না করাই ভালো নয়কি?
প্রেমা:- ইহু প্রতিদিন যে জ্বর আসবে বা সেন্সলেস হয়ে পরবো এমনটা কিন্তু নয়। সেদিন অনেক সময় বৃষ্টিতে ভেজার কারণে এমনটা হয়েছিলো।
হৃদয়:- বিশ্বাস নেই, আর বিশেষ করে মেয়েদের তো একদম বিশ্বাস নেই। কারণ তাদের কথা আর কাজের কোন রকম মিল পাওয়া যায় না।
প্রেমা:- মানেটা কি একদম উল্টা পাল্টা কথা বলবেন না বুঝলেন? মেয়েদের যেমন নিষ্ঠুর হতে হয় ঠিক তেমনি হতে হয় কোমল। তাই হয়তো আপনার কাছে এমনটা মনে হয়। আসলে কি জানেন মেয়েরা ঠিক এমন যখন যেখানে যেমন মুহুর্তে সে সেখানে তেমন হয়ে যায়। যখন ভালোবাসার প্রয়োজন হয় তখন নিজের সম্পূর্ণটাই উজার করে দেয়। আর যখন শাষক হতে হয় তখন সব কিছু কঠোর হাতে দমন করতেও জানে সে।
হৃদয়:- আচ্ছা তাহলে পিচ্চির এই মুহুর্তে কি মন চাচ্ছে?
প্রেমা:- খবরদার পিচ্চি বলবেন না, আমার এখন মন চাচ্ছে দু’হাত বাহিরে বাড়িয়ে দিয়ে ভেজাতে। হাতের উপর টপটপ করে বৃষ্টির পানি পরবে আমি মুঠো ভরে সে পানি নিয়ে এসে চোখ বন্ধ করে মুখে ছিঁটিয়ে দিবো।
হৃদয়:- আচ্ছা আর যদি জ্বর আসে তখন কি হবে?
প্রেমা:- উফ এতো ভয় পান কেন হ্যাঁ? জ্বর আসলে ঔষধ খেলে সেরে যাবে, এখন আপনার ইচ্ছে হলে আমার সাথে দাঁড়িয়ে ভিজতে পারেন নয়তো রুমের ভিতর যেয়ে কোম্বল গায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরতে পারেন। কিন্তু খবরদার সুযোগ নেবার চেষ্টা করবেন না।
হৃদয়:- সারা যখন এক বিছানায় থাকার পরেও কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধে সুযোগ নেই না, তখন এখানে কেন জোর করে সুযোগ নিতে যাবো? তবে হ্যাঁ পুরুষ মানুষকেও কিন্তু বিশ্বাস নেই বুঝলে, এই যে ভালো আছি যদি ভালো থাকতে দিলেতো ভালোই, আর যদি রাগিয়ে হিংস্র বানিয়ে দিলে তাহলেতো সিংহের মত শিকার করে খেতেই হবে।
প্রেমা:- ইস মুখের ভিতর কোন কিছুই আটকায় না নাকি আপনার? বলেই দু’হাত বাহিরে বের করে দিলো।
হৃদয়:- তুমি মেনে নাও আর না নাও তুমি আমার বিবাহিতা স্ত্রী, তাই তোমার কাছে কিছু বলতে আমার লজ্জা পাবার কোন কারণ নেই, আমার কাছে কিছু বলতেও তোমার লজ্জা পাবার কিছু নেই।
প্রেমা:- হুম আপনার কাছে জিনিসটা হয়তো খুব সহজ কিন্তু আমার কাছে হয়তো অনেক কঠিন।
— কথাটা বলেই দু’হাত ভর্তি করে পানি নিয়ে নিজের মুখে ছিঁটিয়ে দিলো প্রেমা। এক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে হৃদয়। এ দু’দিনেই মেয়েটা হৃদয়ের অস্তিত্বে মিশে গিয়েছে। না চাইতেও কখন জানি সে ভালোবেসে ফেলেছি প্রেমার বাচ্চামি পনাটাকে। মুখে পানি লাগতেই চোখ বন্ধ করে হেসে উঠছে প্রেমা। হৃদয়ও সাথে সাথে হেসে উঠছে, এমন বাঁচামি দেখতে কার না ভালো লাগবে কথা গুলো ভাবতে ভাবতে অনেকটা গভীরেই হারিয়ে গিয়েছে হৃদয় হঠাৎ নিজের মুখের
উপর পানির ছিঁটা পরায় লাফিয়ে উঠে প্রেমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকায় সে।
প্রেমা:- এতো সময় ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে ছিলেন ঐটাই ভালো ছিলো, দেখতে সুন্দর লাগছিলো, কিন্তু এই যে এখন বড় বড় চোখ করে তাকিয়েছেন একদম ভালো লাগছে না। তাছাড়া আপনার বড় বড় চোখকে আমি ভয় পাইনা বুঝলেন।
— বলে আরও একবার হৃদয়ের দিকে দু’হাত ভরে পানি নিয়ে ছিঁটিয়ে দিতেই হৃদয় ক্ষপ করে প্রেমার হাত চেঁপে ধরে। টান দিয়ে ঘুরিয়ে নিজের বুকের খুব কাছাকাছি নিয়ে আসে।
প্রেমা:- অস্পষ্ট সুরে বলে উঠে কি করছেন আপনি।
— প্রেমার ঠোঁট দু’টো কাঁপছে, চিবুক স্পর্শ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে নিচের দিকে হৃদয় প্রেমার চিবুক স্পর্শ করতেই সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো প্রেমার। চোখ দু’টো বন্ধ করে নিলো সে, হৃদয় অপলক চেয়ে আছে প্রেমার দিকে, সৃষ্টিকর্তা কানায় কানায় পূর্ণতা দিয়ে মেয়েটাকে তৈরি করেছে। বিন্দু পরিমাণ খুঁত কোথাও নেই। হঠাৎ বজ্রপাতে প্রেমা নিজের ঠোঁটটা নিয়ে গেলো হৃদয়ের ঠোঁটের গভীরে, জীবনে প্রথম ভালোবাসার স্পর্শে হৃদয়ের বুকের সাথে লেপ্টে কেঁপে চলেছে প্রেমা, চারিদিক যেন মুহুর্তে আরও গভীর অন্ধকারে পরিণত হয়েছে বৃষ্টির গতি আরও বেড়ে গিয়েছে। আশেপাশের সব বাড়ি গুলোর লাইট অফ হয়ে গিয়েছে অনেক সময় আগেই। প্রেমার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছে নেই এই মুহুর্তে হৃদয়ের বুক থেকে মাথা সরিয়ে নেবার। বরং আরও শক্ত করে সে হৃদয়কে চেঁপে ধরে রেখেছে। সে আজ ভুলে গিয়েছে দু’জনের মাঝের বয়সের দূরত্বটা। বুঝে ফেলেছে সে ভালোবেসে ফেলেছে এই মানুষটাকে, নিজের সমস্ত দিয়ে হলেও এই মানুষটার মন তাকে জয় করতেই হবে। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে সে নিজের ঠোঁটটা হৃদয়ের ঠোঁটের আরও গভীরে নিয়ে গেলো। কাঁপতে কাঁপতে শার্টের উপর হৃদয়ে পিঠে খামছে ধরলো। হৃদয় এতো সময় নিজেকে কঠিন পুরুষ বানিয়ে রাখলেও এই মুহুর্তে আর নিজেকে সে রকম ভাবে আটকে রাখতে পারছে না। নিজেও দু’হাতে প্রেমাকে জড়িয়ে ধরলো। খালি পিঠে হৃদয়ের হাতের স্পর্শে অনেকটা চমকে উঠলো প্রেমা। বৃষ্টির পানি ছিঁটে প্রেমাকে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে দেখে। হৃদয় প্রেমাকে কোলে তুলে নিলো। প্রেমা চোখ মেলে তাকিয়ে চোখ চোখ রাখলো হৃদয়ের মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছে না। ঘরের ভিতর ঢুকে বেলকনির দরজাটা লাগিয়ে সোজা খাটের উপর শুয়িয়ে দিলো প্রেমাকে। প্রেমা বুঝতে পারছে কি হতে চলছে। তাই নিজের দু’চোখ বন্ধ করে নিলো।
হৃদয়:- হঠাৎ করেই প্রেমা যা হচ্ছে তা কি ঠিক হচ্ছে।
— হৃদয়ে এমন প্রশ্নে চমকে উঠে চোখ মেলে তাকায় প্রেমা। হৃদয়ের চোখে চোখ রেখে বলতে শুরু করে, আমার উপর আপনার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। আর আমি কখন কিভাবে কেমন করে আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি জানি না। হয়তো কোন দিনও আপনার ভালোবাসা পাবো না। কিন্তু সারা জীবন চেষ্টা করে যাবো আপনার ভালোবাসা অর্জন করার জন্য। অনেক ভালোবাসি আমি আপনাকে। কথা গুলো বলেই হৃদয়ের হাত ধরে টান দিয়ে বিছানায় নিয়ে আসলো প্রেমা হৃদয়কে কোন রকম কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সোজা তার ঠোঁটের মাঝে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। অল্প সময়ে দু’জন হারিয়ে যেতে শুরু করলো অন্য ভূবনে।
.
.
— খুব ভোরে প্রেমার ঘুম ভেঙে যায়, তখনো সূর্যের আলোয় পুরোপুরি আলোকিত হয়নি চারপাশ, হালকা আলো প্রবেশ করছে জানালার কাঁচ বেদ করে ঘরের ভিতর। হৃদয় তখনো গভীর ঘুমে মগ্ন। মন্ত্রমুগ্ধ দৃষ্টিতে প্রেমা চেয়ে রইলো কিছুটা সময়। কত মায়াময় লাগছে মুখটা। রাতের কথা মনে পড়তেই নিজেই দু’হাতে নিজের মুখ চেঁপে ধরে তাড়াতাড়ি শাড়িটা শরীরে পেঁচিয়ে নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো প্রেমা। তারপর সোজা চলে গেলো ওয়াশ রুমের দিকে, শাওয়ার নেবার জন্য। একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে যখন প্রেমা ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে এলো তখন সূর্য সমস্ত জায়গায় নিজের অস্তিত্ব ঠিকই জানান দিয়ে দিয়েছে। প্রেমা জানালা থেকে পর্দা সরিয়ে দিতেই সূর্যের আলো এসে লাগতে শুরু করলো হৃদয়ের চোখে, হৃদয় আসতে আসতে চোখ মেলে তাকাতেই প্রেমার হাসি মাখা মিষ্টি মুখটা তার চোখে পরলো।
প্রেমা:- টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেস হয়ে নিন। জানেনতো কিছু ক্ষণ পর কিন্তু চলে যাবো আমি।
— হৃদয় হুট করে প্রেমার শাড়ির আঁচল ধরে টান দিতেই প্রেমা হৃদয়ের বুকের উপর পরতেই দু’হাতে শক্ত করে চেঁপে ধরে আজ বুঝি যাবার খুব তাড়া তোমার?
প্রেমা:- হৃদয়ের বুকের মাঝেই মুখ লুকিয়ে কি করবো আপনারতো হাতে সময় নেই যাবার মত, তাইতো আপনাকে রেখে যেতে হবে। যদি দিন গুলো আমার ভীষণ খারাপ কাটবে তবুও যে যেতে হবে। মানুষের সব চাওয়া পাওয়া পূর্ণতা পায়। কিছু চাওয়া পাওয়া না হয় বাকির খাতায় হিসেবে থেকে যাক বছরের পর বছর।
হৃদয়:- হেসে দিয়ে কেন সেগুলো দিয়ে কি প্রতি বছর হালখাতা খাবে।
— হৃদয়ের এমন কথা শুনে প্রেমাও হেসে দেয়। হুম মানুষের ভালোবাসা আজকাল ফিকে হয়ে গিয়েছে, ভালোবাসা গুলো আর আগের মত রঙীন নেই। কেমন জানি বিবর্ণ হয়ে গিয়েছি। ক্ষতি কি যদি বছরে একবার করে হালখাতা খেয়ে তা রেনু করে নেয়া যায়? যদি নতুন করে ভালোবাসায় প্রাণের সোঁয়া লাগে?
— হৃদয় আরও শক্ত করে প্রেমাকে অনেকটা সময় বুকের সাথে চেঁপে ধরে রাখে। টুকটাক কথা আর হাসিতে পুরো ঘর যেন আনন্দে ভরে উঠে। একটা সময় হৃদয় প্রেমাকে ছেড়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যায় ওয়াশ রুমের দিকে। হৃদয় ওয়াশ রুমে চলে যেতেই প্রেমাও বিছানা ছেড়ে উঠে পরে, তাড়াতাড়ি বিছানাটা গুছিয়ে এক পা দুই পা করে এগিয়ে যেতে থাকে বাহিরে। যত দ্রুত কিচেন রুমে যাওয়া যায় সে চেষ্টাই করছে প্রেমা, হৃদয় বের হবার আগে যে তাকে চা বানিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
#চলবে..